আফগানিস্তানে অ্যাথলেটিক ফেডারেশনের প্রধান হলেন এক নারী
১০ জানুয়ারি ২০২০
আফগান ন্যাশনাল অ্যাথলেটিক ফেডাারেশন (এএনএএফ)-এর প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন এক নারী৷ তাঁর নাম রোবিনা জালালি৷ আগামী চার বছরের জন্য তিনি ফেডারেশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন৷
বিজ্ঞাপন
এএনএএফ-এর নির্বাচনে ৩০ ভোটের সবক'টি জিতেছেন রোবিনা জালালি৷ ২০০১ সালে তালিবান শাসনের পতনের পর তিনিই অলিম্পিক গেমসে অংশ নেয়া প্রথম আফগান নারী৷ ২০০৪ ও ২০০৮ সালে তিনি অলিম্পিক গেমসে অংশ নেন৷ এমনকি ২০১০ সালে তিনি আফগান সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন৷ বর্তমান সংসদে কাবুল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি৷ এছাড়া আফগান ন্যাশনাল অলিম্পিকেরও সদস্য তিনি৷
রোবিনা একজন মানবাধিকার কর্মীও৷ তিনি নারী ও তরুণদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছেন৷ ২০০৮ সালের নভেম্বরে তিনি আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলে দুই স্কুলপড়ুয়া নারী শিশুকে এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান৷
আফগানিস্তানের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী৷ তাদের ৭৮ ভাগ গ্রামে থাকেন৷ বেশিরভাগই গৃহিনী৷ ১৯৬৪ সালে করা আফগানিস্তানের সংবিধানে নারী সমতার কথা বলা আছে৷ কিন্তু পরবর্তীতে নারীরা অনেক বেশি বৈষম্যের শিকার হন৷ বিশেষ করে তালিবান শাসনামলে নব্বইয়ের দশকে নারী স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়ে৷
তালিবান পরবর্তী গণতান্ত্রিক শাসনামলে নারীদের অবস্থার উন্নতি হয়৷ সংসদে ২৫ ভাগ নারী প্রতিনিধি বাধ্যতামূলক করা হয়৷ অন্যান্য ক্ষেত্রেও নারীদের অংশগ্রহণ বাড়তে থাকে৷ সবমিলিয়ে দেশটিতে ২০ ভাগ নারী কর্মক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছেন৷
আফগান নারীদের সোনালি অতীত
তালেবান শাসনামলে মেয়েদের জন্য বোরকা বাধ্যতামূলক করা হয় আফগানিস্তানে৷ অথচ আফগানিস্তানে এমন একটা সময়ও ছিল, যখন সে দেশের মানুষ, বিশেষ করে নারীরা পশ্চিমা পোশাকে অভ্যস্ত ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
উচ্চাকাঙ্খী চিকিৎসকরা
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’জন নারী মেডিসিন শিক্ষার্থীকে দেখা যাচ্ছে এক অধ্যাপকের সঙ্গে মানবদেহের একটি অংশ পরীক্ষা করতে৷ ছবিটি ১৯৬২ সালে তোলা৷ সে’সময় আফগান সমাজে নারীদের একটি সক্রিয় ভূমিকা ছিল৷ তখন তাঁদের শিক্ষার সুযোগ যেমন ছিল, তেমনই বাড়ির বাইরেও ছিল অবাধ বিচরণ৷
ছবি: Getty Images/AFP
পাশ্চাত্যের পোশাক কাবুলের রাস্তায়
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে একটি রেডিও স্টেশনের বাইরে হাঁটছেন পশ্চিমা ধাঁচের পোশাক পরা দুই নারী৷ ১৯৬২ সালে তোলা ছবি এটি৷ কিন্তু উগ্র ইসলামপন্থি তালেবান গত শতকের নব্বইয়ের দশকে ক্ষমতা গ্রহণের পর, সব কিছু বদলে যায়৷ আর সব কিছু ঢাকা যায়, এমন বোরকা পরে জনসমক্ষে যেতে বাধ্য করা হয় নারীদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সবার জন্য সম অধিকার - সবসময় নয়
গত শতকের সত্তরের দশকে আফগান শিক্ষাকেন্দ্রগুলোতে মেয়েদের বিচরণ স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল৷ কিন্তু তার মাত্র ২০ বছর পর শিক্ষাকেন্দ্রে মেয়েদের যাতায়াত পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়৷ ২০০১ সালে তালেবানের পতনের পর পরিস্থিতি আবার কিছুটা বদলেছে৷ ২০০৩ সালে আফগান সংবিধানে নারী ও পুরুষ উভয়ের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/Hulton Archive/Zh. Angelov
কম্পিউটার প্রশিক্ষণ
কাবুল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে আফগান শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন একজন সোভিয়েত প্রশিক্ষক৷ ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত – অর্থাৎ এই দশ বছর আফগানিস্তান সোভিয়েতদের দখলে ছিল৷ তাই সেই সময়টায় আফগান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বহু অধ্যাপক অধ্যাপনা করেছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP
শিক্ষার্থীদের ঘোরাফেরা
১৯৮১ সালে তোলা এই ছবিটিতে আফগান ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে৷ ১৯৭৯ সালে সোভিয়েতরা আফগানিস্তানে হামলা চালালে যুদ্ধ শুরু হয় এবং তা দশ বছর ধরে চলে৷ পরবর্তীতে, ১৯৮৯ সালে, সোভিয়েতরা দেশটি ছেড়ে গেলে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় আফগানিস্তানে৷ এই গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে ১৯৯৬ সালে, তালেবানের ক্ষমতাগ্রহণের মধ্য দিয়ে৷
ছবি: Getty Images/AFP
সবার জন্য স্কুল
সোভিয়েতদের অধিকৃত আফগানিস্তানের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছবি এটি৷ তবে তালেবানের শাসনামল শুরু হওয়ার পর আফগান মেয়েদের স্কুলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়৷ এমনকি বাড়ির বাইরে কাজ করাও নিষিদ্ধ ছিল তাঁদের৷
ছবি: Getty Images/AFP
তেমন কিছু বদলায়নি
এই ছবিটি ১৯৮১ সালে তোলা৷ হিজাব, বোরকা ছাড়া এক মা তাঁর সন্তানদের নিয়ে রাস্তায় হাঁটছেন৷ এমন দৃশ্য এখন আর আফগানিস্তানে দেখা যায় না৷ এমনকি তালেবান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ১৫ বছর পরেও না!