পরিবারের সঙ্গে আফগানিস্তানে গিয়েছিলেন তারা। তারপরই তালেবান দখল করে ক্ষমতা। অ্যামেরিকায় ফিরতে পারেনি বহু ছাত্র।
বিজ্ঞাপন
ক্যালিফোর্নিয়ার তিনটি স্কুলের ৩০ জনেরও বেশি ছাত্রছাত্রী আটকে পড়েছে আফগানিস্তানে। তাদের স্কুলগুলির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ওই ছাত্রছাত্রীদের বাবা-মায়েরা আফগান। শরণার্থী হিসেবে অ্যামেরিকায় গিয়েছিলেন। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের অধিকাংশই মার্কিন নাগরিক। কারণ তারা অ্যামেরিকায় জন্মগ্রহণ করেছে।
স্কুলগুলির তরফে জানানো হয়েছে, কিছুদিন আগে বাবা-মায়ের সঙ্গে আফগানিস্তানে দেশের বাড়ি গিয়েছিল ওই ছাত্রছাত্রীরা। কিন্তু তার কিছুদিনের মধ্যেই তালেবান মাত্র কয়েকদিনে গোটা আফগানিস্তান ক্ষমতা দখল করে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে, ওই ছাত্রছাত্রীরা এবং তাদের পরিবার কাবুল বিমানবন্দর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি।
২০ বছরের দীর্ঘতম যুদ্ধ শেষ
৯/১১-র ঠিক পরেই আফগানিস্তানে সৈন্য পাঠিয়েছিল অ্যামেরিকা। ২০ বছর পর কাবুল ছাড়ল মার্কিন সেনা। শেষ হলো ২০ বছরের যুদ্ধ।
ছবি: AFP/W. Kohsar
ঘটনাবহুল ২০ বছর
গত ২০ বছরে নানা ঘটনা ঘটেছে আফগানিস্তান এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে। তালেবান, আইএস-এর সঙ্গে লাগাতার যুদ্ধ চলেছে মার্কিন এবং ন্যাটো বাহিনীর। আফগান সেনাও সেই বাহিনীতে যোগ দিয়েছে। শেষপর্যন্ত আফগান বাহিনীর হাত থেকে ক্ষমতা দখল করে তালেবান ফৌজ।
ছবি: Getty Images/A. Renneisen
৯/১১ এবং যুদ্ধ
২০০১ সালে অ্যামেরিকার টুইন টাওয়ারে বিধ্বংসী আক্রমণ চালায় আল কায়দা। গোটা বিশ্ব হতবাক হয়ে যায় বিমান দিয়ে টুইন টাওয়ার গুঁড়িয়ে দেওয়ার সেই দৃশ্য দেখে।
ছবি: Imago/ZUMA Press
জর্জ বুশের যুদ্ধ ঘোষণা
ওই ঘটনার পরেই যুদ্ধ ঘোষণা করেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ জুনিয়র। তিনি বলেন, বিশ্ব হয় তাদের দিকে, অথবা সন্ত্রাসবাদের দিকে। ৮ অক্টোবর আফগানিস্তানে প্রথম হামলা চালায় মার্কিন সেনা।
ছবি: Jim Watson/AFP /Getty Images
প্রথম তালেবান শাসন
আফগানিস্তানে তখন তালেবানের শাসন। ১৯৯৬ সালে তালেবান আফগানিস্তানে প্রথমবার ক্ষমতা দখল করে। মার্কিন প্রশাসন অভিযোগ করে, তালেবান সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিচ্ছে। ওসামা বিন লাদেন আফগানিস্তানে আছে, এবং তালেবান তাকে আশ্রয় দিচ্ছে বলে জানায় বুশ প্রশাসন।
ছবি: picture-alliance/dpa/Ausaf Newspaper
আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা
৯/১১-র পরেই আফগানিস্তানে ঢুকে পড়ে মার্কিন সেনা। তালেবান এবং আই এস-এর সঙ্গে মার্কিন এবং ন্যাটো বাহিনীর তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়।
ছবি: AFP/Getty Images
তালেবানের পতন এবং নতুন সরকার
অ্যামেরিকার নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর আক্রমণের সামনে আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের পতন হয়। অ্যামেরিকার তত্ত্বাবধানে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় আফগানিস্তানে।
ছবি: Reuters/M. Ismail
হামিদ কারজাই প্রধানমন্ত্রী
২০০৪ সালে নির্বাচনের আয়োজন হয়। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন হামিদ কারজাই। পরবর্তী নির্বাচনেও তিনিই নির্বাচিত হন। তৈরি হয় নতুন আফগান সেনাবাহিনী। অ্যামেরিকা সহ পশ্চিমা শক্তির সাহায্যে আফগানিস্তান শাসন করতে শুরু করেন নতুন প্রধানমন্ত্রী। যদিও কোনো কোনো মহলের অভিযোগ, কারজাই কার্যত অ্যামেরিকার পুতুল হিসেবেই কাজ করেছেন।
ছবি: AP
ওসামা বিন লাদেনের হত্যা
২০১১ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন বাহিনী হত্যা করে ওসামা বিন লাদেনকে। ২ মে অভিযান চালিয়ে লাদেনকে হত্যা করা হয়।
ছবি: Getty Images/AFP
আশরাফ গনি প্রধানমন্ত্রী
২০১৪ সালে আফগানিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন আশরাফ গনি। সমস্ত জনগোষ্ঠীর মানুষকে প্রশাসনে রেখে নতুন আফগানিস্তান তৈরির অঙ্গীকার করেন গনি।
ছবি: Sajjad Hussain/AFP/Getty Images
ডনাল্ড ট্রাম্প এবং ঐতিহাসিক চুক্তি
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দোহায় তালেবানের সঙ্গে চুক্তি করে ট্রাম্প প্রশাসন। স্থির হয়, এক বছরের মধ্যে মার্কিন সেনা সরিয়ে নেওয়া হবে আফগানিস্তানের মাটি থেকে।
ছবি: U.S. Department of State/AA/picture alliance
ন্যাটোর আপত্তি
দ্রুত সেনা সরানোয় আপত্তি জানিয়েছিল ন্যাটো এবং ইউরোপের একাধিক দেশ। কিন্তু সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সেই আপত্তি শুনতে চায়নি। বাইডেন ৩১ অগাস্ট ডেডলাইন স্থির করেন।
ছবি: Daniel Kubirski/dpa/picture alliance
আট দিনে দখল
অগাস্টের গোড়ায় মাত্র আটদিনের মধ্যে কার্যত পুরো আফগানিস্তানের দখল নিয়ে নেয় তালেবান যোদ্ধারা। মার্কিন সেনার হাতে থাকে কেবলমাত্র কাবুল বিমানবন্দর।
ছবি: Zabi Karim/AP/picture alliance
উদ্ধারকাজ এবং লড়াই
গত দুই সপ্তাহে আফগানিস্তান থেকে ১ লাখ ৭২ হাজার মানুষকে উদ্ধার করেছে অ্যামেরিকা সহ একাধিক দেশের সেনা। বহু আফগানকেও দেশ ছাড়তে সাহায্য করা হয়েছে। ৩০ অগাস্ট মধ্যরাতে শেষ মার্কিন বিমান আফগানিস্তানের জমি ছাড়ে। মাঝের দুই দিন কাবুল বিমানবন্দরে একাধিক হামলা করেছে ইসলামিক স্টেট খোরাসান। ১৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মার্কিন সেনাও পাল্টা ড্রোন আক্রমণ করেছে।
ছবি: 1stLt. Mark Andries/U.S. Marine Corps/Handout/REUTERS
পালানোর অপেক্ষায় বহু আফগান
অ্যামেরিকা চলে গেছে। কিন্তু এখনো দেশ ছেড়ে পালাতে চাইছেন বহু আফগান। সমস্ত বিদেশিকেও উদ্ধার করা যায়নি।
২০ বছর ধরে চলা অ্যামেরিকার আফগান যুদ্ধে সব মিলিয়ে প্রাণ গেছে এক লাখ ৭২ জন মানুষ। এর মধ্যে মার্কিন সেনার সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। প্রায় চার হাজার মার্কিন কন্ট্রাক্টরের মৃত্যু হয়েছে। অন্যান্য দেশের সেনা মারা গেছে প্রায় এগারোশ।
ছবি: Getty Images/AFP/W. Kohsar
আফগানের মৃত্যু
যুদ্ধে বহু আফগান সেনার মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৬৬ হাজার। ৪৭ হাজার সাধারণ আফগানের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে নারী এবং শিশুও আছে। তালেবান এবং আইএস যোদ্ধার মৃত্যু হয়েছে ৫১ হাজারের কিছু বেশি।
ছবি: Getty Images/AFP/N. Mohammad
16 ছবি1 | 16
বিমানবন্দর অবরুদ্ধ
স্কুল সূত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, কয়েকটি পরিবার বিমানবন্দরে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু রাস্তায় তালেবান চেকপোস্টে তাদের আটকে দেওয়া হয়। যারা বিমানবন্দর পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছিল, তারাও ভিতরে ঢুকতে পারেনি। বিমানবন্দরের বাইরে হাজার হাজার আফগানকে টপকে তারা ভিতরে যেতে পারেনি।
স্কুল কর্তৃপক্ষ নিয়মিত ওই ছাত্রছাত্রীদের পরিবার এবং মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। কীভাবে তাদের আফগানিস্তান থেকে বার করে আনা যায়, তার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু কাবুল বিমানবন্দর তালেবানের হাতে চলে যাওয়ার পর ওই ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অদূর ভবিষ্যতে তাদের পক্ষে আফগানিস্তান ছেড়ে বেরনো সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আফগানিস্তানে তালেবান ফেরার পর থেকেই আফগানদের বড় একটা অংশ দেশ ছাড়তে মরিয়া৷ তাদের অনেকে ইতিমধ্যে হেঁটে ইরান হয়ে তুরস্কে ঢোকার চেষ্টা করছেন৷ তাদের রুখতে সীমান্তে প্রহরা জোরদার করেছে তুরস্ক৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Murad Sezer/REUTERS
তুরস্ক সীমান্তে বন্দি
এই দুজন আফগানিস্তান থেকে হাঁটতে শুরু করেছিলেন এক সপ্তাহ আগে৷ ইরান পার হয়ে তুরস্কের সীমান্তবর্তী ভ্যান শহরে এলে গত ২১ আগস্ট তুর্কি সীমান্তররক্ষীরা আটক করে তাদের৷
ছবি: Murad Sezer/REUTERS
তুরস্কে প্রবেশের অপেক্ষা...
ছবির এই পরিবারটিও ইরান থেকে হেঁটে এসে ভ্যান শহরের সীমান্তে ধরা পড়ে যায়৷ সীমান্তরক্ষীরা তাদের এই ঘরটিতে বসতে বলেছেন৷ আফগান নাগরিক হিসেবে যাবতীয় কাগজপত্র দেখাতে পারলে তুরস্কে প্রবেশের সুযোগ মিলতে পারে তাদের৷
ছবি: Murad Sezer/REUTERS
রাতের প্রহরী
তুরস্কের এক সীমান্তরক্ষীর এ ছবি তোলা হয় ২১ আগস্ট রাতে৷ ভ্যান শহর সংলগ্ন সীমান্তের ছবি এটি৷
ছবি: Murad Sezer/REUTERS
প্রাচীরের দৈর্ঘ বাড়ছে...
২০১৭ সালে সীমান্তে তিন মিটার উঁচু প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করে এর্দোয়ান সরকার৷ সম্প্রতি দেয়ালের দৈর্ঘ আরো ৬৪ কিলোমিটার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ ওপরের ছবিতে বিশেষ ক্যামেরায় চোখ রেখে সীমান্তে কেউ অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছেন কিনা তা দেখছেন এক তুর্কি সেনা৷
ছবি: Murad Sezer/REUTERS
এর্দোয়ানের ঘোষণা এবং বাস্তবতা
সম্প্রতি তুরস্ক জানিয়েছে, আফগানিস্তানে তালেবান ফেরার আগে থেকেই সেখানে এক লাখ ৮২ হাজার নিবন্ধিত এবং প্রায় দুই লাখ অনিবন্ধিত আফগান শরণার্থী বাস করছেন৷ তাই তালেবান আফগানিস্তান দখল করার পরই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন তুরস্ককে ‘শরণার্থী জমাকেন্দ্রে’ পরিণত করা হোক তা তিনি চান না৷ এর পাশাপাশি ইইউ-র প্রতি আফগান শরণার্থীদের দায়িত্ব নেয়ার আহ্বানও জানান তিনি৷
ছবি: Murad Sezer/REUTERS
পরবাসে বন্দি জীবন
ওপরের ছবিটিও ভ্যান শহর সংলগ্ন সীমান্ত থেকে তোলা৷ ছবিতে যাদের দেখা যাচ্ছে তাদের বেশিরভাগই এসেছেন আফগানিস্তান থেকে৷
ছবি: Murad Sezer/REUTERS
সেনা টহল
ভ্যান শহর সংলগ্ন সীমান্তে টহল দিচ্ছে তুর্কি সেনাবাহিনীর গাড়ি৷
আফগানিস্তান থেকে যাতে অবাধে শরণার্থী প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে আকাশ থেকেও নজরদারির ব্যবস্থা করেছে তুরস্ক সরকার৷ ওপরের ছবিতে ভ্যান প্রদেশের সীমান্ত সংলগ্ন আকাশে তুর্কি বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারের টহল৷
ছবি: Murad Sezer/REUTERS
9 ছবি1 | 9
মার্কিন ঘোষণা
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগেই স্বীকার করেছিলেন, এখনো বেশ কিছু মার্কিন নাগরিক আফগানিস্তানে আটকে আছেন। তাদের উদ্ধার করার চেষ্টা হলেও শেষপর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। মার্কিন প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে, ওই মার্কিন নাগরিকদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় এবং তারা যাতে দেশে ফিরতে পারে তার জন্য তালেবানের সঙ্গে আলোচনা চালানো হচ্ছে। ওই তিরিশ জন ছাত্রছাত্রী এবং তাদের পরিবার নিয়েও আলোচনা হচ্ছে বলে মার্কিন প্রশাসনের সূত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে।
এরই মধ্যে স্যান হুয়ান স্কুল ইউনিয়ন ডিস্ট্রিক্টের মুখপাত্র রাজ রাই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ''গত দুই-তিন দিনে কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে একবারের জন্যও যোগাযোগ করা যায়নি। সম্ভবত সড়কপথে তারা আফগানিস্তান থেকে পালানোর চেষ্টা করছে। সে কারণেই তাদের ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না।''
তালেবানের সেনা প্যারেড
এদিকে বুধবার কান্দাহারে সেনা প্যারেডের আয়োজন করে তালেবান। আফগান ফৌজের ছেড়ে যাওয়া সমস্ত অস্ত্র এবং সামরিক জিনিসপত্র এখন তাদের হাতে। মার্কিন এবং ন্যাটো বাহিনীর ছেড়ে যাওয়া বেস থেকেও তারা বহু জিনিস পেয়েছে। বুধবার কান্দাহারের প্যারেডে হামভি এবং আর্মার্ড ভেহিকেল নিয়ে মিছিল করে তালেবান। উপর থেকে সেই মিছিলে নজর রাখে ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার। মনে করা হয়েছিল, ওই মিছিলে যোগ দেবেন তালেবান নেতা হিবাতুল্লাহ আখুনজাদা। কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত আসেননি। স্থানীয় তালেবান গভর্নর বক্তৃতা করেন।