আফগানিস্তানে নিয়োজিত জার্মান সৈন্যদের পরিদর্শন করার সময় জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন বলেছেন যে, আইসাফ বড় তাড়াতাড়ি আফগানিস্তান থেকে পশ্চাদপসারণ করেছে৷
বিজ্ঞাপন
উত্তর আফগানিস্তানের মাজার-ই-শরিফ শহরে অবস্থিত ক্যাম্প মার্মাল সৈন্যশিবিরে ষষ্ঠবারের মতো পা দিলেন ফন ডেয়ার লাইয়েন৷ আফগানিস্তান থেকে ন্যাটো সৈন্যদের বড় বেশি দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, বলে তাঁর অভিমত৷
ফন ডেয়ার লাইয়েন সোমবার ক্যাম্প মার্মালে বলেন, ‘‘আমরা যখন (২০১৪ সালে) ব্যাপকভাবে সৈন্য কমিয়ে সাততাড়াতাড়ি পশ্চাদপসারণ করি, তখন গোড়ার দিকে যে কি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তা আমি ভুলিনি৷'' আফগানিস্তানে যে এখনও একটি সংঘাত চলেছে, তা সকলের কাছেই স্পষ্ট, বলে তিনি যোগ করেন৷
‘‘এখনও অনেক কাজ বাকি আছে, কিন্তু আফগানিস্তান মিশনের মাধ্যমে আমরা ঠিক দিকে চলেছি বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস,'' ফন ডেয়ার লাইয়েন বলেন৷ ‘‘আমাদের আরো অনেক শক্তি ব্যয় করতে হবে – আফগানিস্তান নিয়ে আরো বহুকাল ব্যাপৃত থাকতে হবে,'' বলে তাঁর ধারণা৷
আফগানিস্তানে জার্মান সেনা
এক্ষুনি আফগানিস্তান থেকে ফিরছে না জার্মান সেনারা৷ আফগানদের নিরাপত্তার স্বার্থেই সেনা সদস্যদের আরো কিছুদিন সেখানে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মানি৷ ছবিঘরে থাকছে আফগানিস্তানে জার্মান সেনাদের অবদান ও তৎপরতা নিয়ে কিছু তথ্য৷
ছবি: picture alliance / JOKER
যেখানে প্রশিক্ষণ দেয় জার্মানরা
এই ক্যাম্প মারমালেই আফগান সেনাদের প্রশিক্ষণ দেয় জার্মান সেনাবাহিনীর সদস্যরা৷ এই মুহূর্তে ৬৫০ জন জার্মান সেনাসদস্য সেখানে প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gambarini
শুরু যেভাবে
২০০২ সালের ১১ই জানুয়ারি আফগানিস্তানে প্রথম দফা সৈন্য পাঠায় জার্মানি৷ সেবার ৭০ জন সেনা সদস্যকে কাবুলে পাঠিয়েছিল জার্মান সরকার৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সেই প্রথম ইউরোপের বাইরে যায় জার্মানির সৈন্য৷ আফগানিস্তানে এক সময় জার্মান সৈন্যের সংখ্যা বেড়ে ৫৩৫০ হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আফগানিস্তানে জার্মান সেনাদের অবদান
এই মুহূর্তে মোট ৮৭০ জন জার্মান সেনা আছে আফগানিস্তানে৷ তাঁদের মূল কাজ আফগান পুলিশ এবং সেনা সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া৷ ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৬০ হাজারের চেয়েও বেশি আফগান পুলিশ ও সেনা সদস্য সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন৷
ছবি: AFP/Getty Images/J. Eisele
প্রথম নিহত জার্মান সেনা
২০০২ সালের মার্চ মাসে কাবুলে এক বোমা হামলায় দু’জন জার্মান এবং তিনজন ডেনিশ সৈন্য মারা যায়৷ ওই দু’জনই আফগানিস্তানে প্রাণ দেয়া প্রথম জার্মান সৈন্য৷ তারপর অবশ্য মৃতের সংখ্যা বেড়েছে৷ এ পর্যন্ত মোট ৫৫ জন জার্মান সেনা মারা গেছেন আফগানিস্তানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
উন্নয়ন কাজে জার্মানি
সেনা প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অন্য কিছু উন্নয়ন কর্মেও ভূমিকা রাখছে জার্মানি৷ বিদেশি সেনা প্রত্যাহার শুরুর পর থেকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সুযোগ এবং প্রয়োজন আরো বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Joker
আফগানিস্তানে জার্মান সেনাবাহিনীর কালো অধ্যায়
২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে দু’টি তেলের ট্রাক তালেবান দখল করে নিয়েছে শুনে জার্মান সেনাদের কুন্দুসে বিমান হামলা চালানোর নির্দেশ দেন কর্নেল গেওর্গ ক্লাইন৷ সেই হামলায় ৯১ জন সাধারণ নাগরিক মারা যায়৷
ছবি: DW/M. Saifullah
6 ছবি1 | 6
২০০১ সালের নাইন-ইলেভেন সন্ত্রাসের পর ওয়াশিংটনের ‘‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের'' অঙ্গ হিসেবে মার্কিন নেতৃত্বাধীন একটি জোট আফগানিস্তানে অভিযান চালায়৷ সেযাবৎ জার্মান সৈন্যরা প্রায় ১৬ বছর ধরে আফগানিস্তানে নিযুক্ত রয়েছে৷ ফেডারাল জার্মান প্রজাতন্ত্রের ইতিহাসে জার্মান সামরিক বাহিনীর বৃহত্তম বৈদেশিক অভিযান হলো এই আফগানিস্তান মিশন৷ অন্য কোনো মিশনে বুন্ডেসভেয়ারের এত বেশি সৈন্য প্রাণ হারাননি৷
ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাসিস্ট্যান্স ফোর্স (আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সহায়তা বাহিনী) বা আইসাফ-এর অভিযানের সর্বোচ্চ পর্যায়ে সারা বিশ্ব থেকে আগত প্রায় দেড় লাখ সৈন্য আফগানিস্তানে ছিল৷ বর্তমানে মাত্র ১৭,০০০ অবশিষ্ট রয়েছে, যাদের মধ্যে ১০,০০০ মার্কিন সৈন্য৷
ওদিকে আফগানিস্তানে নিরাপত্তা পরিস্থিতি ক্রমেই আরো সঙ্গিন হয়ে উঠছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াশিংটন জার্মানির উপর আফগানিস্তানে আরো বেশি সৈন্য পাঠানোর জন্য চাপ দিয়ে চলেছে – নতুন জার্মান সরকার গঠিত হবার আগে বার্লিন যা করতে দ্বিধা বোধ করছে৷
গত সপ্তাহে নবনির্বাচিত জার্মান সংসদ আফগানিস্তানে জার্মান সৈন্যদের মিশনের মেয়াদ তিন মাস বাড়িয়ে দেয় – আশা যে, ঐ সময়ের মধ্যে নতুন সরকার গঠিত হবে ও সেই নতুন সরকার আফগানিস্তান মিশন সম্পর্কে তাঁদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন৷
সেপ্টেম্বরের নির্বাচন যাবৎ ৮৫ দিন কেটে গেছে, কিন্তু চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সিডিইউ-সিএসইউ দল এখনও কোনো উপযুক্ত জোট সহযোগী খুঁজে পায়নি৷
এসি/ডিজি (ডিপিএ, রয়টার্স)
আফগানিস্তান ত্যাগ করছে জার্মান সেনাবাহিনী
আফগানিস্তানে জার্মান সামরিক বাহিনী ‘বুন্ডেসভেয়ার’ এর কম্ব্যাট মিশন শেষ হচ্ছে ২০১৪ সালে৷ তাই সেনাসদস্যদের সঙ্গে কয়েক হাজার টন যুদ্ধ উপকরণ এবং অন্যান্য পণ্যও ফেরত আনতে হবে৷ বিছানা থেকে শুরু করে বিশাল ট্যাংক রয়েছে তালিকায়৷
ছবি: cc-by/Sebastian Wilke/Bundeswehr
বিশাল কর্মযজ্ঞ
জার্মান সেনাবাহিনীর সাড়ে চার হাজারের মতো সেনা সদস্য, সতের শত যান এবং ছয় হাজারের মতো কন্টেইনার রয়েছে আফগানিস্তানে৷ ২০১৪ সালে আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক বাহিনী আইসাফ এর কর্মকাণ্ড শেষ হওয়ার আগেই জার্মান সেনাবাহিনীর অনেক সম্পদ ফিরিয়ে আনা হবে৷ এই সম্পদের মধ্যে মেশিনগান থেকে শুরু করে পঞ্চাশ টন ওজনের ট্যাংক রয়েছে৷
ছবি: cc-by-nd/Bundeswehr/Bienert
ট্রাবজন হাব
হিন্দুকুশ থেকে বিভিন্ন পণ্য ফিরিয়ে আনতে জার্মানি যে দুটি হাব ব্যবহার করছে তার একটি তুরস্কের ট্রাবজন৷ এই বন্দর হয়ে জার্মানিতে পৌঁছাবে বুন্ডেসভেয়ার-এর বিভিন্ন পণ্য৷ তবে আফগানিস্তান থেকে ট্রাবজন পর্যন্ত পণ্য পৌঁছানোর প্রক্রিয়া সহজ নয়৷
ছবি: cc-by-nd/Sebastian Wilke/Bundeswehr
পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার
গত এগারো বছরের বেশি সময় ধরে আফগানিস্তানে অবস্থান করছে জার্মান সেনাবাহিনী৷ তাদেরকে মূলত সেদেশের উত্তরে মোতায়েন করা হয়েছিল৷ ইতোমধ্যে অনেক ক্যাম্প খালি করা হয়েছে৷
ছবি: cc-by-nd/Bundeswehr/Bienert
সবাই সম্ভবত ফিরছেন না
২০১৪ সালের শেষ নাগাদ সম্ভবত সকল জার্মান সেনা ঘরে ফিরবেন না৷ জার্মানি আইসাফের ম্যান্ডেট মেনে আটশো সেনা আরো দীর্ঘ সময়ের জন্য আফগানিস্তানে রাখতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সব পণ্য ফিরবে না
আফগানিস্তানে পাঠানো কিছু জার্মান পণ্য ফেরত আনা হবে না৷ কিছু পণ্য বিক্রি অথবা ধ্বংসে করে ফেলা হবে৷ তবে অস্ত্রশস্ত্র কন্টেইনারে ভরে নিয়ে আসা হবে৷ ইতোমধ্যে এসব পণ্য জমা করা শুরু হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আরেক হাব: মাজার-ই-শরিফ
আফগানিস্তান থেকে জার্মান সেনাবাহিনীর পণ্য ফিরিয়ে আনার আরেকটি হাব হচ্ছে মাজার-ই-শরিফ৷ সে দেশের চতুর্থ বড় এই শহর থেকে অধিকাংশ পণ্য বিমানে পরিবহন করা হচ্ছে৷ তবে পাকিস্তান, উজবেকিস্তান এবং তাজাকিস্তান হয়ে সড়ক পথেও কিছু পণ্য ফেরত আনা হবে৷ তবে নিরাপত্তার কারণে বেশি পণ্য এভাবে পরিবহন হবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রক্ষণাবেক্ষণ এবং জীবাণুমুক্তকরণ
জার্মান সেনাবাহিনীর এসব পণ্যের মাধ্যমে আফগানিস্তান থেকে কোন জীবাণু যাতে জার্মানিতে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য এসব পণ্য জীবাণুমুক্ত করা হবে৷ জার্মানিতে এসব পণ্য প্রবেশের আগেই এটা করা হবে৷
ছবি: Bundeswehr - PIZ SKB/Foto: Vanita Schanze
বিমানে আফগানিস্তান ত্যাগ
বড় এবং ভারি যানবাহন পরিবহনের মতো বিমান জার্মান সামরিক বাহিনীর নেই৷ ফলে ছবির এই বিশাল সামরিক যান পরিবহনের জন্য একটি ইউক্রেনীয়-রাশিয়ান কনসর্টিয়ামের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে৷ এই ব্যবস্থায় প্রত্যেক উড়ালে ৩৭ মিটার দীর্ঘ জায়গায় ১৫০ টন পণ্য পরিবহন সম্ভব হচ্ছে৷
ছবি: cc-by-nd/Bundeswehr/Weinrich
সরাসরি জার্মানিতে ফেরত
অস্ত্র এবং কারিগরিভাবে সংবেদনশীল বিভিন্ন পণ্য বিমানে আফগানিস্তানের মাজার-ই-শরিফ থেকে সরাসরি জার্মানিতে ফেরত আনা হচ্ছে৷ ছবির ট্যাংকটি এই সুবিধা পাচ্ছে৷
ছবি: cc-by-nd/Bundeswehr/Schmidt.
বাকি পণ্য আসছে তুরস্ক হয়ে
অস্ত্রবিহীন গাড়ি, রেডিও এবং তাঁবুর মতো পণ্য সরাসরি জার্মানিতে আনা হচ্ছে না৷ আফগানিস্তান থেকে বিমানে এগুলো তুরস্কের ট্রাবজন বন্দরে আনা হচ্ছে৷
ছবি: cc-by/Sebastian Wilke/Bundeswehr
জাহাজে প্রত্যাবর্তন
ট্রাবজন বন্দরে জার্মান সেনাবাহিনীর জন্য কাজ করছেন ১৭০ ব্যক্তি৷ এই বন্দর থেকে ত্রিশ হাজার বর্গমিটার পণ্য জাহাজে জার্মানিতে পাঠাতে কাজ করছেন তারা৷ সমুদ্রপথে বিভিন্ন পণ্য ট্রাবজান থেকে জার্মানিতে পোঁছাতে সময় লাগে দুই সপ্তাহের মতো৷