যখন যুক্তরাষ্ট্র ও তালিবানের প্রতিনিধিরা সৈন্য প্রত্যাহারের আলোচনা করছে তখন জার্মানি ভাবছে ভিন্নভাবে৷ তারা বরং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি নিয়ে আরো কাজ করতে চাইছে৷
বিজ্ঞাপন
২০০১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক সশস্ত্রবাহিনী যখন আফগানিস্তানে প্রবেশ করে এবং তালিবানদের ক্ষমতাচ্যুত করে, তখন থেকেই দেশটির অভ্যন্তরীণ ইস্যু নিয়ে কাজ করছে জার্মানি৷ এখন পর্যন্ত বন শহরে আফগানিস্তান নিয়ে দু'টি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ দু'টোতেই তালিবান প্রতিনিধিদের হাজির করতে ব্যর্থ হয়েছে জার্মানি৷
এখন যখন দেশটিতে শান্তি আলোচনা এগোচ্ছে তখন আরেকটি সম্মেলন করার উদ্যোগ নিচ্ছে জার্মানি, যেখানে আশা করা হচ্ছে যে, এবার অন্তত তালিবান প্রতিনিধি থাকবেন৷
এখন পর্যন্ত মার্কিনিদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনায় অংশ নিয়েছে তালিবানরা৷ কিন্তু ফলপ্রসূ হয়নি৷ সবশেষ গত ১১ মার্চে ১৬ দিনের আলোচনা শেষে তালিবান ও মার্কিন প্রতিনিধিরা ঘোষণা দেন যে, সেনা প্রত্যাহার ও সহিংসতা বন্ধের বিষয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে৷
সম্প্রতি ন্যাটোর আফগানিস্তানের সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও অন্যান্য সহযোগিতা দেবার বিষয়ে জার্মানি বড় ভূমিকা পালন করেছে৷ মাজার-ই-শরীফে আন্তর্জাতিক সেনাদলগুলোর মধ্যে জার্মানিরটি আকারের দিক থেকে দ্বিতীয়৷ প্রায় ১২০০ সৈন্য আছে এ দলটিতে৷
জার্মান কর্মকর্তারা অবশ্য মনে করেন, এত দ্রুত আফগান সমস্যা সমাধান হবার নয়৷
‘‘এখনও শুধু প্রাথমিক আলোচনাই চলছে৷ আসল শান্তি আলোচনা তালিবান ও আফগান সরকারের প্রতিনিধিদের মধ্যে হবে,'' আফগানিস্তানে জার্মানির সাবেক রাষ্ট্রদূত মার্কুজ পোটসেল বলেন৷
মার্কিনিরা সেনা প্রত্যাহার করতে চাইছে অথবা সেনা সংখ্যা একেবারে কমিয়ে আনতে চাইছে৷ আফগান সরকার ও অনেক পশ্চিমা দেশ মনে করে যে, এতে তালিবানদের সঙ্গে তড়িঘড়ি করে একটি শান্তি চুক্তির পথ তৈরি হচ্ছে৷
ওয়াশিংটনভিত্তিক উড্রো উইলসন সেন্টার ফর স্কলারসের দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলমান বলেন, ‘‘যদি যুক্তরাষ্ট্র সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয় এবং তাদের দেখাদেখি অন্যরাও করে, তাহলে জার্মানিকেও করতে হবে৷''
মাসুদ সাইফুল্লাহ/জেডএ
২০১৭ সালের ছবিঘরটি দেখুন:
যেসব দেশে শান্তি ফেরাচ্ছে জার্মানি
তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি ন্যাটোর সঙ্গে যোগ দেয়ার পর থেকে বার্লিন ট্রান্স-অ্যাটলান্টিক জোটটিকে নানাভাবে সহায়তা করেছে৷ সেই ১৯৯০ সাল থেকে বিভিন্ন দেশে শান্তি ফেরাতে কাজ করেছে জার্মান সেনাবাহিনী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Hanschke
ন্যাটোতে জার্মানির ভূমিকা
তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটোতে যোগ দিয়েছে ১৯৫৫ সালে৷ তবে ১৯৯০ সাল অবধি নিজেদের কর্মকাণ্ড অত্যন্ত সীমিত রেখেছিল জার্মানি৷ শান্তিরক্ষা থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষা ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত বিভিন্ন কাজে ন্যাটোর হয়ে বিশ্বের কয়েকটি দেশে কাজ করেছে জার্মান সেনাবাহিনী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Hanschke
বসনিয়া: জার্মানির প্রথম ন্যাটো মিশন
১৯৯৫ সালে বসনিয়া-হ্যারৎসেগোভিনায় প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে জার্মান সেনা মোতায়েন করা হয়৷ অর্থাৎ বসনিয়া যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সেদেশে শান্তি ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন জার্মানরাও৷ সেই শান্তিরক্ষা মিশনে ন্যাটোর সদস্য ও সহযোগী দেশগুলোর ৬০ হাজারেরও বেশি সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/H. Delic
কসভোতে শান্তিরক্ষা
কসভোতে ন্যাটো নেতৃত্বাধীন শান্তিরক্ষা মিশনের শুরুতেই সেদেশে সাড়ে আট হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়৷ ১৯৯৯ সালে সংখ্যালঘু আলবেনীয় বিচ্ছিন্নতবাদী এবং তাদের সমর্থকদের ওপর বর্বর দমনপীড়নের দায়ে সার্বিয়ার ওপর বিমান হামলা চালায় ন্যাটো৷ এখনো প্রায় ৫৫০ জন জার্মান সেনা কসভোতে অবস্থান করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V.Xhemaj
এজিয়ান সাগরে টহল
২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সমর্থিত ন্যাটো মিশনের অংশ হিসেবে এজিয়ান সাগরে মোতায়েন করা হয় জার্মান যুদ্ধজাহাজ ‘বন’৷ অভিবাসী সংকট যখন চরমে, তখন অন্যান্য কাজের মধ্যে এই মিশনের অন্যতম কাজ ছিল গ্রিস এবং তুরস্কের জলসীমায় অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ওপর নজর রাখা৷ জার্মানি, গ্রিস এবং তুরস্ক এ কাজে ন্যাটোর সহায়তা চেয়েছিল৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/M.Schreiber
লিথুয়ানিয়ায় জার্মান ট্যাংক
বাল্টিক দেশগুলোতে ন্যাটোর মিশনের অংশ হিসেবে লিথুয়ানিয়ায় চলতি বছর ৪৫০ জন জার্মান সেনা মোতায়েন করা হয়েছে৷ অবস্থান করছে জার্মান ট্যাংকও৷ তবে জার্মানি ছাড়া ক্যানাডা, ইংল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেনাও রয়েছে সে অঞ্চলে৷ ‘বর্ধিত সামরিক মহড়া’-র অংশ হিসেবে প্রায় এক দশক যাবৎ ন্যাটো বাহিনী সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ লিথুয়ানিয়ায় অবস্থান করছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Kul
এক দশকের বেশি সময় ধরে আফগানিস্তানে
আফগানিস্তানে ন্যাটো নেতৃত্বাধীন আইসাফ বাহিনীতে জার্মানি যোগ দেয় ২০০৩ সালে৷ সংখ্যার বিচারে দেশটিতে মোতায়েন বিদেশি সেনাদের মধ্যে জার্মানির অবস্থান তৃতীয়৷ আফগান মিশনে এখন পর্যন্ত ৫০ জন জার্মান সেনা নিহত হয়েছে৷ ২০১৫ সালে জার্মান সেনাদের মিশন শেষ হওয়া ও দায়িত্ব হস্তান্তরের পরও সহস্রাধিক জার্মান সেনা অবস্থান করছেন আফগানিস্তানে৷