জাতিসংঘের মনিটারিং টিমের সাম্প্রতিক রিপোর্টে এই তথ্য উঠে এসেছে। রিপোর্ট নিয়ে সোচ্চার ভারত।
ছবি: picture-alliance/Zuma
বিজ্ঞাপন
কাশ্মীরে গত একবছরে লস্কর-ই-তইবা এবং জৈশ-ই-মহম্মদ জঙ্গি গোষ্ঠীর তৎপরতা বেড়েছে বলে ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে। তারই মধ্যে প্রকাশিত হলো জাতিসংঘের তালেবান মনিটারিং টিমের রিপোর্ট। যেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, তালেবানশাসিত আফগানিস্তানে একাধিক জৈশ এবং লস্করের ক্যাম্প চলছে। তালেবান প্রশাসকরা সেই ক্যাম্প পরিদর্শনে গেছেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
তালেবান বিরুদ্ধে লড়ছেন যে আফগান নারী
03:59
This browser does not support the video element.
জাতিসংঘে তালেবানমনিটারিং কমিটি বহুদিন ধরে কাজ করছে। তালেবানের কর্মকাণ্ডের দিকে তারা নজর রাখে এবং সময় সময় রিপোর্ট প্রকাশ করে। অতি সম্প্রতি তারা একটি রিপোর্ট পেশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের আটটি জায়গায় জৈশের সন্ত্রাসী ক্যাম্প ছিল। তার মধ্যে তিনটি এখনো সক্রিয়। নানগরহার অঞ্চলে ক্যাম্পগুলি চলছে বলে রিপোর্টে জানানো হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, কুনার এবং নানগরহারে লস্করের তিনটি জঙ্গি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প চলছে বলেও ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে।
এবিষয়ে দোহায় তালেবানের কূটনৈতিক অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানিয়েছে, আফগানিস্তানের মাটি কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীকে ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে না। আফগানিস্তানে বসে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির উপর আঘাত হানা যাবে না বলেও তারা স্পষ্ট জানিয়েছে। কিন্তু বাস্তব অন্যরকম বলেই দাবি জাতিসংঘের।
আফগানিস্তানের করুণ দশা
তালেবান ক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে৷ এছাড়া নারী ও মেয়েদের অনেক অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে৷
ছবি: Ahmad Sahel Arman/AFP
অর্ধেকের বেশি মানুষ ক্ষুধা কষ্টে
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ডাব্লিউএফপি বলছে আফগানিস্তানের প্রায় দুই কোটি ২৮ লাখ মানুষ মারাত্মক ক্ষুধা কষ্টে আছেন৷ তারা খাদ্য সহায়তার উপর নির্ভরশীল৷ দেশটির মোট জনসংখ্যা প্রায় চার কোটি৷ ছবিতে কাবুলে দুই ব্যক্তিকে চীনের খাদ্য সহায়তা নিয়ে ফিরতে দেখা যাচ্ছে৷ ডাব্লিউএফপি বলছে আফগানিস্তানে তাদের কার্যক্রম চালাতে প্রতিমাসে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন৷
ছবি: Saifurahman Safi/Xinhua/IMAGO
বাংলাদেশ এক কোটি টাকা দিচ্ছে
জাতিসংঘের মাধ্যমে আফগানিস্তানে এক কোটি টাকা অনুদান পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ৷ রোববার (২২ মে) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ‘ফর দ্য কো-অর্ডানেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স’ তহবিলে এ টাকা জমা দেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷
ছবি: Javed Tanveer/AFP
মেয়েদের অধিকার খর্ব
তালেবান বলেছিল এবার তারা আগের চেয়ে একটু বেশি সহনীয় হবে৷ কিন্তু দেখা যাচ্ছে নারীদের অনেক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে৷ তারা মাধ্যমিক স্কুলে যেতে পারছে না, একা চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷ প্রকাশ্যে পা থেকে মুখ পর্যন্ত ঢাকা পোশাক পরতে বলা হয়েছে৷ এসব নির্দেশ মানা হচ্ছে কিনা তা দেখতে চেকপয়েন্ট বসানো হয়েছে৷ এছাড়া সম্প্রতি নারী সাংবাদিক ও উপস্থাপকদের মুখ ঢেকে টিভিতে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷
ছবি: Ali Khara/REUTERS
প্রতিবাদ
কাবুলের মতো আফগানিস্তানের অধিকতর উদার এলাকার কিছু নারীকে নতুন নিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে৷ বিক্ষোভে অংশ নেয়া একজন বলেন, ‘‘আমরা জীবিত প্রাণী হিসেবে পরিচিত হতে চাই, মানুষ হিসেবে পরিচিত হতে চাই, ঘরের কোণে বন্দি দাস হিসেবে পরিচিত হতে চাই না৷’’
ছবি: Wakil Kohsar/AFP
বোরকার দাম বেড়েছে
কাবুলের এক বোরকা বিক্রেতা জানান, পোশাক নিয়ে তালেবানের নতুন নির্দেশের পর বোরকার দাম প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়ে গেছে৷
ছবি: Wakil Kohsar/AFP
নারী ও পুরুষ একসঙ্গে রেস্টুরেন্টে যেতে মানা
আফগানিস্তানের মানদণ্ড বিবেচনায় হেরাত শহরকে কিছুটা উদার মনে করা হয়৷ কিন্তু সেখানে রেস্টুরেন্টে বসে পুরুষ আর নারীরা একসঙ্গে খেতে পারবেন না বলে নির্দেশ জারি করা হয়েছে৷ হেরাতের এক রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক শফিউল্লাহ এই নির্দেশ জারির কথা নিশ্চিত করে বলেছেন, এর ফলে তাদের ব্যবসার অনেক ক্ষতি হচ্ছে৷
ছবি: WANA NEWS AGENCY/REUTERS
প্রতিক্রিয়া
নারী ও মেয়েদের উপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা জারির সমালোচনা করেছেন জি-সেভেন দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা৷ এসব নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে বলে জানান তারা৷
ছবি: Ali Khara/REUTERS
7 ছবি1 | 7
মনিটারিং টিমের রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত জানুয়ারি মাসে নানগরহরে একটি লস্কর ক্যাম্পে গিয়েছিল একটি তালেবান প্রশাসনের বড় দল। লস্কর কম্যান্ডার মওলাভি আসাদুল্লাহের সঙ্গে তালেবান ডেপুটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নূর জালিলের বৈঠক হয়েছিল গত বছর অক্টোবর মাসে। ভারত কিছুদিন আগেই দাবি করেছিল, তালেবান ক্ষমতায় আসার পর কাশ্মীরে জৈশ এবং লস্করের আনাগোনা বেড়েছে।
তালেবান নিয়ে এটি ১৩তম রিপোর্ট মনিটারিং টিমের। আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা দখল করার পর এটি তাদের প্রথম রিপোর্ট।
বস্তুত, আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর ভারত জানিয়েছিল, এর ফলে জঙ্গিবাদ বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। এ নিয়ে বিশ্বমঞ্চে একাধিকবার সরব হয়েছে ভারত। এর আগেও তালেবান যখন আফগানিস্তানে ক্ষমতায় এসেছে, কাশ্মীরে জঙ্গিবাদ বেড়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য। এবারও সেই একই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। কাশ্মীর বিশেষজ্ঞ এবং ডিডাব্লিউয়ের সাংবাদিক সালাউদ্দিন জৈনের বক্তব্য, ''গতবার তালেবান ক্ষমতা দখলের পর কাশ্মীরে আফগান যোদ্ধাদের রীতিমতো কুচকাওয়াজ করতে দেখা গেছিল। এবার এখনো পর্যন্ত তেমন কিছু দেখা না গেলেও লস্কর এবং জৈশের মতো সংগঠনগুলি যে আরো সক্রিয় হয়েছে, তা বোঝা যাচ্ছে। জাতিসংঘের রিপোর্টে এখন স্পষ্ট যে, আফগানিস্তানে তাদের ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে বহু সদস্য কাশ্মীরে ঢুকে পড়েছে।''