শুক্রবার তালেবান সদস্যরা অতর্কিত হামলা চালিয়ে আফগানিস্তানের গজনি নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করলে মার্কিন বিমান বাহিনী পালটা হামলায় চালায়৷ এতে করে পিছু হঠতে বাধ্য হয় তালেবান জঙ্গিরা৷
বিজ্ঞাপন
হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হাত মেলান আফগান সেনারাও৷ বার্তা সংস্থা এএফপি-র এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, ঐ হামলায় আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর ১৪ জন সদস্য নিহত হয়৷
এদিকে রাজ্যটির গভর্নরের মুখপাত্র আরিফ নুরি এএফপিকে জানান, দু'পক্ষের এ হামলায় বেশ কিছু বাড়িঘর ও নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ এছাড়া রাস্তার ওপর বেশ কিছু তালেবান সদস্যের দেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷
প্রতিবেদনে এএফপি জানায়, শুক্রবার ভোর রাতে তালেবান সদস্যরা অতর্কিত হামলা চালিয়ে শহরটির বিভিন্ন এলাকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা চালায়৷ এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অ্যামেরিকান বিমান বাহিনী ও আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা পালটা হামলা চালিয়ে তালেবান সদস্যদের পিছু হঠতে বাধ্য করে৷ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা এ সময় শহরটির বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং স্থানীয়দের বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশনা দেয়৷
আফগানিস্তানে নিযুক্ত অ্যামেরিকান বাহিনীর টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে জানানো হয় যে শহরটি এখন পুরোপুরি দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷
আফগানিস্তানে অফুরন্ত ক্ষমতার লড়াই
২০০১ সালে আফগানিস্তানকে তালেবানমুক্ত করতে অভিযান শুরু করেছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ কিন্তু এখনও শান্ত হয়নি দেশটি৷ বরং গত কয়েকমাসে জঙ্গি হামলা আরও বেড়েছে৷
ছবি: picture alliance/Photoshot
ঠুনকো নিরাপত্তা
গত কয়েকমাসে বিভিন্ন হামলায় শত শত লোক হতাহত হয়েছেন৷ ফলে দেশের নিরাপত্তা নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে৷ এছাড়া জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের সীমাবদ্ধতার বিষয়টিও উঠে এসেছে৷
ছবি: Reuters/M. Ismail
চাপে সরকার
তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস এবং তালেবানসহ বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করছে৷ এসব গোষ্ঠীর হাতে থাকা বিভিন্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Hossaini
ঘোষণা দিয়ে হামলা শুরু
গতসপ্তাহে ঘোষণা দিয়ে তালেবান বসন্তকালীন হামলা শুরু করেছে৷ দেশটিতে কঠোর ইসলামি শাসন চালু করতে চায় তারা৷ আফগানিস্তান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র গতবছর আরও আক্রমণাত্মক পরিকল্পনা ঘোষণা করার প্রতিক্রিয়ায় এমন হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে তালেবান৷
ছবি: Reuters
মার্কিন নীতি
নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আফগানিস্তানে আরও মার্কিন সেনা মোতায়েনের চিন্তা করছেন৷ এই সেনারা আফগান সেনাদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেয়ার কাজ করবে৷ এছাড়া যতদিন প্রয়োজন হবে ততদিন সেখানে মার্কিন উপস্থিতি থাকবে বলেও জানান ট্রাম্প৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Smialowski
শান্তি প্রক্রিয়া
ফেব্রুয়ারি মাসে ‘কোনো শর্ত ছাড়াই’ আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি তালেবানের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন৷ কিন্তু জঙ্গি গোষ্ঠীটি সে ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখায়নি৷ তাদের অভিযোগ, আলোচনার প্রস্তাব একটি ‘ষড়যন্ত্র’৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, ময়দানে তালেবান এখন সুবিধাজনক অবস্থায় আছে বলে তারা আলোচনায় বসতে রাজি হচ্ছে না৷ বর্তমানে তালেবানের হাতে ২০০১ সালের পর সবচেয়ে বেশি আফগান জেলার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Shirzad
পাকিস্তানের সমর্থন
আফগানিস্তানে হামলার জন্য দায়ী জঙ্গিরা পাকিস্তানে নিরাপদে আস্তানা গড়তে পারে বলে কাবুল ও ওয়াশিংটনের অভিযোগ৷ তবে পাকিস্তান সবসময় তা অস্বীকার করে এসেছে৷ কাবুল ও ইসলামাবাদ সবসময় একে অপরের বিরুদ্ধে তাদের দেশের জঙ্গিদের আশ্রয় দেয়ার অভিযোগ করে থাকে৷
ছবি: DW/H. Hamraz
অকার্যকর সরকার
ক্ষমতার অফুরন্ত লড়াইয়ের মাঝে জনমত সমীক্ষায় প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির জনপ্রিয়তা ক্রমেই কমছে৷ আফগান সরকারের দুর্নীতি ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গড়ে ওঠা জাতীয় ঐকমত্যের সরকারের কারণে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/K. Pempel
7 ছবি1 | 7
এদিকে জঙ্গি গোষ্ঠি তালেবান এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে তারা শহরটির অধিকাংশ সরকারি স্থাপনার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে৷ নিরাপত্তা বাহিনীর প্রায় ১৪০ জন সদস্যের হতাহতের দাবিও করেছে জঙ্গি গোষ্ঠিটি৷
২০১৪ সালে ন্যাটো সদস্যদের প্রত্যাহারের পর থেকেই দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার জন্য তালেবান বাহিনীর সাথে লড়তে হচ্ছে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের৷ গত মে মাসে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ফারাহ-এ হামলা চালায় তালেবান জঙ্গিরা৷ এ সময় অ্যামেরিকান বিমান বাহিনী ও আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর হামলা ও পালটা হামলার মুখে পিছু হঠতে বাধ্য হয় তালেবান৷
দেশটিতে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে তালেবান জঙ্গিদের সঙ্গে আলোচনায় বসার পরিকল্পনা করছে আফগান সরকার৷ গত ফেব্রুয়ারি মাসে তালেবানকে শান্তি আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেয় তারা৷ এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তালেবান জঙ্গিরা জানিয়েছে যে, তারা সরাসরি মার্কিন বাহিনীর সাথে শান্তি আলোচনা বসতে চায়৷ তালেবানের এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ওয়াশিংটন জানিয়েছে, শান্তি আলোচনা হতে হবে আফগান প্রশাসনের নেতৃত্বে৷ শান্তি আলোচনার বিষয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা এখনও চলছে আফগানিস্তানে৷