1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আফগানিস্তানে তালেবান, বাংলাদেশের দুই ঝুঁকি

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৬ আগস্ট ২০২১

তালেবান পুনরায় ক্ষমতার দখল নিয়েছে আফগানিস্তানে৷ বাংলাদেশে এর কেমন প্রভাব পড়তে পারে? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

Konflikt in Afghanistan | Taliban-Kämpfer
ছবি: Mohammad Asif Khan/dpa/AP/picture alliance

‘‘আফগানিস্তানে তালেবানের আগমনে দু'টি ঝুঁকি তৈরি হয়েছে৷ একটি জঙ্গি বিস্তার, আরেকটি হল মার্কিন সৈন্য প্রত্যহারের পর সেখানে যে নিরাপত্তাশূন্যতা তৈরি হয়েছে, এখন আঞ্চলিক শক্তিগুলো সেখানে আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে৷ ফলে আঞ্চলিক সংঘাতের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে৷ যেহেতু বাংলাদেশ এই অঞ্চলের একটি দেশ, ফলে তারা কমবেশি দু'টি ঝুঁকিতেই পড়তে পারে,'' ডয়চে ভেলেকে বলছিলেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ৷

তবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও সাবেক কূটনীতিকরা বলছেন, এই মুহুর্তে বাংলাদেশের শঙ্কার তেমন কোনো কারণ নেই, কারণ ২০ বছর আগের বাংলাদেশ আর এই বাংলাদেশ এক নয়৷ আবার ২০ বছর আগের তালেবান আর এখনকার তালেবানের মধ্যেও পার্থক্য আছে৷ তবে তারা বলছেন, বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে৷ যে কোনো দেশ জঙ্গি নিয়ে যেভাবে সজাগ থাকে, বাংলাদেশেও সেটুকু থাকতে হবে৷

‘‘আঞ্চলিক সংঘাতের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে’’: আবদুর রশিদ

This browser does not support the audio element.

দু'টি ঝুঁকির ব্যাখা করতে গিয়ে জেনারেল রশিদ বলেন, ‘‘আগে তালেবান জঙ্গি বিস্তারে যে প্রত্যয় নিয়ে কাজ করতো, এখন হয়ত সে প্রত্যয় নিয়ে কাজ করবে না৷ যেহেতু তালেবান অতীতে সারা বিশ্বে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত ছিল, এবার তারা সেখান থেকে বেরিয়ে গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক অস্তিত্ব হিসেবে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করছে৷ সেক্ষেত্রে অতীতে জঙ্গি বিস্তারে তাদের যে ভূমিকা দেখেছি, এবার সেটা অন্যভাবে দেখবো৷ সারা বিশ্বের জঙ্গিরা তালেবানের এই জয়কে নিজেদের জয় হিসেবে দেখে উজ্জীবিত হওয়ার চেষ্টা করবে৷ বাংলাদেশ এই ঝুঁকি থেকে মুক্ত নয়৷ বাংলাদেশে অতীতে যেসব জঙ্গি খুব বেশি সক্রিয় ছিল, তাদের মধ্যে আফগানফেরত জঙ্গিদের একটা বড় উপস্থিতি ছিল৷ এবারও কিছু তরুণ সেখানে গেছে বা যাওয়ার চেষ্টা করছে৷ ফলে বাংলাদেশকে একটা শক্তিশালী নিরাপত্তা কৌশল বির্নিমাণ করতে হবে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য৷''

‘‘২০ বছর আগের বাংলাদেশ আর এই বাংলাদেশ এক নয়’’: ইমতিয়াজ আহমেদ

This browser does not support the audio element.

তবে এই মুহুর্তে শঙ্কা নেই- এমন মতামত ব্যক্ত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘২০ বছর আগের বাংলাদেশ আর এই বাংলাদেশ এক নয়৷ যে কোনো জঙ্গিবাদ যখন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তখন রাষ্ট্রের বা কোনো গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতা থাকে৷ এখন যারা বাংলাদেশে ক্ষমতায় আছে, তারা তো হোলি আর্টিজানের ঘটনার পর জিরো টলারেন্সে গেছে৷ জঙ্গিবাদ থামানোর জন্য একাধিক স্ট্রাকচার তৈরি করেছে৷ একজন দুই জন বিচ্ছিন্নভাবে আগ্রহ দেখাতে পারে, কিন্তু বিস্তারের জন্য রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা দরকার৷ এখানে সেটা তো নেই৷ আর এখনকার তালেবানের মধ্যেও একটা পার্থক্য আছে৷ তখন তো সৌদিআরব আর পাকিস্তান তালেবানের বন্ধু আর শক্তি ছিল৷ তার সঙ্গে অ্যামেরিকা ছিল৷ এটাও মনে রাখতে হবে৷ এখনকার তালেবান কাতারে বসে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে নেগোসিয়েশন করছে৷''

অধ্যাপক আহমেদের সঙ্গে সহমত পোষণ করে সাবেক রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক হুমায়ুন কবীর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আফগানিস্তানে তালেবানের নতুন করে উত্থানে বাংলাদেশের শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই৷ তবে সতর্ক থাকতে হবে৷ এবারের যে তালেবান, তাদের চেহারা ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সালের মতো উগ্রবাদী এবং পুরোপুরি সামরিক নয়৷ বরং তাদের বর্তমান চেহারায় একটি নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিচয় দেখা যাচ্ছে৷ ফলে এবার তালেবানের দেশ পরিচালনায় আগের চেহারা দেখা যাবে না, সেটা ধারণা করা যায়৷ তালেবান ধীরে ধীরে বর্তমান বিশ্বের সমসাময়িক বাস্তবতায় একটা রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেদের অবস্থান সংহত করার উদ্যোগ নেবে, সে ধারণাও করা যায়৷ তবে বাংলাদেশকে অবশ্যই পরিস্থিতি গভীর পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে এবং সতর্ক থাকতে হবে৷''

আফগানিস্তানে তালেবান ফিরে এসেই বলেছে নারীদের ঘর থেকে বের হতে বোরখা পরতে হবে৷ বাংলাদেশে কি এর কোনো প্রভাব পড়তে পারে? নারী অধিকার কর্মী খুশি কবীর এ প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শুধু বাংলাদেশ না, সারা পৃথিবীতেই এর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকতেও পারে৷ আমি একেবারে উড়িয়ে দিতে চাই না যে পড়বে না৷ আমার মনে আছে, ইরানে যখন আন্দোলন হয়, তখন তো সবাই নেমেছিল৷ কিন্তু নিয়ন্ত্রণ নিলো খোমেনির দল৷ পরে ইরানকে একটা ধর্মীয় রাষ্ট্র বানিয়ে দিয়েছে৷ যখন আন্দোলন চলতো, তখন আমি তাদের অনেকের সঙ্গেই কথা বলেছি৷ তখন কিন্তু আমরা আশঙ্কা করেছিলাম, ধর্মীয় শাসন চলে আসে কিনা৷ তখন তারা বলেছিল, আমরা যতদূর এগিয়েছি, এখানে ধর্মীয় শাসনের সুযোগ নেই৷ কিন্তু পরে কী হলো! আবার প্রতিবেশী দেশ ভারতে দেখেন, বিজেপির যখন উত্থান শুরু হয় তখন অনেকের সঙ্গেই আমার কথা হয়েছে৷ তারা বলেছিল, সেকুলার ভারতে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতির উত্থানের কোনো সুযোগ নেই৷ সেখানেও তো বিজেপি ক্ষমতায় এলো৷ সেখানে সংখ্যালঘুরা একটা অনিশ্চয়তায় আছে৷ সুদান, লেবাননসহ এমন আরো অনেক দেশ আছে৷ এগুলো দেখে আমি বুক ফুলিয়ে যে বলবো কোনোদিন হবে না, সেটা বলতে পারি না৷ তবে ২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলনে আমি তরুণদের মধ্যে যে স্বতস্ফূর্ততা দেখেছি, সেটা থেকে আমার মনে একটা বিরাট আশা তৈরি করেছে৷ আমাদের তরুণরা প্রয়োজন হলে মাঠেও নামবে এবং বড় ভুমিকা রাখবে৷ ওরা যতদিন আছে, ততদিন বাংলাদেশে তালেবানের মতো কিছু আসতে দেবে না৷''

‘‘যতদিন তরুণরা আছে, ততদিন বাংলাদেশে তালেবানদের মতো শাসন আসতে দেবে না’’: খুশি কবীর

This browser does not support the audio element.

সাবেক কূটনীতিক মোহাম্মদ জমির মনে করেন, ‘‘এখন আমাদের দেখতে হবে বড় বড় শক্তিগুলো কী অবস্থান নিচ্ছে৷ আফগানিস্তান ঘিরে তাদের পরিকল্পনা কী?'' বাংলাদেশে আপাতত কোনো প্রভাব পড়ার আশঙ্কা আছে বলে মনে করেন না এই কূটনীতিক৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের এখন ধৈর্য্য ধরে পর্যবেক্ষণ করতে হবে৷ আমাদের মনে রাখতে হবে, তারা সার্কের সদস্য৷ তারা ওআইসিরও সদস্য৷ ফলে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে৷ আমরা চাই না এর কোনো ছায়া বাংলাদেশে পড়ুক৷''

আফগানিস্তানেস্থায়ী সরকার এলে বাংলাদেশ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে- পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা তৃতীয় কোনো দেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আফগানিস্তানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাই না৷ আঞ্চলিক সমৃদ্ধির জন্য আমরা চাই আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক৷ আফগানিস্তানের মানুষের অনেক সক্ষমতা আছে৷ তারা সেটি ব্যবহার করে বিশ্বে মাথা উচুঁ করে দাঁড়াক৷ সে বিষয়ে বাংলাদেশ সার্বিক সহযোগিতা করবে৷ আমরা সে জন্য প্রস্তুত আছি, তবে সে জন্য স্থায়ী সরকারের প্রয়োজন৷ সামনের দিনে যখন আমরা বুঝবো একটি স্থায়ী সরকার এসেছে, আমরা তখন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবো৷''

আফগানিস্তানে বাংলাদেশিদের যাতায়াতে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘‘বাংলাদেশের এমন প্র্যাকটিস নেই৷ স্বাভাবিকভাবে যে দেশের আইন-শৃঙ্খলা ভালো নয়, সে দেশে বাংলাদেশের মানুষ যাবেন না৷ এটা নতুন করে বলার কিছু নেই৷ আমরা লিখিতভাবে না বললেও আমরা নিরুৎসাহিত করবো আফগানিস্তানে যেতে৷ তাদের সংবিধান অনুযায়ী স্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও সরকার শপথ নিলে বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সিদ্ধান্ত নেবে৷''

সমীর কুমার দে (ঢাকা)

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ