এই প্রথম সরকারিভাবে তালেবান প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করলেন যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূতরা। নারী অধিকার, মানবাধিকার নিয়ে কথা হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্য।
বিজ্ঞাপন
আফগানিস্তানের ক্ষমতা তালেবানের হাতে যাওয়ার পরে এই প্রথম আফগানিস্তানে গিয়ে সরকারিভাবে তালেবান প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করলেন যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিরা। কূটনীতিবিদদের একাংশের বক্তব্য, এই বৈঠকের মাধ্যমে তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক তৈরির রাস্তা তৈরি হলো। যদিও যুক্তরাজ্য এখনই সে কথা বলতে রাজি নয়। তাদের বক্তব্য, মানবিক বিষয়গুলিকে সামনে রেখে এদিন তালেবানের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে।
তালেবানের এই আফগানিস্তান
আফগানিস্তানে এখন আর বিদেশি সৈন্য নেই৷ সব জায়গায় শুধুই সশস্ত্র তালেবান যোদ্ধার উপস্থিতি৷ আরো অনেক পরিবর্তন চোখে পড়ছে দেশ জুড়ে৷ দেখুন ছবিঘরে..
ছবি: WANA NEWS AGENCY/REUTERS
যেন পুরুষের দেশ
তালেবান দখল নেয়ার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবন ফিরছে আফগানিস্তানে ৷দোকান, অফিস-আদালত খুলছে৷ তবে কোনো জায়গাতেই নারীদের তেমন দেখা যায় না৷ ছবির এই রেস্তোরাঁতেও খেতে আসা সবাই পুরুষ৷
ছবি: WANA NEWS AGENCY/REUTERS
লিঙ্গবৈষম্য
কাবুলের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আফগানিস্তানের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই এখন ছেলে আর মেয়েদের বসতে হয় আলাদা৷ মাঝে পর্দা অথবা কার্ডবোর্ডের দেয়াল দিয়ে আলাদা করা হয় তাদের৷ প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারী-পুরুষের বৈষম্য এভাবে তুলে ধরতে চায় তালেবান৷ এর কারণ জানাতে গিয়ে তালেবান নেতা আব্দুল বাগি হাক্কানি বলেন, ‘‘সহশিক্ষা ইসলামের মূল নীতিমালা এবং আমাদের জাতীয় মূল্যবোধ, রীতিনীতি এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক৷’’
ছবি: AAMIR QURESHI AFP via Getty Images
নারীর নিয়ন্ত্রিত অধিকার
হেরাতের মসজিদে এভাবেই এখন নামাজ আদায় করতে যান নারীরা৷ নারীদের শুধু নিজের পছন্দের পোশাক পরার অধিকারই কেড়ে নেয়া হয়নি, তালেবানের সাংস্কৃতিক কমিশনের প্রধান আব্দুল্লাহ ওয়াসিক জানিয়েছেন, এখন থেকে খেলাধুলাতেও সীমিত পরিসরে অংশ নিতে পারবেন মেয়েরা৷
ছবি: WANA NEWS AGENCY/REUTERS
অলি-গলিতেও সশস্ত্র তালেবান
ছবির এই রাস্তার মতো আফগানিস্তানের সব শহরের সব রাস্তায়ই থাকে তালেবান পাহারা৷ সশস্ত্র তালেবান যোদ্ধারা কেউ পশ্চিমা পোশাক পরেছেন কিনা, তালেবানবিরোধী কিছু করছেন কিনা এসব দিকে কড়া নজর রাখেন৷
ছবি: Haroon Sabawoon/AA/picture alliance
বেকারত্ব বাড়ছে
কাবুলের রাস্তার পাশে বসে কোনো কাজের সুযোগের অপেক্ষায় কয়েকজন দিনমজুর৷ আফগানিস্তানে বেকারত্ব দ্রুত বাড়ছে৷ জাতি সংঘের আশঙ্কা, বিদেশি সহায়তা না পেলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ বেকারত্ব ভয়াবহ পর্যায়ে চলে যেতে পারে, দারিদ্র্যের হারও সর্বশেষ সমীক্ষার ৭২ শতাংশ থেকে বেড়ে শতকরা ৯৮ ভাগ হয়ে যেতে পারে৷
ছবি: Bernat Armangue/dpa/picture alliance
তালেবানকে চ্যালেঞ্জ
প্রতিবাদ, বিক্ষোভ রোধে লাঠি, বেত, এমনকি আগ্নেয়াস্ত্রও চালায় তালেবান৷ এ বিষয়ে তালেবানকে সতর্কও করেছে জাতিসংঘ৷ তালেবানের হামলায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে চারজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অনেক৷ তা সত্ত্বেও নিজেদের অধিকার আদায়ের দাবিতে সোচ্চার নারীরা৷ ওপরের ছবিতে এক নারী বিক্ষোভকারীর হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা আমাদের (নারীর) ক্ষমতার ফলাফল৷’’
ছবি: REUTERS
তালেবানের নারী সমর্থক
তালেবান দখল নেয়ার পর আফগানিস্তানে তালেবান সমর্থক নারীদেরও দেখা যাচ্ছে৷ ওপরের ছবিতে তালেবান সমর্থক নারীদের বিক্ষোভের এক প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘মুজাহিদিনের দৃষ্টিভঙ্গি ও ব্যবহারে আমরা সন্তুষ্ট৷ ’’
ছবি: AAMIR QURESHI/AFP/Getty Images
তালেবানের পক্ষপাত
তালেবানবিরোধীদের সমাবেশে হামলা হয়েছে, সেই খবর প্রকাশ করতে যাওয়া সাংবাদিকদেরও ধরে নিয়ে পিটিয়েছে তালেবান৷ অন্যদিকে তালেবান সমর্থকদের সমাবেশ কাভার করতে আহ্বান জানানো হয় সাংবাদিকদের৷
ছবি: AAMIR QURESHI/AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
আফগানিস্তানে যুক্তরাজ্যের দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মার্টিন লংডেন এবং সাইমন গ্যাস আফগানিস্তানে গিয়েছিলেন। মঙ্গলবার তারা বৈঠক করেন তালেবান মন্ত্রিসভার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে। বৈঠকের পর লংডেন টুইট করে একটি ছবি প্রকাশ করেন। সঙ্গে লেখেন, 'তালেবান নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সব বিষয়ে স্বাভাবিকভাবেই মতের মিল হয়নি। তবে গুরুত্বপূর্ণ মানবিক বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।' যুক্তরাজ্যের দাবি, কয়েকটি বিষয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে যুক্তরাজ্য। আফগানিস্তানে এখনো আটকে থাকা ব্রিটিশ এবং দেশের বাইরে যেতে চাওয়া আফগান নাগরিকদের সেফ প্যাসেজ দিতে হবে। হত্যা বন্ধ করতে হবে এবং নারীদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
তালেবান মুখপাত্রও টুইট করেছেন এদিনের বৈঠকের বিষয়ে। তিনি জানিয়েছেন, আফগানিস্তানের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক তৈরির বিষয়ে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে।
তালেবান ক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্তানের সমস্ত অ্যাসেট ফ্রিজ করে দিয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব। বিদেশ থেকে আফগানিস্তানের সমস্ত সাহায্য বন্ধ হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে তালেবান চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। ফলে তারা চাইছে, দ্রুত পশ্চিমা দেশগুলির সঙ্গে সমঝোতায় যেতে। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বৈঠক তারই অন্যতম পদক্ষেপ বলে মনে করছে তারা।
অ্যামনেস্টির মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলি অবশ্য বলছে, মুখে শান্তির কথা বললেও আফগানিস্তানে একের পর এক হত্যার ঘটনা ঘটেই চলেছে। তালেবান ১১ জন হাজারাকে হত্যা করেছে বলে তাদের অভিযোগ। এছাড়াও নারীদের উপর নির্যাতন চলছে বলেও তারা দাবি করেছে।