1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আফগানিস্তানে তালেবান, সোনামুখীতে পাগড়ি বিক্রিতে ভাটার টান

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২ সেপ্টেম্বর ২০২১

কয়েকদিন আগেও আফগান ব্যবসায়ীরা পাগড়ি নিয়ে যেতেন বাঁকুড়ার সোনামুখী থেকে৷ তালেবান ফেরায় তারা আর আসছেন না৷ বিপুল টাকা বিনিয়োগে পাগড়ি তৈরি করে তাঁত শিল্পীদের এখন মাথায় হাত৷

ছবি: Payel Samanta/DW

৬০-৭০ বছর আগে সোনামুখীর তাঁত শিল্পীরা শুরু করেছিলেন পাগড়ি বোনার কাজ৷ আফগানিস্তান থেকে হিং, গালা বিক্রি করতে এসে তাঁতিদের হাতে বোনা ধুতি, সিল্কের থান দেখে মুগ্ধ হন কাবুলিওয়ালারা৷ নগদ টাকার বিনিময়ে পাগড়ি কেনার প্রস্তাব দেন৷ তারপর থেকে সোনামুখীর তাঁতিরা পাগড়ি তৈরি করছেন৷ এখানকার পাগড়ি সৌদি আরব, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের মাটিতে পৌঁছে যায়৷ রেশমের পাগড়ির দাম দু'হাজার টাকা থেকে শুরু, পলিয়েস্টার পাগড়ি শুরু ৪০০ টাকা থেকে৷ এক সময় খোদ কাবুলিওয়ালারা সেসব পাগড়ি কিনে নিয়ে যেতেন দেশে৷ পাশাপাশি সোনামুখী থেকে পাগড়ি আসতো কলকাতার বড়বাজার এলাকায়৷ সেখান থেকে পৌঁছে যেতো বিদেশের মাটিতে৷ লকডাউনের পর এই ব্যবসায় ভাটা পড়েছে৷ আগে ৭০০-৮০০ তাঁতি পাগড়ি বুনলেও, এখন সংখ্যাটা কমে ২০০-র নীচে এসে ঠেকেছে৷ এমনিতেই করোনা তাঁদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে৷ পাগড়ি বিক্রি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মূলধনে টান পড়েছে৷ এখন তালেবান আফগান দেশ দখল করার ফলে তাঁতশিল্পীরা আরো চিন্তায় পড়েছেন৷ পেটের দায়ে পেশা ছেড়ে দিয়েছেন কেউ কেউ৷ সামনেই পুজো৷ যে সোনামুখীর ৪০ শতাংশ মানুষ তাঁতশিল্পের উপর নির্ভরশীল, সেখানে এই শরতে বিষণ্ণতা৷

তাঁতশিল্পের অন্দরে

সোনামুখীর কৃষ্ণবাজার আর লালবাজার একসময় পাগড়ির পীঠস্থান হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল৷ এখন সেখানে শুধুই হতাশা৷ কথা বলছিলাম কৃষ্ণবাজারের তাঁতশিল্পী সম্পদ পালের সঙ্গে৷ ৩০ বছর ধরে কাজ করছেন তিনি৷ বলেন, ‘‘করোনা আসার পর কাবুল থেকে পাগড়ি নিতে আসাটা কমে গিয়েছিল৷ এবার আফগানিস্তানে তালেবান শাসন শুরু হল, ফলে আমাদের আরও খারাপ অবস্থা! আমরা এখন রেশমের শাড়ি বুনছি৷’’

সম্পদ পাল

This browser does not support the audio element.

শাড়িতে কি লাভের মুখ দেখবেন? তিনি বলেন, ‘‘সুতোর দাম যা বেড়েছে তাতে লাভ দূরের কথা, মজুরি পাই না৷ আসলটাও ওঠে না৷ একটা শাড়ির দাম আড়াই হাজার টাকা হলেও বিক্রি করতে হয়েছে দু'হাজারে৷ সংসার চালানোর জন্য অনেককে আর্থিক ক্ষতি করে জিনিস বেচতে হয়েছে৷’’ অথচ ১০ বছর আগে যখন কাবুলিওয়ালারা আসতেন, পুরো বাজার চাঙ্গা হয়ে যেত৷ সেসব দিনের কথা বলতে বলতে উজ্জ্বল হয়ে যায় এলাকার তাঁতশিল্পীদের মুখ৷ কাবুল থেকে ক্রেতারা এসে সমস্ত পাগড়ি কিনে নিতেন নগদের বিনিময়ে৷ কিন্তু পাঠানরা না এলে পাগড়ি কিনবে কে! কাবুলিওয়ালারা যদি না আসেন, তাহলে খুব তাড়াতাড়িই পাগড়ি বোনায় ইতি হয়ে যাবে বলে অনেকে মনে করছেন৷ অনেকে পেটের দায়ে অন্যত্র কাজে যোগ দিয়েছেন, তাঁত ছেড়ে দোকানে কাজও নিয়েছেন অনেকে৷ তাঁতশিল্পী বাপন রজক পেশা থেকে সরে এখন মাছ ফেরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ঘুরে ঘুরে মাছ ব্যবসা করছি৷ আমাদের এসব লাইন নয়৷ তবু কিছু করারও নেই৷ সংসার তো চালাতে হবে৷ বাড়িতে চারজন আছে, পেট চালাতে হবে৷’’ এলাকায় তাঁতশিল্পীদের সংগঠনও নেই যে তারা ভরসা জোগাবে৷ বাপন বলেন, ‘‘এখানে সব গরিব মানুষ৷ দিন আনে দিন খায়৷ সংগঠন করবে কী করে?’’

পাগড়ি তৈরি পুরোপুরি বন্ধ৷ শুধু শাড়ি বুনে সংসার চালানো দায়! ভবিষ্যৎ ভেবে শঙ্কিত অনেক তাঁতশিল্পী৷ তবু সকলে পিতৃপুরুষের পেশা ছাড়তে পারেননি৷ তাঁতশিল্পী দেবমাল্য দত্ত বলেন, ‘‘অনেকেই অন্য পেশায় চলে গেছেন৷ তবে আমি এখনও যাইনি৷ ভবিষ্যতে কী হবে জানি না৷ যেটুকু সঞ্চয় ছিল, সবই শেষ হয়ে গিয়েছে৷ ভবিষ্যতে কী উপায় হবে জানি না৷’’

লকডাউনে কাবুলিওয়ালরা কমই আসতেন৷ এখন তালেবান ঝঞ্ঝায় এই এক-দেড় মাস সব চুপচাপ৷ পাগড়ির ১২ হাত কাপড়ের বদলে এখন সাড়ে ১৩ হাত শাড়ি বুনছেন শিল্পীরা৷ তাতে কাপড় নষ্ট হচ্ছে৷ কিন্তু পেট চালানোর জন্য এছাড়া উপায় নেই৷ শিল্পীরা অভিযোগ করেন, মাস দেড়েকে কাঁচামালের দাম ৮০০-১০০০ টাকা বেড়েছে৷ সেই অনুযায়ী কাপড়ের দাম বাড়েনি৷ সুতোর দাম পেলেও বোনার মজুরি নেই৷ সরকারের দেওয়া চাল, গম মিলিয়ে টেনেটুনে সংসার চলছে তাদের৷ শুধু আশায় বেঁচে আছেন৷ তাঁতশিল্পী রাজু পাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জমানো টাকায় সংসার চলছে৷ পরের দিন বিক্রি হবার আশায় উৎপাদনও করে যাচ্ছি৷ পুরসভায় আবেদন করেছি৷ তারা আশ্বাস দিয়েছে, আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে৷’’ তাঁতশিল্পীদের করুণ অবস্থার কথা ডয়চে ভেলের কাছ থেকে জানতে পারেন রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা৷ তিনি বলেন, ‘‘ব্যাপারটি দেখা হবে৷ তাঁতশিল্পীরা আসুন, আমাদের সঙ্গে কথা বলুন, আমরা বিষয়টি দেখবো৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ