আফগানিস্তানে গুলি করে মারা হলো নারী অধিকাররক্ষা কর্মী ফ্রেশতা কোহিস্তানিকে। উত্তর কাপিসা অঞ্চলে এই ঘটনা ঘটেছে।
ছবি: Getty Images/AFP/S. Marai
বিজ্ঞাপন
আফগানিস্তানে এখন সমানে সহিংস ঘটনা ঘটছে। একের পর এক বিস্ফোরণ হচ্ছে। পরিকল্পনা করে হত্যা করা হচ্ছে একের পর এক ব্যক্তিত্বকে। সেই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন নারী অধিকাররক্ষা কর্মী ফ্রেশতা কোহিস্তানি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তারিক এরিয়ান জানিয়েছেন, অজ্ঞাতপরিচয় বন্দুকধারীরা তাঁকে হত্যা করেছে।
প্রভিন্সিয়াল কাউন্সিলের সাবেক সদস্য কোহিস্তানি নারীর অধিকার নিয়ে আন্দোলন করতেন। তিনি সামাজিক মাধ্যমে নারী অধিকার নিয়ে সোচ্চার ছিলেন। এ নিয়ে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। কাবুলে অনেকগুলি সভা করেছেন। এর আগের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি আবদুল্লাহের হয়ে প্রচারও করেছিলেন। কোহিস্তানিকে হত্যার দায় কোনো সংগঠন নেয়নি।
আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, ২৯ বছর বয়সী কোহিস্তানির কোনো ভয়ডর ছিল না। সাহসী এই নারী ছিলেন সামাজিক ও নাগরিক আন্দোলনের অতি পরিচিত মুখ। এভাবে তাঁকে হত্যা করা মেনে নেয়া যায় না।
একদিন আগেই কাবুলে গণতন্ত্রপন্থী এক আইনজীবীকে হত্যা করা হয়েছিল। তারপর মারা হলো কোহিস্তানিকে। এই ধরনের হত্যার মধ্যে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে। একটা ছক আছে। অধিকাংশ ঘটনাই কাবুলে ঘটছে। ইলেকশন মনিটরিং সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ ইউসুফ রশিদকে কাবুলে সম্প্রতি হত্যা করা হয়েছে। সাংবাদিক রহমতউল্লাহ নেকজাদকে সাইলেন্সর লাগানো পিস্তল দিয়ে খুন করা হয়েছে। তিনি তাঁর বাড়ির কাছের মসজিদে যাচ্ছিলেন।
আন্দোলনের নেতৃত্বে নারী
নারীদের প্রতিনিয়ত সম অধিকারের দাবিতে লড়াই চালিয়ে যেতে হয়৷ সরকার বিরোধী নানা আন্দোলনেও পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাস্তায় নামে নারী৷ কখন কখন আন্দোলনের নেতৃত্বেও তাদের দেখা যায়৷
ছবি: picture alliance/abaca
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে রাস্তায় ভারতীয় নারীরা
ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের মূল টার্গেট দেশটির মুসলমান জনগোষ্ঠী৷ এরকম বৈষম্যমূলক একটি আইনের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে জোর আন্দোলন শুরু হয়৷ সব ভয় উপেক্ষা করে নারীরা সামনে থেকে ওই আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন৷
ছবি: DW/M. Javed
‘ফ্যাসিবাদের’ বিরুদ্ধে নারী
পার্লামেন্টে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল উত্থাপন করে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি হুমকির মুখে ফেলে দেওয়ায় ভারতের নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করে৷ ওই আন্দোলনে ছাত্রীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত৷
ছবি: DW/M. Krishnan
হিজাব খুলে প্রতিবাদ
কট্টর শরিয়া আইন অনুসরণ করা দেশ ইরানে নারীদের হিজাব পরা বাধ্যতামূলক৷ কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে অনেক নারী হিজাব খুলে সরকারের ওই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন৷ নানা দমন পীড়নের শিকার হওয়ার পরও দেশটির বড় বড় নগরীতে নারীদের এ প্রতিবাদ চলছে৷
ছবি: picture-alliance/abaca/SalamPix
সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
ইরানে সাধারণ মানুষের বাকস্বাধীনতাই হরণ করা হয়েছে৷ সেখানে নারীদের সমঅধিকার বা বাকস্বাধীনতার দাবি কঠোর ভাবে দমণের শিকার হওয়াটাই স্বাভাবিক৷ তারপরও দেশটির সব আন্দোলনে নারীদের সরব উপস্থিতি দেখা যায়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Roberson
পাকিস্তানের নারীরা বললেন ‘যথেষ্ট হয়েছে’
পাকিস্তানে সাধারণত নারীদের সমঅধিকারের দাবিকে ‘পশ্চিমা আগ্রাসন’ বা ‘এনজিও মাফিয়া’ বলে বিদ্রুপ করা হয়৷ সমাজের বড় একটি অংশ নারীবাদীদের অচ্ছুত ভাবে৷ এত বাধার পরও পাকিস্তানের নারীরা ধীরে ধীরে আওয়াজ তুলতে শুরু করেছেন৷
ছবি: Reuters/M. Raza
বৃহৎ সামাজিক আন্দোলন
সমঅধিকারের আন্দোলন ছাড়াও পাকিস্তানের নারীরা লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা, বাল্যবিবাহ এবং ‘অনার কিলিং’ এর মত সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন৷ গণতন্ত্র রক্ষায় নানা আন্দোলনেও তাদের সক্রিয় উপস্থিতি দেখা যায়৷
ছবি: DW/T. Shahzad
ছোট্ট মিছিলের বড় প্রভাব
পাকিস্তানের প্রতিবেশী আফগানিস্তানেও নারীদের সমঅধিকারের দাবি কখনোই বড় ইস্যু হয়ে উঠতে পারনি৷ গত কয়েক দশক ধরে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে শান্তি ফেরানোই যেখানে মূল লক্ষ্য সেখানে নারীদের অধিকার নিয়ে আলাদাভাবে কথা হয় না৷ তারপরও দেশটির নারীদের মাঝেমধ্যে নিজেদের অধিকারের দাবিতে রাস্তায় নামতে দেখা যায়৷
ছবি: DW/H.Sirat
কী পাচ্ছেন আফগান নারীরা
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে তালেবানের সঙ্গে একটি চুক্তির মাধ্যমে আফগানিস্তানে শান্তি ফেরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে৷ কিন্তু যদি আবারও তালেবান দেশটির ক্ষমতায় চলে আসে তবে আফগান নারীরা এখন যেটুকু অধিকার পাচ্ছেন সেটুকুও কেড়ে নেওয়া আশঙ্কা রয়েছে৷
ছবি: DW/H. Sirat
8 ছবি1 | 8
আফগান সরকার ও তালেবান যখন কাতারের দোহায় শান্তি আলোচনা চালাচ্ছে, তখন এই ধরনের একের পর এক ঘটনা ঘটছে। এই আলোচনা সফল হতে আরো সময় লাগতে পারে।
কোহিস্তানি কয়েকদিন আগেই ফেসবুকে জানিয়েছিলেন, তাঁকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। তিনি নিরাপত্তা রক্ষী চেয়েছেন। গত নভেম্বরে সামাজিক মাধ্যমে তিনি লিখেছিলেন, ''আফগানিস্তানে আর শান্তিতে বসবাস করার মতো জায়গা নেই। দর্জিকে বলে রাখুন, শেষকৃত্যের পোশাকের মাপ নিয়ে রাখতে। কাল আপনার পালা আসতে পারে।''