আফগানিস্তানের সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিনে একাধিক হামলায় অন্তত ১৭০ জন হতাহত হয়েছেন৷ হামলার পাশাপাশি দুর্বল ব্যবস্থাপনা আর কারিগরি সমস্যার কারণেও ভোট গ্রহণ বাধাগ্রস্ত হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
শনিবার রাজধানী কাবুলের কাছের এক ভোটকেন্দ্রে আত্মঘাতী হামলায় অন্তত পনের ব্যক্তি নিহত হয়েছেন৷ এছাড়া দেশটির আরো কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে বোমা ও রকেট হামলার পাশাপাশি সহিংসতায় বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছেন৷ সব মিলিয়ে দেশটির একুশ হাজারের মতো ভোটকেন্দ্রে শনিবার ভোটগ্রহণ করা হয়েছে৷ আর ভোটের দিনে হতাহতের মোট সংখ্যা ১৭০ জনের বেশি৷
তবে, হামলার পাশাপাশি কারিগরি সমস্যার কারণেও কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দিতে হয়েছে৷ কিছুক্ষেত্রে ভোটগ্রহণের সময়সীমা রবিবার পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে৷
আফগানিস্তানে ‘যুদ্ধের চেয়ে খরায় বেশি’ বাস্তুচ্যুত
আফগানিস্তানে কয়েক মাস ধরে চলা খরায় মানবিক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে৷ জাতিসংঘের তথ্য মতে, দেশটিতে এ বছর সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তালেবানের যুদ্ধের কারণে যত মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ ঘর ছেড়েছেন খরার কারণে৷
ছবি: Getty Images/AFP/H. Hashimi
খাবার সংকটে ৩০ লাখ
আফগানিস্তানে খরার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৩০ লাখ মানুষ চরম খাবার সংকটে রয়েছে জানিয়ে জাতিসংঘ বলছে, এই মানুষগুলো সহায়তা না পেলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে৷
ছবি: Imago/Xinhua/S. Mominzadah
আক্রান্ত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল
তীব্র খরায় আফগানিস্তানের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের আড়াই লাখের বেশি মানুষ নিজেদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন৷ হেরাতসহ বিভিন্ন শহরের উপকণ্ঠে তাঁবু গেড়ে ঠাঁই নিয়েছেন তাঁরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/H. Hashimi
বৃষ্টি নেই বছরের বেশি
হেরাতের একটি আশ্রয় শিবিরে চার সন্তান নিয়ে আসা উত্তরের ফারইয়াব প্রদেশের এক নারী বলেন, এক বছরের বেশি সময় ধরে তাঁদের এলাকায় বৃষ্টি হয় না৷ সবকিছু শুকিয়ে গেছে৷ ‘‘ছেলে-মেয়েদের খাওয়ানোর মতো পানিও আমাদের নেই৷ এর উপর আবার আর্মির সঙ্গে তালেবানের লড়াই চলছে৷ ভয়াবহ অবস্থা৷’’
ছবি: AFP/Getty Images/F. Usyan
৮০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র খরা
বাদগিস প্রদেশের ঘোরমাচ জেলা থেকে পরিবার নিয়ে আশ্রয় শিবিরে আসা ৮০ বছরের মুরাদ খান ইশাকজাই এএফপিকে জানান, জীবনে দ্বিতীয়বার ঘর ছেড়েছেন তিনি৷ ১৫ বছর আগে একবার খরার কারণে স্বল্প সময়ের জন্য বাড়ি ছেড়েছিলেন তিনি৷ তবে এবারই ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি৷ খেত, ফসল সব নষ্ট হয়ে গেছে৷ ‘‘এটা আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে খারাপ অবস্থা,’’ বলেন তিনি৷ এই পরিস্থিতিতে অন্য জায়গা থেকে কনটেইনারে পানি নিয়ে চলছে জীবন৷
ছবি: Imago/Xinhua/S. Mominzadah
যুদ্ধকেও ‘হার মানিয়েছে’
হেরাতের শিবিরে ছয় সন্তান নিয়ে আশ্রয় নেওয়া নব খান জামানজাই বলেন, ‘‘কয়েক বছর ধরে চলা যুদ্ধকে আমরা এত বড় করে দেখিনি৷ আমরা ভালোই ছিলাম, চাষাবাদ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম৷ কিন্তু খরার কারণে আমাদের ছেলে-মেয়েরা না খেয়ে আছে৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/F. Usyan
খাবার জুটছে একবেলা
আফগানিস্তানে জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণ সহায়তা সমন্বয়ক টোবি লানজের বলেন, বাস্তুচ্যুত এসব মানুষ দিনে মাত্র একবেলা খেয়ে কোনো রকমে বেঁচে আছেন৷ পরিস্থিতি তাঁদের ধারণার চেয়ে অনেক খারাপ৷ সামনের শীত মৌসুমে অবস্থা আরো খারাপের দিকে যেতে পারে৷
ছবি: Getty Images/AFP/H. Hashimi
শুধু রুটি আর চা
শিবিরে আশ্রয় নেওয়া অনেকে এএফপিকে বলেছেন, সঙ্গে যতটুকু আনা সম্ভব তাই নিয়ে রওনা দিলেও পথে তা-ও খোয়া গেছে৷ এখন টাকা-পয়সা হাতে নেই৷ মাসের পর মাস রুটি আর চা খেয়ে টিকে থাকতে হচ্ছে তাঁদের৷
ছবি: Getty Images/AFP/H. Hashimi
বিপদে লক্ষাধিক শিশু
জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণ সহায়তা সমন্বয় দপ্তর-ওসিএইচএ’র ভাষ্যমতে, শিবিরগুলোতে আশ্রয় নেওয়া প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার শিশুর জরুরি খাদ্য সহায়তা দরকার৷ এদের অধিকাংশই দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের এবং তাঁদের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সি ৩৩ হাজার ২০০ শিশুর ‘জীবনরক্ষাকারী’ চিকিৎসা দরকার৷
ছবি: Getty Images/AFP/H. Hashimi
8 ছবি1 | 8
শনিবার যা ঘটেছে:
- কাবুলের কয়েকটি স্থানে ভোটকেন্দ্রের আশেপাশে হামলার ঘটনায় অন্তত ১৮ ব্যক্তি নিহত এবং ৬৭ জন আহত হয়েছেন৷
- দেশটির পূবাঞ্চলের রাজ্য নানগারহারে এক বিস্ফোরণে দুই ব্যক্তি নিহত এবং তিনজন আহত হয়েছেন৷ এবং উত্তরাঞ্চলের রাজ্য তাখারে রকেট হামলায় এক ব্যক্তি নিহত ও আট ব্যক্তি আহত হয়েছেন৷ তালেবান এই হামলা চালিয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে৷
- বায়োমেট্রিক সিস্টেম ঠিকভাবে কাজ না করা এবং সময়মতো ভোটার তালিকা না পৌঁছানোয় বেশ কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ সম্ভব হয়নি৷
- কিছু ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণ দেরিতে শুরু হওয়ায় সারা দেশে ভোট দানের সময় স্থানীয় সময় রাত আটটা পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়৷ পাশাপাশি যেসব ভোট কেন্দ্রে ভোটের উপকরণ পৌঁছাতে দেরি হয়েছে, সেগুলোতে রবিবারও ভোট গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷
- গজনি এবং কান্দাহারে গত বৃহস্পতিবারের ভয়াবহ হামলার কারণে সেখানে ভোট গ্রহণ এক সপ্তাহ পিছিয়ে দেয়া হয়েছে৷
শনিবার ভোট গ্রহণের সময় বিভিন্ন স্থানে বিশৃঙ্খলার অভিযোগ এনেছেন নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা৷ কাবুলে একজন পর্যবেক্ষক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সবকিছু বিশৃঙ্খলায় পূর্ণ... কোনো কিছুই কাজ করছে না৷ তারা যে সিস্টেম স্থাপন করেছে, তা ঠিকভাবে সচল হয়নি৷''
উল্লেখ্য, নির্বাচনে অংশ নেয়া বেশ কয়েকজন প্রার্থী অনিয়মের অভিযোগও এনেছেন৷ সেসব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশন৷