আফগানিস্তানে গত ১৪ বছরে মার্কিন বিমান হানায় প্রতিদিন গড়ে পাঁচটি শিশু হয় মারা গেছে বা আহত হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
মার্কিন বিমান হামলায় আফগানিস্তানে প্রতিদিন গড়ে অন্তত পাঁচটি শিশুর মৃত্যু হয় বা তারা গুরুতর আহত হয়। সম্প্রতি ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৭ সাল থেকে আফগানিস্তানে মার্কিন বিমান হানায় সাধারণ মানুষের মৃত্যুর ঘটনা অন্তত ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত অগাস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে আফগানিস্তানের তালেবান অধ্যষিত একটি অঞ্চলে বড়সড় বিমান হামলা ঘটিয়েছিল অ্যামেরিকা এবং আফগান বিমান বাহিনী। আক্রমণের পরে তালেবান দাবি করেছিল, পঞ্চাশেরও বেশি সাধারণ মানুষ এবং শিশু ওই হামলায় আহত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে অনেকের। কিন্তু অ্যামেরিকা কিংবা আফগান বাহিনী তা স্বীকার করেনি।
ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন আফগান যুবারা
প্রায় দুই দশক তালেবানের সঙ্গে যুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক শক্তির উপস্থিতিতে বেড়ে উঠেছে এখনকার আফগান তরুণ প্রজন্ম৷ সরকার-তালেবান সংলাপ ও মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পরিকল্পনায় নানা উদ্বেগ দানা বাঁধছে তাঁদের মনে৷ শান্তি ফিরবে তো?
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
সুলতান কাসিম সায়েদি, মডেল
কাবুলের এই ১৮ বছর বয়সি মডেল স্পোর্টস হেয়ারস্টাইল করতে পছন্দ করেন৷ তাঁর পছন্দের মডেল সৌদি আরবের ওমর বোরকান এবং ক্যানাডিয়ান পপস্টার জাস্টিন বিবার৷ তাঁর ভয়, ‘‘তালেবান ক্ষমতায় আসলে, আমরা হয়তো আর শো করতে পারবো না৷’’ কিন্তু তারপরও যুদ্ধের বদলে শান্তি চান সুলতান৷
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
হুসাইন, হেয়ারড্রেসার
লক্ষ লক্ষ আফগানের মতো, যুদ্ধের ভয়াবহতা এড়াতে ছোট্ট হুসাইনকে নিয়ে তাঁর পরিবারও পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল পার্শ্ববর্তী দেশ ইরানে৷ তবে এখন আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে হেয়ারড্রেসারের কাজ করেন ১৯ বছরের হুসাইন৷ তালেবানের সাঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু হওয়ায় তিনি খুশি৷ তিনি বলছেন, ‘‘আমাদের দেশে যুদ্ধ ও সংঘাত শেষ হওয়া দরকার৷ আমি চাই তালেবান আগের মতো আচরণ না করে তাদের নীতিতে পরিবর্তন আনুক৷’’
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
মাহদি জাহাক, আর্টিস্ট
গত ১৭ বছর থেকে তালেবানেরও শিক্ষা নেয়া উচিত বলে মনে করেন ২৫ বছর বয়সি আর্টিস্ট সাহদি জাহাক৷ তিনি বলছেন, ‘‘শান্তি ফিরে আসার একটা আশা রয়েছে৷ কিন্তু গত ১৭ বছরে দেশ যে সাফল্য অর্জন করেছে, তা তাদের স্বীকার করতে হবে এবং সবাইকে তাঁদের জীবন উপভোগ করার সুযোগ দিতে হবে৷’’
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
কাওসার শেরজাদ, অ্যাথলিট
মুয়ায় থাই অ্যাথলিট কাওসার শেরজাদ৷ তাঁর বয়স ১৭ বছর৷ নারীদের ব্যাপারে তালেবানের অতীত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বেশ চিন্তিত তিনি৷ কাওসার বলছেন, ‘‘আফগান নারীরা খেলাধুলায় ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন৷ আমি আশাবাদী, এই সাফল্যগুলো মেনে নিবে তালেবান৷’’
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
সোহাইল আতাই, ব্যবসায়ী
মাত্র ২২ বছর বয়সেই একটি বিলাসবহুল কাপড়ের দোকানের মালিক সোহাইল৷ বুঝতে শেখার পর থেকেই দেশজুড়ে সহিংসতা, যুদ্ধ, বোমা দেখে বড় হয়েছেন৷ এখন যে-কোনো প্রকারেই হোক, এই যুদ্ধের সমাপ্তি চান তিনি৷ সোহাইল বলছেন, ‘‘আমরা যুদ্ধে ক্লান্ত হয়ে গেছি৷ এখন ভালো একটা জীবনযাপনের জন্য আমরা শান্তি চাই৷’’
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
মারাম আতায়ী, পিয়ানোবাদক
কাবুলের এক মিউজিক স্কুলে পিয়ানো বাজানো শিখছেন ১৬ বছরের মারাম৷ তাঁর জন্য সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো তালেবান আবার ক্ষমতায় এলে তাঁকে আর পিয়ানো বাজাতে দেবে কিনা৷ মারাম বলেন, ‘‘সবচেয়ে ভালো হয় সরকার ও তালেবানের মধ্যে সমঝোতা হলে৷ গানবাজনার অধিকার ও নারী অধিকার অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে৷’’
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
ওমিদ আরমান, মডেল
কাবুলের এক কাপড়ের দোকানে ছবির জন্য পোজ দিয়েছেন ২১ বছর বয়সি মডেল ওমিদ৷ যুদ্ধ-সংঘাত ‘যথেষ্ট হয়েছে’ বলে মনে করেন তিনি৷ ওমিদ বলেন, ‘‘এই দেশের সবাই শান্তি চায়৷ আমরা অনেক সংঘাতের সাক্ষী হয়েছি৷ যথেষ্ট হয়েছে, আর না৷ আমরা আর কোনো বিপর্যয় দেখতে চাই না৷’’
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
নাদিম কোরায়শী, ব্যবসায়ী
কাবুলে একটি গেম শপের মালিক ১৯ বছরের নাদিম৷ এত বছরের সংঘাত শেষে শান্তির সুবাতাস ভালো ফল বয়ে আনবে বলে প্রত্যাশা তাঁর৷ নাদিম বলছেন, ‘‘সরকার ও তালেবানের মধ্যে একটি দীর্ঘস্থায়ী সমঝোতা দেখতে চাই আমরা৷’’
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
জারঘোনা হাইদারি, চাকরিজীবী
একটি বইয়ের দোকানে কাজ করেন জারঘোনা৷ তাঁর বয়স ২২ বছর৷ শান্তি প্রক্রিয়ায় তেমন একটা আশার কিছু দেখছেন না জারঘোনা৷ তিনি বলছেন, ‘‘এই দেশে শিগগিরই শান্তি আসার কোনো সম্ভাবনা আমি দেখতে পাচ্ছি না৷ আমার ধারণা, তালেবান শেষ পর্যন্ত সরকারের সঙ্গে কোনো সমঝোতায় আসবে না৷’’
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
9 ছবি1 | 9
ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক রিপোর্টে বলা হচ্ছে, একটি নয়, প্রতিটি মার্কিন বিমান হানায় বিপুল পরিমাণ সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাঁদের মৃত্যু হয়েছে অথবা গুরুতর আহত হয়েছেন। শুধু মাত্র ২০১৯ সালে বিমান হামলায় ৭০০ জন সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ২০০১ সালে ৯/১১-র পর অ্যামেরিকা যখন আফগানিস্তানে অভিযান চালিয়েছিল, তখন বহু সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এরপর মার্কিন সেনা আফগানিস্তানে অবস্থান করতে শুরু করে। সাধারণ মানুষের মৃত্যুর ঘটনাও ক্রমশ কমতে শুরু করে। যুদ্ধ মূলত তালেবান এবং আল কায়দার সঙ্গে শুরু হয়। ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্ট, ২০০১ সালের পর ২০১৯ সালে বিমান হানায় সব চেয়ে বেশি সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
২০১৭ সাল থেকে আফগানিস্তান থেকে ধীরে ধীরে মার্কিন স্থল সেনা সরানোর কাজ শুরু করে অ্যামেরিকা। অন্য দিকে শান্তি বৈঠকে বসানোর জন্য তালেবানের উপর চাপবৃদ্ধির কৌশল হিসেবে বিমান হানা বাড়ানো হয়। তারই জেরে সাধারণ মানুষের এত বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে রিপোর্টে আসঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। আফগান বাহিনীও বিমান হানার পরিমাণ অনেকটাই বাড়িয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে সেখানে।
রিপোর্টে সেফ দ্য চিলড্রেনের একটি সমীক্ষা উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, প্রতিদিন আফগানিস্তানে ন্যাটো ফোর্সের হামলায় গড়ে পাঁচটি শিশুর মৃত্যু হয় অথবা তারা গুরুতর আহত হয়। রিপোর্টটি পড়ে বিশেষজ্ঞদের একাংশের প্রশ্ন, বাইডেন দায়িত্ব গ্রহণ করার পরে এই পরিস্থিতির কি উন্নতি হবে? সম্প্রতি আফগানিস্তানে সাধারণ মানুষকে হত্যার দায় অস্ট্রেলিয়া যে ভাবে স্বীকার করেছে, অ্যামেরিকা কি তা করবে?