শরবত গুলা, ন্যাশনাল জিওগ্র্যাফিকের প্রচ্ছদের কারণে যিনি বিখ্যাত হয়েছিলে, পাকিস্তান থেকে তাকে আফগানিস্তানে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে৷ হেপাটাইটিস রোগে আক্রান্ত শরবত পাকিস্তানের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন৷
বিজ্ঞাপন
১৯৮৪ সালে পাকিস্তানের এক উদ্বাস্তু শিবিরে ১২ বছরের আফগান কিশোরী শরবত গুলা'র ছবি তুলেছিলেন মার্কিন আলোকচিত্রী স্টিভ ম্যাককারি৷ ছবিটি ন্যাশনাল জিওগ্র্যাফিকের প্রচ্ছদ হয়েছিল৷ আর সেই ছবি ছাপা হওয়ার পর থেকে শরবত গুলা সারা বিশ্বেই পরিচিত৷ কিশোরী শরবতের বিস্ফারিত সবুজ চোখে এমন কিছু একটা ছিল, যা ভোলার নয়৷
ম্যাককারি ১৭ বছর ধরে খোঁজখবর করার পর আবার শরবত গুলার খোঁজ পান ২০০২ সালে, আফগানিস্তানের এক প্রত্যন্ত গ্রামে৷ শরবত গুলা তখন এক রুটি তৈরি কারিগর, অর্থাৎ তন্দুরওয়ালার স্ত্রী ও তিন সন্তানের জননী৷
পরে শরবত গুলা তাঁর স্বামীর সঙ্গে পেশাওয়ারে যান৷ সেখানেই গত অক্টোবরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় পাকিস্তানি আইডি কার্ড জাল করার দায়ে৷ পাকিস্তানের ফেডারেল ইনভেস্টিগেটিভ এজেন্সি ‘ফিয়া' নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বাড়িতে ঢুকে খানাতল্লাসি করে ও দরকারি কাগজপত্র ছাড়া ২,৮০০ ডলার নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছেন গুলার দেবর শাহশাদ খান৷ গুলাকে পেশাওয়ারের কারাগারে রাখা হয়েছিল৷ শাহশাদ খান বলেন, ‘‘গুলা উদ্বাস্তু হতে পারেন না; তিনি বৈধভাবে পাকিস্তানে রয়েছেন, কেননা তিনি শাহশাদ খানের ভাই রহমত খানের বিবাহিত পত্নী৷'' প্রসঙ্গত, রহমতের জন্ম পাকিস্তানে৷ তিনি পাঁচ বছর আগেই পরলোকগমন করেছেন৷
কিন্তু অভিযোগ ওঠেছে শরবত গুলা অবৈধভাবে পাকিস্তানে বসবাস করছেন৷ তার পাসপোর্টসহ অন্যান্য কাগজপত্র অবৈধ বলে তাকে আটক করা হয়েছিল৷ এরপরই তাকে আফগানিস্তানের কাছে হস্তান্তর করা হয়৷
দুনিয়া কাঁপানো ৮টি ছবি
তিন বছরের শিশু আয়লানের ছবি দেখে এখনো অনেকে কেঁদে ফেলেন৷ সিরীয় এই শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু ভীষণ নাড়া দিয়েছে বিশ্ববাসীকে৷ ছবিঘরে থাকছে এমন আটটি ছবির কথা, যে ছবিগুলো অতীতে একইভাবে বিশ্বময় আলোড়ন তুলেছিল৷
ছবি: STAN HONDA/AFP/Getty Images
নিজের কাপড় ছিঁড়ে বেঁচেছিল মেয়েটি
নাপাম বোমার আঘাতে দক্ষিণ ভিয়েতনাম তখন কেঁপে উঠেছে৷ ৯ বছরের ফান থি কিম পুক কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখলো সবাই পাগলের মতো ছুটছে৷ নিজে ছুটতে শুরু করার আগেই দেখে গায়ের জামাকাপড়ে আগুন৷ আগুন নেভানোর চেষ্টা করে কাজ হলো না, বুদ্ধি করে নিজের কাপড় ছিড়ে ফেলে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়াতে শুরু করলো৷ ৯ বছরের মেয়েটির ছবিও বিশ্বজুড়ে তোলপাড় তুলেছিল৷ এ ছবির জন্য ১৯৭৩ সালে পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছিলেন ফটোগ্রাফার নিক উট৷
ছবি: picture-alliance/AP Images
ধুলায় ঢাকা নারী
মার্সি বর্ডার৷ ধুলায় তাঁর শরীর ঢেকে যাওয়ার কারণ বিশ্বের নিষ্ঠুরতম সন্ত্রাসী হামলা৷ ২০০১ সালে ১১ সেপ্টেম্বরের ছবি এটি৷ টুইন টাওয়ার ধ্বংস হয়ে যাওয়ার মুহূর্তে সেখানে ছিলেন মার্সি বর্ডার৷ এই ছবির কারণে ৯/১১-র পর থেকে সবাই ‘ডাস্ট লেডি’ নামেই সবাই তাঁকে চিনতো৷ ওই হামলার পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় পাকস্থলীতে ক্যানসার হয়েছিল৷ ক্যানসারে ভুগে এ বছরের ১৫ আগস্ট ৪২ বছর বয়সে মারা যান তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AFP
নির্ভিক এক মানুষ
১৯৮৯ সালের ৫ই জুন তিয়েনানমেন স্কয়ারের প্রতিবাদ বিক্ষোভকে দমন করতে যখন চীনা সেনাবাহিনী হামলা চালায় তখন ট্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন একজন৷ এভাবে বেশ কয়েকটি ট্যাংককে কিছুক্ষণ থামিয়েও রেখেছিলেন৷ সেই মুহূর্তটিকে ক্যামেরায় ধরে রেখেছিলেন জেফ উইডেনার৷ ছবিটি তোলার পরপরই অকুতোভয় ব্যাক্তিটিকে সেখান থেকে নিয়ে যায় পুলিশ৷ ২৬ বছরেও অসম সাহসী লোকটির পরিচয় জানা যায়নি, জানা যায়নি তিনি কোথায়, কেমন আছেন!
ছবি: Reuters/A. Tsang
প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে প্রাণ দিল জার্মান তরুণ
ইরানের রেজা শাহ পেহলভির রাষ্ট্রীয় সফরের প্রতিবাদে বার্লিনের রাস্তায় বিক্ষোভে নেমেছিল অনেক মানুষ৷ শাহ বার্লিন অপেরায় বসে দিব্যি মোৎসার্টের ‘দ্য ম্যাজিক ফ্লুট’ উপভোগ করছেন৷ বাইরে শুরু হয়ে গেল জনতা-পুলিশ মারামারি৷ উত্তেজনা তৈরির পেছনে শাহ-র গোয়েন্দাদের উসকানির অবদান ছিল বলে অনেকে মনে করেন৷ একটা সময়ে প্রতিবাদী ছাত্র বেনো ওনেসর্গ-কে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ৷
ছবি: AP
জন এফ কেনেডির মৃত্যু
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির আততায়ীর গুলিতে নিহত হবার ছবিটিও চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল৷ কেনেডি তখন গাড়িতে৷ হঠাৎ আততায়ীর গুলি৷ মাথায় লেগেছিল গুলি৷ অ্যাব্রাহাম জ্যাপারডার তুলেছিলেন ছবিটি৷ আর কোনো ক্যামেরায় ধরা পড়েনি মুহূর্তেরও খণ্ডাংশের সেই দৃশ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অলিম্পিকে সন্ত্রাসী হামলা
১৯৭২ সালে জার্মানির মিউনিখে বসেছিল অলিম্পিকের আসর৷ অনেকের কাছে আসরটি বেশি স্মরণীয় হয়ে আছে ইসরায়েলের অলিম্পিক দলের ওপর সন্ত্রাসী হামলার কারণে৷ ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর নামের একটি ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সশস্ত্র কর্মীরা অতর্কিতে হামলা চালিয়ে ইসরায়েলের ১১ জন ক্রীড়াবিদকে জিম্মি করে ফেলে৷ পরে তাদের হত্যা করা হয়৷ ছবিতে এক ভবনের ব্যালকনিতে দেখা যাচ্ছে এক অপহরণকারীকে৷
ছবি: dapd
আফগান মেয়ে
আফগানিস্তান তখন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দখলে৷ পাকিস্তানে আশ্রয় নেয়া এই আফগান কিশোরীর ছবি তখনেই তুলেছিলেন স্টিভ ম্যাককারি৷ ১৯৮৫ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক প্রচ্ছদ ছবির মর্যাদা দেয় ছবিটিকে৷ শরবত গুলা নামের মেয়েটি তা জানেনইনা৷ ২০০২ সালে তাকে খুঁজে পায় সংবাদমাধ্যম৷ শরবত গুলা তখন জানতে পারেন তাঁর ১২ বছর বয়সের কোনো ছবির জগত বিখ্যাত হওয়ার সত্যি কাহিনি৷