বুধবার আফগানিস্তানের বেশ কয়েকটি শহরে বিশ্ববিদ্যালয় আবার খুললো। প্রথম দিন মেয়েরাও ক্লাসে ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
তালেবান জানিয়েছে, মেয়েরাও ক্লাস করতে পারবে, তবে তাদের ছেলেদের থেকে আলাদা বসতে হবে এবং পাঠ্যসূচিতে 'ইসলামিক প্রিন্সিপাল' থাকতে হবে। আফগানিস্তানের আন্তর্জাতিক সাহায্য পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের শিক্ষার বিষয়টি খুবই জরুরি।
গত অগাস্টে তালেবান আফগানিস্তান দখল করার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি বন্ধ ছিল। বুধবার বেশ কিছু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খুললো। কাবুল-সহ বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে খুলবে।
সংবাদসংস্থা এএফপি দেশের পূবদিকে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা জানিয়েছে। সেখানে প্রবেশদ্বারে সশস্ত্র তালেবান বন্দুকধারীরা উপস্থিত ছিল। সেখানে অল্প কিছু মেয়েকেও ঢুকতে দেখা গেছে। তারা বোরখা পরে ছিলেন। তবে প্রথম দিন খুব বেশি ছাত্রছাত্রী আসেননি।
রয়টার্স জানাচ্ছে, জালালাবাদে আলাদা দরজা দিয়ে ছাত্রীদের ঢুকতে দেখা গেছে। এএফপি-কে একজন ২৩ বছর বয়সি অঙ্কের শিক্ষার্থী বলেছেন, ''আমাদের জানানো হয়েছে, শরিয়া আইন অনুযায়ী ক্লাস হবে।''
আফগান নারীদের যেসব অধিকার কেড়ে নিয়েছে তালেবান
দ্বিতীয় দফা ক্ষমতায় এসে যুযোপযোগী শাসনব্যবস্থার কথা বললেও একে একে নারীর অনেক অধিকারই কেড়ে নিয়েছে তালেবান৷ ছবিঘরে দেখুন...
ছবি: Wakil Kohsar/AFP/Getty Images
একা একা দূরে নয়
গত ২৬ ডিসেম্বরের নির্দেশনা অনুযায়ী, আফগানিস্তানের নারীরা ৭২ কিলোমিটারের (৪৫ মাইল) চেয়ে বেশি দূরে একা যেতে পারবেন না৷ যেতে হলে সঙ্গে কোনো পুরুষকে রাখতে হবে৷তালেবান মিনিস্ট্রি ফর প্রোপাগেশন অফ ভার্চু অ্যান্ড দ্য প্রিভেনশনস অফ ভাইস এক নির্দেশনায় কোনো চালক যাতে কখনো একা দূরে যেতে আগ্রহী নারীকে গাড়িতে না তোলেন সেই কথাও বলা হয়েছে৷
ছবি: Sayed Khodaiberdi Sadat/AA/picture alliance
গৃহনির্যাতন মেনে নিতে হবে!
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপি-কে বলেছেন, তালেবান মিনিস্ট্রি ফর প্রোপাগেশন অফ ভার্চু অ্যান্ড দ্য প্রিভেনশনস অফ ভাইস-এর নির্দেশনায় গৃহ নির্যাতনের স্বীকার হলেও নারীদের স্বামীর সংসার ছেড়ে না যাওয়ার কথাও বলা হয়েছে৷
ছবি: Safi/Xinhua/imago
টেলিভিশনে, মুভিতে চেহারা দেখানো যাবে না
টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রে নারীদের চেহারা দেখানোও সীমিত করেছে তালেবান৷ এই নির্দেশের ফলে কোনো নারী আর টিভি শো, নাটক বা চলচ্চিত্রে অংশ নিতে পারেন না৷ বিশেষ ক্ষেত্রে অংশ নিলেও নারীকে অবশ্যই হিজাব পরতে হয়৷এক প্রতিবেদনে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স জানিয়েছে, তালেবান ক্ষমতায় আসার পর অনেক নারীই মিডিয়া ছেড়েছেন৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: Ariana News
নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয় অবলুপ্ত
২০০১ সালে নারীদের জন্য আলাদা একটি মন্ত্রণালয় খুলেছিল তখনকার সরকার৷২০২১ সালে ক্ষমতায় এসে সেই মন্ত্ণালয় বন্ধ করেছে তালেবান৷ ওপরের ছবিতে কাবুলের এক বেকারির সামনে দরিদ্র নারীদের মধ্যে রুটি বিতরণের দৃশ্য৷ রুটি দিচ্ছেন এক সাধারণ নাগরিক৷
ছবি: Petros Giannakouris/AP/picture alliance
শিক্ষার সুযোগ সীমিতকরণ
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ) অক্টোবরের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আফগানিস্তানে প্রাইমারির ওপরে মেয়েদের প্রায় সব স্কুলই বন্ধ করে দিয়েছে তালেবান৷ এর ফলে মেয়েদের উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ কমে গেল৷
ছবি: Bulent Kilic/AFP
নারী-পুরুষ একসঙ্গে নয়
গত আগস্টে আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কান্দাহারের দখল নিয়েই সেখানকার বিভিন্ন ব্যাংকে গিয়ে নারীদের বের করে দেয় তালেবান৷পরে অন্যান্য শহরেও নারীদের কর্মস্থল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে তারা৷ ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে তালেবানের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, তারা মনে করেন, আফগান নারীদের পুরুষদের সঙ্গে বসে কাজ করা উচিত নয়৷
ছবি: TASS/dpa/picture alliance
বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষাক-বিধি
২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তালেবানের শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা করেন, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী ও পুরুষকে আলাদা বসতে হবে এবং সবাইকে ‘ইসলামি পোশাক’ পরতে হবে৷
ছবি: Javed Tanveer/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
নারী অধিকার
তালেবান আফগানিস্তান দখল করার পর থেকেই নারীদের শিক্ষা ও নারী অধিকারের বিষয়টি সামনে এসেছে। তালেবান বেশ কিছু কড়াকড়ি চালু করেছে। মেয়েরা টিভি শো বা সিনেমা করতে পারবে না। নারী সম্পর্কিত মন্ত্রকও আর নেই।
অক্টোবরে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছিল, তালেবান মেয়েদের উচ্চশিক্ষার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। অধিকাংশ সেকেন্ডারি স্কুল মেয়েদের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এর আগে তালেবান ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আফগানিস্তান শাসন করেছে। তারা তখন মেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল।
নারী পুতুলের মাথা কাটার নির্দেশ তালেবানের
পোশাকের দোকানে ‘মডেল পতুল’ নারী হলে, সেগুলোরও মাথা থাকা চলবে না৷ আফগানিস্তানের হেরাত প্রদেশে দোকান মালিকদের এমন নির্দেশ দিয়েছে তালেবান৷ তাদের দাবি, মানুষের আকৃতি নকল করে তৈরি এসব পুতুল ‘অনৈসলামিক’৷
ছবি: Haroon Sabawoon/AA/picture alliance
নারীর পুতুলের মাথা কাটো
আফগানিস্তানে সমস্ত দোকানদারকে নারী পুতুলের মাথা তাটার নির্দেশ দিয়েছে তালেবান। তালেবানের যুক্তি- এসব পুতুল ইসলামী আইনের পরিপন্থি। হেরাতের এক দোকানদারের পুতুলের ‘শিরশ্ছেদ’ করার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে৷ এ নিয়ে একদিকে যেমন ব্যাপক সমালোচনা চলছে, দেশের ভেতরে ও বাইরে অনেকে নানারকম হাসি-তামাশাও করছেন৷
ছবি: Sayed Aqa Saeedi/dpa/picture alliance
নারীর ওপর নিষেধাজ্ঞা
আগস্টে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তালেবান নানা ক্ষেত্রেই ‘ইসলামি আইনের’ প্রয়োগ করছে। মানুষের স্বাধীনতা হরণ, বিশেষ করে নারীদের ওপর অনেক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যদিও কট্টরপন্থি ইসলামিক গোষ্ঠীটি এখনও ভাস্কর্য বা পুতুলের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক জাতীয় নীতি বা নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেনি, তবে দেশের অনেক অঞ্চলে এসবকে ‘অনৈতিক’ আখ্যা দিয়ে স্থানীয়ভাবে নির্দেশ জারি করা হচ্ছে৷
ছবি: Jalil Rezayee/dpa/picture alliance
স্কার্ফ দিয়ে ঢাকলেও চলবে না
হেরাত প্রদেশের নৈতিকতা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রধান আজিজ রহমান বুধবার এই আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এই আদেশ আসার পর কিছু দোকানদার স্কার্ফ বা ব্যাগ দিয়ে পুতুলের মাথা ঢেকে রেখেছিলেন। কিন্তু তাদের হুঁশিয়ার করে রহমান বলেন, "যদি তারা শুধুমাত্র তাদের মাথা ঢেকে রাখে বা পুতুল লুকিয়ে রাখে, তাহলে আল্লাহ তাদের দোকান বা ঘরে প্রবেশ করবেন না এবং তাদের বরকত দেবেন না।"
ছবি: Haroon Sabawoon/AA/picture alliance
ক্ষুব্ধ কাপড় বিক্রেতারা
ছয় লাখ জনসংখ্যার এই শহরের অনেক দোকানদারই এই আদেশে ক্ষুব্ধ। বশির আহমেদ নামে একজন পোশাক বিক্রেতা বলেন, "আপনি দেখতে পাচ্ছেন, আমরা মাথা কেটে ফেলেছি৷" তিনি জানান, একেকটি ডামির দাম প্রায় সাড়ে তিন হাজার আফগানি। বশির বলেন, "যখন পুতুলই নেই, তখন আমরা কীভাবে আমাদের পণ্য বিক্রি করবো? যখন পুতুলটিকে কাপড় দিয়ে সাজানো হয়, তখনই কেবল গ্রাহক এটি পছন্দ করার মতো কিনা বুঝতে পারেন।"
ছবি: Jalil Rezayee/dpa/picture alliance
ফিরে আসছে কঠোর আইন
২০২১ সালের ১৫ই আগস্ট আবার ক্ষমতায় আসার পর আগের (১৯৯৬-২০০১) মতো কঠোর আইন প্রয়োগ না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তালেবান৷ আগের শাসনামলেও মানুষের মতো দেখতে যে-কোনো অবয়ব নিষিদ্ধ করেছিল তালেবান৷ অনেকেই ধারণা করছেন, ধীরে ধীরে আবারও সেদিকেই যাচ্ছে গোষ্ঠীটি৷ স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, নতুন বিধিনিষেধে দিনে পাঁচবার নামাজ পড়া, পুরুষদের দাড়ি বড় করা এবং পশ্চিমা পোশাক না পরার ব্যাপারেও উৎসাহিত করতে বলা হয়েছে।
ছবি: Mohd Rasfan/AFP/Getty Images
অধিকাংশ বালিকা বিদ্যালয় বন্ধ
নতুন নানা বিধিনিষেধে এরই মধ্য়ে নারীরা বিপত্তিতে পড়েছেন। অধিকাংশ বালিকা বিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ সরকারি চাকরিতে নারীদের যোগদানে বাধা দেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে একটি নতুন আদেশে দীর্ঘ যাত্রায় নারীদের একা যেতে নিষেধ করা হয়েছে। যাত্রাপথ দীর্ঘ হলে তাদের কোনো না কোনো পুরুষ আত্মীয়ের সঙ্গে যেতে হবে।
ছবি: Allauddin Khan/AP/picture alliance
মদ ও গানের বিরুদ্ধে অভিযান
মদ বিক্রি বন্ধে অভিযান জোরদার করেছে তালেবান। নিষিদ্ধ করা হয়েছে গানও। আফগানিস্তানে এরই মধ্যে ধুঁকতে থাকা অর্থনীতি আরো চাপের মুখে পড়েছে৷ কয়েক বিলিয়ন ডলারের অর্থ সাহায্য বন্ধ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ আফগানিস্তানকে দেওয়া বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক সাহায্যও বন্ধ হয়ে গেছে।
ছবি: Ali Khara/REUTERS
7 ছবি1 | 7
তালেবান এখন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চাইছে। কিন্তু অধিকাংশ সরকারই জানিয়ে দিয়েছে, মেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা না করলে তালেবানকে স্বীকৃতি দেয়ার প্রশ্ন নেই। সম্প্রতি নরওয়েতে পশ্চিমা দেশগুলির কূটনীতিকদের সঙ্গে বসেছিলেন তালেবান প্রতিনিধিরা। সেখানে তারা বলেছেন, আফগানিস্তানে এখন নারীদের অধিকারের বিষয়টি খেয়াল রাখা হচ্ছে।