আফগানিস্তানে মার্কিন দূত জালমে খালিলজাদ ইস্তফা দিচ্ছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সময় থেকে তিনি এই দায়িত্বে ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
এই সপ্তাহেই দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন খালিলজাদ। তিন বছর ধরে তিনি এই দায়িত্বে ছিলেন। ট্রাম্পের পর বাইডেন প্রশাসনেও তিনি এই দায়িত্ব পালন করে এসেছেন। টমাস ওয়েস্ট এবার এই দায়িত্ব পালন করবেন। খালিলজাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ট্রাম্পের আমলে তালেবানের উপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করতে পারেননি। তবে ব্লিংকেন তার কাজের জন্য খালিলজাদকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, খলিলজাদ কয়েক দশক ধরে অ্যামেরিকার মানুষের সেবা করেছেন।
কিছুদিন আগে দোহায় তালেবানের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন মার্কিন কূটনীতিকরা। সেখানে খালিলজাদকে রাখা হয়নি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তিনিই ছিলেন আফগানিস্তানের বিষয়ে অ্যামেরিকার প্রধান কূটনীতিক।
সেনা প্রত্যাহারে বিশৃঙ্খলা নিয়ে তদন্ত
সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফ থেকে কংগ্রেসকে জানানো হয়েছে, আফগানিস্তান থেকে বিশৃঙ্খলভাবে সেনা প্রত্যাহার করা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। বিশেষ অভিবাসন ভিসা দেয়া নিয়েও তদন্ত হবে। যে আফগানরা গত ২০ বছর ধরে অ্যামেরিকাকে সাহায্য করেছিলেন, তাদের এই ভিসা দেয়া হয়েছে। তাদের জরুরি ভিত্তিতে অ্যামেরিকায় এনে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
'আফগানিস্তানে পরাজিত অ্যামেরিকা'
পরাজয় স্বীকার করছেন আফগানিস্তানে লড়াই করা মার্কিন সেনা অফিসাররাই। তুলনা টানছেন ভিয়েতনামের।
ছবি: Goran Tomasevic/REUTERS
বিশ বছরের যুদ্ধ
৯/১১ হামলার পরে আফগানিস্তানে প্রথম সেনা পাঠান তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ। জানিয়েছিলেন, এ হলো সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই।
ছবি: picture-alliance/dpa
লাদেন কোথায়
আল কায়দা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে বার করতেই বহু বছর সময় লেগে গেছে মার্কিন সেনার। শেষপর্যন্ত পাকিস্তানে তাকে হত্যা করা হয়। আফগানিস্তানে বহু তালেবান নেতার মৃত্যু হয়েছে মার্কিন সেনার হাতে।
ছবি: picture-alliance/dpa/Ausaf
মৃত্যুমিছিল সর্বত্র
গত প্রায় বিশ বছরে শুধু আফগানিস্তানে প্রায় সাড়ে তিন হাজার ন্যাটো বাহিনীর মৃত্যু হয়েছে। যার অধিকাংশই মার্কিন। ৪৭ হাজার আফগান নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। ৬৬ হাজার আফগান সেনা মারা গেছেন। লাখ লাখ আফগান দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।
ছবি: Getty Images/AFP//N. Noorullha
বর্তমান পরিস্থিতি
কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে আফগানিস্তানের বিস্তীর্ণ এলাকা। যুদ্ধের চিহ্ন সর্বত্র। আর্থ-সামাজিক দিক থেকেও দেশটির অবস্থা ভয়াবহ।
ছবি: picture-alliance/dpa
বাইডেনের বক্তব্য
এতদিন যুদ্ধের পর বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, আর যুদ্ধ নয়, অগাস্টের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সমস্ত সেনা ফেরত আনা হবে। আফগানিস্তানের দায়িত্ব অ্যামেরিকা আর নিতে পারবে না।
ছবি: picture-alliance/dpa
কঠিন বাস্তব
মার্কিন সেনা ফিরতে শুরু করার পরেই ফের আফগানিস্তানের দখল নিতে শুরু করেছে তালেবান। আফগানিস্তান কার্যত গৃহযুদ্ধের মুখোমুখি।
ছবি: Ashaq Akramy/DW
অ্যামেরিকার হার
আফগানিস্তানে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করা মার্কিন সেনাদের একাংশ বলছেন, এটা আসলে অ্যামেরিকার হার। বিশ বছরেও যুদ্ধ জয় করতে পারেনি অ্যামেরিকা।
ছবি: Ashaq Akramy/DW
ভিয়েতনামের সঙ্গে তুলনা
কেউ কেউ এই হারকে ভিয়েতনামের সঙ্গে তুলনা করছেন। তাদের দাবি, ভিয়েতনাম থেকেও শেষ পর্যন্ত মার্কিন সেনাকে ফিরে আসতে হয়েছিল। আফগানিস্তানেও তাই হলো।
ছবি: Ashaq Akramy/DW
লক্ষ্য ছিল না
তাদের দাবি, ভিয়েতনামের মতোই আফগানিস্তানে অ্যামেরিকার কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল না। কিছু নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু সার্বিক পরিবর্তন ঘটানো যায়নি।
ছবি: John Moore/Getty Images
9 ছবি1 | 9
আফগানিস্তানে তালেবান দ্রুত ক্ষমতা দখল করেছে এবং তড়িঘড়ি করে অ্যামেরিকাকে নিজেদের সেনা ও নাগরিকদের দেশে ফেরাতে হয়েছে। এই প্রক্রিয়া মসৃনভাবে হয়নি, বরং তা ছিল খুবই বিশৃঙ্খল। তারপর রিপাবলিকানরা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কঠোর সমালোচনা করেছেন।
যোগ দেবে না অ্যমেরিকা
রাশিয়ায় আফগানিস্তান নিয়ে আন্তর্জাতিক আলোচনায় যোগ দেবে না অ্যামেরিকা। বুধবার তালেবান, চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে রাশিয়া আলোচনা করবে। মস্কোয় এই আলোচনা হবে। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস জানিয়েছেন, অ্যামেরিকা ওই আলোচনায় থাকবে না। পুটিনের বিশেষ দূত জামির কাবুলভ জানিয়েছেন, আফগানিস্তান নিয়ে একটি সাধারণ অবস্থান নেয়াই হলো এই আলোচনার লক্ষ্য।
২০ বছরের দীর্ঘতম যুদ্ধ শেষ
৯/১১-র ঠিক পরেই আফগানিস্তানে সৈন্য পাঠিয়েছিল অ্যামেরিকা। ২০ বছর পর কাবুল ছাড়ল মার্কিন সেনা। শেষ হলো ২০ বছরের যুদ্ধ।
ছবি: AFP/W. Kohsar
ঘটনাবহুল ২০ বছর
গত ২০ বছরে নানা ঘটনা ঘটেছে আফগানিস্তান এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে। তালেবান, আইএস-এর সঙ্গে লাগাতার যুদ্ধ চলেছে মার্কিন এবং ন্যাটো বাহিনীর। আফগান সেনাও সেই বাহিনীতে যোগ দিয়েছে। শেষপর্যন্ত আফগান বাহিনীর হাত থেকে ক্ষমতা দখল করে তালেবান ফৌজ।
ছবি: Getty Images/A. Renneisen
৯/১১ এবং যুদ্ধ
২০০১ সালে অ্যামেরিকার টুইন টাওয়ারে বিধ্বংসী আক্রমণ চালায় আল কায়দা। গোটা বিশ্ব হতবাক হয়ে যায় বিমান দিয়ে টুইন টাওয়ার গুঁড়িয়ে দেওয়ার সেই দৃশ্য দেখে।
ছবি: Imago/ZUMA Press
জর্জ বুশের যুদ্ধ ঘোষণা
ওই ঘটনার পরেই যুদ্ধ ঘোষণা করেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ জুনিয়র। তিনি বলেন, বিশ্ব হয় তাদের দিকে, অথবা সন্ত্রাসবাদের দিকে। ৮ অক্টোবর আফগানিস্তানে প্রথম হামলা চালায় মার্কিন সেনা।
ছবি: Jim Watson/AFP /Getty Images
প্রথম তালেবান শাসন
আফগানিস্তানে তখন তালেবানের শাসন। ১৯৯৬ সালে তালেবান আফগানিস্তানে প্রথমবার ক্ষমতা দখল করে। মার্কিন প্রশাসন অভিযোগ করে, তালেবান সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিচ্ছে। ওসামা বিন লাদেন আফগানিস্তানে আছে, এবং তালেবান তাকে আশ্রয় দিচ্ছে বলে জানায় বুশ প্রশাসন।
ছবি: picture-alliance/dpa/Ausaf Newspaper
আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা
৯/১১-র পরেই আফগানিস্তানে ঢুকে পড়ে মার্কিন সেনা। তালেবান এবং আই এস-এর সঙ্গে মার্কিন এবং ন্যাটো বাহিনীর তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়।
ছবি: AFP/Getty Images
তালেবানের পতন এবং নতুন সরকার
অ্যামেরিকার নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর আক্রমণের সামনে আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের পতন হয়। অ্যামেরিকার তত্ত্বাবধানে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় আফগানিস্তানে।
ছবি: Reuters/M. Ismail
হামিদ কারজাই প্রধানমন্ত্রী
২০০৪ সালে নির্বাচনের আয়োজন হয়। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন হামিদ কারজাই। পরবর্তী নির্বাচনেও তিনিই নির্বাচিত হন। তৈরি হয় নতুন আফগান সেনাবাহিনী। অ্যামেরিকা সহ পশ্চিমা শক্তির সাহায্যে আফগানিস্তান শাসন করতে শুরু করেন নতুন প্রধানমন্ত্রী। যদিও কোনো কোনো মহলের অভিযোগ, কারজাই কার্যত অ্যামেরিকার পুতুল হিসেবেই কাজ করেছেন।
ছবি: AP
ওসামা বিন লাদেনের হত্যা
২০১১ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন বাহিনী হত্যা করে ওসামা বিন লাদেনকে। ২ মে অভিযান চালিয়ে লাদেনকে হত্যা করা হয়।
ছবি: Getty Images/AFP
আশরাফ গনি প্রধানমন্ত্রী
২০১৪ সালে আফগানিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন আশরাফ গনি। সমস্ত জনগোষ্ঠীর মানুষকে প্রশাসনে রেখে নতুন আফগানিস্তান তৈরির অঙ্গীকার করেন গনি।
ছবি: Sajjad Hussain/AFP/Getty Images
ডনাল্ড ট্রাম্প এবং ঐতিহাসিক চুক্তি
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দোহায় তালেবানের সঙ্গে চুক্তি করে ট্রাম্প প্রশাসন। স্থির হয়, এক বছরের মধ্যে মার্কিন সেনা সরিয়ে নেওয়া হবে আফগানিস্তানের মাটি থেকে।
ছবি: U.S. Department of State/AA/picture alliance
ন্যাটোর আপত্তি
দ্রুত সেনা সরানোয় আপত্তি জানিয়েছিল ন্যাটো এবং ইউরোপের একাধিক দেশ। কিন্তু সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সেই আপত্তি শুনতে চায়নি। বাইডেন ৩১ অগাস্ট ডেডলাইন স্থির করেন।
ছবি: Daniel Kubirski/dpa/picture alliance
আট দিনে দখল
অগাস্টের গোড়ায় মাত্র আটদিনের মধ্যে কার্যত পুরো আফগানিস্তানের দখল নিয়ে নেয় তালেবান যোদ্ধারা। মার্কিন সেনার হাতে থাকে কেবলমাত্র কাবুল বিমানবন্দর।
ছবি: Zabi Karim/AP/picture alliance
উদ্ধারকাজ এবং লড়াই
গত দুই সপ্তাহে আফগানিস্তান থেকে ১ লাখ ৭২ হাজার মানুষকে উদ্ধার করেছে অ্যামেরিকা সহ একাধিক দেশের সেনা। বহু আফগানকেও দেশ ছাড়তে সাহায্য করা হয়েছে। ৩০ অগাস্ট মধ্যরাতে শেষ মার্কিন বিমান আফগানিস্তানের জমি ছাড়ে। মাঝের দুই দিন কাবুল বিমানবন্দরে একাধিক হামলা করেছে ইসলামিক স্টেট খোরাসান। ১৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মার্কিন সেনাও পাল্টা ড্রোন আক্রমণ করেছে।
ছবি: 1stLt. Mark Andries/U.S. Marine Corps/Handout/REUTERS
পালানোর অপেক্ষায় বহু আফগান
অ্যামেরিকা চলে গেছে। কিন্তু এখনো দেশ ছেড়ে পালাতে চাইছেন বহু আফগান। সমস্ত বিদেশিকেও উদ্ধার করা যায়নি।
২০ বছর ধরে চলা অ্যামেরিকার আফগান যুদ্ধে সব মিলিয়ে প্রাণ গেছে এক লাখ ৭২ জন মানুষ। এর মধ্যে মার্কিন সেনার সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। প্রায় চার হাজার মার্কিন কন্ট্রাক্টরের মৃত্যু হয়েছে। অন্যান্য দেশের সেনা মারা গেছে প্রায় এগারোশ।
ছবি: Getty Images/AFP/W. Kohsar
আফগানের মৃত্যু
যুদ্ধে বহু আফগান সেনার মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৬৬ হাজার। ৪৭ হাজার সাধারণ আফগানের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে নারী এবং শিশুও আছে। তালেবান এবং আইএস যোদ্ধার মৃত্যু হয়েছে ৫১ হাজারের কিছু বেশি।
ছবি: Getty Images/AFP/N. Mohammad
16 ছবি1 | 16
নেড প্রাইস জানিয়েছেন, ''আমরা মস্কো আলোচনায় অংশ নেব না। রাশিয়ার সঙ্গে তিন দেশের কথা হবে। আমরা চাই, এই ফোরাম কথাবার্তা এগিয়ে নিয়ে যাক। কিন্তু আমরা বুধবারের আলোচনায় অংশ নেয়ার পরিস্থিতিতে নেই।'' তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, অ্যামেরিকা কি এই উদ্যোগকে সমর্থন করে? প্রাইস জানিয়েছেন, ''এই উদ্যোগকে সমর্থন করে অ্যামেরিকা।''