উচ্চশিক্ষার সুযোগ বন্ধ হওয়ায় ক্ষুব্ধ আফগান মেয়েদের চোখে জল। ইউনিভার্সিটির বাইরে প্রতিবাদ মেয়েদের।
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘের দাবি, সিদ্ধান্ত বদল করতে হবে। একের পর এক দেশ প্রতিবাদ জানাচ্ছে। অ্যামেরিকা হুমকি দিয়েছে। তা সত্ত্বেও বুধবার থেকে আফগানিস্তানে মেয়েদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা বন্ধ হয়ে গেল। বুধবার মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গেছিলেন, কিন্তু তাদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। রক্ষীদের উপর কড়া নির্দেশ ছিল, বিনা অনুমতিতে কাউকে ঢুকতে দেয়া হবে না।
বুধবার স্নাতক হওয়া কিছু মেয়েদের ডিগ্রি দেয়ার অনুষ্ঠান ছিল। সেটা হয়েছে। প্রশাসনিক কারণে কিছু মেয়েকে অফিস পর্যন্ত যেতে দেয়া হয়েছে। বাকিদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। তারা বাইরে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। স্বপ্নপূরণ হবে না বলে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন।
২৩ বছর বয়সি নার্সিং পাঠরত এক নারী সংবাদসংস্থা এএফপি-কে জানিয়েছেন, ''আমার নিজেকে খাঁচায় বন্দি পাখির মতো মনে হচ্ছে। আমরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরছি, কাঁদছি, আর প্রশ্ন করছি, কেন শুধু আমাদের সঙ্গে এমন হবে?''
আফগান মেয়েদের বিনোদন পার্কেও ঢোকা নিষিদ্ধ
আফগানিস্তানে মেয়েদের উপর বাড়তি নিষেধাজ্ঞা চাপালো তালেবান। বিনোদন পার্কে ঢুকতে পারবে না মেয়েরা।
ছবি: Hussein Malla/AP/picture alliance
নতুন নিষেধাজ্ঞা
আফগানিস্তানে তালেবান দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর থেকে মেয়েদের উপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তাদের শেষ নিষেধাজ্ঞা হলো, মেয়েরা বিনোদন পার্কে ঢুকতে পারবে না। প্রোপাগেশন অফ ভার্চু অ্যান্ড প্রিভেনশন অফ ভাইস মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, বিনোদন পার্কে ঢোকার অনুমতি মেয়েদের নেই।
ছবি: Hector Retamal/AFP/Getty Images
জানিয়ে দেয়া হয়েছে
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাবুলের দুইটি পার্কের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাদের কাছে তালেবানের নির্দেশ এসে গেছে, মেয়েদের আর ঢুকতে দেয়া যাবে না।
ছবি: Hector Retamal/AFP/Getty Images
স্পষ্ট নয়
তবে একটা বিষয় এখনো স্পষ্ট হয়নি, মেয়েদের বিনোদন পার্কে ঢোকার আলাদা দিন থাকবে কি না। আগে নিয়ম ছিল, সপ্তাহের কিছু দিন শুধু মেয়েরাই পার্কে ঢুকতে পারবে। এবারও সেই নিয়ম চালু হবে কি না তা তালেবান জানায়নি।
ছবি: Hector Retamal/AFP/Getty Images
একা নয়
এর আগে তালেবান জানিয়েছিল, অন্তত একজন পুরুষ আত্মীয় ছাড়া মেয়েরা একা রাস্তায় বেরোতে পারবে না। বাইরে বেরোতে গেলে তাদের মুখ ঢেকে রাখতেই হবে।
ছবি: Nava Jamshidi/Getty Images
সরকারি চাকরি নয়
মেয়েদের সমানে সরকারি চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কিছু ক্ষেত্রে পুলিশের চাকরিতে মেয়েদের রাখা হয়েছে। কারণ, সেখানে উপযুক্ত পুরুষ পাওয়া যায়নি। বাকি সব সরকারি চাকরি থেকে তাদের বাদ দেয়া হয়েছে।
ছবি: DW
ঘোষণা করেও পিছিয়ে আসা
গত মার্চে তালেবান জানিয়েছিল, শুধু মেয়েদের জন্য সেকেন্ডারি স্কুল খোলা হবে। কিন্তু পরে তারা সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে যায়। এখনো সেই স্কুল খোলা হয়নি।
ছবি: Ebrahim Noroozi/AP/picture alliance
বিক্ষোভের মোকাবিলা
কাবুল ও অন্য শহরে নিজেদের অধিকারের দাবিতে মেয়েরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। কিন্তু কড়া হাতে তাদের বিক্ষোভের মোকাবিলা করেছে তালেবান। মেয়েদের হত্যা করা হলেও অভিযুক্তের কোনো শাস্তি হয়নি।
ছবি: AHMAD SAHEL ARMAN/AFP
জাতিসংঘের রিপোর্ট
গত অগাস্টে প্রকাশিত জাতিসংঘের রিপোর্টে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে মেয়েদের অবস্থা ক্রমশ আরো ভয়াবহ এবং নিরাশাজনক হচ্ছে। নারী ও অল্পবয়স্ক মেয়েদের আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে।
ছবি: Sharifa
8 ছবি1 | 8
মেয়েদের জন্য যাবতীয় পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রী। তিনি রয়টার্সকে জানিয়েছেন, এই প্রস্তুতি শোকে পরিণত হয়েছে। আমি আর পড়তে পারব না। আমার স্বপ্নপূরণ হবে না। মনে হচ্ছে, মেয়েদের জীবন্ত কবর দেয়া হচ্ছে।
আফগানদের প্রতিক্রিয়া
বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সামনে প্রচুর নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে। ফলে সেখানে বা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ কম হচ্ছে। বরং আফগানিস্তানের মানুষ সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। ফেসবুক ও টুইটারে হ্যাশট্যাগ লেটহারলার্ন ভাইরাল হয়েছে।
তামানা জানাচ্ছেন, তিনি ভোর সাড়ে ছয়টার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে যান। ছাত্রদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছিল। ছাত্রীদের দেখলেই বন্দুক তুলে বলা হচ্ছিল, বাড়ি যাও। ফেসবুকে হাদিয়া লিখেছেন, এরপর মেয়েদের বাড়ির বাইরে রাস্তাতেও নামতে দেয়া হবে না।
আফগানিস্তানের করুণ দশা
তালেবান ক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে৷ এছাড়া নারী ও মেয়েদের অনেক অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে৷
ছবি: Ahmad Sahel Arman/AFP
অর্ধেকের বেশি মানুষ ক্ষুধা কষ্টে
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ডাব্লিউএফপি বলছে আফগানিস্তানের প্রায় দুই কোটি ২৮ লাখ মানুষ মারাত্মক ক্ষুধা কষ্টে আছেন৷ তারা খাদ্য সহায়তার উপর নির্ভরশীল৷ দেশটির মোট জনসংখ্যা প্রায় চার কোটি৷ ছবিতে কাবুলে দুই ব্যক্তিকে চীনের খাদ্য সহায়তা নিয়ে ফিরতে দেখা যাচ্ছে৷ ডাব্লিউএফপি বলছে আফগানিস্তানে তাদের কার্যক্রম চালাতে প্রতিমাসে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন৷
ছবি: Saifurahman Safi/Xinhua/IMAGO
বাংলাদেশ এক কোটি টাকা দিচ্ছে
জাতিসংঘের মাধ্যমে আফগানিস্তানে এক কোটি টাকা অনুদান পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ৷ রোববার (২২ মে) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ‘ফর দ্য কো-অর্ডানেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স’ তহবিলে এ টাকা জমা দেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷
ছবি: Javed Tanveer/AFP
মেয়েদের অধিকার খর্ব
তালেবান বলেছিল এবার তারা আগের চেয়ে একটু বেশি সহনীয় হবে৷ কিন্তু দেখা যাচ্ছে নারীদের অনেক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে৷ তারা মাধ্যমিক স্কুলে যেতে পারছে না, একা চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷ প্রকাশ্যে পা থেকে মুখ পর্যন্ত ঢাকা পোশাক পরতে বলা হয়েছে৷ এসব নির্দেশ মানা হচ্ছে কিনা তা দেখতে চেকপয়েন্ট বসানো হয়েছে৷ এছাড়া সম্প্রতি নারী সাংবাদিক ও উপস্থাপকদের মুখ ঢেকে টিভিতে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷
ছবি: Ali Khara/REUTERS
প্রতিবাদ
কাবুলের মতো আফগানিস্তানের অধিকতর উদার এলাকার কিছু নারীকে নতুন নিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে৷ বিক্ষোভে অংশ নেয়া একজন বলেন, ‘‘আমরা জীবিত প্রাণী হিসেবে পরিচিত হতে চাই, মানুষ হিসেবে পরিচিত হতে চাই, ঘরের কোণে বন্দি দাস হিসেবে পরিচিত হতে চাই না৷’’
ছবি: Wakil Kohsar/AFP
বোরকার দাম বেড়েছে
কাবুলের এক বোরকা বিক্রেতা জানান, পোশাক নিয়ে তালেবানের নতুন নির্দেশের পর বোরকার দাম প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়ে গেছে৷
ছবি: Wakil Kohsar/AFP
নারী ও পুরুষ একসঙ্গে রেস্টুরেন্টে যেতে মানা
আফগানিস্তানের মানদণ্ড বিবেচনায় হেরাত শহরকে কিছুটা উদার মনে করা হয়৷ কিন্তু সেখানে রেস্টুরেন্টে বসে পুরুষ আর নারীরা একসঙ্গে খেতে পারবেন না বলে নির্দেশ জারি করা হয়েছে৷ হেরাতের এক রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক শফিউল্লাহ এই নির্দেশ জারির কথা নিশ্চিত করে বলেছেন, এর ফলে তাদের ব্যবসার অনেক ক্ষতি হচ্ছে৷
ছবি: WANA NEWS AGENCY/REUTERS
প্রতিক্রিয়া
নারী ও মেয়েদের উপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা জারির সমালোচনা করেছেন জি-সেভেন দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা৷ এসব নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে বলে জানান তারা৷
ছবি: Ali Khara/REUTERS
7 ছবি1 | 7
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘ দাবি জানিয়েছে, অবিলম্বে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে। আর মেয়েদের জন্য ষষ্ঠ শ্রেণির পর থেকে স্কুল খুলতে হবে।
মার্কিন সেক্রেটারি অফ স্টেট অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, তালেবানকে এর ফল ভুগতে হবে। বিশ্বের অন্য কোনো দেশই মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ করেনি বলে তিনি জানিয়েছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, এটা পিছনের দিকে যাওয়ার একটা উদাহরণ।