আফগানিস্তান নিয়ে ফের বিতর্কিত মন্তব্য সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের।
বিজ্ঞাপন
কিছুদিন আগে বাইডেনকে এক হাত নিয়েছিলেন তিনি। এবার পূর্ববর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ জুনিয়রের বিরুদ্ধে সরব হলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, ২০০১ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা পাঠানো অ্যামেরিকার ইতিহাসে সব চেয়ে বড় ভুল। এ কথা বলেই তিনি জানিয়েছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট বুশ তার এই মন্তব্যে আঘাত পেতে পারেন। কিন্তু তিনি তার মতে অনড় থাকবেন।
ট্রাম্পের বক্তব্য, শুধু আফগানিস্তানে নয়, গোটা মধ্য প্রাচ্যে মার্কিন সেনা পাঠানোই ভুল সিদ্ধান্ত। তার কথায়, ''আমরা মধ্যপ্রাচ্যকে ধ্বংস করেছি। এর জন্য আমাদের কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। হাজার হাজার মার্কিন নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তাতে কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। সব ধ্বংস হয়েছে।''
আবার তালেবানের আফগানিস্তান
দীর্ঘ দুই দশক পর আফগানিস্তানের দখল আবার নিজেদের হাতে তুলে নিলো তালেবান৷ ছবিঘরে তালেবানের অতীত, বর্তমানের চিত্র৷
ছবি: Str/XinHua/dpa/picture alliance
দুই দশক আগে...
ওপরের ছবিটি ২০০১ সালের নভেম্বর মাসের৷ আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে জাবাল উস সেরাজ শহরে তালেবান সৈন্যদের সরিয়ে দখল নিচ্ছে মার্কিন সমর্থিত বাহিনীর সদস্যরা৷
ছবি: Yannis Behrakis/REUTERS
ধ্বংসের চিত্র
তালেবান বনাম মার্কিন সংঘর্ষের সময় সংবাদমাধ্যমে উঠে আসছিল আফগানিস্তানের বিভিন্ন দিক থেকে ধ্বংস আর প্রাণহানির চিত্র৷ ২০০২ সালের এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে বোমা হামলার শিকার কাবুলের দারুল-আমান প্রাসাদ, যার বাইরে নিশ্চিন্তে খেলছে দুই আফগান কিশোর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Bianchi
শরণার্থী
আফগান যুদ্ধের ফলে ২০০০ সাল থেকে ৩৬ লাখ শরণার্থী আশ্রয় নেন ইরান ও পাকিস্তানে৷ বর্তমানে বিশ্বজুড়ে তৃতীয় বৃহত্তম শরণার্থী গোষ্ঠী এই আফগানরা৷ দুই দশক পরে আবারও যখন উত্তপ্ত আফগানিস্তান, নতুন করে আফগান শরণার্থীর ভিড় দেখা যাচ্ছে তুরস্ক, ইরান ও ইউরোপের বিভিন্ন সীমান্তে৷
ছবি: Hussain Ali/Pacific Press/picture alliance
আবার তালেবান
চলতি বছর মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর খুব অল্প সময়েই আফগানিস্তানের দখল নিয়েছে সশস্ত্র জঙ্গি গোষ্ঠী তালেবান৷ ছবিতে রাজধানী কাবুলের হামিদ কারজাই বিমানবন্দরের বাইরের রাস্তায় বন্দুক হাতে তিন তালেবান সদস্য৷
ছবি: WAKIL KOHSAR/AFP/AFP/Getty Images
নিহত পাঁচ
তালেবান দখল নিলেও আফগানিস্তানে এখনো শান্তি ফেরেনি৷ তালেবান কাবুলে ঢুকে পড়ার পর বিমানবন্দরে গিয়ে শত শত আফগান জোর করে বিমানে উঠে দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছিলেন৷ এরই মাঝে সেখানে পাঁচ জন নিহত হওয়ার খবর এলো৷ বিমানবন্দরটির দায়িত্বে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা সোমবার সকালে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলি ছুঁড়েছিল বলে জানা গেছে৷ তবে ওই পাঁচজন কিভাবে প্রাণ হারিয়েছেন তা এখনো জানা যায়নি৷
ছবি: REUTERS
প্রেসিডেন্টের প্রাসাদও দখলে
রোববার দেশ ছেড়েছেন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি৷ একই দিনে কাবুলে অবস্থিত প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেসে ঢুকে পড়ে তালেবান সদস্যরা৷ সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে সেই চিত্র৷ তালেবানের মুখপাত্র ঘোষণা করেন, আফগান যুদ্ধ শেষ হয়েছে, এবার নতুন সরকার গঠন করা হবে৷
ছবি: Zabi Karim/AP/picture alliance
শহরের দখল
গত কয়েক সপ্তাহে আফগানিস্তানের সবকটি গুরুত্বপূর্ণ শহরেরই দখল নিয়েছে তালেবান৷ একে একে হেরাত, কান্দাহার, গজনি, কুন্দুজের মতো সব বড় শহরের নিয়ন্ত্রণই নিয়ে নেয় তারা৷
ছবি: Gulabuddin Amiri/AP/picture alliance
নিজদেশে বিপন্ন আফগানরা
ক্ষমতার হাতবদলের মাঝে অনেক আফগান নাগরিকই নতুন করে বিপন্ন বোধ করছেন৷ কাবুল বিমানবন্দরের ভেতরে ভিড় করেছেন হাজার হাজার জনতা৷ যে কোনো উপায়ে দেশ ছাড়তে চান তারা৷ তাদের মতে, বিশ বছর আগের বাস্তবতা আবার ফিরে আসতে পারে তাদের জীবনে৷ বেশ ঝুঁকির মধ্যে পশ্চিমা বাহিনীর সাথে সুসম্পর্ক রাখা আফগানরা৷
ছবি: AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
কিছুদিন আগে ট্রাম্প এভাবেই আক্রমণ করেছিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে। বলেছিলেন, আফগানিস্তানের বর্তমান অবস্থার জন্য বাইডেনের পদত্যাগ করা উচিত। গোটা পরিস্থিতির দায় বর্তমান প্রেসিডেন্টকেই নিতে হবে।
তবে ট্রাম্পের এইসব মন্তব্য ঘিরে একাধিক প্রশ্ন উঠছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ট্রাম্প যদি সত্যিই মনে করেন যে আফগানিস্তান সহ মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সেনা পাঠানো ভুল সিদ্ধান্ত, তাহলে তার ক্ষমতাকালে তিনি সেনা প্রত্যাহার করলেন না কেন? ট্রাম্প অবশ্য মনে করিয়ে দিয়েছেন, তিনি চেয়েছিলেন জুনের মধ্যে সমস্ত সেনা প্রত্যাহার করা হোক। প্রশ্ন উঠছে, ক্ষমতায় এসেই সে কাজ করলেন না কেন তিনি? কেন এত বছর অপেক্ষা করলেন?
বাইডেন শিবিরের প্রশ্ন, তালেবানের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন ট্রাম্প। সেই চুক্তি নিয়ে এখন কী বলবেন তিনি? তালেবানের সঙ্গে সমঝোতা কি ঐতিহাসিক ভুল নয়? প্রশ্ন উঠছে, আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করাও ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত। বাইডেন এসে কেবল তা রূপায়ণ করেছেন। ফলে আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য যদি বাইডেন দায়ী হন, তাহলে ট্রাম্প নন কেন?
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, ফক্স নিউজ)
তালেবানের শীর্ষ নেতা কারা?
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা সরে যাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে পুরো দেশ দখল করে নিয়েছে তালেবান৷ ১৯৯৪ সালে গঠিত তালেবানের বর্তমান শীর্ষ নেতাদের পরিচয় জানা যাবে এই ছবিঘরে৷
ছবি: Gulabuddin Amiri/AP/picture alliance
হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা
তালেবানের সুপ্রিম নেতা আখুন্দজাদা এই গোষ্ঠীর রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামরিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সর্বোচ্চ ব্যক্তি৷ ২০১৬ সালে তার পূর্বসূরী আখতার মনসুর মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হওয়ার পর দায়িত্ব পান আখুন্দজাদা৷ পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কুচলাক শহরের এক মসজিদে তিনি প্রায় ১৫ বছর শিক্ষকতা ও ধর্মপ্রচারের কাজ করেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স৷ তার বয়স প্রায় ৬০ বলে মনে করা হয়৷
ছবি: Imago/Xinhua
মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব
তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে তিনি৷ তালেবানের সামরিক অভিযানের দায়িত্বে আছেন ইয়াকুব৷ ২০১৬ সালে আখতার মনসুর নিহত হওয়ার পর ইয়াকুবকে তালেবানের দায়িত্ব নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল৷ কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা কম এবং বয়স কম হওয়ায় ইয়াকুব নেতা হিসেবে আখুন্দজাদার নাম প্রস্তাব করেন৷ ইয়াকুবের বয়স ৩০-এর ঘরে বলে ধারণা করা হয়৷
ছবি: Gulabuddin Amiri/AP/picture alliance
সিরাজুদ্দীন হাক্কানি
হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান৷ পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে তালেবানের আর্থিক ও সামরিক সম্পদ দেখাশোনা করে এই গোষ্ঠী৷ আফগানিস্তানে আত্মঘাতী বোমা হামলার চল এই গোষ্ঠী শুরু করে বলে মনে করা হয়৷ সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইকে হত্যার চেষ্টা, ভারতীয় দূতাবাসে আত্মঘাতী হামলার জন্য হাক্কানি নেটওয়ার্ককে দায়ী করা হয়৷ হাক্কানির বয়স ৪০-এর ঘরে শেষ থেকে ৫০-এর ঘরে শুরু পর্যন্ত বলে মনে করা হয়৷
ছবি: FBI/REUTERS
মোল্লা আব্দুল গনি বারাদার
তালেবানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বারাদার এই গোষ্ঠীর রাজনীতি বিভাগের প্রধান৷ কাতারের দোহায় আফগান সরকার ও তালেবানের মধ্যে যে আলোচনা চলছিল, সেখানে উপস্থিত ছিলেন তিনি৷ তালেবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের সবচেয়ে বিশ্বস্ত কর্ম ছিলেন বারাদার৷ ২০১০ সালে পাকিস্তানের করাচিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ ২০১৮ সালে তিনি ছাড়া পান৷
ছবি: Alexander Zemlianichenko/REUTERS
শের মোহাম্মদ আব্বাস স্তানেকজাই
তালেবান যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন তিনি উপমন্ত্রী ছিলেন৷ এরপর প্রায় এক দশক তিনি কাতারের দোহায় বাস করেন৷ ২০১৫ সালে তাকে দোহার রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান করা হয়৷ সাম্প্রতিক সময়ে আফগান সরকার ও তালেবানের মধ্যকার আলোচনায় তিনি উপস্থিত ছিলেন৷ এছাড়া বিভিন্ন দেশে কূটনৈতিক সফরে তালেবানের প্রতিনিধিত্ব করেছেন স্তানেকজাই৷
ছবি: Sefa Karacan/AA/picture alliance
আব্দুল হাকিম হাক্কানি
তাকে তালেবানের বর্তমান সুপ্রিম নেতা আখুন্দজাদার সবচেয়ে বিশ্বস্ত মনে করা হয়৷ তিনি তালেবানের সাবেক ছায়া প্রধান বিচারপতি৷ বর্তমানে তিনি এই গোষ্ঠীর ধর্মীয় পণ্ডিতদের প্রভাবশালী সংগঠনের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন৷ আফগান সরকারের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেয়া তালেবানের প্রতিনিধি দলের প্রধান ছিলেন হাক্কানি৷ উপরের ছবিটি ২০০৫ সালের৷