1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আফগান নারী

২৮ ডিসেম্বর ২০১১

কয়েক বছর আগেও কাবুলবাসী জুলফিয়ার পড়াশুনো ছেড়ে ঘরে বসে থাকা ছাড়া আর কোন উপায় ছিলনা৷ জুলফিয়া এখন জার্মান প্রতিষ্ঠান এনএজেডও-র সাহায্যে অল্পবয়সী মেয়েদের স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে৷

আফগান মেয়েরা ক্রমশ আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হয়ে উঠছেছবি: NAZO

একুশ বছর বয়সি জুলফিয়া বলেন, ‘‘আমি আর্থিক সমস্যার কারণে পড়াশোনা আর চালাতে পারছিলাম না৷ তাই আমাকে ঘরে বসে থাকতে হচ্ছিল৷ আমি আগে এতটা সাহসী ছিলাম না, কিছু বলতে পারতামনা৷ কারো সঙ্গে তেমন যোগাযোগও আমার ছিলনা, বলা যায় আমি একটি লাজুক মেয়ে ছিলাম৷ কিন্তু আমি বাড়ির বাইরে কাজ করতে সব সময়ে আগ্রহী ছিলাম৷''

হেরাত-এ আফগানিস্তানের ব্যবসায় সমিতির প্রধান আতিফা মানসোরি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এদেশে নারীদের বিরুদ্ধে বৈষম্যের প্রথা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে, আমাদের সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে মেয়েদের চাকরির সুযোগ সুবিধা তেমন নেই বললেই চলে৷ খুব অল্প সংখ্যক মেয়েই ঘরের বাইরে কাজ করার সুযোগ পায়৷''

জুলফিয়া এনএজেডও নামে এক সংস্থায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন৷ এই জার্মান সংস্থা আফগান মেয়েদের চারু ও কারুকলা শেখায়৷ জুলফিয়া বলে, ‘‘আমরা সুখী৷ আফগান নারীরা এখন আগের তুলনায় বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছে৷ এখন তারা সমাজের সক্রিয় সদস্য হিসেবে বাস করছে৷''

সহিংসতার শিকার

বছর দশেক আগে আফগানিস্তানে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই' শুরু হয়৷ আফগান নারীরা তালেবান আমলের নিষ্পেষণের অভিজ্ঞতা সহজে ভুলতে পারেনি, অন্যদিকে যুদ্ধের ফলে দেশটি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে৷

২০০২ সালে এলকে ইওনিশকাইট কামিনস্কি নামে একজন জার্মান চলচ্চিত্র নির্মাতা আফগানিস্তানে যান৷ তিনি এর আগেও সেখানে বহু চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন৷

কামিনস্কি বলেন, ‘‘আমি আফগান নারীদের নিয়ে ১৯৮৫ সাল থেকে ছবি তৈরি করছি৷ ২০০২ সালে আফগানিস্তানে আমার আগের ছবিতে কাজ করেছে, এমন তিন মেয়ের খোঁজ করছিলাম৷ অবশেষে তাদের দেখা পেলাম৷ আমি জার্মানিতে ফিরে আসার পর এনএজেডও প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুললাম৷ আমার চলচ্চিত্রের তিনটি মেয়ে আফগানিস্তানে ঐ প্রতিষ্ঠানের শাখা খুলতে আমাকে সাহায্য করে৷'' কামিনস্কি পরিচালিত ছবিগুলোর মধ্যে ‘দ্য উইমেন অফ কাবুল - স্টার্স ইন অ্যা বার্নিং স্কাই' ছবিটার নাম করা যেতে পারে৷''

আফগান নারীদের তৈরি গহনাছবি: NAZO

জার্মানির অর্থনৈতিক সহযোগিতা মন্ত্রণালয় এনএজেডও'কে প্রথমে দেড় লক্ষ ইউরো আর্থিক সহায়তা দেয়৷ ২০০৪ সালে প্রশিক্ষণের কাজ শুরু হয়৷ এখন পর্যন্ত ৫০০ এরও বেশি নারী গয়নাগাটি, বস্ত্র শিল্প আর চামড়ার নকশার ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছে৷ এনএজেডও আইন সংক্রান্ত ও পরিবার পরিকল্পনার বিষয়েও পরামর্শ দিয়ে থাকে৷ আফগানিস্তানের শেওয়েকি, কারতে নাউ, কামারি এবং আহমাদ শাহ বাবা মিনাতে এনএজেডও-র ৪টি কেন্দ্র চালু রয়েছে৷

অর্থনৈতিক স্বাধীনতার মূল্য

জুলফিয়া অলংকার তৈরির প্রশিক্ষণের জন্য এনএজেডও কেন্দ্রে নাম লেখান৷ ঐ কেন্দ্র সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘আমি এই কেন্দ্র স্থাপনের খবর পাই৷ বিজ্ঞাপনে আমার বাসার কাছে চাকরির কথা জানতে পারি৷ এটা এক বিরাট সংবাদ৷ আমি চাকরি এবং প্রশিক্ষণ সম্পর্কে আমার পরিবারের সঙ্গে কথা বলি৷ সংস্থাটি আমার প্রয়োজন মেটাতে পারবে এবং মেয়েদের জন্য অনেক সুযোগ এনে দেবে বলে আমি মনে করি''

১৮ মাসের অলংকার তৈরির প্রশিক্ষণে জুলফিয়া গয়না বানানো এবং পাথরের কারুকাজ সম্পর্কে জানতে পারেন৷ এখন তিনি কেন্দ্রে একজন প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ আমি এখন ১৫ জন ছাত্রীর ক্লাস চালাচ্ছি৷ বেশ ভালো বেতন পাই৷ আমি এখন স্বাধীন আর আমার ও পরিবারের খরচও আমি বহন করতে পারি৷''

তবে এনএজেডও-র মত সংস্থা গুলি তাদের প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়৷ কামিনস্কি বলেন, ‘‘যুদ্ধ বিধ্বস্ত গ্রামের এই সব মেয়েরা দারুণ দু:খ কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে৷ আমরা তাদের অর্থ দিয়ে সাহায্য করি ও পরামর্শ দিই, মেয়েরাই আসল কাজ করছে৷ কিন্তু গ্রামের মোল্লা বা মেয়র অথবা গোয়েন্দা বিভাগের লোকজনদের কথা আমাদের শুনতে হয়৷''

সমস্যা এবং সম্ভাবনা

ব্যবসায় সমিতির প্রধান মানসোরি এসব সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে চেষ্টা করছেন৷ তবে তিনি কতটুকু সফল হবেন সে ব্যপারে তাঁর সন্দেহ রয়েছে৷ তিনি মনে করেন, স্বল্পকালীন অনুদান আফগানিস্তানের ব্যবসা জগতে তেমন সুফল বয়ে আনতে নাও পারে, তার কারণ এদেশে পেশাগত বিষয়ে প্রশিক্ষণ আর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির তেমন সুযোগ নেই৷

মানসোরি বলেন, আফগান সরকারের নারী বিষয়ক বিভাগগুলি মেয়েদের কর্মতত্পরতার ব্যাপারে তেমন উত্সাহী নয়৷ আফগান পণ্যের মানও ততটা উন্নত নয়৷ সে কারণে ভালো প্রচার করাও কঠিন হয়ে পড়ে৷

তবে আতিফা মানসোরি আর এনএজেডও-র মত সংস্থাগুলির সাফল্য মানুষকে আশান্বিত করে৷ মানসোরি হেরাত-এ তাঁর খাদিজাতুল কোবরা ব্যবসা কেন্দ্রটিকে সফল ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন৷ তিনি ভারত, তাজিকিস্তান, কাবুল, হেরাত আর মাজার-এ-শরিফে আফগান হস্তশিল্পের প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন৷

অন্যদিকে নাজো সংস্থাটিও প্রদর্শনীর আয়োজন করে আফগানিস্তানের নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পদক লাভ করেছে৷ প্রতিষ্ঠানটির পণ্য দেশে এবং বিদেশে বিক্রি হচ্ছে৷ কাবুলে কেন্দ্রের প্রধান মারিনা নিয়াজি বলেন, ‘‘মেয়েরা আগের তুলনায় অনেক বেশি স্বাধীন৷ আমাদের প্রকল্প দুঃস্থ নারী এবং গ্রাম আর শহরতলিতে যে সব মেয়ে আধুনিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত, তাদের সাহায্য করে থাকে৷''

জুলফিয়ার জীবনে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে৷ তিনি বলেন, ‘‘ আমি বেসরকারি স্কুলে যেতে পেরেছি৷ আমি কাজের শেষে সেই স্কুলে যেতাম আর নিজেই পড়াশুনোর খরচ বহন করতাম৷ আমি এখন একজন গ্র্যাজুয়েট৷''

প্রতিবেদন: তামানা জামিলি/ রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ