তালেবানের বিরুদ্ধে সরাসরি যু্দ্ধে ন্যাটো বাহিনী আর থাকছেনা৷ নেতৃত্বে চলে আসছে আফগান বাহিনী৷ ন্যাটো প্রধান জেনস স্টলেনবার্গ জানিয়েছেন, এর ফলে আফগান সেনাদের মৃত্যুহারও বাড়ছে৷
বিজ্ঞাপন
নাইন ইলেভেনের টুইন টাওয়ার হামলার পর তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আফগানিস্তানে যায় ন্যাটো বাহিনী৷ গত ১৩ বছরে এ যুদ্ধে ২,২১০ জন মার্কিনসহ মোট সাড়ে তিন হাজার বিদেশি সৈন্য মারা গেছে৷ মার্কিন এবং ন্যাটোভুক্ত অন্য দেশগুলো নিজেদের সৈন্য প্রত্যাহার এবং যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তাদের সরিয়ে আফগানদের প্রশিক্ষণ দেয়া এবং অন্যান্য কাজে নিয়োজিত করছে৷ ফলে যুদ্ধক্ষেত্রের নেতৃত্ব নিচ্ছে আফগান সেনারা৷ শুক্রবার ন্যাটোর নবনির্বাচিত মহাসচিব জেনস স্টলেনবার্গ জানান, এর ফলে যু্দ্ধে আফগান সেনাদের মৃত্যুহার বাড়ছে৷ ২০১৩ সালে যেখানে সব মিলিয়ে ৪,৩৫০ জন আফগান সেনা যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছিল, সেখানে এ বছর ১০ মাসেই মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪,৬৩৪৷
আফগানিস্তানে জীবন ও যুদ্ধ
দীর্ঘদিন ধরে আফগানিস্তানের ছবি তুলছেন ইরানের ফটোগ্রাফার মাজিদ সাঈদি৷ ছবিগুলো অনেক আন্তর্জাতিক পুরস্কারও এনে দিয়েছে তাঁকে৷ চলুন তাঁর ক্যামেরার চোখে দেখা যাক আফগানিস্তানকে৷
ছবি: Majid Saeedi
খেলনা!
কাবুলে যু্দ্ধাহতদের জন্য তৈরি একটা নকল হাত নিয়ে খেলছে দুই কিশোরী৷ এমন কিছু ছবিই তেহরানের মাজিদ সাঈদিকে এনে দিয়েছে বেশ কিছু পুরস্কার৷
ছবি: Majid Saeedi
ছবিই বলে হাজার কথা
১৬ বছর বয়স থেকে ছবি তুলছেন মাজিদ৷ মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের কারণে মানবিক বিপর্যয়ের দিকেই তাঁর সমস্ত মনযোগ৷ জার্মানির ডেয়ার স্পিগেল, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমসের মতো ম্যাগাজিন এবং আন্তর্জাতিক পত্রিকায় ছাপা হয় তাঁর তোলা ছবি৷
ছবি: Majid Saeedi
আফগানিস্তানের শিশুরা
ডিডাব্লিউকে সরবরাহ করা মাজিদের ছবির অনেকগুলোতেই ফুটে উঠেছে আফগান শিশুদের জীবনে যুদ্ধের প্রভাব৷ এ ছবিটি যুদ্ধের কারণে হাত হারানো এক আফগান শিশুর৷
ছবি: Majid Saeedi
মাদকের অভিশাপ
আফগানিস্তানের খুব বড় এক সমস্যা মাদক৷ বলা হয়ে থাকে বিশ্বের শতকরা ৯০ ভাগ মাদকদ্রব্যই নাকি উৎপন্ন হয় আফগানিস্তানে৷ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আফিম হয় দেশটিতে৷ দেশের অনেক নাগরিক আফিমসেবী৷ জাতিসংঘের দেয়া তথ্য অনুযায়ী আফগানিস্তানের অন্তত তিন লক্ষ শিশু নিয়মিত আফিম সেবন করে৷
ছবি: Majid Saeedi
রোল কল
কাবুলের এক অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ শুরুর আগে ক্যাডেটদের রোল কল চলছে৷ জার্মান সেনাবাহিনী ‘বুন্ডেসভেয়ার’ আফগান নিরাপত্তাকর্মীদের অনেক আগে থেকেই প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিল৷ প্রশিক্ষণের লক্ষ্য, আফগান সেনাবাহিনী এবং পুলিশকে দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় আত্মনির্ভরশীল করে তোলা৷ ২০১৪ সালের শেষেই অবশ্য আফগানিস্তান থেকে নিজেদের সেনা সদস্যদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে জার্মানি৷
ছবি: Majid Saeedi
ভয়ংকর শৈশব
স্কুলে লেখাপড়া করতে যাওয়ার সুযোগ শিশুদের কমই মেলে৷ স্কুলে গেলে নগণ্য কারণেও হতে হয় শিক্ষকের কঠোর শাসনের শিকার৷ তা সহ্য করেও পুরো সময় থাকা হয়না, পরিবারের জন্য টাকা রোজগার করতে আগেভাগেই স্কুল থেকে বেরিয়ে পড়তে হয় তাদের৷ আফগানিস্তানে শিক্ষার হার খুবই কম৷ ২০১১ সালে জার্মান সরকারের উদ্যোগে একটি তথ্যবিবরণী প্রকাশ করা হয়েছিল৷ তখন আফগানিস্তানের শতকরা ৭২ ভাগ পুরুষ আর ৯৩ ভাগ নারীই ছিল নিরক্ষর৷
ছবি: Majid Saeedi
বোরখা এবং পুতুল
আফগান নারীরা পুতুল বানাতে শেখার ক্লাসে৷ মালয়েশিয়ার একটি বেসরকারি সংস্থার অর্থায়নে এখানে পুতুল বানাতে শেখানো হয় তাঁদের৷ আফগান নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্যই এ উদ্যোগ৷
ছবি: Majid Saeedi
তালেবানের প্রতিশোধ
২০১১ সালে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করার পরই আফগানিস্তানে হামলা চালায় তালেবান৷ প্রতিশোধমূলক সে হামলায় প্রাণ যায় চারজনের, আহত হয়েছিলেন ৩৬ জন৷ ছবিতে দু’জন আহতকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Majid Saeedi
খেলাধুলা
হাড়ভাঙা খাটুনি শেষে একটু বিশ্রাম৷ আফগানিস্তানে শরীর চর্চা খুব জনপ্রিয়৷
ছবি: Majid Saeedi
যুদ্ধের আবাদ
গত ৩০টি বছর ভীষণ প্রভাব ফেলেছে আফগানদের জীবনে৷ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা যায় যুদ্ধের প্রভাব৷
ছবি: Majid Saeedi
মাদ্রাসা
কান্দাহারের মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত শিশুরা৷
ছবি: Majid Saeedi
হত্যার প্রশিক্ষণ
কুকুরের লড়াইও আফগানিস্তানে খুব জনপ্রিয়৷ কুকুরদের এমনভাবে লড়াই করতে শেখানো হয় যাতে তারা প্রতিপক্ষকে একেবারে মেরে ফেলে৷ কুকুরের জীবনেও যুদ্ধের প্রভাব!
ছবি: Majid Saeedi
12 ছবি1 | 12
এ বছরের মধ্যেই আফগানিস্তানের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে নিজেদের সৈন্য পুরোপুরি সরিয়ে নেবে ন্যাটো৷ তারপর আফগান সেনাদের প্রশিক্ষণ দেয়াসহ অন্য কিছু সহায়ক কাজের জন্য মোট ১২ হাজার বিদেশি সৈন্য থাকবে আফগানিস্তানে৷
গত ১ অক্টোবর ন্যাটোর মহাসচিবের দায়িত্ব পাওয়ার পর এই প্রথম আফগানিস্তান সফরে গেলেন জেনস স্টলেনবার্গ৷ বৃহস্পতিবার তিনি আফগানিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সঙ্গে সাক্ষাত করেন৷ স্টলেনবার্গ শুক্রবার গিয়েছিলেন আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় শহর হেরাতে৷ সেখানে ইটালির সেনাঘাঁটিতে গিয়ে তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন দেয়া সৈন্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান৷ তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে এ পর্যন্ত ইটালির ৫৩ জন সৈন্য প্রাণ হারিয়েছেন৷
জেনস স্টলেনবার্গ জানান, ন্যাটো ভবিষ্যতেও আফগানিস্তানের পাশে থাকবে৷ এ বছর সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ এবং বেতন-ভাতার ব্যয় সংকুলানের জন্য আফগান সরকারকে ৪১ লক্ষ ডলার দেবে ন্যাটো৷