অবশেষে নতুন প্রেসিডেন্ট পেয়েছে আফগানিস্তান৷ আশরাফ গনিকে প্রেসিডেন্ট এবং আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহকে দেশের ‘প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে৷ এর ফলে অচলাবস্থা কাটলেও আফগানিস্তানের অনেকে খুশি হতে পারেননি৷
বিজ্ঞাপন
আফগানিস্তানে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটিয়ে ওঠার ইঙ্গিত দেখা গেল রবিবার৷ সেদিন সংক্ষিপ্ত এক বৈঠকে বসেছিলেন দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী আশরাফ গনি এবং আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ৷ রাজধানী কাবুলের প্রেসিডেন্ট ভবনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠক শেষে আশরাফ গনিকে প্রেসিডেন্ট এবং আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহকে ‘প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা' হিসেবে ঘোষণা করা হয়৷ অচলাবস্থা কাটানোর স্বার্থে ‘প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা' নাম দেয়া হলেও আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ আসলে প্রধানমন্ত্রীর সমান ক্ষমতাই উপভোগ করবেন৷ বৈঠক শেষে আশরাফ গনি বা আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ অবশ্য কোনো বিবৃতি দিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাননি৷
আফগানিস্তানে জীবন ও যুদ্ধ
দীর্ঘদিন ধরে আফগানিস্তানের ছবি তুলছেন ইরানের ফটোগ্রাফার মাজিদ সাঈদি৷ ছবিগুলো অনেক আন্তর্জাতিক পুরস্কারও এনে দিয়েছে তাঁকে৷ চলুন তাঁর ক্যামেরার চোখে দেখা যাক আফগানিস্তানকে৷
ছবি: Majid Saeedi
খেলনা!
কাবুলে যু্দ্ধাহতদের জন্য তৈরি একটা নকল হাত নিয়ে খেলছে দুই কিশোরী৷ এমন কিছু ছবিই তেহরানের মাজিদ সাঈদিকে এনে দিয়েছে বেশ কিছু পুরস্কার৷
ছবি: Majid Saeedi
ছবিই বলে হাজার কথা
১৬ বছর বয়স থেকে ছবি তুলছেন মাজিদ৷ মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের কারণে মানবিক বিপর্যয়ের দিকেই তাঁর সমস্ত মনযোগ৷ জার্মানির ডেয়ার স্পিগেল, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমসের মতো ম্যাগাজিন এবং আন্তর্জাতিক পত্রিকায় ছাপা হয় তাঁর তোলা ছবি৷
ছবি: Majid Saeedi
আফগানিস্তানের শিশুরা
ডিডাব্লিউকে সরবরাহ করা মাজিদের ছবির অনেকগুলোতেই ফুটে উঠেছে আফগান শিশুদের জীবনে যুদ্ধের প্রভাব৷ এ ছবিটি যুদ্ধের কারণে হাত হারানো এক আফগান শিশুর৷
ছবি: Majid Saeedi
মাদকের অভিশাপ
আফগানিস্তানের খুব বড় এক সমস্যা মাদক৷ বলা হয়ে থাকে বিশ্বের শতকরা ৯০ ভাগ মাদকদ্রব্যই নাকি উৎপন্ন হয় আফগানিস্তানে৷ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আফিম হয় দেশটিতে৷ দেশের অনেক নাগরিক আফিমসেবী৷ জাতিসংঘের দেয়া তথ্য অনুযায়ী আফগানিস্তানের অন্তত তিন লক্ষ শিশু নিয়মিত আফিম সেবন করে৷
ছবি: Majid Saeedi
রোল কল
কাবুলের এক অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ শুরুর আগে ক্যাডেটদের রোল কল চলছে৷ জার্মান সেনাবাহিনী ‘বুন্ডেসভেয়ার’ আফগান নিরাপত্তাকর্মীদের অনেক আগে থেকেই প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিল৷ প্রশিক্ষণের লক্ষ্য, আফগান সেনাবাহিনী এবং পুলিশকে দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় আত্মনির্ভরশীল করে তোলা৷ ২০১৪ সালের শেষেই অবশ্য আফগানিস্তান থেকে নিজেদের সেনা সদস্যদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে জার্মানি৷
ছবি: Majid Saeedi
ভয়ংকর শৈশব
স্কুলে লেখাপড়া করতে যাওয়ার সুযোগ শিশুদের কমই মেলে৷ স্কুলে গেলে নগণ্য কারণেও হতে হয় শিক্ষকের কঠোর শাসনের শিকার৷ তা সহ্য করেও পুরো সময় থাকা হয়না, পরিবারের জন্য টাকা রোজগার করতে আগেভাগেই স্কুল থেকে বেরিয়ে পড়তে হয় তাদের৷ আফগানিস্তানে শিক্ষার হার খুবই কম৷ ২০১১ সালে জার্মান সরকারের উদ্যোগে একটি তথ্যবিবরণী প্রকাশ করা হয়েছিল৷ তখন আফগানিস্তানের শতকরা ৭২ ভাগ পুরুষ আর ৯৩ ভাগ নারীই ছিল নিরক্ষর৷
ছবি: Majid Saeedi
বোরখা এবং পুতুল
আফগান নারীরা পুতুল বানাতে শেখার ক্লাসে৷ মালয়েশিয়ার একটি বেসরকারি সংস্থার অর্থায়নে এখানে পুতুল বানাতে শেখানো হয় তাঁদের৷ আফগান নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্যই এ উদ্যোগ৷
ছবি: Majid Saeedi
তালেবানের প্রতিশোধ
২০১১ সালে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করার পরই আফগানিস্তানে হামলা চালায় তালেবান৷ প্রতিশোধমূলক সে হামলায় প্রাণ যায় চারজনের, আহত হয়েছিলেন ৩৬ জন৷ ছবিতে দু’জন আহতকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Majid Saeedi
খেলাধুলা
হাড়ভাঙা খাটুনি শেষে একটু বিশ্রাম৷ আফগানিস্তানে শরীর চর্চা খুব জনপ্রিয়৷
ছবি: Majid Saeedi
যুদ্ধের আবাদ
গত ৩০টি বছর ভীষণ প্রভাব ফেলেছে আফগানদের জীবনে৷ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা যায় যুদ্ধের প্রভাব৷
ছবি: Majid Saeedi
মাদ্রাসা
কান্দাহারের মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত শিশুরা৷
ছবি: Majid Saeedi
হত্যার প্রশিক্ষণ
কুকুরের লড়াইও আফগানিস্তানে খুব জনপ্রিয়৷ কুকুরদের এমনভাবে লড়াই করতে শেখানো হয় যাতে তারা প্রতিপক্ষকে একেবারে মেরে ফেলে৷ কুকুরের জীবনেও যুদ্ধের প্রভাব!
ছবি: Majid Saeedi
12 ছবি1 | 12
তাই বলে দুই পর্বের ভোট শেষে ভোটের ফলাফল ঘোষণা স্থগিত রেখে দুই প্রার্থীর এভাবে আপোশরফায় সম্মত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া থেমে নেই৷ অধিকাংশ আফগান স্বস্তিই পেয়েছেন৷ গত এপ্রিলে প্রথম এবং জুনে দ্বিতীয় পর্বের ভোটগ্রহণ হলেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে অচলাবস্থা কাটছিল না৷ অবশেষে একটা দফারফা যে হয়েছে তাতেই স্বস্তি পেয়েছেন অনেকে৷
জাতীয় ঐক্যের আশা
প্রধান দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী যে অবশেষে পারস্পরিক বিরোধ দূরে রেখে এক সঙ্গে সরকার পরিচালনায় রাজি হয়েছেন, কারো কারো কাছে এটাই বড় স্বস্তির ব্যাপার৷ কাবুলের বাসিন্দা তানিন সুলাইমানখাইল তাঁদের একজন৷ রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে আফগানিস্তানে বিনিয়োগের আগ্রহ কমছিল – এ বিষয়টি উল্লেখ করে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমরা কয়েক মিলিয়ন ডলার আয়ের সুযোগ হারিয়েছি৷ প্রচুর মানুষ বেকারত্ব বরণ করছিল৷ অবশেষে যে এ অবস্থার অবসান হতে চলেছে তা ভেবেই আমি খুশি৷''
আফগানিস্তানে বাড়ছে আফিম চাষ
আফগান চাষীরা আবারো বেশি করে ঝুঁকছেন আফিম চাষের দিকে৷ এর মধ্যেই উৎপাদনের পরিমাণ অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে৷
ছবি: AP
বিশ্ব নেতা
আফিম চাষের দিক থেকে বিশ্বের কোনো দেশই আফগানিস্তানকে টেক্কা দিতে পারবে না – তাই এক্ষেত্রে আফগানিস্তানকে ‘বিশ্ব নেতা’ বলা যেতে পারে৷ ২০১৩ সালে দেশটিতে ২ লাখ ৯ হাজার হেক্টর জমিতে পপি ফুলের চাষ হয়েছে৷ এই পপি ফুলের বীজ থেকেই তৈরি হয় আফিম এবং হেরোইন৷ বিশ্বের অন্তত ৯০ ভাগ চেতনানাশক মাদক উৎপাদন হয় এখানে৷
ছবি: dapd
বৃহৎ জমি, ব্যাপক উৎপাদন
২০১৩ সালের নভেম্বরে জাতিসংঘ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখানে বলা হয় যে, ২০১৩ সালে এর আগের বছর, মানে ২০১২ সালের তুলনায় আফিমের উৎপাদন ৫০ ভাগ বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সেনা প্রত্যাহার কি সঠিক সিদ্ধান্ত?
এই হারে আফিমের উৎপাদন বাড়ায় আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে জাতিসংঘকে৷ ধারণা করা হচ্ছে, সেনা প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানের নিরাপত্তা এবং অর্থনীতির যে ক্ষতি হবে তা পোষাতে আফিমের উৎপাদন আরো বাড়াতে বাধ্য হবেন চাষীরা৷
ছবি: picture alliance/dpa
কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য
জাতিসংঘের অনুমান, ২০১৩ সালে আফগানিস্তানে যে পরিমাণ আফিম উৎপাদন হয়েছে তার মূল্য অন্ততপক্ষে ৯৫ কোটি মার্কিন ডলার৷
ছবি: picture-alliance/ dpa/dpaweb
অর্থের মোহ
স্বল্প উৎপাদনে বিপুল লাভের কারণে পপি উৎপাদনে চাষীদের লোভ বাড়ছে৷ এক কেজি আফিম আফগানিস্তানে বিক্রি হয় ১৫০ মার্কিন ডলারে৷ ফলে এটা তাঁদের জন্য একটি লাভজনক বিনিয়োগে পরিণত হয়েছে৷
ছবি: Getty Images
হেলমন্দ – সমস্যাগ্রস্ত প্রদেশ
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফগানিস্তানে গত বছর যে পরিমাণ আফিম উৎপাদন হয়েছে তার অর্ধেক উৎপাদন হয়েছে দেশটির হেলমন্দ প্রদেশে৷ এই প্রদেশটি জঙ্গি গোষ্ঠী তালেবানের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বৃথা লড়াই
মাদকবিরোধী লড়াইয়ে আফগানিস্তানকে সহায়তা করছে যুক্তরাষ্ট্র৷ ২০১৩ সালেই দু’দেশের মধ্যে ২৫ কোটি মার্কিন ডলারের একটি চুক্তি সই হয়েছে৷ আফগান সরকারের তথ্য অনুযায়ী, দেশের অন্তত ২ লাখ পরিবার আফিম চাষের উপর নির্ভরশীল৷
ছবি: AP
মাদক বাণিজ্য তালেবানের জন্য লাভজনক
আফগানিস্তানের এই মাদক বাণিজ্য থেকে একটা বড় লাভের অংশ যায় তালেবানের হাতে৷ কাবুল সরকার এবং আন্তর্জাতিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অর্থের জন্য আফিম চাষীরা বরাবরই তাদের লাভের একটা অংশ তালেবান জঙ্গিদের হাতে তুলে দেয়৷
ছবি: AP
মাদকাসক্ত শিশু
ব্যাপক উৎপাদনের সাথে ব্যাপক আসক্তির ব্যাপারটাও জড়িত৷ আফগানিস্তানে কেবল যে মাদক উৎপাদন হচ্ছে তাই না, স্থানীয়রা এই মাদক বেচা-কেনাও করে৷ জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুরো দেশে ১৫ লাখ মানুষ মাদকাসক্ত এবং এদের মধ্যে ৩ লাখই নাকি শিশু৷
ছবি: Getty Images
9 ছবি1 | 9
ভোট কোনো গুরুত্বই পেল না!
তিন মাস ধরে চলল প্রেসিডেন্ট নির্বাচন৷ অথচ ভোটের ফলাফল ঘোষণার আগেই নিজেদের মধ্যে আপোশ করে ফেললেন আশরাফ গনি এবং আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ৷ এই ব্যাপারটি অনেকের ভালো লাগেনি৷ তাঁরা মনে করেন, এর ফলে তাঁরা যে কষ্ট করে ভোট দিলেন সেই ভোট কোনো মূল্য পেল না৷ এমন হতাশা নিয়েই কাবুলের হামেদ বললেন, ‘‘আমি দ্বিতীয় পর্বের নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলাম৷ কিন্তু ভোটের তো কোনো গুরুত্বই দেয়া হলো না৷ জাতীয় ঐক্যের সরকার হয়তো ভালোই হবে, তবে তাঁরা আফগানদের ভোটে নির্বাচিত সরকার নয়৷''
সময়ের অপচয়
অশান্তি এড়াতে নির্বাচন কমিশন যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেনি এ নিয়ে অনেক আফগান নাগরিকই ক্ষুব্ধ৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সমস্ত ক্ষোভ আর অসন্তোষের কথা জানাচ্ছেন তাঁরা৷ টুইটারে মোদাসের লিখেছেন, ‘‘বছরের সেরা দুই মিথ্যে: ১.আমরা জনগণের ভোটের প্রশ্নে কোনো আপোশ করবো না৷ ২. এক ঘণ্টার জন্যও আমরা কোনো প্রতারকের সরকারকে বরদাশত করবো না৷''
রামিন আনোয়ারি তাঁদের ভোটকে এমন গুরুত্বহীন হয়ে যেতে দেখেও বিস্মিত নন৷ তাঁর মতে, ‘‘নির্বাচনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বীই ‘বিজয়ী' এবং সময়ের এমন অপচয় মেনে নেয়া শুধু আফগানিস্তানেই সম্ভব৷ গণতন্ত্রের শ্রেষ্ঠ সময় দেখছি!''
জার্মান সংস্থা কনরাড-আডেনাওয়ার ফাউন্ডেশনের প্রধান নিলস ভ্যরমার নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ‘‘যে নির্বাচন হয়েছে তাকে সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছ বলা মুশকিল৷ আফগানিস্তানের অনেকেই মনে করেন, নির্বাচনটাকে শুধু একটি শব্দেই বর্ণনা করা উচিত আর তা হলো – প্রহসন৷'’