1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আফগানিস্তান অভিযান জার্মানিকে বদলে দিয়েছে

ফ্লোরিয়ান ভাইগান্ড/এসি২৯ ডিসেম্বর ২০১৪

জার্মান সেনাবাহিনীর আফগানিস্তান অভিযান জার্মানির বিদেশ নীতির উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে, বলে মনে করেন ডিডাব্লিউ-র ফ্লোরিয়ান ভাইগান্ড৷ তিনি প্রশ্ন তুলেছেন: আফগান অভিযান কি আদৌ সফল হয়েছে?

Deutsche Soldaten in Afghanistan
ছবি: picture-alliance/AP/Anja Niedringhaus

আফগানিস্তানে আফিমের চাষ বাড়ে বৈ কমেনি৷ তালেবানের আক্রমণের সংখ্যাও রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে৷ আফগানিস্তানে জার্মান সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মক্ষেত্র কুন্দুস প্রদেশেও বিদ্রোহীরা গত গ্রীষ্মে তাদের পতাকা উত্তোলন করতে সমর্থ হয়, যদিও স্বল্পকালের জন্য৷

এখন চিন্তা হলো, তালেবান এবং ‘‘ইসলামিক স্টেট'' নাকি আলাপ-আলোচনা শুরু করেছে৷ দেশের একটা বৃহৎ অংশ দৃশ্যত – মূলত দুর্নীতিপরায়ণ – রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নেই; বাসিন্দারা পুনরায় স্থানীয় গোষ্ঠীপতিদের নির্দেশ মেনে চলছে৷ রাজধানী কাবুলের অতি সুরক্ষিত কেন্দ্রও আর নিরাপদ নয়, সেখানে একটির পর একটি আক্রমণ ঘটছে৷ এটা ঠিক ‘‘সাফল্যের'' চেহারা হতে পারে না৷

কিন্তু এই অভিযানকে সম্পূর্ণ নিষ্ফল বললেও ভুল করা হবে৷ ন্যাটোর আইসাফ বাহিনীর তেরো বছরের অভিযান চলাকালীন বহু হাসপাতাল ও স্কুল নির্মিত হয়েছে – বিশেষ করে এত বেশি মেয়ে আর কখনো এর আগে স্কুলে যায়নি৷ এটা প্রধানত বেসামরিক সাহায্যের ফলেই সম্ভব হয়েছে, কিন্তু জার্মান সেনাবাহিনী তথা অপরাপর বিদেশি সৈন্যদের উপস্থিতি ও সংশ্লিষ্ট সাহায্য ছাড়া এ সব কিছু সম্ভব হত না৷ আফগানিস্তানের আমূল পরিবর্তন ঘটেছে৷

সরল বিশ্বাস

২৮ ডিসেম্বর ন্যাটোর আইসাফ মিশন আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হলছবি: Shah Marai/AFP/Getty Images

সেই সঙ্গে জার্মানিও বদলেছে৷ ২০০১ সালে জার্মান সেনাবাহিনী যখন আফগানিস্তান অভিমুখে যাত্রা করে, তখন জার্মানির মানুষদের সরল বিশ্বাস ছিল যে, এ অভিযান নব্বই-এর দশকে বলকান অভিযানের মতোই হবে৷ ভাবা হয়েছিল যে, নাইন-ইলেভেনের পর যে বিমান হানা চালানো হয়েছে, তা-তেই তালেবানকে দমন করা সম্ভব হয়েছে এবং বসনিয়া ও কসোভোর মতো আফগানিস্তানেও শীঘ্র শান্তি ফিরে আসবে৷ তখন সৈন্যরা রাস্তায় চকোলেট বিলি করতে পারবে, বিভিন্ন পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের পথ প্রশস্ত করতে পারবে এবং এভাবেই স্থানীয় জনগণের মন জয় করবে৷ আজ তা বিশ্বাস করা শক্ত, কিন্তু গোড়ার দিকে জার্মান সৈন্যরা যে সব অকুস্থলে কেনা গাড়িতে চড়ে কুন্দুসের বাজারে ঘুরে বেরিয়েছে, সেগুলো ছিল সাধারণ গাড়ি, সাঁজোয়া গাড়ি নয়৷

হাওয়া বদল

কিন্তু জার্মান সৈন্যরা ক্রমেই আরো বেশি বিরোধিতার সম্মুখীন হয়৷ হঠাৎ দেখা যায়, জার্মান সৈন্যরা স্থানীয় গেরিলা যোদ্ধাদের সঙ্গে স্থলযুদ্ধে ব্যাপৃত৷ জার্মান সৈন্যদের নিহত হওয়ার ঘটনা; মানসিক উদ্বেগ বা ‘ট্রমা' নিয়ে যে সব জার্মান সৈন্য দেশে ফিরেছেন, তারা তাদের বীভৎস অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনকে৷ অন্যত্র, নিহত সৈন্যদের পরিবারবর্গ হারানো সন্তান, পতি কিংবা পিতার জন্য শোক করেছেন৷

ফ্লোরিয়ান ভাইগান্ডছবি: DW/P. Henriksen

এটা ছিল যুদ্ধ – এমন একটা শব্দ, যা কোনো রাজনীতিক মুখে নিতে চাননি – অথচ ক্রমেই আরো বেশি কফিন আফগানিস্তান থেকে জার্মানিতে ফিরেছে৷ তারপর ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে এক জার্মান অফিসার কুন্দুসের কাছে দু'টি তেলের ট্যাংকারের উপর বিমান হানার নির্দেশ দেন৷ ঐ বিমান হানায় প্রায় ১০০ নির্দোষ বেসামরিক অধিবাসী প্রাণ হারান৷ দোষ এবার ছিল জার্মান সেনাবাহিনীর৷ স্বদেশে জার্মান জনসাধারণের মধ্যে আফগান মিশনের প্রতি সমর্থন আরো কমতে থাকে এবং সরকারের পক্ষে এই অভিযানের সপক্ষে যুক্তি খুঁজে পাওয়া ক্রমেই আরো কঠিন হয়ে ওঠে৷

আজকের জার্মান বিদেশ নীতি

আজকের জার্মান বিদেশ নীতির আকৃতির সঙ্গে আফগানিস্তানের অভিজ্ঞতার গূঢ় সংযোগ আছে, যে কারণে জার্মানি ২০১১ সালে লিবিয়ার বিরুদ্ধে বিমান হানায় যোগদান করতে দ্বিধা করেছে, এবং ইরাক ও সিরিয়ায় ‘ইসলামিক স্টেট'-এর বিরুদ্ধে মিত্রশক্তিদের বায়ু অভিযানে অংশগ্রহণ করেনি৷জার্মানি যদি আজ একটি শান্তিবাদী দেশ হয়, তবে তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে নয় বরং আফগানিস্তানে আইসাফ মিশনের কারণে৷ ২০০১ সাল যাবৎ জার্মান সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের একটা গোটা প্রজন্ম বাস্তব যুদ্ধের অভিজ্ঞতা করেছেন এবং সেই অভিজ্ঞতা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে নিয়ে এসেছেন৷ এভাবেই আফগানিস্তান জার্মান বিদেশ নীতিকে প্রভাবিত করেছে এবং করছে৷

আগামীতে

অপরদিকে আফগানিস্তানে জার্মান সেনাবাহিনীর অভিযান এমন একটি ধারাবেগ সৃষ্টি করছে, যা রোখার আজ আর কোনো পথ নেই৷ ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রসমাজ জার্মানির অবদান প্রত্যাশা করবে: আফগানিস্তান মিশনের পরবর্তী পর্যায় এবং কুর্দ এলাকাগুলির জন্য নতুন মিশন, উভয়ের ক্ষেত্রেই সেটা প্রযোজ্য৷

সরকারিভাবে জার্মান সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ উত্তর ইরাকে কুর্দ পেশমার্গা যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণে সীমাবদ্ধ থাকবে৷ কিন্তু আফগানিস্তানের ১৩ বছরের অভিজ্ঞতাই দেখিয়েছে, কত তাড়াতাড়ি এ ধরনের একটি মিশন একটি ‘কমব্যাট মিশন'-এ পরিণত হতে পারে৷ এখন জার্মানি কিভাবে তার শান্তিবাদী মনোভাবকে তার আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক দায়িত্বসমূহের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেবে, সেটাই দেখা বাকি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ