চার বছর আগে আফগানিস্তানে ক্ষমতায় দখল করেছিল তালেবানরা৷ দেশটি এখনও গভীর মানবিক সংকটের মধ্যে রয়েছে, কিন্তু তালেবান জঙ্গিরা নানা উপায়ে এ পরিস্থিতিকে তাদের সুবিধার জন্য কাজে লাগাচ্ছে৷
ইইউ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, আফগানিস্তানে দারিদ্র্যের কারণে প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষ বিদেশি সাহায্যের উপর নির্ভরশীল। এটি দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক।ছবি: Wakil Kohsar/AFP
বিজ্ঞাপন
রুশ স্বীকৃতি ও আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা
২০২১ সালের আগস্টে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর কাবুলে সরকারের পতন হয় এবং তালেবানরা ক্ষমতা দখল করে। চার বছর পর তালেবানদের ক্ষমতা আরও দৃঢ় হয়েছে। এমনকি জার্মানিসহ কিছু সরকার কাবুলের সরকারে সাথে কার্যত সম্পর্ক স্থাপন করছে।
রাশিয়া গত জুলাই মাসে প্রথম দেশ হিসেবে তালেবানদের আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়। প্যারিসের ইনালকো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গবেষক সরদার রহিমী বলেন, "এভাবে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে রাশিয়া যা মার্কিনিরা চার বছর আগে সেনা প্রত্যাহারের মাধ্যমে স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিয়েছিল।"
চীনও তালেবান শাসনের সাথে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখছে। বেইজিং আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি, তবে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কূটনৈতিক প্রোটোকল অনুযায়ী তালেবান রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র গ্রহণ করেন।
আফগানদের যে কারণে দেশে ফেরাতে মরিয়া পাকিস্তান
পাকিস্তানে বসবাসরত আফগান শরণার্থীদের অনেকেই একসময় যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করেছেন৷ এ কারণে তালেবান শাসনামলে স্বদেশে ফেরা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন তারা৷ তবুও কেন তাদেরকে দেশে পাঠাতে মরিয়া পাকিস্তান?
ছবি: FAROOQ NAEEM/AFP/Getty Images
পাকিস্তানে এক আফগান নারীর জীবন
তালেবান ক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্তান ছাড়েন ফাতিমা (ছদ্মনাম)৷ আফগানিস্তানে তিনি একটি মার্কিন বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন৷ পাকিস্তানে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে আসায় মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছেন৷ এরইমাঝে ইসলামাবাদের যেই ভবনে থাকেন, সেখানে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ৷ ফাতিমা বাসায় না থাকায় পুলিশ তাকে পায়নি, তবে তার ভাইকে ধরে নিয়ে গেছে৷ ভিসার মেয়াদ না পারলে ফিরে যেতে হবে দেশে৷ গেলে কী হবে ফাতিমা তা জানেন না৷
ছবি: DW
শরণার্থীদের বিষয়ে আবারো কঠোর পাকিস্তান
২০২৩ সালে আফগানিস্তানের শরণার্থীদের বিষয়ে কঠোর হয়ে উঠেছিল পাকিস্তান সরকার৷ সেই সময় হাজার হাজার আফগানকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়৷ চলতি বছরের শুরু থেকে আফগান শরণার্থীদের বিষয়ে আবার কঠোর হয়ে ওঠে পাকিস্তান সরকার৷
ছবি: Wakil Kohsar/AFP/Getty Images
৩১ মার্চ ডেডলাইন
অবৈধভাবে থাকা বিদেশিদের ৩১ মার্চের মধ্যে দেশ ত্যাগের নির্দেশনা দিয়েছে পাকিস্তান সরকার৷ এদিকে লাগাতার অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ৷ ইসলামাবাদ এবং রাওয়ালপিণ্ডিতে বসবাসরত আফগান শরণার্থীদেরকে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেশ ত্যাগের মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানালেন আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী ওমর গিলানি৷
ছবি: Fatima Nazish/DW
ইসলামাবাদে ১ হাজার আটক
ওমর গিলানি জানান, ইসলামাবাদে চলতি বছর এখন পর্যন্ত এক হাজার আফগানক শরণার্থীকে আটক করা হয়েছে৷ এদিকে ইসলামাবাদ এবং রাওয়ালপিণ্ডি থেকে ১৮ হাজার আফগানকে জোরপূর্বক দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷
ছবি: Abdul Majeed/AFP/Getty Images
শঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার প্রত্যাশায় থাকা আফগানরা
আফগান শরণার্থী আমিন শরণার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার জন্য পাকিস্তান অপেক্ষারত৷ কয়েকদিনের মধ্যেই তার যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু ডনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে মার্কিন সরকারের রিফিউজি সেটেলমেন্ট প্রোগ্রাম বাতিল করে দেয়৷ প্রায় ২০ হাজার আফগান শরণার্থী যুক্তরাষ্ট্রের এই কর্মসূচির আওতায় দেশটিতে পাড়ি জমানোর লক্ষ্যে পাকিস্তানে অপেক্ষমান৷ তাদের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চয়তায়৷
ছবি: DW
কেন কঠোর হচ্ছে পাকিস্তান?
পাকিস্তানে বছরের পর বছর ধরে অফগান শরণার্থীরা বসবাস করছেন৷ কিন্তু তালেবান ক্ষমতায় আসার পর এই শরণার্থীদের বিষয়ে কঠোর হয় পাকিস্তান সরকার৷ বিশ্লেষকেরা বলছেন, তেহরিক-ই-তালেবানসহ বেশ কিছু সংগঠনের তৎপরতা থামাতে আফগানিস্তান ব্যর্থ বলে মনে করে পাকিস্তান৷ তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের নিরাপত্তারক্ষীদের উপর বেশ কয়েকবার হামলাও চালিয়েছে৷
ছবি: MOHSEN KARIMI/AFP
‘আফগানিস্তানের উপর চাপ তৈরি করতে চায় পাকিস্তান’
আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী গিলানির মতে, আফগান শরণার্থীদের ‘জিম্মি’ হিসেবে ব্যবহার করছে পাকিস্তান সরকার৷ এর মাধ্যমে আফগান সরকারের উপর চাপ অব্যাহত রাখতে চায় পাকিস্তান৷ অর্থাৎ, দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন তৈরি হলে পাকিস্তান সরকার শরণার্থীদের বিষয়টিকে সামনে আনে৷
ছবি: SOHAIL SHAHZAD/EPA-EFE
7 ছবি1 | 7
জার্মানি থেকে আফগানিস্তানে ফেরত
২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর জার্মানি আফগানিস্তানে দুটি প্রত্যাবাসন ফ্লাইটের আয়োজন করে। মোট ১০৯ জন আফগান নাগরিককে তাদের দেশে পাঠানো হয়েছে - যাদের অর্ধেকের বেশি বিভিন্ন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
মানবাধিকার সংস্থা প্রো অ্যাসাইল এই প্রত্যাবাসন ফ্লাইটগুলোকে "আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন" বলে নিন্দা জানিয়েছে।
ইরান ও পাকিস্তান থেকে ব্যাপক নির্বাসন
ইউরোপ থেকে বিতাড়ণের সংখ্যা আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশ ইরান ও পাকিস্তান থেকে ব্যাপক বিতাড়ণের তুলনায় নগণ্য। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর ২০২৫ সালের প্রথম সাত মাসে শুধু এই দুই দেশ থেকে ২১ লাখের বেশি প্রত্যাবাসন নথিভুক্ত করেছে।
তালেবান শাসনে নারীরা ‘অদৃশ্য’
02:10
This browser does not support the video element.
নারী অধিকার সংকট
তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে নারীদের পুরোপুরি জনজীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ১২ বছরের বেশি বয়সি প্রায় ১৪ লাখ মেয়ে আর স্কুলে যেতে পারে না, এবং তরুণী নারীদের উচ্চ বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
সাবেক আফগান কূটনীতিক শুকরিয়া বরকজাই বলেন, "নিজের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তালেবানরা নারীদের ব্যবহার করছে। তারা তাদের শাসনকে বৈধতা দেয়ার জন্য নতুন সীমাবদ্ধতার মাধ্যমে নারীদের উপর চাপ বাড়ায়।"
মানবিক সংকট
ইইউ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, আফগানিস্তানে দারিদ্র্যের কারণে প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষ বিদেশি সাহায্যের উপর নির্ভরশীল। এটি দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, প্রতি চারজনের মধ্যে একজন আফগান খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ইউএসএআইডি বন্ধ করে দেওয়ায়মানবিক সংকট আরও গভীর হয়েছে, যার ফলে ৩০ লাখ মানুষ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না এবং ৪২০টি ক্লিনিক বন্ধ হয়ে গেছে।