আফগানিস্তানে আর কোনো জার্মান সেনা নেই। মঙ্গলবার ৫৭০ জন সেনাকে দেশে ফিরিয়ে নিয়েছে জার্মানি।
বিজ্ঞাপন
আফগানিস্তানের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। তালেবান এখন একের পর এক জেলা দখল করছে। সেনার সঙ্গে তাদের নিয়মিত সংঘর্ষ চলছে। এই পরিস্থিতিতে জার্মানি তাদের সব সেনা দেশে ফিরিয়ে নিল। ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অ্যামেরিকাও তাদের সেনা আফগানিস্তান থেকে ফিরিয়ে নেবে।
দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর জার্মান সেনা আফগনিস্তানে ছিল। জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, সেনা এখন ঘরে ফিরছে। এর মধ্যে দিয়ে এক ঐতিহাসিক অধ্যায় শেষ হলো। জার্মান সেনা পেশাদারিত্ব ও দৃঢ়তার সঙ্গে আফগানিস্তানে তাদের কাজ করেছে বলে তিনি জনিয়েছেন।
জার্মান সেনাবাহিনীর তরফ থেকেও জানানো হয়েছে, আফগানিস্তান থেকে তাদের সব সেনা দেশে ফিরছে। সেখানে আর একজনও জার্মান সেনা নেই। তবে নিরাপত্তার কারণেই তারা এনিয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেয়নি। আফগানিস্তানে সবমিলিয়ে জার্মানির এক হাজার একশ জন সেনা ছিল। মে মাস থেকে সেনা প্রত্যাহারের কাজ শুরু হয়।
জার্মান সেনা আফগানিস্তান পৌঁছয় ২০০২ সালের জানুয়ারিতে। জার্মান সেনাকে প্রথমে বলা হয়েছিল, তালেবানের সঙ্গে লড়াই করা তাদের কাজ নয়, তাদের কাজ হলো আফগানিস্তানের পরিস্থিতি যাতে স্থিতিশীল হয় তার জন্য কাজ করা। সবমিলিয়ে প্রায় দেড় লাখ জার্মান সেনা আফগানিস্তান গেছেন। অনেকে একাধিকবার সেখানে গেছেন। তাদের খরচ সামলাতে এক হাজার ২৫০ কোটি ইউরো খরচ হয়েছে। আফগানিস্তানে ৫৯ জন জার্মান সেনা মারাও গেছেন।
আফগানিস্তান যুদ্ধের যত ক্ষয়ক্ষতি
আফগানিস্তান থেকে দেশে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে মার্কিন সেনাদের৷ দেড় যুগেরও বেশি আগে শুরু হওয়া এই যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Hoshang Hashimi/AP Photo/picture alliance
আফগানিস্তান যুদ্ধ নিয়ে গবেষণা
আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটি৷ গবেষণায় নিহতের সংখ্যা, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয়ের পরিমাণসহ নানা দিক বেরিয়ে এসেছে৷ এ যুদ্ধে পাকিস্তানের কেমন ক্ষতি হয়েছে উঠে এসেছে সেই তথ্যও৷
ছবি: DW/S. Tanha
নিহতের সংখ্যা
২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে দুই লক্ষ ৪১ হাজার মানুষ মারা গেছেন৷
ছবি: picture-alliance/ASSOCIATED PRESS/R. Gul
আছে বেসামরিক লোকও
এই দুই দশকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের ৭১ হাজারের বেশি বেসামরিক মানুষ মারা গেছেন৷ তাছাড়া দুই হাজার চারশ ৪২ জন মার্কিন সেনা, প্রতিরক্ষা দপ্তরের ছয়জন বেসামরিক লোক, তিন হাজার নয়শ ৩৬ জন মার্কিন ঠিকাদার এবং যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র জোটের এক হাজার একশ ৪৪ জন সেনা মারা গেছেন৷ যুদ্ধে ৬৬ হাজার থেকে ৬৯ হাজার আফগান সেনা ও পুলিশ মারা গেছে, পাকিস্তানের সেনা মারা গেছে ৯,৩১৪ জন৷
ছবি: picture alliance/dpa/J. Jalali
আছে সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীও
গবেষণা পত্রটি বলছে, এ সময়ের মধ্যে ১৩৬ জন সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী এবং ৫৪৯ জন মানবাধিকারকর্মী মারা গেছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/Shah Marai
সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে
গবেষণায় সরাসরি যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা প্রকাশ করা হয়েছে৷ কিন্তু যুদ্ধ চলাকালীন রোগবালাই, খাবার কিংবা পানির সংকটেও আরো অনেক মানুষ নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Habibi
ব্যয়ের পরিমাণ
যুদ্ধ চলাকালীন এ বিশ বছরে মার্কিন যুত্তরাষ্ট্রকে গুণতে হয়েছে দুই দশমিক দুই ছয় ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার৷
ছবি: Imago Images/Zuma/A. Dinner
সৈন্য ফেরত নেওয়ার ঘোষণা
গত বুধবার আফগানিস্তান থেকে নিজেদের সেনা ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন৷ ১ মে থেকে সৈন্য প্রত্যাহার শুরু করার কথা বলেন তিনি৷ এদিকে, বাইডেনের ঘোষণার পর ন্যাটো বাহিনীও তার সদস্যদের ফিরিয়ে আনার কথা জানায়৷
ছবি: Andrew Harnik/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
এরপর কী হবে?
চারটি সামরিক বিমান বুধবার ৫৭০ জন সেনাকে নিয়ে জার্মানি পৌঁছাবে। জার্মান সেনা যে শিবিরে ছিল তা আফগান সেনার হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। জার্মানির সেনা ছিল ন্যাটো বাহিনীর অন্তর্গত।
জার্মানি পৌঁছনোর পর তাদের ১৪ দিন নিভৃতবাস করতে হবে। দেখা হবে, তারা করোনার ডেল্টা প্রজাতির ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন কি না। একটি জার্মান পত্রিকার খবর, এই মাসের গোড়ায় একজন জার্মান সেনা ডেল্টা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন।