এ বছরের শেষ নাগাদ আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সৈন্য ফিরে যাওয়ার কথা৷ তবে আফগান সরকার দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর না করলে তার আগেই সব সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন বারাক ওবামা৷
বিজ্ঞাপন
২০১০ সালে এক লক্ষ মার্কিন সৈন্য ছিল আফগানিস্তানে৷ তবে সংখ্যাটা কমে এখন ৩৩ হাজারে এসে ঠেকেছে৷ সব মার্কিন সৈন্য ফিরিয়ে নেয়া হলে আফগান সরকার তালেবানকে মোকাবিলা করতে পারবে কিনা এ নিয়ে সংশয় রয়েছে৷ তা সত্ত্বেও আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রস্তাবিত নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে অনিচ্ছা প্রকাশ করে আসছেন৷ উপরন্তু গত কয়েক মাস ধরে আফগানিস্তানের আবাসিক এলাকায় সেনা অভিযান এবং বিমান হামলা বন্ধ করার জন্য ওবামা সরকারের ওপর চাপ বাড়িয়ে আসছেন তিনি৷ দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা চুক্তি (বিএসএ) স্বাক্ষরে তাঁর এই অনীহার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আফগানিস্তানের সম্পর্কের উষ্ণতা কমছে৷ ওবামার হুমকি তারই বহিপ্রকাশ৷
আফগানিস্তানে জীবন ও যুদ্ধ
দীর্ঘদিন ধরে আফগানিস্তানের ছবি তুলছেন ইরানের ফটোগ্রাফার মাজিদ সাঈদি৷ ছবিগুলো অনেক আন্তর্জাতিক পুরস্কারও এনে দিয়েছে তাঁকে৷ চলুন তাঁর ক্যামেরার চোখে দেখা যাক আফগানিস্তানকে৷
ছবি: Majid Saeedi
খেলনা!
কাবুলে যু্দ্ধাহতদের জন্য তৈরি একটা নকল হাত নিয়ে খেলছে দুই কিশোরী৷ এমন কিছু ছবিই তেহরানের মাজিদ সাঈদিকে এনে দিয়েছে বেশ কিছু পুরস্কার৷
ছবি: Majid Saeedi
ছবিই বলে হাজার কথা
১৬ বছর বয়স থেকে ছবি তুলছেন মাজিদ৷ মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের কারণে মানবিক বিপর্যয়ের দিকেই তাঁর সমস্ত মনযোগ৷ জার্মানির ডেয়ার স্পিগেল, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমসের মতো ম্যাগাজিন এবং আন্তর্জাতিক পত্রিকায় ছাপা হয় তাঁর তোলা ছবি৷
ছবি: Majid Saeedi
আফগানিস্তানের শিশুরা
ডিডাব্লিউকে সরবরাহ করা মাজিদের ছবির অনেকগুলোতেই ফুটে উঠেছে আফগান শিশুদের জীবনে যুদ্ধের প্রভাব৷ এ ছবিটি যুদ্ধের কারণে হাত হারানো এক আফগান শিশুর৷
ছবি: Majid Saeedi
মাদকের অভিশাপ
আফগানিস্তানের খুব বড় এক সমস্যা মাদক৷ বলা হয়ে থাকে বিশ্বের শতকরা ৯০ ভাগ মাদকদ্রব্যই নাকি উৎপন্ন হয় আফগানিস্তানে৷ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আফিম হয় দেশটিতে৷ দেশের অনেক নাগরিক আফিমসেবী৷ জাতিসংঘের দেয়া তথ্য অনুযায়ী আফগানিস্তানের অন্তত তিন লক্ষ শিশু নিয়মিত আফিম সেবন করে৷
ছবি: Majid Saeedi
রোল কল
কাবুলের এক অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ শুরুর আগে ক্যাডেটদের রোল কল চলছে৷ জার্মান সেনাবাহিনী ‘বুন্ডেসভেয়ার’ আফগান নিরাপত্তাকর্মীদের অনেক আগে থেকেই প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিল৷ প্রশিক্ষণের লক্ষ্য, আফগান সেনাবাহিনী এবং পুলিশকে দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় আত্মনির্ভরশীল করে তোলা৷ ২০১৪ সালের শেষেই অবশ্য আফগানিস্তান থেকে নিজেদের সেনা সদস্যদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে জার্মানি৷
ছবি: Majid Saeedi
ভয়ংকর শৈশব
স্কুলে লেখাপড়া করতে যাওয়ার সুযোগ শিশুদের কমই মেলে৷ স্কুলে গেলে নগণ্য কারণেও হতে হয় শিক্ষকের কঠোর শাসনের শিকার৷ তা সহ্য করেও পুরো সময় থাকা হয়না, পরিবারের জন্য টাকা রোজগার করতে আগেভাগেই স্কুল থেকে বেরিয়ে পড়তে হয় তাদের৷ আফগানিস্তানে শিক্ষার হার খুবই কম৷ ২০১১ সালে জার্মান সরকারের উদ্যোগে একটি তথ্যবিবরণী প্রকাশ করা হয়েছিল৷ তখন আফগানিস্তানের শতকরা ৭২ ভাগ পুরুষ আর ৯৩ ভাগ নারীই ছিল নিরক্ষর৷
ছবি: Majid Saeedi
বোরখা এবং পুতুল
আফগান নারীরা পুতুল বানাতে শেখার ক্লাসে৷ মালয়েশিয়ার একটি বেসরকারি সংস্থার অর্থায়নে এখানে পুতুল বানাতে শেখানো হয় তাঁদের৷ আফগান নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্যই এ উদ্যোগ৷
ছবি: Majid Saeedi
তালেবানের প্রতিশোধ
২০১১ সালে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করার পরই আফগানিস্তানে হামলা চালায় তালেবান৷ প্রতিশোধমূলক সে হামলায় প্রাণ যায় চারজনের, আহত হয়েছিলেন ৩৬ জন৷ ছবিতে দু’জন আহতকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Majid Saeedi
খেলাধুলা
হাড়ভাঙা খাটুনি শেষে একটু বিশ্রাম৷ আফগানিস্তানে শরীর চর্চা খুব জনপ্রিয়৷
ছবি: Majid Saeedi
যুদ্ধের আবাদ
গত ৩০টি বছর ভীষণ প্রভাব ফেলেছে আফগানদের জীবনে৷ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা যায় যুদ্ধের প্রভাব৷
ছবি: Majid Saeedi
মাদ্রাসা
কান্দাহারের মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত শিশুরা৷
ছবি: Majid Saeedi
হত্যার প্রশিক্ষণ
কুকুরের লড়াইও আফগানিস্তানে খুব জনপ্রিয়৷ কুকুরদের এমনভাবে লড়াই করতে শেখানো হয় যাতে তারা প্রতিপক্ষকে একেবারে মেরে ফেলে৷ কুকুরের জীবনেও যুদ্ধের প্রভাব!
ছবি: Majid Saeedi
12 ছবি1 | 12
মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগনকে দেয়া ওবামার এক নির্দেশে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে উঠেছে৷ পেন্টাগনকে প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেছেন, আফগানিস্তান বিএসএ স্বাক্ষর না করলে সে দেশ থেকে যেন সব সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়া হয়৷ পরে হামিদ কারজাই-এর সঙ্গেও টেলিফোনে এ নিয়ে কথা বলেছেন ওবামা৷ টেলিফোন কথোপকথনে তিনি জানান, চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে আফগানিস্তানে সীমিত সংখ্যক সৈন্য রাখতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র৷ পেন্টাগনকে দেয়া ওবামার নির্দেশ এবং কারজাই-এর সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের বিষয়টি এক বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস৷
যুক্তরাষ্ট্র আগে থেকেই বলে আসছে বিএসএ স্বাক্ষর না করা হলে আফগানিস্তানে তাদের সৈন্য মোতায়েন রাখা সম্ভব হবেনা৷ দেশটি মনে করে, এ বছরের শেষ নাগাদ সব সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা থাকলেও এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেই কেবল তারপরও আফগানিস্তানের নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু মার্কিন সৈন্য রাখা আইনসম্মত হবে৷
তবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমাগত উদ্যোগ সত্ত্বেও আফগানিস্তান এখনো বিএসএ স্বাক্ষরে আগ্রহ দেখায়নি৷ গত বছরও আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই-এর সঙ্গে এ বিষয়ে টেলিফোনে কথা বলেছিলেন বারাক ওবামা৷ দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে অনুষ্ঠিত ২৫ জুনের সেই আলোচনার পর আট মাস অতিবাহিত হলেও আফগানিস্তান আগের অবস্থানে এখনো অনড়৷