আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার ভুল সিদ্ধান্ত: বুশ
১৫ জুলাই ২০২১
অ্যামেরিকান ও ন্যাটো সেনা প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানের নারীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত জর্জ ডাব্লিউ বুশ৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বাইডেন প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে ভুল হিসেবে অভিহিত করেছেন সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷
বিজ্ঞাপন
টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষিতে ২০০১ সালে আফগানিস্তানে সৈন্য পাঠায় জর্জ ডাব্লিউ বুশ প্রশাসন৷ দুই দশক পর সেখান থেকে সব সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন জো বাইডেন৷ একে ভুল হিসেবে অভিহিত করে ডয়চে ভেলেকে বুশ বলেন, ‘‘আফগান নারী ও মেয়েরা যে অবর্ণনীয় ক্ষতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে তা নিয়ে আমি ভীত৷’’ তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিদেশি সেনাদের সঙ্গে কাজ করা আফগান অনুবাদকদের নিয়ে৷ ‘‘তাদেরকে এইসব নিষ্ঠুর মানুষের (তালেবান) হাতে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে যা আমার হৃদয়কে ভেঙে দিচ্ছে,’’ বলেন তিনি৷
সাক্ষাৎকারে বুশ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন সৈন্য প্রত্যাহার নিয়ে তিনিও একই মনোভাব পোষন করেন বলে তার ধারণা৷
আফগানিস্তান নিয়ে বুশের এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে কাবুল ভিত্তিক সাংবাদিক আলী লতিফি ডয়চে ভেলেকে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘‘এটা খুবই কৌতুহলোদ্দীপক ব্যাপার যে তিনি হঠাৎ আফগান নারী ও শিশুদের নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন৷ যেখানে তার যুদ্ধ (বুশ প্রশাসনের) অনেককে বিধবা ও অনেক শিশুকে এতিমে পরিণত করেছে৷’’
আফগানিস্তান যুদ্ধ: কজন মারা গেলেন, খরচ কত হলো?
প্রায় ২০ বছর পর আফগানিস্তানে যুদ্ধ শেষ হতে যাচ্ছে৷ এই সময়ে কোন পক্ষের কতজন প্রাণ হারিয়েছেন, খরচ কত হয়েছে তার খবর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ও ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তথ্যের উৎস
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনেডি স্কুলের অধ্যাপক লিন্ডা বিলমেস ও ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কস্টস অফ ওয়ার প্রজেক্টের’ তথ্য ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস, এপি৷ ২০০৩ থেকে ২০১১ পর্যন্ত আফগানিস্তানের পাশাপাশি ইরাকেও যুদ্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ এই সময়ে অনেক মার্কিন সেনা দুই দেশেই যুদ্ধ করেছেন৷ ফলে এপির দেয়া কিছু তথ্যে দুটি যুদ্ধেরই পরিসংখ্যান আছে৷
ছবি: AP
যুদ্ধের শুরু
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলার এক সপ্তাহ পর ১৮ সেপ্টেম্বর মার্কিন কংগ্রেস হামলাকারীদের বিরুদ্ধে লড়তে মার্কিন বাহিনীকে অনুমতি দিয়েছিল৷ প্রায় ২০ বছর পর আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রাণহানি
২০০১ সালে আফগান যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত মারা গেছেন এক লাখ ৭২ হাজার ৩৯০ জন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মার্কিন ও পশ্চিমা বাহিনীতে প্রাণহানি
যুদ্ধে মারা যাওয়া মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্যের সংখ্যা দুই হাজার ৪৪৮ জন৷ এছাড়া মার্কিন কন্ট্রাক্টর মারা গেছেন তিন হাজার ৮৪৬ জন৷ যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া আফগানিস্তানে যুদ্ধ করা ন্যাটো ও অন্যান্য দেশের এক হাজার ১৪৪ জন ব্যক্তিও মারা গেছেন৷
ছবি: AFP/T. Watkins
আফগান নাগরিকের মৃত্যু
যুদ্ধে আফগানিস্তানের সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর প্রায় ৬৬ হাজার সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন৷ সাধারণ নাগরিক মারা গেছেন ৪৭ হাজার ২৪৫ জন৷ তালেবান ও অন্যান্য বিরোধী যোদ্ধা মারা গেছেন ৫১ হাজার ১৯১ জন৷
ছবি: Rahmat Gul/AP Photo/picture alliance
ত্রাণকর্মী ও সাংবাদিক
আফগান যুদ্ধে ৪৪৪ জন ত্রাণকর্মী ও ৭২ জন সাংবাদিকও মারা গেছেন৷
ছবি: Reuters
খরচ
২০২০ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান ও ইরাকে যুদ্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্র আনুমানিক প্রায় দুই ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করেছে৷ বাংলাদেশি মুদ্রায় এটি প্রায় ১৬৯ লাখ ৫৪ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা৷
ছবি: Getty Images/A. Renneisen
খরচ আরো আছে, থাকবে
যুদ্ধে খরচের জন্য দুই ট্রিলিয়ন ডলার জোগাড় করতে যে ঋণ নেয়া হয়েছে তার সুদ হিসেবে এখন পর্যন্ত আনুমানিক ৯২৫ বিলিয়ন ডলার দেয়া হয়েছে৷ ২০৩০ সালে সুদের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে দুই ট্রিলিয়ন ডলারে, যা যুদ্ধে খরচের সমপরিমাণ৷ খরচ সেখানেই থামবে না৷ ২০৫০ সাল নাগাদ সুদের পরিমাণ হতে পারে সাড়ে ছয় ট্রিলিয়ন ডলার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/File/Lt. Col.. Leslie Pratt, US Air Force
সেনাদের দেখভালের খরচ
যুদ্ধ শেষ হলেও খরচ শেষ হচ্ছে না, হবে না৷ আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধে অংশ নেয়া প্রায় ৪০ লাখ সেনাকে আজীবন দেখভাল করতে হবে৷ এতে প্রায় ১.৬ থেকে ১.৮ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হতে পারে বলে জানিয়েছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লিন্ডা বিলমেস৷
ছবি: Wakil Kohsar/AFP/Getty Images
আফগান যুদ্ধের খরচ নিয়ে কম আগ্রহ
যুক্তরাষ্ট্রের ‘সিনেট অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন্স ডিফেন্স সাবকমিটি’ ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় তার খরচ নিয়ে ৪২ বার আলোচনা করেছে৷ একই কমিটি আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের খরচ নিয়ে আলোচনা করেছে মাত্র পাঁচবার৷ আর সিনেটের ফাইন্যান্স কমিটি আলোচনা করেছে মাত্র একবার৷
ছবি: PATRICK BAZ/AFP/Getty Images
10 ছবি1 | 10
চলতি বছরের মে মাস থেকেই আফগানিস্তান থেকে সেনা সরিয়ে নিতে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো৷ মার্কিন সামরিক বাহিনীর সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী এরই মধ্যে দেশটি থেকে ৯০ ভাগ সেনা তারা প্রত্যাহার করেছে৷ ৩১ আগস্টের মধ্যেই অবশিষ্ট সেনাদের ফিরয়ে আনা হবে বলে উল্লেখ করেছেন বাইডেন৷
জুনেই আফগানিস্তান থেকে নিজেদের সমস্ত সেনা প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জার্মানি৷ উত্তর আফগানিস্তানের মাজার-ই-শরিফে জার্মানির কনস্যুলেট জেনারেলও এরই মধ্যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ আফগানিস্তান অভিযান সমাপ্তি ঘোষণা করেছে ইটালি৷ পোল্যান্ডও সম্প্রতি তাদের সব সৈন্য ফিরিয়ে এনেছে৷
দেশটিতে মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদর দপ্তর হিসেবে পরিচিত কাবুলের বাগরাম বিমান ঘাঁটি থেকে ২ জুলাই সব সৈন্য প্রত্যাহারের মাধ্যমে সেখানকার কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো৷ এরই মধ্যে দেশটির রাজনৈতিক ও সামরিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব আফগান সরকারের হাতে ন্যাস্ত করেছে তারা৷ অন্যদিকে আফগানিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে দেশটির উল্লেখযোগ্য একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে তালেবানের হাতে৷ এমন প্রেক্ষিতে আফগানিস্তানে পুনরায় হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন বাইডেন৷ ‘নাইন-ইলেভেনের সন্ত্রাসী হামলায় জড়িতদের ও ওসামা বিন লাদেনের বিচারের মধ্য দিয়ে’ যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে বলে গত সপ্তাহে মত প্রকাশ করেন তিনি৷ বাইডেন বলেন, ‘আফগানিস্তানকে গড়ার জন্য’ যুক্তরাষ্ট্র দেশটিতে যায়নি৷ নিজেদের ভবিষ্যৎ ও দেশ কিভাবে চলবে তা নির্ধারণের দায়িত্ব আফগান জনগণের৷
Afghanistan troop withdrawal a mistake, says George W. Bush
01:04
কিন্তু ২০ বছরের যুদ্ধ শেষে আফগানিস্তানকে কেমন রেখে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো, এমন প্রশ্নের উত্তরে সাংবাদিক আলী লতিফি বলেন, ‘‘বাস্তবতা হচ্ছে তালেবান এখনও সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য হুমকি, এখনও আমরা যুদ্ধের মধ্যে আছি এবং এখনও আমরা জিজ্ঞাসা করছি নারী, শিশু, অনুবাদকদের কী হবে, ২০ বছর পরে এসেও এমনটাই পরিস্থিতি৷’’
কেট মার্টায়ার/এফএস
তালেবানের সঙ্গে আফগান কমান্ডোদের লড়াই
আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনারা চলে যেতে শুরু করেছে৷ এই সুযোগে বিভিন্ন এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে তালেবান৷ তাদের রোখার চেষ্টা করছেন কমান্ডোরা৷
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
পুলিশ কর্মকর্তা উদ্ধার অভিযান
মঙ্গলবার কান্দাহারের এক পুলিশ চেকপোস্টে অবরুদ্ধ হয়ে পড়া এক পুলিশ কর্মকর্তাকে উদ্ধার করতে গিয়েছিল আফগান স্পেশাল ফোর্স৷ সেই সময় তালেবানের সঙ্গে তাদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়৷ ছবিতে স্পেশাল ফোর্সের দুটি হামভি (হাই মোবিলিটি মাল্টিপারপাস হুইলড ভেহিকল) সামরিক ট্রাক দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
তালেবানকে লক্ষ্য করে গুলি
স্পেশাল ফোর্সের সদস্যদের লক্ষ্য করে তালেবান গুলিবর্ষণ শুরু করলে স্পেশাল ফোর্সের এক সদস্য হামভি থেকে পাল্টা গুলি ছোড়া শুরু করেন৷
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
অভিযানের উদ্দেশ্যে যাত্রা
পুলিশ কর্মকর্তা উদ্ধার অভিযানে যাচ্ছে স্পেশাল ফোর্সের গাড়িবহর৷ তাদের জায়গা করে দিতে স্পেশাল ফোর্সের এক সদস্য রাস্তার অন্যান্য গাড়ি আটকে রেখেছেন৷
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
প্রস্তুতি
নির্দিষ্ট এলাকায় পৌঁছে গেছেন স্পেশাল ফোর্সের সদস্যরা৷ এবার সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন তারা৷
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
ক্যাম্পে ফেরা
অভিযান শেষে ক্যাম্পে ফিরে হামভি থেকে নামছেন স্পেশাল ফোর্সের দুই সদস্য৷
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
এবার বিশ্রাম
বিশ্রামের আগে পরিষ্কার হয়ে নিচ্ছেন স্পেশাল ফোর্সের সদস্যরা৷
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
বাড়ি বাড়ি খোঁজ
এই ছবিটি সোমবারের৷ কান্দাহারে তালেবানের বিরুদ্ধে এক মিশন পরিচালনার সময় একটি বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছিল স্পেশাল ফোর্স৷ সেই সময় ঐ বাড়ির একজনের সঙ্গে কথা বলছেন স্পেশাল ফোর্সের এক সদস্য৷
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
নামাজ
ছবিটি রোববারের৷ কান্দাহারে তালেবানের বিরুদ্ধে কমব্যাট মিশন শুরুর আগে হাইওয়েতে নামাজ পড়ছেন স্পেশাল ফোর্সের এক সদস্য৷