জার্মান সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত চার-তারকা জেনারেল এগোন রামস আফগানিস্তানে তালেবানের এত দ্রুততার সঙ্গে অগ্রসর হওয়া দেখে ‘বিস্মিত'৷
বিজ্ঞাপন
২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত পশ্চিমা দেশগুলোর যৌথ বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন রামস৷ সামরিক জোট ন্যাটোর নেতৃত্বে আফগানিস্তানে ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাসিসটেন্স ফোর্স- আইএসএফ এর দায়িত্বে ছিলেন তিনি৷
ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে রামস বলেন, ‘‘তালেবান খুব, খুব দ্রুততার সঙ্গে এগোচ্ছে৷ এটাই আমাকে অবাক করছে৷’’
ন্যাটোর সৈন্য প্রত্যাহার নিয়ে প্রশ্ন
আগস্টের মধ্যেই আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সিদ্ধান্তেও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন রামস৷ তিনি মনে করেন এত দ্রুততার সঙ্গে সৈন্য প্রত্যাহার ন্যাটোর দায়িত্বশীলতা নিয়ে অনেকগুলো প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে৷
এই সিদ্ধান্তকে ‘ভুল' মনে করেন রামস৷ এই প্রত্যাহারের ঘোষণার সঙ্গে ২০১০ সালে তার অবসরে যাওয়ার সময় সেনা উপস্থিতি সংকোচনের তুলনাও করেন রামস৷
তিনি বলেন, ‘‘২০১০ সালেও আমরা এর বদলে সেনা পুনরায় মোতায়েন করে আইএসএফ মিশন চালু রাখার কথা বলেছিলাম৷ আমি বলতে চাই, তখন আমরা যে ভুলের শুরু করেছিলাম এই মাসে সেটা শেষ হচ্ছে৷’’
'আফগানিস্তানে পরাজিত অ্যামেরিকা'
পরাজয় স্বীকার করছেন আফগানিস্তানে লড়াই করা মার্কিন সেনা অফিসাররাই। তুলনা টানছেন ভিয়েতনামের।
ছবি: Goran Tomasevic/REUTERS
বিশ বছরের যুদ্ধ
৯/১১ হামলার পরে আফগানিস্তানে প্রথম সেনা পাঠান তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ। জানিয়েছিলেন, এ হলো সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই।
ছবি: picture-alliance/dpa
লাদেন কোথায়
আল কায়দা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে বার করতেই বহু বছর সময় লেগে গেছে মার্কিন সেনার। শেষপর্যন্ত পাকিস্তানে তাকে হত্যা করা হয়। আফগানিস্তানে বহু তালেবান নেতার মৃত্যু হয়েছে মার্কিন সেনার হাতে।
ছবি: picture-alliance/dpa/Ausaf
মৃত্যুমিছিল সর্বত্র
গত প্রায় বিশ বছরে শুধু আফগানিস্তানে প্রায় সাড়ে তিন হাজার ন্যাটো বাহিনীর মৃত্যু হয়েছে। যার অধিকাংশই মার্কিন। ৪৭ হাজার আফগান নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। ৬৬ হাজার আফগান সেনা মারা গেছেন। লাখ লাখ আফগান দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।
ছবি: Getty Images/AFP//N. Noorullha
বর্তমান পরিস্থিতি
কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে আফগানিস্তানের বিস্তীর্ণ এলাকা। যুদ্ধের চিহ্ন সর্বত্র। আর্থ-সামাজিক দিক থেকেও দেশটির অবস্থা ভয়াবহ।
ছবি: picture-alliance/dpa
বাইডেনের বক্তব্য
এতদিন যুদ্ধের পর বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, আর যুদ্ধ নয়, অগাস্টের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সমস্ত সেনা ফেরত আনা হবে। আফগানিস্তানের দায়িত্ব অ্যামেরিকা আর নিতে পারবে না।
ছবি: picture-alliance/dpa
কঠিন বাস্তব
মার্কিন সেনা ফিরতে শুরু করার পরেই ফের আফগানিস্তানের দখল নিতে শুরু করেছে তালেবান। আফগানিস্তান কার্যত গৃহযুদ্ধের মুখোমুখি।
ছবি: Ashaq Akramy/DW
অ্যামেরিকার হার
আফগানিস্তানে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করা মার্কিন সেনাদের একাংশ বলছেন, এটা আসলে অ্যামেরিকার হার। বিশ বছরেও যুদ্ধ জয় করতে পারেনি অ্যামেরিকা।
ছবি: Ashaq Akramy/DW
ভিয়েতনামের সঙ্গে তুলনা
কেউ কেউ এই হারকে ভিয়েতনামের সঙ্গে তুলনা করছেন। তাদের দাবি, ভিয়েতনাম থেকেও শেষ পর্যন্ত মার্কিন সেনাকে ফিরে আসতে হয়েছিল। আফগানিস্তানেও তাই হলো।
ছবি: Ashaq Akramy/DW
লক্ষ্য ছিল না
তাদের দাবি, ভিয়েতনামের মতোই আফগানিস্তানে অ্যামেরিকার কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল না। কিছু নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু সার্বিক পরিবর্তন ঘটানো যায়নি।
আফগান সেনারা কেন শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলছে না, এ নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেন এই অবসরপ্রাপ্ত জার্মান জেনারেল৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা আফগান ন্যাশনাল আর্মিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি, অ্যামেরিকানরা তাদের অস্ত্র দিয়ে সুসজ্জিত করেছে৷ সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই আমার মনে প্রশ্ন জাগছে, আফগান সেনাবাহিনী এখন কী করছে?’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘প্রায় দুই লাখ সেনাকে অ্যামেরিকা, জার্মানি ও অন্যান্য দেশ অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে৷ সেই পুরাতন সৈনিকরা কোথায় গেল?’’
তালেবান এরই মধ্যে আফগানিস্তানের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সর্বোচ্চ শহর কান্দাহার ও হেরাত দখলে নিয়েছে৷ রাজধানী কাবুল থেকে মাত্র ১৫০ কিলোমিটার দূরের গজনিও এখন তালেবানের দখলে৷
কিরান বুর্কে/এডিকে
নিজ দেশেই শরণার্থী আফগানরা
দ্রুত রাজধানী কাবুলের দিকে এগোচ্ছে তালেবান৷ এক সপ্তাহেই দেশটির বেশ কয়েকটি প্রাদেশিক রাজধানীর পতন ঘটেছে৷ বিভিন্ন স্থানে আফগান সৈন্যদের সঙ্গে চলছে তালেবানের তুমুল লড়াই৷ সংঘর্ষ থেকে বাঁচতে রাজধানীতে পালাচ্ছেন অনেকে৷
ছবি: REUTERS
এগিয়ে আসছে তালেবান
কুন্দুজ প্রদেশের রাজধানী আগেই দখল করেছিল তালেবান৷ কিন্তু বিমানবন্দরটির দখল নিতে পারছিল না সশস্ত্র গোষ্ঠীটি৷ এবার সেটিরও দখল গেল তালেবানের হাতে৷ বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আফগান ন্যাশনাল সিকিউরিটি ফোর্সের সদস্যরা তালেবানের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন বলে জানিয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যম৷
ছবি: REUTERS
এক সপ্তাহে নয়টি প্রদেশ
গত এক সপ্তাহে নিজেদের আক্রমণ আরো শাণিত করেছে তালেবান৷ এই এক সপ্তাহেই দেশটির নয়টি প্রদেশের রাজধানী দখল করেছে তারা৷ বুধবার তাজিকিস্তান সীমান্তবর্তী বাদাখশান প্রদেশের রাজধানী ফয়জাবাদ সিটির নিয়ন্ত্রণও নিয়েছে তারা৷
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
স্থানীয়রা সংকটে
তুমুল লড়াই ছড়িয়ে পড়ায় অনেক আফগান নিজেদের এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটছেন৷ বেশিরভাগ এলাকা তালেবান আক্রান্ত হওয়ায় তাদের অনেকের শেষ ভরসা রাজধানী কাবুল৷
ছবি: REUTERS
নিজ দেশে শরণার্থী
গত কয়েকদিনে আফগানিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ায় হাজার হাজার আফগান আশ্রয় নিয়েছেন কাবুলে৷ তাদের অনেককেই অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দেয়া হয়েছে কাবুলের বিভিন্ন পাবলিক পার্কে৷
ছবি: REUTERS
মানবিক বিপর্যয়
ভিটেমাটি থেকে অনেকেই এক কাপড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন৷ পরিবারের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে অনেকে জীবনের সমস্ত সঞ্চয় পেছনে ফেলে এসেছেন৷ কেউ কেউ রাতে ঘুমানোর জন্য মাথাগোঁজার ঠাঁই হিসাবে ছোট তাঁবু পেলেও অনেক পরিবারের শিশু ও নারীদেরও রাত কাটাতে হচ্ছে খোলা আকাশের নীচে৷
ছবি: REUTERS
খাদ্যসংকট
রাজধানীতে পুরো দেশ থেকে হাজার হাজার শরণার্থী জড়ো হওয়ায় আবাসন সংকটের পাশাপাশি খাবার সংকটও দেখা দিয়েছে৷ বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী ও প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলেও তাতে বিপুল পরিমাণ চাপ সামলানো সম্ভব হচ্ছে না৷
ছবি: REUTERS
চিকিৎসা সেবা
সংঘর্ষ চলতে থাকা এলাকা থেকে পালিয়ে আসা অনেকেই আহত৷ বেশ কিছু শিশুও গোলা ও বোমার আঘাতে আহত অবস্থায় কাবুলে এসেছে৷ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান তাদের জন্য কাবুলের পার্কে অস্থায়ী হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করেছে৷
ছবি: REUTERS
মাজার-ই-শরীফে গনি
তালেবানের হাতে যখন একের পর এক প্রদেশের পতন ঘটছে, তখনই উত্তরের বিভিন্ন প্রদেশের পরিস্থিতি দেখতে মাজার-ই-শরীফ সফরে গেছেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি৷ স্থানীয় বিমানবন্দরে নামার পর রাজনীতিবিদ ও আফগান সেনা কমান্ডাররা তাকে সবশেষ পরিস্থিতির বিষয়ে অবগত করেন৷
ছবি: REUTERS
অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
কবে শান্তি ফিরবে, কবে নিজের ঘরে ফিরতে পারবেন, কিছুই জানা নেই৷ অনিশ্চিত এক ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায়ও খোলা নেই তাদের সামনে৷ পরবর্তী প্রজন্মকে যুদ্ধের সহিংসতা থেকে রক্ষাই প্রথম উদ্দেশ্য৷