তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর সেদেশের নারীদের স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ হওয়ার যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল তা সত্যি হচ্ছে৷ দেশটির নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয় বন্ধের পাশাপাশি শুধু ছেলেদের স্কুলে যেতে বলেছে ইসলামী মৌলবাদী গোষ্ঠীটি৷
বিজ্ঞাপন
কাবুলের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ছেলে ও মেয়ে শিশুদের আলাদা শ্রেণিকক্ষে বসানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ আর যেসব মেয়ের বয়স বেশি তাদের স্কুলে ফেরত যাওয়া থেকে বিরত রাখা হয়েছে৷
আফগানিস্তানে সব ক্লাসরুমে ছেলে আর মেয়ে আলাদা
তালেবান আফগানিস্তানের দখল নেয়ার পর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল দেশের প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আবার খুলছে৷ শিক্ষার্থীরাও ফিরছে ক্লাসে৷ তবে ক্লাসে ছেলে-মেয়ে এক সঙ্গে বসতে পারছে না৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: REUTERS
শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা যা বলছেন
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে আফগানিস্তানের বড় তিন শহর কাবুল, কান্দাহার আর হেরাতের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রীরা জানান, কয়েক দিনের বিরতির পর ধীরে ধীরে আবার ক্লাস শুরু হচ্ছে৷ তবে এখন ছাত্র-ছাত্রীরা পাশাপাশি বসে ক্লাস করতে পারছে না৷ কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলে আর মেয়েদের মাঝে ঝুলিয়ে দেয়া হচ্ছে পর্দা, কোথাও আবার মাঝে গড়ে দেয়া হয়েছে কার্ড বোর্ডের দেয়াল৷
ছবি: Social media handout via REUTERS
মাঝে পর্দা
কাবুলের আভিসেনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সোমবার এভাবেই ক্লাস করেছেন শিক্ষার্থীরা৷ কয়েকদিন আগেও যেখানে ছেলে আর মেয়ে পাশাপাশি বসেছেন, এখন তাদের বসতে হচ্ছে আলাদা৷ মাঝে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে পর্দা৷
ছবি: Social media handout via REUTERS
বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া ছবি
কাবুলের আভিসেনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমের বেশ কিছু ছবি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে৷ জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই ছবিগুলো শেয়ার করেছে৷
ছবি: Social media handout via REUTERS
চেহারা
পর্দা বা কার্ডবোর্ডের দেয়াল দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের আলাদা করা হলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া ছবি অনুযায়ী মেয়েদের এখনো মুখ ঢাকতে বাধ্য করা হয়নি৷ ওপরের ছবিতেও সেরকমই দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: REUTERS
কার নির্দেশে?
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলে-মেয়েরা কেন এভাবে আলাদা বসছেন? তাদের কি তালেবান এমন নির্দেশ দিয়েছে? এসব প্রশ্নের উত্তর এখনো জানা যায়নি৷
ছবি: Social media handout via REUTERS
অসন্তোষ
তালেবানের নির্দেশে ছাত্র-ছাত্রীদের আলাদাভাবে বসতে হচ্ছে, নাকি পরিবর্তিত পরিস্থিতির কথা ভেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই এমন উদ্যোগ নিয়েছে তা না জানা গেলেও বিষয়টিতে অনেক শিক্ষার্থীই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন৷ কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আনজিলা টেলিফোনে রয়টার্সকে বলেছেন, ‘‘এভাবে পর্দা দিয়ে দেয়ার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়৷ ক্লাসে ঢুকে আমার ভয়ঙ্কর খারাপ লাগছিল, মনে হচ্ছিল আমরা যেন আবার ২০ বছর আগে ফিরে যাচ্ছি৷’’
ছবি: Social media handout via REUTERS
6 ছবি1 | 6
গতমাসে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করা তালেবান শুধু ছেলে শিক্ষার্থী এবং পুরুষ শিক্ষকদের ক্লাসরুমে যেতে বলেছে৷
কিন্তু মাধ্যমিক স্কুল পড়ুয়া মেয়েদের স্কুলে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়নি তালেবান৷ ফলে তাদের মধ্যে তীব্র অনিশ্চয়তা কাজ করছে৷
এর আগে নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে আফগানিস্তান শাসন করার সময় মেয়ে এবং নারীদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিল তালেবান এবং তাদেরকে জনজীবন থেকেও বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল৷
তবে, ইসলামী মৌলবাদী গোষ্ঠীটি এবার নিজেদের আগের চেয়ে কিছুটা উদারপন্থি হিসেবে দেখাতে চাচ্ছে৷ কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের কর্মকাণ্ডে অতীতের কট্টর অবস্থানেরই প্রমাণ মিলছে৷
নারী মন্ত্রণালয়কে অনৈতিকতারোধের দপ্তরে রূপান্তর
কাবুলের ক্ষমতা দখলের পর তালেবান দেশটির নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয় বন্ধ করে দিয়েছে৷ সেখানে এখন ‘পুণ্যের প্রচার এবং অনৈতিকতারোধের' দপ্তরে রূপান্তর করা হয়েছে৷ দুই দশক আগে তালেবানের তৈরি এরকম এক দপ্তর ধর্মীয় মতবাদ কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে গিয়ে কুখ্যাতি অর্জন করেছিল৷
তালেবানের সাংবাদিক নির্যাতন
02:10
গত কয়েকদিন ধরেই নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মীরা অভিযোগ করে আসছিলেন যে তাদের অনেকে চাকুরি হারাচ্ছেন৷ বার্তাসংস্থা এপি জানিয়েছে, বিশ্বব্যাংকের নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন প্রকল্পের কর্মীদেরও শনিবার বের করে দেয়া হয়েছে৷
এই পরিস্থিতিতে আফগান মেয়েদের ভবিষ্যত নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংগঠন ইউনিসেফ৷
‘‘এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে অপেক্ষাকৃত বয়সি থেকে শুরু করে সব মেয়েরা দ্রুত যাতে লেখাপড়া আবার শুরু করতে পারে৷ আর এজন্য নারী শিক্ষকদেরকেও স্কুলে ফিরতে সুযোগ দিতে হবে,'' এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ইউনিসেফ৷