বিদেশি সৈন্যরা ১৩ বছর অবস্থানের পর আফগানিস্তান ত্যাগ করছে; নিরাপত্তার দায়িত্ব নিচ্ছেন আফগান সরকার ও সেনাবাহিনী৷ দায়িত্ব হস্তান্তরের ঠিক আগে দেশের দক্ষিণে একটি মর্টার আক্রমণে ২০ জন বেসামরিক ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি সরকারিভাবে দায়িত্ব হস্তান্তরের আয়োজন করেছিলেন গত বৃহস্পতিবার, কাবুলে, রাষ্ট্রপ্রধানের প্রাসাদে৷ সেই অনুষ্ঠানে গনি বলেন: ‘‘আফগান সেনাবাহিনী যে এখন তাদের দেশের রাজ্যাঞ্চল ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার নিরাপত্তা সংক্রান্ত দায়িত্ব পুরোপুরি নিতে সক্ষম, সেজন্য আমি আমার দেশের জনগণকে অভিনন্দন জানাতে চাই৷''
‘‘এই অঞ্চল এবং বহির্বিশ্বের নানা সমস্যার ফলে গত ১৩ বছর ধরে নিরাপত্তা ছিল একটি যৌথ দায়িত্ব৷ এখন সেটা শুধু আফগানদের৷ কিন্তু আমরা একা নই, আমাদের মিত্র আছে, আমরা আগের মতোই একসঙ্গে কাজ করব'', বলেন গনি৷
বর্ষশেষে সরকারিভাবে আফগানিস্তানে ন্যাটোর ‘কমব্যাট অপারেশন', অর্থাৎ যুদ্ধাভিযান সমাপ্ত হয়েছে৷ এর অর্থ, সাড়ে তিন লাখ আফগান সৈন্য এখন তালেবান বিদ্রোহ সামাল দেবার দায়িত্বে থাকবে, যে বিদ্রোহ ক্রমেই আরো সংগঠিতভাবে আক্রমণ চালাচ্ছে৷
এর পরও দেশে প্রায় ১৩ হাজার বিদেশি সৈন্য নিযুক্ত থাকবে – তাদের অধিকাংশই মার্কিনি – এবং তারা আফগানিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেবে৷ নতুন এই অভিযানের নাম হবে ‘রেজোলিউট সাপোর্ট' বা ‘দৃঢ় সমর্থন'৷
বিবাহবাসরে রকেট
একদিকে দায়িত্ব হস্তান্তর, অথচ ঠিক তার আগের দিনই একটি ঘটনা ঘটেছে, আফগান পুলিশ যার তদন্ত নিয়ে ব্যস্ত: দৃশ্যত একটি বিবাহবাসরে সেনাবাহিনীর একটি রকেট এসে পড়ে অন্তত বিশজন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং আরো অনেকে আহত হয়েছেন৷
দক্ষিণের হেলমন্দ প্রদেশের সাঙ্গিন জেলায় তালেবান বিদ্রোহীদের সঙ্গে সামরিক বাহিনীর সংঘর্ষ চলাকালীন ঘটনাটি ঘটে, বলে প্রকাশ৷ সাঙ্গিন তালেবান জঙ্গিদের একটি ঘাঁটি এবং ছ'মাস আগে মার্কিন সৈন্যরা এই এলাকা থেকে সরে যাওয়া যাবৎ এখানে বারংবার তীব্র যুদ্ধের অবতারণা ঘটেছে৷
আফগানিস্তান ত্যাগ করছে জার্মান সেনাবাহিনী
আফগানিস্তানে জার্মান সামরিক বাহিনী ‘বুন্ডেসভেয়ার’ এর কম্ব্যাট মিশন শেষ হচ্ছে ২০১৪ সালে৷ তাই সেনাসদস্যদের সঙ্গে কয়েক হাজার টন যুদ্ধ উপকরণ এবং অন্যান্য পণ্যও ফেরত আনতে হবে৷ বিছানা থেকে শুরু করে বিশাল ট্যাংক রয়েছে তালিকায়৷
ছবি: cc-by/Sebastian Wilke/Bundeswehr
বিশাল কর্মযজ্ঞ
জার্মান সেনাবাহিনীর সাড়ে চার হাজারের মতো সেনা সদস্য, সতের শত যান এবং ছয় হাজারের মতো কন্টেইনার রয়েছে আফগানিস্তানে৷ ২০১৪ সালে আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক বাহিনী আইসাফ এর কর্মকাণ্ড শেষ হওয়ার আগেই জার্মান সেনাবাহিনীর অনেক সম্পদ ফিরিয়ে আনা হবে৷ এই সম্পদের মধ্যে মেশিনগান থেকে শুরু করে পঞ্চাশ টন ওজনের ট্যাংক রয়েছে৷
ছবি: cc-by-nd/Bundeswehr/Bienert
ট্রাবজন হাব
হিন্দুকুশ থেকে বিভিন্ন পণ্য ফিরিয়ে আনতে জার্মানি যে দুটি হাব ব্যবহার করছে তার একটি তুরস্কের ট্রাবজন৷ এই বন্দর হয়ে জার্মানিতে পৌঁছাবে বুন্ডেসভেয়ার-এর বিভিন্ন পণ্য৷ তবে আফগানিস্তান থেকে ট্রাবজন পর্যন্ত পণ্য পৌঁছানোর প্রক্রিয়া সহজ নয়৷
ছবি: cc-by-nd/Sebastian Wilke/Bundeswehr
পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার
গত এগারো বছরের বেশি সময় ধরে আফগানিস্তানে অবস্থান করছে জার্মান সেনাবাহিনী৷ তাদেরকে মূলত সেদেশের উত্তরে মোতায়েন করা হয়েছিল৷ ইতোমধ্যে অনেক ক্যাম্প খালি করা হয়েছে৷
ছবি: cc-by-nd/Bundeswehr/Bienert
সবাই সম্ভবত ফিরছেন না
২০১৪ সালের শেষ নাগাদ সম্ভবত সকল জার্মান সেনা ঘরে ফিরবেন না৷ জার্মানি আইসাফের ম্যান্ডেট মেনে আটশো সেনা আরো দীর্ঘ সময়ের জন্য আফগানিস্তানে রাখতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সব পণ্য ফিরবে না
আফগানিস্তানে পাঠানো কিছু জার্মান পণ্য ফেরত আনা হবে না৷ কিছু পণ্য বিক্রি অথবা ধ্বংসে করে ফেলা হবে৷ তবে অস্ত্রশস্ত্র কন্টেইনারে ভরে নিয়ে আসা হবে৷ ইতোমধ্যে এসব পণ্য জমা করা শুরু হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আরেক হাব: মাজার-ই-শরিফ
আফগানিস্তান থেকে জার্মান সেনাবাহিনীর পণ্য ফিরিয়ে আনার আরেকটি হাব হচ্ছে মাজার-ই-শরিফ৷ সে দেশের চতুর্থ বড় এই শহর থেকে অধিকাংশ পণ্য বিমানে পরিবহন করা হচ্ছে৷ তবে পাকিস্তান, উজবেকিস্তান এবং তাজাকিস্তান হয়ে সড়ক পথেও কিছু পণ্য ফেরত আনা হবে৷ তবে নিরাপত্তার কারণে বেশি পণ্য এভাবে পরিবহন হবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রক্ষণাবেক্ষণ এবং জীবাণুমুক্তকরণ
জার্মান সেনাবাহিনীর এসব পণ্যের মাধ্যমে আফগানিস্তান থেকে কোন জীবাণু যাতে জার্মানিতে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য এসব পণ্য জীবাণুমুক্ত করা হবে৷ জার্মানিতে এসব পণ্য প্রবেশের আগেই এটা করা হবে৷
ছবি: Bundeswehr - PIZ SKB/Foto: Vanita Schanze
বিমানে আফগানিস্তান ত্যাগ
বড় এবং ভারি যানবাহন পরিবহনের মতো বিমান জার্মান সামরিক বাহিনীর নেই৷ ফলে ছবির এই বিশাল সামরিক যান পরিবহনের জন্য একটি ইউক্রেনীয়-রাশিয়ান কনসর্টিয়ামের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে৷ এই ব্যবস্থায় প্রত্যেক উড়ালে ৩৭ মিটার দীর্ঘ জায়গায় ১৫০ টন পণ্য পরিবহন সম্ভব হচ্ছে৷
ছবি: cc-by-nd/Bundeswehr/Weinrich
সরাসরি জার্মানিতে ফেরত
অস্ত্র এবং কারিগরিভাবে সংবেদনশীল বিভিন্ন পণ্য বিমানে আফগানিস্তানের মাজার-ই-শরিফ থেকে সরাসরি জার্মানিতে ফেরত আনা হচ্ছে৷ ছবির ট্যাংকটি এই সুবিধা পাচ্ছে৷
ছবি: cc-by-nd/Bundeswehr/Schmidt.
বাকি পণ্য আসছে তুরস্ক হয়ে
অস্ত্রবিহীন গাড়ি, রেডিও এবং তাঁবুর মতো পণ্য সরাসরি জার্মানিতে আনা হচ্ছে না৷ আফগানিস্তান থেকে বিমানে এগুলো তুরস্কের ট্রাবজন বন্দরে আনা হচ্ছে৷
ছবি: cc-by/Sebastian Wilke/Bundeswehr
জাহাজে প্রত্যাবর্তন
ট্রাবজন বন্দরে জার্মান সেনাবাহিনীর জন্য কাজ করছেন ১৭০ ব্যক্তি৷ এই বন্দর থেকে ত্রিশ হাজার বর্গমিটার পণ্য জাহাজে জার্মানিতে পাঠাতে কাজ করছেন তারা৷ সমুদ্রপথে বিভিন্ন পণ্য ট্রাবজান থেকে জার্মানিতে পোঁছাতে সময় লাগে দুই সপ্তাহের মতো৷
ছবি: Bundeswehr - PIZ SKB/Foto: Vanita Schanze
11 ছবি1 | 11
‘‘আমরা এ পর্যন্ত যা জনি, তা হলো এই যে, আমাদের সৈন্যরা তিনটি ‘আউটপোস্ট' থেকে মর্টারের গোলা ছুঁড়েছে, কিন্তু আঘাতটা ইচ্ছাকৃত কিনা, তা আমরা জানি না,'' রয়টার্স সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন জেনারেল মাহমুদ, যিনি হেলমন্দ প্রদেশে নিযুক্ত আফগান ২১৫ কোর-এর ডেপুটি কমান্ডার৷ তবে তিনি তদন্ত এবং অপরাধীদের শাস্তি দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷
ন্যাটো সৈন্যদের পশ্চাদপসারণের পর আফগানিস্তান জুড়ে সহিংসতা ও অনিশ্চয়তা বেড়েছে৷ জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত ২০১৪ সালে আফগানিস্তানে নিহত বেসামরিক ব্যক্তিদের সংখ্যা হলো ৩,১৮০, আহত প্রায় ৬,৪৩০ – যার অর্থ, ২০১৪ ছিল বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতির দিক থেকে সর্বাপেক্ষা মারাত্মক একটি বছর৷ এদের অধিকাংশই প্রাণ হারিয়েছেন তালেবান আক্রমণে অথবা আফগান সেনাবাহিনী এবং বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালীন৷