তিন দেশে বন্যায় শতাধিক মানুষ মারা গেছেন। বহু মানুষ নিখোঁজ। গৃহপালিত পশুর বিপুল ক্ষতি হয়েছে। গত সপ্তাহেই উত্তর আফগানিস্তানে প্রবল বৃষ্টির পর ফ্ল্যাশ ফ্লাড হয়। সেখানে অন্ততপক্ষে ৩১ জন মারা গেছেন।
পশ্চিম আফগানিস্তানের লোগারে বন্যায় অন্ততপক্ষে ২০ জন মারা গেছেন। আহত ৩০ জন। হাজার হাজার ঘরবাড়ি ভেসে গেছে। ক্যানালের পাশে চাষের খেত ডুবে গেছে। ওই এলাকার একটি গ্রামের এক বয়স্ক মানুষ বলেছেন, বন্যা তাদের কাছে অভাবিত বিষয়। কখনো ওই এলাকায় বন্যা হয়নি। তিনি বলেছেন, বাড়ি, চাষের জমি ও পশু সবই হারিয়েছেন গ্রামের মানুষ। তারা এখন পাহাড়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, গ্রাম জলবন্দি। তাতে ভেসে বেড়াচ্ছে মানুষের শব।
উদ্ধারে হেলিকপ্টার
আফগানিস্তানের ন্যাশনাল ডিজাস্টার অথরিটির কর্মকর্তারা ডিপিএ-কে বলেছেন, তারা বিপন্ন মানুষকে উদ্ধার করার জন্য হেলিকপ্টার ব্যবহার করছেন।
গত দুই দশকে পাকিস্তানে এত বেশি বৃষ্টির তাণ্ডব দেখা যায়নি। ছবি: Rana Sajid Hussain/Pacific Press Agency/IMAGO
আফগান সরকারের মুখপাত্র বিলাল করিমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ত্রাণের আবেদন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমরা আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছি। তারা এই সংকট সময়ে এগিয়ে আসুন। দুর্গতদের সাহায্য করুন।
তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে আফগানিস্তানে বিদেশি সাহায্যের পরিমাণ খুবই কমে গেছে। বিভিন্ন দেশ তালেবান শাসনের উপর এখনো নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে।
পাকিস্তানেও ভয়ংকর বৃষ্টি
গত কয়েক দশকের মধ্যে পাকিস্তানে এত বৃষ্টি হয়নি। এর ফলে বিস্তীর্ণ অঞ্চল বন্যার জলে ভেসেছে। বন্যায় মারা গেছেন ৩৬ জন। বালোচিস্তান ও সিন্ধু প্রদেশ থেকে প্রচুর মানুষকে উদ্ধার করেছে সেনা এবং ন্যাচরাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি।
বালোচিস্তানে ৩০৫ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এই সপ্তাহে আরো বৃষ্টি হবে। জুন মাস থেকে এখানে ৬১৮ জন মারা গেছেন। প্রায় ৭০ হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বন্য়য় বিপর্যস্ত ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্য। ছবি: Sanjay Kanojia/AFP/Getty Images
ভারতের অবস্থা
বর্ষা নামার পর থেকেই উত্তর ভারতে নিয়মিত ফ্ল্যাশ ফ্লাড হচ্ছে, প্রায়ই ধস নামছে। গত সপ্তাহেই বন্যা ও ধসের ফলে ৪০ জন মারা গেছেন। হিমাচলে বন্যায় মারা গেছেন ৩৬ জন এবং উত্তরাখণ্ডে মারা গেছেন চার জন। প্রচুর মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছেন।
উত্তরাখণ্ড সরকার জানিয়েছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক মানুষ আটকে পড়েছেন। তাদের উদ্ধারের জন্য হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে।
ওড়িশাতেও বন্যায় ছয়জন মারা গেছেন বলে সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন। সেখানেও বিশাল এলাকা জলের তলায়। বন্যার ফলে প্রচুর মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন।
একদিকে খরা, অন্যদিকে বন্যা: জলবায়ু পরিবর্তনে আক্রান্ত পৃথিবী
মৌসুম পরিবর্তনে বিশ্বের কোনো স্থান পুড়ে যাচ্ছে খরায়, জ্বলে যাচ্ছে দাবানলে৷ আবার কোনো অঞ্চল ভাসছে বন্যার জলে, মানুষ মরছে অতিবৃষ্টি ও ভূমিধসে৷ এমনকি এক দেশেরই দুই প্রান্তে দু’রকম চরম আবহাওয়ার দেখা দিচ্ছে৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Mariel Müller/DW
সিডনিতে দেড় বছরে চতুর্থ বন্যা
জুলাই-এর শুরুতেই অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসে বন্যা দেখা দিয়েছে৷ গত ১৮ মাসের মধ্যে চতুর্থ বারের মতো বন্যার কবলে পড়লো রাজ্যটি৷ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত গ্রেটার সিডনি৷ মাত্র চারদিনে আট মাসের সমান বৃষ্টিতে সড়কগুলো নদীতে পরিণত হয়েছে৷ কয়েক হাজার মানুষকে বাড়ি থেকে সরিয়ে নিতে হয়েছে৷ বারবার বন্যা জলবায়ু পরিবর্তন রোধের উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী৷
ছবি: DEAN LEWINS/AAP/IMAGO
পাকিস্তানের অস্বাভাবিক বৃষ্টি
মধ্যজুন পর্যন্ত ঝড়ে পাকিস্তানে ৭০ জনের বেশি প্রাণ হারিয়েছেন৷ ধ্বংস হয়ে গেছে বিপুল বাড়িঘর, সেতু আর বিদ্যুৎকেন্দ্র৷ দেশটির জলবায়ু সংক্রান্ত মন্ত্রী জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে গড় হারে চেয়ে সেখানে ৮৭ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে৷ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে দেশটিকে সামনে আরো বেশি বন্যার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি৷
এদিকে বৃষ্টির অভাবে যেন মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে ইটালি৷ পাঁচটি অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে সরকার, যা চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত বজায় থাকবে৷ জলের এতটাই সংকট দেখা দিয়েছে যে পানি ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে বেশ কিছু শহর ও জেলা৷ দেশটির দীর্ঘতম নদী পো বিধৌত অঞ্চলে গত ৭০ বছরের মধ্যে এমন ভয়াবহ খরা দেখা যায়নি৷ এই কৃষি অঞ্চলে ফসল উৎপাদনও মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে৷
ছবি: Luca Bruno/AP/picture alliance
অ্যামেরিকায় আগাম দাবানল
মৌসুম শুরুর আগেই যুক্তরাষ্ট্র দাবানলে পুড়তে শুরু করেছে৷ জুলাইর শুরুতেই উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার কিছু অঞ্চলে আগুন লাগে৷ রাতারাতি তা দ্বিগুণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে৷ রাজ্যের আরো কিছু জায়গাতে দাবানল চলছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের খরা পর্যবেক্ষণ সংস্থার হিসাবে ক্যালিফোর্নিয়ার ৮৬ শতাংশ খরায় ভুগছে৷
ছবি: Noah Berger/AP Photo/picture alliance
চীনে তাপদাহ
গত কয়েকযুগের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ তাপদাহে ত্রাহি অবস্থা চীনে৷ জুন ও জুলাইতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল দিয়ে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ বয়ে যায়৷ পূর্বাঞ্চলে হেনান প্রদেশে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের চাহিদায় বাড়ায় বিদ্যুতের উপর চাপ রেকর্ড ছাড়িয়েছে৷ কিন্তু উল্টো ঘটনা ঘটে চলেছে দক্ষিণাঞ্চলে৷ সেখানকার মানুষ প্রচণ্ড বৃষ্টি আর বন্যায় আক্রান্ত৷ সরকার বলছে, জলবায়ুর এই পরিবর্তন দেশটির সমাজ ও অর্থনীতিকে আক্রান্ত করছে৷
ছবি: Mark Schiefelbein/AP Photo/picture alliance
ব্রাজিলে ভূমিধস
প্রবল বৃষ্টির পর ভূমিধস এবং বন্যায় মে মাসে ব্রাজিলের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পার্নাম্বুকো রাজ্যে ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়৷ অন্তত ১০০ জন প্রাণ হারিয়েছেন এই দুর্যোগে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই সেখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়েছে৷ জাতিসংঘের সংস্থা আইপিসিসি পার্নাম্বুকোর রাজধানী রেসিফের আশেপাশের নিচু মেট্রো অঞ্চলকে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে৷
ছবি: Lucio Tavora/Xinhua/picture alliance
সাউথ আফ্রিকায় অতিবৃষ্টি
এপ্রিলে সাউথ আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে ভারি বৃষ্টিতেও বন্যা আর ভূমিধস হয়৷ এতে চার শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, ধ্বংস হয়েছে ১২ হাজার বাড়িঘর৷ অন্তত ৪০ হাজার মানুষকে বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে যেতে হয়েছে৷ ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশনের হিসাবে, সাউথ আফ্রিকায় জলবায়ু পরিবর্তনে বৃষ্টির পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়েছে দ্বিগুন আর ঘনত্ব আট শতাংশ৷
ছবি: ROGAN WARD/REUTERS
পূর্ব আফ্রিকায় দীর্ঘায়িত খরা
গত কয়েক যুগের মধ্যে ভয়াবহ খরায় পুড়ছে পূর্ব আফ্রিকাও৷ শুরুটা হয়েছে গত বছরে যা চলছে এখনও৷ চার মৌসুম পরেও সেখানে বৃষ্টির দেখা নেই৷ এই অঞ্চলের প্রায় দুই কোটি মানুষ চরম অনাহারে রয়েছেন৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভারতীয় মহাসাগরের স্রোতের সঙ্গে সম্পর্কিত বসন্তকালীন বৃষ্টি এই অঞ্চলে পৌঁছানোর আগেই সমুদ্রে ঝরে পড়ছে, যার কারণে বৃষ্টি হচ্ছে না ভূমিতে৷