জার্মান গোয়েন্দারা ভেবেছিলেন, তালেবান কাবুল দখল করবে না। একটি জার্মান খবরের কাগজ প্রকাশ করল গোপন নোট।
বিজ্ঞাপন
জার্মানির পরিচিত খবরের কাগজ বিল্ড। বুধবার সেই পত্রিকায় জার্মান গোয়েন্দা বিভাগের একটি গোপন নোট প্রকাশ করে দাবি করা হয়েছে, জার্মান গোয়েন্দারা আফগানিস্তানে ব্যর্থ হয়েছেন। পত্রিকাটির দাবি, নোটে বলা হয়েছিল, আপাতত তালেবানের কাবুল দখলের পরিকল্পনা নেই। তারা কাবুলকে ঘিরে রাখলেও রাজধানীতে প্রবেশ করবে না। গত শুক্রবার জার্মান প্রশাসনের এক বৈঠকে সেই নোট দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেছে ট্যাবলয়েডটি।
তালেবানের শীর্ষ নেতা কারা?
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা সরে যাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে পুরো দেশ দখল করে নিয়েছে তালেবান৷ ১৯৯৪ সালে গঠিত তালেবানের বর্তমান শীর্ষ নেতাদের পরিচয় জানা যাবে এই ছবিঘরে৷
ছবি: Gulabuddin Amiri/AP/picture alliance
হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা
তালেবানের সুপ্রিম নেতা আখুন্দজাদা এই গোষ্ঠীর রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামরিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সর্বোচ্চ ব্যক্তি৷ ২০১৬ সালে তার পূর্বসূরী আখতার মনসুর মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হওয়ার পর দায়িত্ব পান আখুন্দজাদা৷ পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কুচলাক শহরের এক মসজিদে তিনি প্রায় ১৫ বছর শিক্ষকতা ও ধর্মপ্রচারের কাজ করেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স৷ তার বয়স প্রায় ৬০ বলে মনে করা হয়৷
ছবি: Imago/Xinhua
মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব
তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে তিনি৷ তালেবানের সামরিক অভিযানের দায়িত্বে আছেন ইয়াকুব৷ ২০১৬ সালে আখতার মনসুর নিহত হওয়ার পর ইয়াকুবকে তালেবানের দায়িত্ব নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল৷ কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা কম এবং বয়স কম হওয়ায় ইয়াকুব নেতা হিসেবে আখুন্দজাদার নাম প্রস্তাব করেন৷ ইয়াকুবের বয়স ৩০-এর ঘরে বলে ধারণা করা হয়৷
ছবি: Gulabuddin Amiri/AP/picture alliance
সিরাজুদ্দীন হাক্কানি
হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান৷ পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে তালেবানের আর্থিক ও সামরিক সম্পদ দেখাশোনা করে এই গোষ্ঠী৷ আফগানিস্তানে আত্মঘাতী বোমা হামলার চল এই গোষ্ঠী শুরু করে বলে মনে করা হয়৷ সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইকে হত্যার চেষ্টা, ভারতীয় দূতাবাসে আত্মঘাতী হামলার জন্য হাক্কানি নেটওয়ার্ককে দায়ী করা হয়৷ হাক্কানির বয়স ৪০-এর ঘরে শেষ থেকে ৫০-এর ঘরে শুরু পর্যন্ত বলে মনে করা হয়৷
ছবি: FBI/REUTERS
মোল্লা আব্দুল গনি বারাদার
তালেবানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বারাদার এই গোষ্ঠীর রাজনীতি বিভাগের প্রধান৷ কাতারের দোহায় আফগান সরকার ও তালেবানের মধ্যে যে আলোচনা চলছিল, সেখানে উপস্থিত ছিলেন তিনি৷ তালেবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের সবচেয়ে বিশ্বস্ত কর্ম ছিলেন বারাদার৷ ২০১০ সালে পাকিস্তানের করাচিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ ২০১৮ সালে তিনি ছাড়া পান৷
ছবি: Alexander Zemlianichenko/REUTERS
শের মোহাম্মদ আব্বাস স্তানেকজাই
তালেবান যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন তিনি উপমন্ত্রী ছিলেন৷ এরপর প্রায় এক দশক তিনি কাতারের দোহায় বাস করেন৷ ২০১৫ সালে তাকে দোহার রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান করা হয়৷ সাম্প্রতিক সময়ে আফগান সরকার ও তালেবানের মধ্যকার আলোচনায় তিনি উপস্থিত ছিলেন৷ এছাড়া বিভিন্ন দেশে কূটনৈতিক সফরে তালেবানের প্রতিনিধিত্ব করেছেন স্তানেকজাই৷
ছবি: Sefa Karacan/AA/picture alliance
আব্দুল হাকিম হাক্কানি
তাকে তালেবানের বর্তমান সুপ্রিম নেতা আখুন্দজাদার সবচেয়ে বিশ্বস্ত মনে করা হয়৷ তিনি তালেবানের সাবেক ছায়া প্রধান বিচারপতি৷ বর্তমানে তিনি এই গোষ্ঠীর ধর্মীয় পণ্ডিতদের প্রভাবশালী সংগঠনের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন৷ আফগান সরকারের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেয়া তালেবানের প্রতিনিধি দলের প্রধান ছিলেন হাক্কানি৷ উপরের ছবিটি ২০০৫ সালের৷
ছবি: AP Photo/picture alliance
6 ছবি1 | 6
জার্মান গোয়েন্দা সংস্থা বিএনডি বলে পরিচিত। তাদের ধারণা ছিল, মার্কিন সেনা আফগানিস্তান থেকে পুরোপুরি চলে না গেলে তালেবান কাবুলে প্রবেশ করবে না। বস্তুত, মার্কিন গুপ্তচর সংস্থারও একই ধারণা ছিল। কাবুলে তালেবান ঢোকার দিনকয়েক আগেও মার্কিন গোয়েন্দা দফতরের রিপোর্ট ছিল, কাবুল দখল করতে তালেবানের ৯০ দিন সময় লাগবে। বস্তুত তার দিনকয়েকের মধ্যেই কাবুলে ঢুকে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ দখল করে তালেবান।
তবে ওই একই রিপোর্টে বলা হয়েছে, জার্মান গোয়েন্দারা একটি বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। যে ভাবে আফগান প্রশাসনের কর্মকর্তারা দেশ ছাড়তে শুরু করেছিলেন, তাতে তালেবান অনেক সহজে নিজেদের আধিপত্য তৈরি করবে বলে তারা নোট দিয়েছিলেন। কিন্তু তালেবান যে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কাবুলও দখল করে ফেলবে, তা তারা বুঝতে পারেননি।
এমন একটি সময় গোপন নোটটি প্রকাশ্যে এসেছে, যখন জার্মানি কাবুল থেকে দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে হিমশিম খাচ্ছে। প্রায় দুই দশক ধরে জার্মানি আফগানিস্তানে নিজেদের ঘাঁটি তৈরি করে রেখেছিল। বহু মানুষ সেই সূত্রে আফগানিস্তানে গেছেন। এখনো সকলকে উদ্ধার করে দেশের বিমানে চড়ানো সম্ভব হয়নি। তারই মধ্যে জার্মান সরকারের সঙ্গে কাজ করেছেন, এমন আফগান নাগরিকদেরও জার্মানিতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করছে জার্মান প্রশাসন। ৬০০ জন জার্মান সেনাকে সে কাজে নিয়োগ করা হয়েছে।
বিল্ডের রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পরে জার্মান প্রশাসনের তরফে এখনো কোনো মন্তব্য করা হয়নি।