শান্তি আলোচনা চলার মধ্যেই ভয়ঙ্কর রক্তাক্ত সংঘর্ষ আফগানিস্তানে। তালেবান ও সেনার মধ্যে সংঘর্ষ। হতাহত বহু।
ছবি: DW/Omid Deedar
বিজ্ঞাপন
এক সপ্তাহ আগে কাতারে শান্তি আলোচনায় বসেছেন সরকারপক্ষ ও তালেবান নেতারা। তার মধ্যেই আফগানিস্তানে অশান্তি। রোববার সারারাত ধরে নিরাপত্তা বাহিনী এবং তালেবানের সংঘর্ষ হয়েছে। মারা গেছেন অন্ততপক্ষে ৫৭ জন নিরাপত্তা কর্মী এবং ৮০ জন তালেবান। আহত বহু।
এর মধ্যে উরুজগান প্রদেশেই ২৪ জন নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মী মারা গেছেন। সেখানে একটি চেক পোস্টে আক্রমণঁ চালায় তালেবান। শুধু উরুজগানেই নয়, আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে সংঘর্ষ হয়েছে। তিনজন আফগান গোয়েন্দাকেও অপহরণ করেছে তালেবান।
নিজেদের ক্ষয়ক্ষতির কথা জানায়নি তালেবান। তবে সেনা ও সরকারি মুখপাত্ররা জানিয়েছেন, সবমিলিয়ে অন্ততপক্ষে ৮০ জন তালেবান মারা গেছেন। এর মধ্যে কুন্দুজ, তাখার, বাঘলান প্রদেশে ৫৪ জন মারা গেছেন বলে সেনা মুখপাত্র জানিয়েছেন।
আঙুল কেটেও থামানো যায়নি তাঁকে
২০১৪ সালে ভোট দেয়ায় শফিউল্লাহ শফির একটি আঙুল কেটে নিয়েছিল তালেবান৷ তারপরও গত শনিবার আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন তিনি৷
ছবি: Reuters/S. Safi
‘ওটা তো শুধু একটা আঙুল ছিল’
২০১৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেয়ায় শফিউল্লাহ শফির ডান হাতের একটি আঙুল কেটে নিয়েছিল তালেবান৷ তাই তাঁর পরিবার এবার তাঁকে ভোট দিতে যেতে নিষেধ করেছিল৷ কিন্তু তারপরও ভোট দিয়েছেন শফি৷ কারণ হিসেবে রয়টার্সকে তিনি বলেছেন, ‘‘ওটা তো শুধু একটা আঙুল ছিল৷ আমার সন্তান ও দেশের ভবিষ্যতের প্রশ্নে পুরো হাত কেটে নিলেও আমি বসে থাকবো না৷’’
ছবি: Reuters/S. Safi
সবাই শফির মতো নয়
তবে শফির মতো সবাই নন৷ তাই তো শনিবার অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এর আগের যে-কোনো বারের তুলনায় কম ভোট পড়েছে৷ নির্বাচন কমিশনের ধারনা, এবার মাত্র ২৫ শতাংশ ভোট পড়ে থাকতে পারে৷ এর দুটি কারণের কথা বলছেন বিশ্লেষকরা৷ একটি, তালেবানের হুমকি, অন্যটি কম প্রচারণা৷
ছবি: Getty Images/AFP/H. Hashimi
তালেবানের হুমকি
গত ৭ সেপ্টেম্বর তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি আলোচনা ভেঙে দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ ফলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছিল তালেবান৷ ভোটারদের ভয়ভীতিও দেখানো হয়েছিল৷ ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য অন্তত ছয়জনের আঙুল কেটে নিয়েছিল তালেবান৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua/E. Waak
কয়টি হামলা?
তালেবান বলছে তারা নির্বাচনের দিন ৫৩১টি হামলা করেছে৷ তবে সরকার বলছে হামলার সংখ্যা ছিল ৬৮৷ আর ‘আফগানিস্তান অ্যানালিস্টস নেটওয়ার্ক’ বলছে, নির্বাচনের দিন চারশ’র বেশি হামলা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Wali Sarhadi
হতাহতের সংখ্যা
সরকারি হিসেবে নিরাপত্তা বাহিনীর পাঁচ সদস্যের নিহত হওয়ার কথা জানানো হয়েছে৷ তবে অতীতে দেখা গেছে, ভোটের দিন হতাহতের তথ্য প্রথমে কমিয়ে দেখাতে চায় কর্তৃপক্ষ৷ পরে প্রকৃত তথ্য জানানো হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Hussain
প্রচারণা কম
দু দু’বার নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে শনিবার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি আলোচনা চলায় এবারও ২৮ সেপ্টেম্বর ভোটগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল৷ ৭ সেপ্টেম্বর সেই আলোচনা ভেঙে যাওয়ার পরই কেবল প্রার্থীরা শনিবার ভোটগ্রহণের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পেরেছিলেন৷ ফলে প্রচারণার সময় কম পেয়েছেন তাঁরা৷ ভোটগ্রহণের দিন কম ভোটার উপস্থিতির একটি কারণ হিসেবে এটিকেও সামনে নিয়ে আসছেন বিশ্লেষকরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Hussain
কবে ফল?
১৯ অক্টোবরের আগে ফল আশা করা হচ্ছে না৷ বিজয়ী হতে হলে কোনো প্রার্থীকে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেতে হবে৷ তা না হলে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীর মধ্যে নভেম্বের মাসে আবারও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷
ছবি: Reuters/O. Sobhani
যাঁদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
স্থানীয় গণমাধ্যগুলো বর্তমান রাষ্ট্রপতি আশরাফ গনি এবং তাঁর প্রধান নির্বাহী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস দিয়েছে৷ এই দুজন তথাকথিত জাতীয় ঐক্যমত্যের সরকারের অংশ হিসেবে গত পাঁচ বছর ধরে দেশ পরিচালনা করছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/W. Kohsar
8 ছবি1 | 8
শুধু সেনা বা নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মীরাই নয়, তালেবানের আক্রমণে প্রচুর সাধারণ মানুষ মারা গেছেন বলে অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের মুখপাত্র জানিয়েছেন। তাঁর হিসাব, গত দুই সপ্তাহে তালেবান হানায় দেশের ২৪টি প্রদেশে ৯৮ জন সাধারণ মানুষ মারা গেছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ২৫০ জন।
কিন্তু কাতারে গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সরকার ও তালেবানের মধ্যে শান্তি আলোচনা চলছে। তার মধ্যে এই ধরনের রক্তাক্ত সংঘর্ষ কেন? আসলে দুই পক্ষ নিয়মিত আলোচনা করলেও তা খুব বেশি এগোয়নি। এখনো তারা বিরোধের মূল বিষয়গুলিতে ঢুকতেই পারেনি। কথা হচ্ছে পদ্ধতিগত নিয়ম-কানুন নিয়ে। এই অবস্থায় শক্তিপ্রদর্শন ও চাপ দেয়ার জন্যই আফগানিস্তচান জুড়ে সংঘর্ষ হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।