আফগানিস্তানের জেলে হামলা চালিয়ে ছিল আইএস। প্রশাসন জানিয়েছে, সেই ঘটনায় অন্তত ৪০০ বন্দি পালিয়েছে। ঘটনায় মৃত ৩৯।
বিজ্ঞাপন
রোবাবার আফগানিস্তানের জালালাবাদ জেলে আইএস হামলায় অন্তত ৪০০ বন্দি পালিয়েছে বলে সরকারি ভাবে জানালো আফগান প্রশাসন। একই সঙ্গে তাদের দাবি, ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৩৯ জন নিহত হয়েছেন। তার মধ্যে ১০ জন আইএস জঙ্গি। গুরুতর আহতের সংখ্যা ৪০।
ঘটনার সূত্রপাত রোবার দুপুরে। জালালাবাদ জেলের মূল ফটকের সামনে প্রথমে একটি বিধ্বংসী গাড়িবোমা বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। পুলিশ এবং নিরাপত্তবাহিনীর সন্দেহ, ওই গাড়ির ভিতরে মানববোমা ছিল। বিস্ফোরণ হওয়া মাত্রই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। যত্রতত্র ছুটোছুটি শুরু হয়। এই সুযোগে জেলের মূল দরজা লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে শুরু করে জঙ্গিরা। প্রাথমিক ভাবে দিশেহারা হয়ে পড়ে রক্ষীরা। গুলি ছুড়তে ছুড়তেই জেলের ভিতর ঢুকে পড়ে জঙ্গিরা। কারাগারের একটি ব্লকের দখলও নিয়ে নেয়। কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় জেল। পুলিশের সঙ্গে জঙ্গিদের যখন এই গুলিযুদ্ধ চলছে, তখন একের পর এক লক আপ খুলে দেওয়া হয়। পালাতে শুরু করে বন্দিরা। শুধু জেলের ভিতরেই নয়, জেলের অদূরে একটি বাড়িতেও ঢুকে পড়ে জঙ্গিরা। সেখান থেকেও তারা লাগাতার আক্রমণ চালাতে থাকে।
আইএস এখনো যেসব দেশের জন্য হুমকি
মার্কিন সামরিক অভিযানে জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) নেতা আবু বকর আল বাগদাদি নিহত হয়েছেন৷ তবে এখনও অনেক দেশের জন্য এই জঙ্গি গোষ্ঠীকে বড় হুমকি হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা৷
ছবি: dpa
ইরাক
দেশটিতে মার্কিন সমর্থিত বাহিনীর কাছে হেরে আইএস যোদ্ধারা গেরিলা যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে৷ এখনও তারা ইরাকের কয়েকটি প্রদেশে অপহরণ ও বোমাবাজি করছে৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরাকে প্রায় দুই হাজার আইএস যোদ্ধা সহিংস তৎপরতা চালাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/Dabiq
সিরিয়া
ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও গত বছর সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে বেশ কয়েকটি আক্রমণ চালিয়েছে আইএস৷ অ্যামেরিকান বাহিনীকেও টার্গেট করেছে তারা৷ ইসলামিক স্টেটের যোদ্ধারা সিরিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মরুভূমিতে সক্রিয় রয়েছে৷
ছবি: DW/Judit Neurink
মিশর
বিগত এক বছরে মিশরে কোনো বড় আক্রমণ না হলেও দেশটিতে বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটছে৷ দেশটির সেনাবাহিনী বলছে, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিনাই প্রদেশে অভিযানে কয়েকশ উগ্রপন্থি নিহত হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Desouki
সৌদি আরব
সৌদি আরবে বেশ কয়েকটি বোমা বিস্ফোরণ এবং নিরাপত্তা বাহিনীসহ সংখ্যালঘু শিয়াদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে আইএস৷ সৌদি আরব যখন আইএসের বিরুদ্ধে প্রচারে অংশ নিয়েছিল তখন তাদের বিরুদ্ধেও আক্রমণ চালানোর আহ্বান জানিয়েছিল গোষ্ঠীটি৷ অ্যামেরিকান থিঙ্কট্যাঙ্ক সেন্টার ফর গ্লোবাল পলিসি বলছে, আইএস সৌদি আরবে এখনও সক্রিয় এবং সৌদি কর্তৃপক্ষ এ সম্পর্কে ভালো জানে৷
ছবি: dpa
ইয়েমেন
আইএস ২০১৪ সালের শেষদিকে ইয়েমেন শাখা ঘোষণা করে৷ হুতি বিদ্রোহী ও সৌদি আরব সমর্থিত আবদ রাব্বু মনসুর হাদির সরকারের মধ্যে গৃহযুদ্ধ চলছে৷ ইয়েমেনে আইএস আল কায়েদার সাথে লড়াই করছে এবং উভয় দল শিয়া হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধেও লড়ছে৷ দেশটিতে অনেক হামলা ও হত্যার দায় আইএস স্বীকার করলেও কোনো অঞ্চল তাদের দখলে নেই৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Souleiman
নাইজিরিয়া
বোকো হারাম ২০০৯ সাল থেকে উত্তর নাইজেরিয়ায় বেশ কয়েকটি বড় আক্রমণ চালিয়েছে৷ ২০১৬ সালে এই গোষ্ঠীকে দুইটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে, যার একটি অংশ আইএসের প্রতি অনুগত৷ আইএস পশ্চিম আফ্রিকায় গত বছর বেশ কয়েকটি সামরিক ঘাঁটিকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল৷ এই অঞ্চলে গোষ্ঠীটির আধিপত্য বাড়ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Marte
আফগানিস্তান
দেশটিতে ২০১৫ সাল থেকে সক্রিয় রয়েছে আইএস৷ এখনো নানগারহার প্রদেশে তাদের খুব শক্তিশালী মনে করা হয়৷ অ্যামেরিকান কমান্ডাররা বলছেন, আফগানিস্তানে প্রায় দুই হাজার আইএস যোদ্ধা তালেবানকে আক্রমণ করতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua/E. Waak
শ্রীলঙ্কা
এপ্রিলে শ্রীলঙ্কায় গির্জা ও হাসপাতালে বোমা হামলায় জড়িত ছিল বলে দাবি করে আইএস৷ শ্রীলঙ্কার কর্মকর্তারা বিস্ফোরণের জন্য তাদের সঙ্গে যুক্ত দুইটি স্থানীয় মুসলিম উগ্রবাদী গোষ্ঠীকে দায়ি করেন৷ ওই বিস্ফোরণের পর আইএস একটি ভিডিও প্রকাশ করে যাতে আটজনকে তাদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে দেখা যায়৷
ছবি: Reuters/D. Siddiqui
ইন্দোনেশিয়া
বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম দেশটির হাজার হাজার মানুষ আইএসের আদর্শ থেকে অনুপ্রাণিত বলে জানা গেছে৷ ধারণা করা হয় প্রায় ৫০০ ইন্দোনেশিয়ান আইএসের পক্ষে লড়াইয়ে সিরিয়ায় গিয়েছিল৷ গত বছর সুরবায়ায় আত্মঘাতী হামলায় ৩০ জন নিহত হয়৷ ওই হামলার পেছনে আইএস এর মদদপুষ্ট জামাহ আনসারুত দৌলা সংগঠনটির হাত ছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
ফিলিপাইন্স
ফিলিপাইন্সরা আশঙ্কা করছেন সিরিয়া ও ইরাক থেকে পালিয়ে আসা আইএস উগ্রপন্থিরা মিন্ডানাও প্রদেশের প্রত্যন্ত বন এবং মুসলিম গ্রামগুলোতে আশ্রয় নিতে পারে৷ এই অঞ্চলটি নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা, বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং ইসলামী বিদ্রোহের কারণে কুখ্যাত৷ এই অঞ্চলে সংঘটিত হামলা এবং সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের জন্য আইএস দায় নিলেও তার যথার্থতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷
ছবি: Reuters/Handout
10 ছবি1 | 10
জালালাবাদের প্রভিন্সিয়াল প্রশাসনের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রোববার সারা রাতই দুই পক্ষের মধ্যে গুলিযুদ্ধ চলে। সোমবার সকালেও তা চলতে থাকে। ইতিমধ্যেই এলাকায় পৌঁছয় নিরাপত্তবাহিনীর জওয়ানরা। তাদের সাহায্যে শেষ পর্যন্ত গুলিযুদ্ধ বন্ধ হয়। ১০ জন জঙ্গির মৃত্যু হয়। তবে সব মিলিয়ে কতজন আইএস জঙ্গি এসেছিল, সে বিষয়ে কোনও নির্দিষ্ট উত্তর দিতে পারেনি প্রশাসন।
সোমবার গুলিযুদ্ধ বন্ধ হওয়ার পরে ফের জেলের দখল নেয় পুলিশ। তখনই দেখা যায় প্রায় ৪০০ বন্দি পালিয়েছে। তাদের খোঁজে সার্চ অপারেশনও শুরু হয়েছে। জেল সূত্র জানিয়েছে, ওই ৪০০ বন্দির মধ্যে বেশ কিছু আইএস এবং তালেবান যোদ্ধা রয়েছে। আইএস জঙ্গিরা বিশেষ ব্যক্তিকে মুক্ত করতে এসেছিল কি না, সে বিষয়ে অবশ্য কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।
সোমবারেই এই ঘটনায় তাদের হাত নেই বলে জানিয়েছিল তালেবান। পরে আইএস ঘটনার দায় স্বীকার করে। খোরাসান প্রভিন্সের আইএস সংগঠন বিবৃতি দিয়ে দায় স্বীকার করেছে।
বছরখানেক আগেই আফগান সরকার জানিয়েছিল, দেশ এখন আইএস মুক্ত। প্রতিটি প্রভিন্স থেকেই আইএস জঙ্গিরা পালিয়েছে। কিন্তু জালালাবাদের ঘটনা প্রমাণ করে দিল, আফগানিস্তানে আইএস কেবল সক্রিয় নয়, যথেষ্ট শক্তিশালী। এই ঘটনার পরে আরও একটি প্রশ্ন সামনে চলে আসছে। তালেবানের সঙ্গে আফগান সরকারের যে শান্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, ঈদের পরে ফের যে শান্তি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, তা কি ভেস্তে গেল? তালেবান এবং আফগান প্রশাসন, কেউই এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি।