কিশোরী সারা হাবিবের মতো অনেক তরুণ আফগান যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান চুক্তি নিয়ে আশা-নিরাশার দোলাচালে রয়েছেন৷ এই চুক্তি দেশটির দীর্ঘ ১৮ বছরের যুদ্ধাবস্থার অবসান ঘটাবে, নাকি আফগানিস্তানকে আবারও ফিরিয়ে নেবে তালেবান আমলে৷
বিজ্ঞাপন
আফগানিস্তানে শান্তি ফেরাতে এক বছরের বেশি সময় ধরে আলোচনার পর কাতারের দোহায় তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এ চুক্তি সাক্ষর হচ্ছে৷
চুক্তি অনুযায়ী, তালেবান শর্ত মানলে আফগানিস্তান থেকে সব সৈন্য সরিয়ে নেবে যুক্তরাষ্ট্র৷
তালেবান রাজনৈতিক দল হিসেবে দেশটির মূল রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে এবং হয়তো আবারও তাদের ক্ষমতার কেন্দ্রে যাওয়ার পথ তৈরি হবে৷
১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ছিল তালেবান৷ ওই সময় তারা দেশে কট্টর শরিয়া আইন জারি করেছিল৷ বিশেষ করে নারীদের উপর নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল৷ তাদের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পর্যন্ত ছিল না৷
খুশিতে নাচছেন আফগানরা
01:14
যুক্তরাষ্ট্রের অভিযানে তালেবান ক্ষমতা থেকে উৎখাত হওয়ার পর অবস্থার পরিবর্তন হয়৷
কাবুলের ১৩ বছরের সারা হাবিব সেখানে একটি মিউজিক অ্যাকাডেমিতে গিটার শেখে৷
চুক্তির পর গিটার শেখা চালিয়ে যেতে পারবে কিনা তা নিয়ে উদ্বিগ্ন এই কিশোরী, ‘‘আমি আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছুটা চিন্তিত৷ যদি তালেবান বা তাদের মতো কেউ দেশের ক্ষমতায় চলে আসে, তবে আমার শিক্ষা গ্রহণের অধিকার আর থাকবে না৷''
যদিও তালেবান বলছে, তারা তাদের আদর্শে আধুনিকায়ন করেছে৷ ইসলাম নারীদের ব্যবসা, মালিকানা, শিক্ষা গ্রহণ, কাজ করার, স্বামী নির্বাচন করার এবং নিরাপত্তা ও ভালো থাকার অধিকার দিয়েছে৷
কিন্তু দেশটির নারীরা এখনো তাদের উপর আস্থা রাখতে পারছে না৷
পাঁচ বছর আগে হাবিবা ‘ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অব কাবুল'-এ লেখাপড়া করতো৷ স্কুলে তার প্রিয় বিষয় ছিল সংগীত৷
নিরাপত্তার কারণে স্কুলটি বন্ধ হয়ে গেলে হাবিবা গিটার বাজানো শেখা শুরু করে৷ তার জীবনে আনন্দ ফিরে আসে৷
হাবিবার অ্যাকাডেমিতে গিটার শেখেন মাহদি ফায়াজি৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রতিদিনই আলোচনা চলছে৷ অন্য দেশ আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ করছে; কত দিন আমরা এটা সহ্য করবো? এ কারণে আমি দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে হতাশ৷''
গত ১৮ বছর ধরে তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ চলে আসছে৷ আফগানিস্তানে এখনো ১২ থেকে ১৩ হাজার মার্কিন সৈন্য রয়েছে৷
২৯ তারিখ চুক্তির পর তালেবান ও আফগান সরকারের মধ্যে আগামী ১০ মার্চ আলোচনা শুরু হতে পারে৷
এর আগে গত সেপ্টেম্বরে একবার দুই পক্ষ চুক্তির কাছাকাছি চলে গিয়েছিল৷ কিন্তু সংঘাত চলতে থাকায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প শেষ মুহূর্তে সরে যান৷
এসএনএল/এসিবি (রয়টার্স)
এক বছর আগের ছবিঘরটি দেখুন:
ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন আফগান যুবারা
প্রায় দুই দশক তালেবানের সঙ্গে যুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক শক্তির উপস্থিতিতে বেড়ে উঠেছে এখনকার আফগান তরুণ প্রজন্ম৷ সরকার-তালেবান সংলাপ ও মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পরিকল্পনায় নানা উদ্বেগ দানা বাঁধছে তাঁদের মনে৷ শান্তি ফিরবে তো?
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
সুলতান কাসিম সায়েদি, মডেল
কাবুলের এই ১৮ বছর বয়সি মডেল স্পোর্টস হেয়ারস্টাইল করতে পছন্দ করেন৷ তাঁর পছন্দের মডেল সৌদি আরবের ওমর বোরকান এবং ক্যানাডিয়ান পপস্টার জাস্টিন বিবার৷ তাঁর ভয়, ‘‘তালেবান ক্ষমতায় আসলে, আমরা হয়তো আর শো করতে পারবো না৷’’ কিন্তু তারপরও যুদ্ধের বদলে শান্তি চান সুলতান৷
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
হুসাইন, হেয়ারড্রেসার
লক্ষ লক্ষ আফগানের মতো, যুদ্ধের ভয়াবহতা এড়াতে ছোট্ট হুসাইনকে নিয়ে তাঁর পরিবারও পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল পার্শ্ববর্তী দেশ ইরানে৷ তবে এখন আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে হেয়ারড্রেসারের কাজ করেন ১৯ বছরের হুসাইন৷ তালেবানের সাঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু হওয়ায় তিনি খুশি৷ তিনি বলছেন, ‘‘আমাদের দেশে যুদ্ধ ও সংঘাত শেষ হওয়া দরকার৷ আমি চাই তালেবান আগের মতো আচরণ না করে তাদের নীতিতে পরিবর্তন আনুক৷’’
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
মাহদি জাহাক, আর্টিস্ট
গত ১৭ বছর থেকে তালেবানেরও শিক্ষা নেয়া উচিত বলে মনে করেন ২৫ বছর বয়সি আর্টিস্ট সাহদি জাহাক৷ তিনি বলছেন, ‘‘শান্তি ফিরে আসার একটা আশা রয়েছে৷ কিন্তু গত ১৭ বছরে দেশ যে সাফল্য অর্জন করেছে, তা তাদের স্বীকার করতে হবে এবং সবাইকে তাঁদের জীবন উপভোগ করার সুযোগ দিতে হবে৷’’
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
কাওসার শেরজাদ, অ্যাথলিট
মুয়ায় থাই অ্যাথলিট কাওসার শেরজাদ৷ তাঁর বয়স ১৭ বছর৷ নারীদের ব্যাপারে তালেবানের অতীত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বেশ চিন্তিত তিনি৷ কাওসার বলছেন, ‘‘আফগান নারীরা খেলাধুলায় ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন৷ আমি আশাবাদী, এই সাফল্যগুলো মেনে নিবে তালেবান৷’’
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
সোহাইল আতাই, ব্যবসায়ী
মাত্র ২২ বছর বয়সেই একটি বিলাসবহুল কাপড়ের দোকানের মালিক সোহাইল৷ বুঝতে শেখার পর থেকেই দেশজুড়ে সহিংসতা, যুদ্ধ, বোমা দেখে বড় হয়েছেন৷ এখন যে-কোনো প্রকারেই হোক, এই যুদ্ধের সমাপ্তি চান তিনি৷ সোহাইল বলছেন, ‘‘আমরা যুদ্ধে ক্লান্ত হয়ে গেছি৷ এখন ভালো একটা জীবনযাপনের জন্য আমরা শান্তি চাই৷’’
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
মারাম আতায়ী, পিয়ানোবাদক
কাবুলের এক মিউজিক স্কুলে পিয়ানো বাজানো শিখছেন ১৬ বছরের মারাম৷ তাঁর জন্য সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো তালেবান আবার ক্ষমতায় এলে তাঁকে আর পিয়ানো বাজাতে দেবে কিনা৷ মারাম বলেন, ‘‘সবচেয়ে ভালো হয় সরকার ও তালেবানের মধ্যে সমঝোতা হলে৷ গানবাজনার অধিকার ও নারী অধিকার অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে৷’’
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
ওমিদ আরমান, মডেল
কাবুলের এক কাপড়ের দোকানে ছবির জন্য পোজ দিয়েছেন ২১ বছর বয়সি মডেল ওমিদ৷ যুদ্ধ-সংঘাত ‘যথেষ্ট হয়েছে’ বলে মনে করেন তিনি৷ ওমিদ বলেন, ‘‘এই দেশের সবাই শান্তি চায়৷ আমরা অনেক সংঘাতের সাক্ষী হয়েছি৷ যথেষ্ট হয়েছে, আর না৷ আমরা আর কোনো বিপর্যয় দেখতে চাই না৷’’
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
নাদিম কোরায়শী, ব্যবসায়ী
কাবুলে একটি গেম শপের মালিক ১৯ বছরের নাদিম৷ এত বছরের সংঘাত শেষে শান্তির সুবাতাস ভালো ফল বয়ে আনবে বলে প্রত্যাশা তাঁর৷ নাদিম বলছেন, ‘‘সরকার ও তালেবানের মধ্যে একটি দীর্ঘস্থায়ী সমঝোতা দেখতে চাই আমরা৷’’
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
জারঘোনা হাইদারি, চাকরিজীবী
একটি বইয়ের দোকানে কাজ করেন জারঘোনা৷ তাঁর বয়স ২২ বছর৷ শান্তি প্রক্রিয়ায় তেমন একটা আশার কিছু দেখছেন না জারঘোনা৷ তিনি বলছেন, ‘‘এই দেশে শিগগিরই শান্তি আসার কোনো সম্ভাবনা আমি দেখতে পাচ্ছি না৷ আমার ধারণা, তালেবান শেষ পর্যন্ত সরকারের সঙ্গে কোনো সমঝোতায় আসবে না৷’’