জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা ইউএনএইচআরসি তালেবান সরকারের প্রতি আফগান নারীদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে৷ শুক্রবার এক প্রস্তাবে তারা বলছে, আফগান নারীদের সমাজ থেকে অদৃশ্য করে ফেলা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
গত আগস্ট মাসে দ্বিতীয়বারের মতো আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখল করে তালেবান৷ এরপর থেকে সেখানকার নারীদের পোশাক, চলাফেরা ও শিক্ষার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তারা, যদিও শুরুতে বিপরীতই বলা হয়েছিল সংগঠনটির পক্ষ থেকে৷
‘‘২০২১ সালে আগস্ট মাস থেকে আফগানিস্তানের মানবাধিকার পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে, বিশেষ করে নারীদের জন্য,’’ ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন চেক রাষ্ট্রদূত ভাস্লাভ বালেক৷ ‘‘তালেবান এতটাই কড়াকড়ি আরোপ করেছে যে তারা আফগান সমাজ থেকে অদৃশ্য হয়ে গেছে,’’ যোগ করেন তিনি৷
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার সিদ্ধান্তের কারণে কোনো আইনি বাধ্যবাধকতায় পড়বে না তালেবান৷ তবে এর রাজনৈতিক প্রভাব আছে৷ এমনকি এই সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিক তদন্তের সুযোগও তৈরি করতে পারে৷
তালেবানের বিরুদ্ধে কাবুলে নারীদের বিক্ষোভ
01:34
অনেকগুলো দেশের সম্মতি থাকায় শুক্রবারের সিদ্ধান্তটি কোনো ভোট ছাড়াই পাশ হয়েছে৷ তবে চীন নিজেকে এই সিদ্ধান্ত থেকে আলাদা রেখে বলেছে, ‘এটি ভারসাম্যপূর্ণ নয়’৷
সমর্থনকারীদের একজন আফগানিস্তানের আগের সরকারের দূত মহিবুল্লাহ তাইব৷ তিনি বলেন, তালিবানের নিষেধাজ্ঞাগুলো ‘নারীবিদ্বেষপ্রসূত’৷
আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকে এ বিষয়ে একটি আলোচনা হবে৷ সেখানে আফগান নারী অধিকারকর্মীরা যোগ দিতে পারবেন৷
তবে এসব সিদ্ধান্ত বা চাপে তালিবান সরকার কতটা নমনীয় হবে সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে অনেকের৷
জেডএ/এসিবি (রয়টার্স)
আফগান নারীদের যেসব অধিকার কেড়ে নিয়েছে তালেবান
দ্বিতীয় দফা ক্ষমতায় এসে যুযোপযোগী শাসনব্যবস্থার কথা বললেও একে একে নারীর অনেক অধিকারই কেড়ে নিয়েছে তালেবান৷ ছবিঘরে দেখুন...
ছবি: Wakil Kohsar/AFP/Getty Images
একা একা দূরে নয়
গত ২৬ ডিসেম্বরের নির্দেশনা অনুযায়ী, আফগানিস্তানের নারীরা ৭২ কিলোমিটারের (৪৫ মাইল) চেয়ে বেশি দূরে একা যেতে পারবেন না৷ যেতে হলে সঙ্গে কোনো পুরুষকে রাখতে হবে৷তালেবান মিনিস্ট্রি ফর প্রোপাগেশন অফ ভার্চু অ্যান্ড দ্য প্রিভেনশনস অফ ভাইস এক নির্দেশনায় কোনো চালক যাতে কখনো একা দূরে যেতে আগ্রহী নারীকে গাড়িতে না তোলেন সেই কথাও বলা হয়েছে৷
ছবি: Sayed Khodaiberdi Sadat/AA/picture alliance
গৃহনির্যাতন মেনে নিতে হবে!
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপি-কে বলেছেন, তালেবান মিনিস্ট্রি ফর প্রোপাগেশন অফ ভার্চু অ্যান্ড দ্য প্রিভেনশনস অফ ভাইস-এর নির্দেশনায় গৃহ নির্যাতনের স্বীকার হলেও নারীদের স্বামীর সংসার ছেড়ে না যাওয়ার কথাও বলা হয়েছে৷
ছবি: Safi/Xinhua/imago
টেলিভিশনে, মুভিতে চেহারা দেখানো যাবে না
টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রে নারীদের চেহারা দেখানোও সীমিত করেছে তালেবান৷ এই নির্দেশের ফলে কোনো নারী আর টিভি শো, নাটক বা চলচ্চিত্রে অংশ নিতে পারেন না৷ বিশেষ ক্ষেত্রে অংশ নিলেও নারীকে অবশ্যই হিজাব পরতে হয়৷এক প্রতিবেদনে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স জানিয়েছে, তালেবান ক্ষমতায় আসার পর অনেক নারীই মিডিয়া ছেড়েছেন৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: Ariana News
নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয় অবলুপ্ত
২০০১ সালে নারীদের জন্য আলাদা একটি মন্ত্রণালয় খুলেছিল তখনকার সরকার৷২০২১ সালে ক্ষমতায় এসে সেই মন্ত্ণালয় বন্ধ করেছে তালেবান৷ ওপরের ছবিতে কাবুলের এক বেকারির সামনে দরিদ্র নারীদের মধ্যে রুটি বিতরণের দৃশ্য৷ রুটি দিচ্ছেন এক সাধারণ নাগরিক৷
ছবি: Petros Giannakouris/AP/picture alliance
শিক্ষার সুযোগ সীমিতকরণ
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ) অক্টোবরের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আফগানিস্তানে প্রাইমারির ওপরে মেয়েদের প্রায় সব স্কুলই বন্ধ করে দিয়েছে তালেবান৷ এর ফলে মেয়েদের উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ কমে গেল৷
ছবি: Bulent Kilic/AFP
নারী-পুরুষ একসঙ্গে নয়
গত আগস্টে আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কান্দাহারের দখল নিয়েই সেখানকার বিভিন্ন ব্যাংকে গিয়ে নারীদের বের করে দেয় তালেবান৷পরে অন্যান্য শহরেও নারীদের কর্মস্থল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে তারা৷ ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে তালেবানের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, তারা মনে করেন, আফগান নারীদের পুরুষদের সঙ্গে বসে কাজ করা উচিত নয়৷
ছবি: TASS/dpa/picture alliance
বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষাক-বিধি
২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তালেবানের শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা করেন, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী ও পুরুষকে আলাদা বসতে হবে এবং সবাইকে ‘ইসলামি পোশাক’ পরতে হবে৷