আন্তর্জাতিক নারী সংগঠন ডাব্লিউএফডাব্লিউআই মনে করে, জননিরাপত্তা ছাড়া আফগানিস্তানে কাঙ্খিত উন্নয়ন সম্ভব নয়৷ অথচ তালেবানের দাপট আবার বাড়ছে৷ নারীদের নিয়ে তাই আরো বেশি শঙ্কিত সংস্থাটি৷
বিজ্ঞাপন
রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব শঙ্কার কথা জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক নারী অধিকার সংগঠন ‘উইমেনস ফর উইমেন ইন্টারন্যাশনাল' ডাব্লিউএফডাব্লিউআই -এর যুক্তরাজ্য অঞ্চলের নির্বাহী পরিচালক ব্রিটা ফার্নান্দেস শ্মিড্ট৷ সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, আফগানিস্তানে সাম্প্রতিককালে আবার ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলোর প্রভাব বেড়েছে৷ কিছু অঞ্চলে তালেবান আবার পূর্ণ শক্তি নিয়ে ফিরে আসতে শুরু করেছে৷ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সেনা কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে, আফগানিস্তানের এক তৃতীয়াংশ অঞ্চল এ মুহূর্তে তালেবানের নিয়ন্ত্রণে৷ কোথাও কোথাও তালেবান জঙ্গিরা ইসলামিক স্টেটে যোগ দিয়ে নতুনভাবে সংগঠিত হচ্ছে৷
তবে ব্রিটা ফার্নান্দেস শ্মিড্ট জানান, তালেবান নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নারীরা কোণঠাসা অবস্থায় থাকলেও নারী নির্যাতন আফগানিস্তানের সাধারণ পুরুষরাই বেশি করেন৷ ঘরে ঘরে চলছে নির্যাতন, নিপীড়ন৷
আফগান নারীদের সোনালি অতীত
তালেবান শাসনামলে মেয়েদের জন্য বোরকা বাধ্যতামূলক করা হয় আফগানিস্তানে৷ অথচ আফগানিস্তানে এমন একটা সময়ও ছিল, যখন সে দেশের মানুষ, বিশেষ করে নারীরা পশ্চিমা পোশাকে অভ্যস্ত ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
উচ্চাকাঙ্খী চিকিৎসকরা
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’জন নারী মেডিসিন শিক্ষার্থীকে দেখা যাচ্ছে এক অধ্যাপকের সঙ্গে মানবদেহের একটি অংশ পরীক্ষা করতে৷ ছবিটি ১৯৬২ সালে তোলা৷ সে’সময় আফগান সমাজে নারীদের একটি সক্রিয় ভূমিকা ছিল৷ তখন তাঁদের শিক্ষার সুযোগ যেমন ছিল, তেমনই বাড়ির বাইরেও ছিল অবাধ বিচরণ৷
ছবি: Getty Images/AFP
পাশ্চাত্যের পোশাক কাবুলের রাস্তায়
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে একটি রেডিও স্টেশনের বাইরে হাঁটছেন পশ্চিমা ধাঁচের পোশাক পরা দুই নারী৷ ১৯৬২ সালে তোলা ছবি এটি৷ কিন্তু উগ্র ইসলামপন্থি তালেবান গত শতকের নব্বইয়ের দশকে ক্ষমতা গ্রহণের পর, সব কিছু বদলে যায়৷ আর সব কিছু ঢাকা যায়, এমন বোরকা পরে জনসমক্ষে যেতে বাধ্য করা হয় নারীদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সবার জন্য সম অধিকার - সবসময় নয়
গত শতকের সত্তরের দশকে আফগান শিক্ষাকেন্দ্রগুলোতে মেয়েদের বিচরণ স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল৷ কিন্তু তার মাত্র ২০ বছর পর শিক্ষাকেন্দ্রে মেয়েদের যাতায়াত পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়৷ ২০০১ সালে তালেবানের পতনের পর পরিস্থিতি আবার কিছুটা বদলেছে৷ ২০০৩ সালে আফগান সংবিধানে নারী ও পুরুষ উভয়ের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/Hulton Archive/Zh. Angelov
কম্পিউটার প্রশিক্ষণ
কাবুল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে আফগান শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন একজন সোভিয়েত প্রশিক্ষক৷ ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত – অর্থাৎ এই দশ বছর আফগানিস্তান সোভিয়েতদের দখলে ছিল৷ তাই সেই সময়টায় আফগান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বহু অধ্যাপক অধ্যাপনা করেছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP
শিক্ষার্থীদের ঘোরাফেরা
১৯৮১ সালে তোলা এই ছবিটিতে আফগান ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে৷ ১৯৭৯ সালে সোভিয়েতরা আফগানিস্তানে হামলা চালালে যুদ্ধ শুরু হয় এবং তা দশ বছর ধরে চলে৷ পরবর্তীতে, ১৯৮৯ সালে, সোভিয়েতরা দেশটি ছেড়ে গেলে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় আফগানিস্তানে৷ এই গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে ১৯৯৬ সালে, তালেবানের ক্ষমতাগ্রহণের মধ্য দিয়ে৷
ছবি: Getty Images/AFP
সবার জন্য স্কুল
সোভিয়েতদের অধিকৃত আফগানিস্তানের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছবি এটি৷ তবে তালেবানের শাসনামল শুরু হওয়ার পর আফগান মেয়েদের স্কুলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়৷ এমনকি বাড়ির বাইরে কাজ করাও নিষিদ্ধ ছিল তাঁদের৷
ছবি: Getty Images/AFP
তেমন কিছু বদলায়নি
এই ছবিটি ১৯৮১ সালে তোলা৷ হিজাব, বোরকা ছাড়া এক মা তাঁর সন্তানদের নিয়ে রাস্তায় হাঁটছেন৷ এমন দৃশ্য এখন আর আফগানিস্তানে দেখা যায় না৷ এমনকি তালেবান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ১৫ বছর পরেও না!
ছবি: Getty Images/AFP
7 ছবি1 | 7
নারীরা মুখ বুঁজে সহ্য করছেন সব৷ আফগান নারীরা ধীরে ধীরে আরো কোণঠাসা হয়ে পড়ছে৷ব্রিটা ফার্নান্দেস শ্মিড্ট মনে করেন, নারী উন্নয়নের পদক্ষেপ আরো জোরদার না করলে আফগানিস্তানের সংকট আরো ঘণীভূত হবে৷
সাক্ষাৎকারে আফগানিস্তানে জননিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুরুত্বও তুলে ধরেছেন ব্রিটা ফার্নান্দেস শ্মিড্ট৷ তবে তিনি মনে করেন, নিরাপত্তার দিকে বেশি মনোনিবেশ করে ঢিলেঢালা উন্নয়ন কার্যক্রমে সন্তুষ্টি প্রকাশ করা ভুল৷ তাঁর মতে, ‘‘উন্নয়ন ছাড়া নিরাপত্তা সম্ভব নয়, আবার নিরাপত্তা ছাড়াও উন্নয়ন সম্ভব নয়৷ দুটো আসলে হাত ধরাধরি করেই চলে৷''