আফগান নিরাপত্তা কর্মীদের দক্ষ করে তুলতে ভারতের সহযোগিতা
১০ নভেম্বর ২০১১
২০১৪ সালের মধ্যে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব হস্তান্তর করতে চায় ন্যাটো নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সহায়তা বাহিনী আইসাফ৷ তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যুদ্ধের প্রতি জনসমর্থন যেভাবে নেমে গেছে তাতে নির্ধারিত সময়ের আগেই সেনা প্রত্যাহারের কথা ভাবতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, এমন আশঙ্কাও করছেন বিশ্লেষকরা৷ তাই সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে এখন প্রায় সাড়ে তিন লাখ আফগান পুলিশ ও সেনা সদস্যকে প্রশিক্ষিত করে তোলার কাজ করছে ন্যাটো৷
তবে ২০১৪ সালের পর আফগানিস্তানের পরিস্থিতি যাতে আরো খারাপের দিকে না যায় এবং সেখানে যেন নিরাপত্তা জনিত শূন্যতা সৃষ্টি না হয় সে লক্ষ্যেই এগিয়ে এসেছে ভারত৷ আফগান নিরাপত্তা কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং কিছু হাল্কা অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করার ঘোষণা দিয়েছে নতুন দিল্লি৷ এতোদিন পর্যন্ত খুব অল্প সংখ্যক আফগান নিরাপত্তা কর্মীকে কিছু তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ দিয়েছে ভারত৷ যেমন ২০০৭ সালে ৩০ সদস্যের দু'টি বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে৷ তবে গত মাসে সম্পাদিত ভারত-আফগান সহযোগিতা চুক্তি অনুসারে এবার প্রশিক্ষণের ধরণ ও মাত্রা অনেক বেশি বৃদ্ধি করা হবে৷
ভারতের মধ্য প্রদেশের এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা এ ব্যাপারে বলেন, ‘‘আমি মনে করি এবার মহু'র আর্মি ওয়ার কলেজের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতে আফগানিস্তান নিরাপত্তা কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে৷ এমনকি তাদেরকে প্রশিক্ষক বানানোর জন্যও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে মনে করা হচ্ছে৷'' এছাড়া যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের রাস্তা-ঘাট, বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং বাঁধ নির্মাণসহ বেসামরিক খাতে দুই বিলিয়ন ডলার সাহায্য দেবে ভারত৷ ফলে সামরিক ও বেসামরিক খাতে আফগানিস্তানের উন্নয়নে ভারত আনুষ্ঠানিক এবং প্রকাশ্যভাবে বড় মাপের সহযোগিতা করতে যাচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে৷
আর সম্প্রতি পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টির ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও আফগান-ভারত চুক্তিকে ইতিবাচকভাবে দেখছে৷ তবে আফগান নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ভারতের মাটিতে গিয়ে প্রশিক্ষিত হয়ে আসলে তাদের মধ্যে পাকিস্তান বিরোধী মনোভাব দানা বাঁধবে বলে বেশ উদ্বিগ্ন পাকিস্তান৷ তবে আফগানিস্তানে এই সহযোগিতা উদ্যোগ থেকে পিছু হটবে না ভারত তা বেশ স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছে নতুন দিল্লি৷ তাছাড়া আঞ্চলিকভাবে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে আফগানিস্তানে ভারতের সম্পৃক্ততা জরুরি৷ কারণ আফগানিস্তানের খনি থেকে প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলনে চীনের বিনিয়োগ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ আবার বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন, আফগান গোয়েন্দা বাহিনীকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান ভারতের জন্য বেশি লাভজনক এবং সহজতর৷
যাহোক, ভারতের অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল অশোক মেহতার মতো অনেকেই মনে করছেন, ‘‘বর্তমানে আফগান সেনা, পুলিশ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য এখন ভারতের দরজা খোলা৷'' তাঁর মতে, আফগানরা ভারতীয়দের মতো বিভিন্ন ধর্মের এবং গৌত্রের সদস্যদের সমন্বয়ে একটি ধর্ম নিরপেক্ষ এবং জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ শক্তিশালী নিরাপত্তা বাহিনী গড়ে তুলতে চায়৷ অথচ আফগান সেনাবাহিনীতে এখনও সংখ্যালঘু তাজিক ও হাজারা গোষ্ঠীর আধিক্য রয়েছে এবং সামরিক বাহিনীতে সংখ্যাগরিষ্ঠ পাস্তুনদের প্রতিনিধিত্ব কম৷
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ