আফগানিস্তানের মেয়ে নেগিন খোপলোয়াক৷ বয়স মাত্র ১৭ এই বয়সেই দেশের সীমানা ছাড়িয়েছে তার খ্যাতি৷ দেশের প্রথম নারী ‘কন্ডাক্টর' হয়ে নেগিন এখন বিশ্বজয় করার অপেক্ষায়৷
বিজ্ঞাপন
জন্ম কুনার প্রদেশে৷ আফগানিস্তানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ওই এলাকায় কয়েক বছর আগেও ছিল তালেবানের দাপট৷ মেয়েদের লেখাপড়া ছিল নিষিদ্ধ৷ গান-বাজনা ছিল ‘হারাম'৷ সেই কুনার থেকেই কাবুলে গিয়ে স্বপ্নের পথে নেমেছে নেগিন৷ সংগীতের প্রতি দুর্দমনীয় টান আর অক্লান্ত পরিশ্রমে আজ সে দেশের প্রথম নারী ‘কন্ডাক্টর', অর্থাৎ বাদক দলের প্রথম নারী নেত্রী৷ নেগিন খোপলোয়াক তাই ইতিহাসের অংশ৷
কুনারের অনেক মেয়ের কাছেই এতকাল সংগীতচর্চা ছিল অব্যক্ত এক স্বপ্ন৷ নেগিন তাঁর স্বপ্নের কথা শুধু বাবাকে বলেছিল৷ বাবা পরম বন্ধু৷ তাই মায়ের আপত্তি, বড় চাচার বাধা ডিঙিয়েও সে কাবুলের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ মিউজিকে ভর্তি হতে পেরেছিল৷
লেখাপড়ার জন্য মা-ও খুব উৎসাহ দিতেন৷ কিন্তু কাবুলে মেয়েদের হস্টেলে গিয়ে প্রথম টেলিভিশনের অনুষ্ঠান দেখে যখন গানের প্রতি ভালোবাসা জন্মালো তখনই হলো মুশকিল৷ নিজের আগ্রহেই আফগানিস্তানের একমাত্র সংগীত শেখার প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ মিউজিকে ভর্তি হয়েছিল নেগিন৷ সেবার চার মাসের বেশি সেখানে সংগীত শিখতে পারেনি৷ মায়ের আপত্তি, বড় চাচার বকুনির মুখে ফিরে যায় গ্রামে৷
আফগান নারীদের সোনালি অতীত
তালেবান শাসনামলে মেয়েদের জন্য বোরকা বাধ্যতামূলক করা হয় আফগানিস্তানে৷ অথচ আফগানিস্তানে এমন একটা সময়ও ছিল, যখন সে দেশের মানুষ, বিশেষ করে নারীরা পশ্চিমা পোশাকে অভ্যস্ত ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
উচ্চাকাঙ্খী চিকিৎসকরা
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’জন নারী মেডিসিন শিক্ষার্থীকে দেখা যাচ্ছে এক অধ্যাপকের সঙ্গে মানবদেহের একটি অংশ পরীক্ষা করতে৷ ছবিটি ১৯৬২ সালে তোলা৷ সে’সময় আফগান সমাজে নারীদের একটি সক্রিয় ভূমিকা ছিল৷ তখন তাঁদের শিক্ষার সুযোগ যেমন ছিল, তেমনই বাড়ির বাইরেও ছিল অবাধ বিচরণ৷
ছবি: Getty Images/AFP
পাশ্চাত্যের পোশাক কাবুলের রাস্তায়
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে একটি রেডিও স্টেশনের বাইরে হাঁটছেন পশ্চিমা ধাঁচের পোশাক পরা দুই নারী৷ ১৯৬২ সালে তোলা ছবি এটি৷ কিন্তু উগ্র ইসলামপন্থি তালেবান গত শতকের নব্বইয়ের দশকে ক্ষমতা গ্রহণের পর, সব কিছু বদলে যায়৷ আর সব কিছু ঢাকা যায়, এমন বোরকা পরে জনসমক্ষে যেতে বাধ্য করা হয় নারীদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সবার জন্য সম অধিকার - সবসময় নয়
গত শতকের সত্তরের দশকে আফগান শিক্ষাকেন্দ্রগুলোতে মেয়েদের বিচরণ স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল৷ কিন্তু তার মাত্র ২০ বছর পর শিক্ষাকেন্দ্রে মেয়েদের যাতায়াত পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়৷ ২০০১ সালে তালেবানের পতনের পর পরিস্থিতি আবার কিছুটা বদলেছে৷ ২০০৩ সালে আফগান সংবিধানে নারী ও পুরুষ উভয়ের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/Hulton Archive/Zh. Angelov
কম্পিউটার প্রশিক্ষণ
কাবুল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে আফগান শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন একজন সোভিয়েত প্রশিক্ষক৷ ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত – অর্থাৎ এই দশ বছর আফগানিস্তান সোভিয়েতদের দখলে ছিল৷ তাই সেই সময়টায় আফগান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বহু অধ্যাপক অধ্যাপনা করেছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP
শিক্ষার্থীদের ঘোরাফেরা
১৯৮১ সালে তোলা এই ছবিটিতে আফগান ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে৷ ১৯৭৯ সালে সোভিয়েতরা আফগানিস্তানে হামলা চালালে যুদ্ধ শুরু হয় এবং তা দশ বছর ধরে চলে৷ পরবর্তীতে, ১৯৮৯ সালে, সোভিয়েতরা দেশটি ছেড়ে গেলে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় আফগানিস্তানে৷ এই গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে ১৯৯৬ সালে, তালেবানের ক্ষমতাগ্রহণের মধ্য দিয়ে৷
ছবি: Getty Images/AFP
সবার জন্য স্কুল
সোভিয়েতদের অধিকৃত আফগানিস্তানের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছবি এটি৷ তবে তালেবানের শাসনামল শুরু হওয়ার পর আফগান মেয়েদের স্কুলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়৷ এমনকি বাড়ির বাইরে কাজ করাও নিষিদ্ধ ছিল তাঁদের৷
ছবি: Getty Images/AFP
তেমন কিছু বদলায়নি
এই ছবিটি ১৯৮১ সালে তোলা৷ হিজাব, বোরকা ছাড়া এক মা তাঁর সন্তানদের নিয়ে রাস্তায় হাঁটছেন৷ এমন দৃশ্য এখন আর আফগানিস্তানে দেখা যায় না৷ এমনকি তালেবান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ১৫ বছর পরেও না!
ছবি: Getty Images/AFP
7 ছবি1 | 7
ভাগ্যিস বাবা ছিলেন! বড়চাচাকে বাবাই বললেন, ‘‘জীবনটা তো নেগিনের৷ নেগিন চাইলে ওকে তো সংগীতে তালিম নেয়ার সুযোগটা দেয়া উচিত৷'' বড় চাচা আর আপত্তি করেননি, নেগিনও আর ফিরে তাকায়নি৷ তারপরকোনো বাধাই আর বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি৷ পরিবার পাশে থাকলে কে কী বলে, কে কী ভাবে তা শোনা বা তা নিয়ে ভেবে কী লাভ?
১৩ বছর বয়স থেকে তাই মন দিয়ে শুধু সংগীত শিল্পী হওয়ার চেষ্টাই করেছে নেগিন৷ চার বছরের অপেক্ষা আপাতত শেষ৷ কয়েকদিন আগেই কাবুলে হয়ে গেল শুধু মেয়ে বাদকদের দলের কনসার্ট৷ নেগিনের জীবনেরও প্রথম কনসার্ট৷ সেই কনসার্টের কন্ডাক্টরও ছিল নেগিন খোপলোয়াক৷
এমনিতে পিয়ানো বাজায় নেগিন৷ শ্রোতা-দর্শক বেশি হলে হাত এখনো কাঁপে৷ অনভিজ্ঞতাজনিত এই দুর্বলতা স্বীকারও করে আফগান কিশোরী, আর দেখে স্বপ্ন, ‘‘শুধু আফগানিস্তান নয়, একদিন আমি সারা বিশ্বের বড় মাপের পিয়ানিস্ট, বিখ্যাত একজন কন্ডাক্টর হতে চাই৷ ''
বিশ্বখ্যাত হলে ভক্তও হবে অনেক৷ ভক্তভাগ্য অবশ্য এখনই বেশ ভালো৷ আফগানিস্তানের প্রথম নারী কন্ডাক্টর নেগিন খোপলোয়াকের প্রশংসায় অনেকেই পঞ্চমুখ৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অভিনন্দন আর শুভেচ্ছা বার্তার ছড়াছড়ি৷ যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন আর আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টনের মেয়ে চেলসি ক্লিন্টনও আছেন সেই দলে!
আফগানিস্তানে জীবন ও যুদ্ধ
দীর্ঘদিন ধরে আফগানিস্তানের ছবি তুলছেন ইরানের ফটোগ্রাফার মাজিদ সাঈদি৷ ছবিগুলো অনেক আন্তর্জাতিক পুরস্কারও এনে দিয়েছে তাঁকে৷ চলুন তাঁর ক্যামেরার চোখে দেখা যাক আফগানিস্তানকে৷
ছবি: Majid Saeedi
খেলনা!
কাবুলে যু্দ্ধাহতদের জন্য তৈরি একটা নকল হাত নিয়ে খেলছে দুই কিশোরী৷ এমন কিছু ছবিই তেহরানের মাজিদ সাঈদিকে এনে দিয়েছে বেশ কিছু পুরস্কার৷
ছবি: Majid Saeedi
ছবিই বলে হাজার কথা
১৬ বছর বয়স থেকে ছবি তুলছেন মাজিদ৷ মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের কারণে মানবিক বিপর্যয়ের দিকেই তাঁর সমস্ত মনযোগ৷ জার্মানির ডেয়ার স্পিগেল, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমসের মতো ম্যাগাজিন এবং আন্তর্জাতিক পত্রিকায় ছাপা হয় তাঁর তোলা ছবি৷
ছবি: Majid Saeedi
আফগানিস্তানের শিশুরা
ডিডাব্লিউকে সরবরাহ করা মাজিদের ছবির অনেকগুলোতেই ফুটে উঠেছে আফগান শিশুদের জীবনে যুদ্ধের প্রভাব৷ এ ছবিটি যুদ্ধের কারণে হাত হারানো এক আফগান শিশুর৷
ছবি: Majid Saeedi
মাদকের অভিশাপ
আফগানিস্তানের খুব বড় এক সমস্যা মাদক৷ বলা হয়ে থাকে বিশ্বের শতকরা ৯০ ভাগ মাদকদ্রব্যই নাকি উৎপন্ন হয় আফগানিস্তানে৷ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আফিম হয় দেশটিতে৷ দেশের অনেক নাগরিক আফিমসেবী৷ জাতিসংঘের দেয়া তথ্য অনুযায়ী আফগানিস্তানের অন্তত তিন লক্ষ শিশু নিয়মিত আফিম সেবন করে৷
ছবি: Majid Saeedi
রোল কল
কাবুলের এক অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ শুরুর আগে ক্যাডেটদের রোল কল চলছে৷ জার্মান সেনাবাহিনী ‘বুন্ডেসভেয়ার’ আফগান নিরাপত্তাকর্মীদের অনেক আগে থেকেই প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিল৷ প্রশিক্ষণের লক্ষ্য, আফগান সেনাবাহিনী এবং পুলিশকে দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় আত্মনির্ভরশীল করে তোলা৷ ২০১৪ সালের শেষেই অবশ্য আফগানিস্তান থেকে নিজেদের সেনা সদস্যদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে জার্মানি৷
ছবি: Majid Saeedi
ভয়ংকর শৈশব
স্কুলে লেখাপড়া করতে যাওয়ার সুযোগ শিশুদের কমই মেলে৷ স্কুলে গেলে নগণ্য কারণেও হতে হয় শিক্ষকের কঠোর শাসনের শিকার৷ তা সহ্য করেও পুরো সময় থাকা হয়না, পরিবারের জন্য টাকা রোজগার করতে আগেভাগেই স্কুল থেকে বেরিয়ে পড়তে হয় তাদের৷ আফগানিস্তানে শিক্ষার হার খুবই কম৷ ২০১১ সালে জার্মান সরকারের উদ্যোগে একটি তথ্যবিবরণী প্রকাশ করা হয়েছিল৷ তখন আফগানিস্তানের শতকরা ৭২ ভাগ পুরুষ আর ৯৩ ভাগ নারীই ছিল নিরক্ষর৷
ছবি: Majid Saeedi
বোরখা এবং পুতুল
আফগান নারীরা পুতুল বানাতে শেখার ক্লাসে৷ মালয়েশিয়ার একটি বেসরকারি সংস্থার অর্থায়নে এখানে পুতুল বানাতে শেখানো হয় তাঁদের৷ আফগান নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্যই এ উদ্যোগ৷
ছবি: Majid Saeedi
তালেবানের প্রতিশোধ
২০১১ সালে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করার পরই আফগানিস্তানে হামলা চালায় তালেবান৷ প্রতিশোধমূলক সে হামলায় প্রাণ যায় চারজনের, আহত হয়েছিলেন ৩৬ জন৷ ছবিতে দু’জন আহতকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Majid Saeedi
খেলাধুলা
হাড়ভাঙা খাটুনি শেষে একটু বিশ্রাম৷ আফগানিস্তানে শরীর চর্চা খুব জনপ্রিয়৷
ছবি: Majid Saeedi
যুদ্ধের আবাদ
গত ৩০টি বছর ভীষণ প্রভাব ফেলেছে আফগানদের জীবনে৷ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা যায় যুদ্ধের প্রভাব৷
ছবি: Majid Saeedi
মাদ্রাসা
কান্দাহারের মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত শিশুরা৷
ছবি: Majid Saeedi
হত্যার প্রশিক্ষণ
কুকুরের লড়াইও আফগানিস্তানে খুব জনপ্রিয়৷ কুকুরদের এমনভাবে লড়াই করতে শেখানো হয় যাতে তারা প্রতিপক্ষকে একেবারে মেরে ফেলে৷ কুকুরের জীবনেও যুদ্ধের প্রভাব!