1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
সমাজপাকিস্তান

আফগান শরণার্থীদের জন্য ইসলামাবাদে ভাড়া বাড়ছে

১০ নভেম্বর ২০২২

পাকিস্তানের রাজধানীতে ভাড়াটেরা অভিযোগ করছেন, আফগান শরণার্থীদের জন্য ভাড়া বেড়ে যাচ্ছে। আফগানদের অনেকেই বলছেন, পশ্চিমা দেশগুলোর ভিসা পেতে দেরি হওয়ার কারণে তারা পাকিস্তান ছাড়তে পারছেন না।

গত বছরের আগস্ট থেকে আফগানদের অনেকেই ইসলামাবাদে পৌঁছেছেন
গত বছরের আগস্ট থেকে আফগানদের অনেকেই ইসলামাবাদে পৌঁছেছেনছবি: SOHAIL SHAHZAD/EPA-EFE

প্রায় তিন সপ্তাহের মধ্যে ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কলেজ শিক্ষক কামারুল ইসলাম পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে বাসা বাড়ি খুঁজছেন। বাড়িওয়ালা যে বিপুল ভাড়া চাইছেন, তার পক্ষে সেটা দেয়া সম্ভব নয়।

ইসলামাবাদে এ ঘটনা এখন একদম চেনা। এমনিতেই রাজধানী বলে বাসস্থানের চাহিদা বেশি। অনেকের মতে গত বছর তালেবান আফগানিস্তানে ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানে পালিয়ে আসা কয়েক হাজার আফগান শরণার্থীর কারণে ভাড়া আরো বেশি বেড়ে গিয়েছে।

কামারুল ইসলাম বলেন, "আমি এই দুই ঘরের বাসাটি ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে ৫৫ হাজার পাকিস্তানি রুপি (২৪৯ ইউরো, ২৫০ ইউরো) দিয়ে ভাড়া নিই। দুই বছর থাকার মাঝপথে ১০ শতাংশ ভাড়া বাড়ে। এরপর ১০ শতাংশ বা তার বেশি ভাড়া বৃদ্ধির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন হওয়ার আশা করেছিলাম।''

স্ত্রী এবং তিন সন্তানের সঙ্গে অভিজাত পাড়ার অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন কামারুল । তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''বাড়িওয়ালা আরো ২০ হাজার পাকিস্তানি রুপি দাবি করছেন। মূল্যস্ফীতির ফলে যা আমার সাধ্যের বাইরে। আমি কম ভাড়ায় নতুন বাসা খুঁজছি,"

তার কথায়, সাম্প্রতিক মাসগুলিতে আফগান নাগরিকেরা পাকিস্তানে আসার ফলে ভাড়া বেড়েছে।

আশ্রয় বা পুনর্বাসনের জন্য পশ্চিমই ভরসা

২০২১ সালের আগস্টে তালেবান আফগানিস্তান দখলের পর, অনেক পরিবার পশ্চিমা বিরোধী তালেবান শাসকদের আতঙ্কে দেশ ছেড়েছেন। যারা আগে ন্যাটো বাহিনী বা বিদেশি সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছেন, তাদের বেশিরভাগই আফগানিস্তান ছেড়েছেন। তাদের মধ্যে শিক্ষিত ও পেশাজীবী নারী-পুরুষও রয়েছেন।

আফগান শরণার্থীরা অচলাবস্থায়

গত বছরের আগস্ট থেকে আফগানদের অনেকেই ইসলামাবাদে পৌঁছেছেন। আশ্রয় বা পুনর্বাসনের জন্য পশ্চিমা দেশগুলিতে আবেদন করার সময়টুকু শহরের কেন্দ্রস্থলে বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট এবং হোটেল ভাড়া নিয়েছেন তারা।

তুলনামূলক নিম্নবিত্ত কিছু পরিবার সংসদ ভবনের কাছে, এমনকি কাছাকাছি একটি পার্কে শিবির বানিয়ে থাকছিল। নিরাপত্তার কারণে তাদের উঠিয়ে দেয় পুলিশ। ইসলামাবাদের পাশাপাশি রাওয়ালপিন্ডির যে সব এলাকায় কম খরচ, সেখানে চলে যায় এই পরিবারগুলি।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের একজন মুখপাত্র কায়জার খান আফ্রিদি ডিডাব্লিউ-কে বলেন, সরকারের অনুমান, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে প্রায় আড়াই লাখ আফগান পাকিস্তানে এসেছে। তিনি স্বীকার করেছেন সংখ্যাটা সম্ভবত আরো বেশি।

বিদেশে থাকা আত্মীয়দের সাহায্য

ইসলামাবাদের রিয়েল এস্টেট এজেন্টরা ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা বলেছে যে অনেক সম্পত্তির মালিক তাদের বাড়ি এবং অ্যাপার্টমেন্ট আফগান কিংবা বিদেশিদের কাছে ইজারা (লিজ) দিতে পছন্দ করে কারণ তারা আরো বেশি উপার্জন করতে পারে।

ইসলামাবাদের "জি-৯/৪" সেক্টরে এরকম অনেক পরিবার বাস করে। সেখানকার এক এস্টেট ব্যবসায়ী বলেন, "আফগানদের অনেকেই পশ্চিমা দেশে তাদের আত্মীয়দের থেকে অর্থ সাহায্য পাচ্ছে, তাই ভাড়া তাদের জন্য কোনো সমস্যা নয়।"

তিনি আরো বলেন, "বেশির ভাগ পাকিস্তানি আলাদা আবাসন ইউনিট দাবি করেন। কিন্তু আফগানরা জায়গা ভাগ করে থাকতে পারেন, বেশি ভাড়া দিতে তারা প্রস্তুত।"

পাকিস্তানে বসবাসের জন্য সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহর ইসলামাবাদ। সেখানকার আরেক ব্যবসায়ী রমজান সরফরাজও বিশ্বাস করেন, আফগানদের মধ্য়ে বাড়ির চাহিদা বেড়ে যাওয়া ইসলামাবাদে ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ।

তার কথায়, "আফগানেরাস্বল্প সময়ের জন্য সম্পত্তি ভাড়া নেয়। ভিসা পাওয়ার পরে চলে যায়, তাই বাড়িওয়ালারা পাকিস্তানিদের চেয়ে তাদের বেশি গুরুত্ব দেন। কারণ পাকিস্তানিরা দীর্ঘসময় ভাড়া থাকেন।"

ধীরগতিতে ভিসা আবেদন

আফগান নাগরিকরা বলছেন, ভিসা দিতে পশ্চিমা দেশগুলির দেরি হওয়ার কারণে বাড়ি ছাড়তে পারছেন না তারা।

বছর বিয়াল্লিশের নুদরাত বিবি বলেন, "কানাডার ভিসা হতে দেরি হওয়ায় আমরা এখানে আটকে গিয়েছি।"

ছয় সন্তান এবং পক্ষাঘাতগ্রস্ত স্বামীকে নিয়ে আন্তর্জাতিক এনজিওর সাবেক কর্মী ইসলামাবাদের একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন। তার বড় ভাই কানাডায় থাকেন। তিনি নুদরাতের পরিবারকে খরচ দিয়ে সাহায্য করেন।

সাদাফ বারি নামে আরেক তরুণ আফগান ভিসার জন্য অপেক্ষা করছেন। কাবুলে শিক্ষকতা করতেন ২৪ বছরের এই তরুণ। এখন একটি কল সেন্টারে সামান্য অর্থের জন্য কাজ করেন তিনি আর তার বোন । বারি বলেন এই লড়াইটা তাদের ভরসা। বর্তমানে ইসলামাবাদের দক্ষিণে রাওয়ালপিন্ডিতে একটি ছোট দোতলা বাড়ি ভাড়া করে রয়েছেন তারা।

পারিবারিক ভিসার অনুরোধ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাখ্যান করেছে। নিরাপত্তাহীনতা এবং মারাত্মক বেকারত্বের কারণে আফগানিস্তানে ফিরতে নারাজ পরিবারটি। তারা ভিসার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেছে।

রাস্তার প্রতিবাদ

ভিসা পেতে অনেক দেরি হলে বা বাতিল হলে আফগানরাতাদের পুনর্বাসন পরিকল্পনার অর্থ জোগাড় করার জন্য প্রায়ই রাস্তায় প্রতিবাদ করছেন। হতাশ হয়ে কেউ বলেন প্রতিশ্রুতি দিয়েও পশ্চিমা দুনিয়া তাদের ত্যাগ করেছে।

২০২১ সালের জুনে আফগানিস্তান থেকে বাহিনী সরানোর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কথা মনে রেখেছেন আফগানরা। বাইডেন তখন বলেছিলেন, যে সমস্ত আফগান নাগরিকেরা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীকে সাহায্য করেছেন তাদের কেউ আফগানিস্তানে পড়ে থাকবে না।

কিছু আফগান নাগরিক পাকিস্তানে শরণার্থী হিসাবে নিবন্ধিত হতে চায়। কিন্তু সরকার এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার মুখপাত্র বলেন, নাজুক আফগানদের সুরক্ষা ও সহায়তা এবং তাদের দুর্দশার সমাধানের জন্য ব্যবস্থা নিতে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

৮০ হাজারের বেশি পুনর্বাসন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে

ডিডাব্লিউ-এর ইমেলের জবাবে, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, অপারেশন অ্যালাইজ ওয়েলকাম (ওএডাব্লিউ)-এর অংশ হিসেবে আফগানিস্তান থেকে এখনো পর্যন্ত ৯৭ হাজারের বেশি আফগান নাগরিক, আমেরিকান নাগরিক এবং বৈধ স্থায়ী বাসিন্দারা যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন।

স্টেট অফিস জানিয়েছে, "আমরা পুনর্বাসন সংস্থার সহযোগী এবং সম্প্রদায়ের অংশীদারদের সঙ্গে ওএডাব্লিউয়ের এর মাধ্যমে ৮৩ হাজার ৬০০ জনের বেশি আফগান নাগরিককে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসনের জন্য চব্বিশ ঘন্টা কাজ করেছি। আমাদের লক্ষ্য হল যোগ্য এবং বিশেষ অভিবাসী ভিসার আবেদনকারীদের দ্রুত ভিসা দেয়া।"

জামিলা আচাকজাই/আরকেসি

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ