সফররত জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাসকে জানিয়ে দিলো তুরস্ক। আফগান শরণার্থীদের দায় তারা নিতে পারবে না।
বিজ্ঞাপন
চারদিনের সফরে আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলিতে গেলেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস। তিনি প্রথমে যান তুরস্কে। সেখানে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মাসের বৈঠক হয়। তালেবান শাসনাধীন আফগানিস্তান নিয়ে আলোচনা করার জন্যই মোট পাঁচটি দেশ সফর করবেন জার্মান বিদেশমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, পুরো অঞ্চলের ব্যবস্থা যাতে ভেঙে না পড়ে, তার জন্য আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা দরকার।
তুরস্কের বক্তব্য
মাসের সঙ্গে আলোচনায় তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, তাদের পক্ষে আর শরণার্থীর চাপ নেয়া সম্ভব নয়। তারা ইতিমধ্যেই নৈতিক ও মানবিক কারণে এই দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু আর করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
২০১৬ সালে ইইউ-র সঙ্গে চুক্তি অনুসারে ৩৭ লাখ সিরীয় শরণার্থীর দায় বহন করছে তুরস্ক। সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ''শরণার্থীদের অতিরিক্ত বোঝা বহন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।''
আফগানিস্তানে তালেবান ফেরার পর থেকেই আফগানদের বড় একটা অংশ দেশ ছাড়তে মরিয়া৷ তাদের অনেকে ইতিমধ্যে হেঁটে ইরান হয়ে তুরস্কে ঢোকার চেষ্টা করছেন৷ তাদের রুখতে সীমান্তে প্রহরা জোরদার করেছে তুরস্ক৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Murad Sezer/REUTERS
তুরস্ক সীমান্তে বন্দি
এই দুজন আফগানিস্তান থেকে হাঁটতে শুরু করেছিলেন এক সপ্তাহ আগে৷ ইরান পার হয়ে তুরস্কের সীমান্তবর্তী ভ্যান শহরে এলে গত ২১ আগস্ট তুর্কি সীমান্তররক্ষীরা আটক করে তাদের৷
ছবি: Murad Sezer/REUTERS
তুরস্কে প্রবেশের অপেক্ষা...
ছবির এই পরিবারটিও ইরান থেকে হেঁটে এসে ভ্যান শহরের সীমান্তে ধরা পড়ে যায়৷ সীমান্তরক্ষীরা তাদের এই ঘরটিতে বসতে বলেছেন৷ আফগান নাগরিক হিসেবে যাবতীয় কাগজপত্র দেখাতে পারলে তুরস্কে প্রবেশের সুযোগ মিলতে পারে তাদের৷
ছবি: Murad Sezer/REUTERS
রাতের প্রহরী
তুরস্কের এক সীমান্তরক্ষীর এ ছবি তোলা হয় ২১ আগস্ট রাতে৷ ভ্যান শহর সংলগ্ন সীমান্তের ছবি এটি৷
ছবি: Murad Sezer/REUTERS
প্রাচীরের দৈর্ঘ বাড়ছে...
২০১৭ সালে সীমান্তে তিন মিটার উঁচু প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করে এর্দোয়ান সরকার৷ সম্প্রতি দেয়ালের দৈর্ঘ আরো ৬৪ কিলোমিটার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ ওপরের ছবিতে বিশেষ ক্যামেরায় চোখ রেখে সীমান্তে কেউ অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছেন কিনা তা দেখছেন এক তুর্কি সেনা৷
ছবি: Murad Sezer/REUTERS
এর্দোয়ানের ঘোষণা এবং বাস্তবতা
সম্প্রতি তুরস্ক জানিয়েছে, আফগানিস্তানে তালেবান ফেরার আগে থেকেই সেখানে এক লাখ ৮২ হাজার নিবন্ধিত এবং প্রায় দুই লাখ অনিবন্ধিত আফগান শরণার্থী বাস করছেন৷ তাই তালেবান আফগানিস্তান দখল করার পরই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন তুরস্ককে ‘শরণার্থী জমাকেন্দ্রে’ পরিণত করা হোক তা তিনি চান না৷ এর পাশাপাশি ইইউ-র প্রতি আফগান শরণার্থীদের দায়িত্ব নেয়ার আহ্বানও জানান তিনি৷
ছবি: Murad Sezer/REUTERS
পরবাসে বন্দি জীবন
ওপরের ছবিটিও ভ্যান শহর সংলগ্ন সীমান্ত থেকে তোলা৷ ছবিতে যাদের দেখা যাচ্ছে তাদের বেশিরভাগই এসেছেন আফগানিস্তান থেকে৷
ছবি: Murad Sezer/REUTERS
সেনা টহল
ভ্যান শহর সংলগ্ন সীমান্তে টহল দিচ্ছে তুর্কি সেনাবাহিনীর গাড়ি৷
আফগানিস্তান থেকে যাতে অবাধে শরণার্থী প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে আকাশ থেকেও নজরদারির ব্যবস্থা করেছে তুরস্ক সরকার৷ ওপরের ছবিতে ভ্যান প্রদেশের সীমান্ত সংলগ্ন আকাশে তুর্কি বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারের টহল৷
ছবি: Murad Sezer/REUTERS
9 ছবি1 | 9
মসের কর্মসূচি
তুরস্কের পর মাস উজবেকিস্তান, পাকিস্তান, তাজিকিস্তান ও কাতার যাবেন। তার কাতার সফর গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, কাবুল থেকে মানুষকে কাতার নিজের দেশে নিয়ে এসে তারপর বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছে। তাছাড়া কাতারের দোহাতেই আছে তালেবানের রাজনৈতিক অফিস। এখন সেই অফিস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলাচ্ছে। এখানেই জার্মান আলোচনাকারী মার্কাস পটজেল কাবুল থেকে মানুষদের জার্মানিতে ফেরাবার ব্যাপারে আলোচনা সেরেছেন।
মাসের বক্তব্য
সফর শুরুর আগে মাস বলেছেন, ''আফগানিস্তানের পরিস্থিতি খুবই টালমাটাল ও বিপজ্জনক। সামরিক উদ্ধার মিশনের মধ্যে দিয়েই জার্মানির দায়িত্ব শেষ হচ্ছে না। আমরা এখন আফগানিস্তানের পড়শিদের সঙ্গে একটা সমঝোতা চাই, যাতে জার্মান, স্থানীয় মানুষ ও স্থানীয় বাহিনী দ্রুত জার্মানি পৌঁছাতে পারে। আমরাও পড়শি দেশগুলিকে মানবিক ও আর্থিক সাহায্য দেব।''
মাস চাইছেন, আফগান সীমান্ত থেকে মানুষ যাতে জার্মান দূতাবাসে দ্রুত ও নিরাপদে পৌঁছতে পারেন তার ব্যবস্থা করতে।
জার্মান উদ্ধারকারী মিশন এ পর্যন্ত ৩৭টি ফ্লাইটে পাঁচ হাজার ৩৪৭জনকে নিরাপদে ফিরিয়ে এনেছে। এর মধ্যে পাঁচশ জার্মান ও চার হাজার আফগান আছেন। বাকি অন্য দেশের নাগরিক। আরো দশ হাজার মানুষকে উদ্ধার করার কাজ বাকি। তার মধ্যে তিনশ জন জার্মান। তাদের আফগানিস্তান থেকে বের করে আনার জন্য জার্মানি আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আলোচনা করছে।