পেমানা আসাদের অভিভাবকরা ব্রিটেনে এসেছিলেন ২০ বছর আগে, শরণার্থী হিসেবে৷ সেই পেমানা আজ রাজনীতিতে সক্রিয়৷ ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর রাজনৈতিক গতিবিধি ও ব্রিটেনে চরম দক্ষিণপন্থার বিপদ সম্পর্কে কথা বলেন৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলে: আফগান বংশোদ্ভূত আপনিই প্রথম ব্রিটিশ নাগরিক যিনি লন্ডন বরো কাউন্সিলের আসনে জয়লাভ করেছেন৷ এই কৃতিত্ব সম্পর্কে আপনি কী বলেন?
পেমানা: এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক৷ জনপ্রতিনিধি হিসেবে এখনও পর্যন্ত কোনো আফগান বংশোদ্ভূত ব্যক্তি ব্রিটেনে নির্বাচিত হননি৷ এটা প্রমাণ করে, ব্রিটেনের আফগান অধিবাসীরা রাজনীতিতে অংশ নিতে পারেন ও স্থানীয় প্রশাসন পরিচালনায় নিজেদের মত রাখতে পারেন৷ এটা একইসঙ্গে ব্রিটেনের গণতন্ত্রের মহান চরিত্র তুলে ধরে এবং সত্যিকারের রাজনৈতিক উদ্দীপনাকে চিহ্নিত করে৷ ব্রিটেন ত্রুটিমুক্ত তা বলছি না৷ কিন্তু এখানে একজন তাঁর ধর্ম ও জাতি পরিচয়ের উর্দ্ধে উঠে জনপ্রতিনিধি হতে পারেন৷
ব্রিটেনে বসবাসকারী বিভিন্ন ধর্ম ও জাতির তরুণদের আমি বলবো, যদি আমি এতদূর পৌঁছাতে পারি, আমার বিশ্বাস তাঁরাও পারবেন৷ নিজেদের উপর আস্থা রাখুন, কারণ আমার আপনাদের উপর আস্থা আছে৷
জার্মানি থেকে আফগানিস্তানে বিতাড়ন
২০১৬ সালের মাঝমাঝি সময়ে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হওয়া ৩৪ আফগান শরণার্থীকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল৷ সেটা শুরু৷ এরপর মাঝখানে কিছুদিন বিরতি দিয়ে আবারো বিমানে করে ফেরত পাঠানো হচ্ছে তাঁদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Balk
বিমানে করে ফেরত পাঠানো
গত ১২ সেপ্টেম্বর ১৫ জন শরণার্থীকে ডুসেলডর্ফ বিমানবন্দর থেকে আফগানিস্তানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা বিমানে তুলে দেয়া হয়৷ প্রত্যেকের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হয়ে গেছে৷ গত মে মাসে কাবুলে জার্মান দূতাবাসের সামনে প্রাণঘাতি গাড়ি বোমা বিস্ফোরণের পর আফগান শরণার্থীদের ফেরত পাঠানো কিছু সময়ের জন্য বন্ধ ছিল৷ এখন আবার শুরু হয়েছে৷ জার্মানির সবুজ দল এবং বামদল এর সমালোচনা করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
একটা সুযোগের আশায় লড়াই
গত মার্চে কটবুসের একদল শিক্ষার্থী গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়৷ তিন আফগান সহপাঠীকে যাতে ফেরত পাঠানো না হয়, সেজন্য প্রচারণা চালিয়েছিল তারা৷ এজন্য তারা বিক্ষোভ করে, স্বাক্ষর সংগ্রহ করে৷ এমনকি আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হওয়া সেই তিন আফগান শিক্ষার্থীর পক্ষে লড়তে একজন আইনজীবী নিয়োগের অর্থও সংগ্রহ করা হয়৷ যে তিন শিক্ষার্থীর জন্য এত আয়োজন, তাদের একজনকে দেখা যাচ্ছে ওপরের ছবিতে৷
ছবি: DW/S.Petersmann
‘কাবুল নিরাপদ নয়’
‘প্রাণঘাতি বিপদের দিকে যাত্রা’, গত ফেব্রুয়ারি মাসে মিউনিখ বিমানবন্দরে প্রতিবাদস্বরুপ দেখানো এক পোস্টারে একথা লেখা ছিল৷ যেসব বিমানবন্দর থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠানো হয়, সেসব বিমানবন্দরে মাঝেমাঝেই হাজির হন এমন প্রতিবাদকারীরা৷ গত ডিসেম্বর থেকে মে মাস অবধি অনেক আফগান শরণার্থীকে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷ চলতি বছর এখন অবধি আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়েছে ২৬১ জনকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Balk
ভ্যুর্ৎসবুর্গ থেকে কাবুল
মধ্য ত্রিরিশে পা দেয়া বাদাম হায়দারিকে সাত বছর জার্মানিতে কাটানোর পর গত জানুয়ারিতে দেশে ফেরত যেতে বাধ্য করা হয়৷ তিনি অতীতে ইউএসএইডে কাজ করেছেন এবং তালেবানের কাছ থেকে বাঁচতে জার্মানিতে এসেছিলেন৷ তালেবানের ভয় এখনো তাড়া করছে হায়দারিকে৷ তিনি আশা করছেন, শীঘ্রই হয়ত আবারো জার্মানিতে ফিরতে পারবেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C.F. Röhrs
নিগৃহীত সংখ্যালঘু
গত জানুয়ারি মাসে আফগান হিন্দু সমীর নারাংকে কাবুলে ফেরত পাঠানো হয়৷ ফেরত পাঠানোর আগ অবধি তিনি জার্মানির হামবুর্গে পরিবরাসহ ছিলেন৷ জার্মান পাবলিক রেডিওকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আফগানিস্তান নিরাপদ নয়৷’’ যেসব সংখ্যালঘু রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হওয়ায় আফগানিস্তানে ফেরত যাচ্ছেন, তারা মুসলিমপ্রধান দেশটিতে সংখ্যালঘু হওয়ায় নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Wiedl
অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফিরে যাওয়া
পকেটে মাত্র বিশ ইউরো নিয়ে জার্মানি থেকে আফগানিস্তানে ফেরত যান রাজনৈতিক আশ্রয় পেতে ব্যর্থরা৷ তাঁরা চাইলে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংগঠন আইওএম’এর সহায়তা নিতে পারেন৷ তাছাড়া সে দেশে জার্মান অর্থায়নে তাদের মানসিক চিকিৎসারও ব্যবস্থা রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dap/M. Jawad
6 ছবি1 | 6
ব্রিটেনে জেনোফোবিয়া বা বিদেশিদের সম্পর্কে অহেতুক ভয় ক্রমশ বাড়ছে৷ এটা নিয়ে কি আপনি উদ্বিগ্ন?
উগ্র দক্ষিণপন্থি মতাদর্শ ব্রিটিশ মূলস্রোতের রাজনীতির অংশ হয়ে উঠছে দেখে আমি খুবই চিন্তিত৷ একই ভাবনা প্রকাশ করছেন অনেক ব্রিটিশ রাজনীতিকও৷ কিন্তু এ দেশে এমন রাজনৈতিক নেতৃত্ব, নাগরিক সমাজ ও শ্রমিক সংগঠন আছে যাদের তরফ থেকে এই ঘৃণা ও বিদ্বেশের প্রতিবাদ করা হচ্ছে৷ এগুলো যাতে ব্রিটিশ সমাজের অংশ না হয়ে যায়, সেটা নিশ্চিত করবে সাধারণ মানুষই৷ যতদিন পর্যন্ত মুক্ত ও মিশ্র সমাজের পক্ষে দাঁড়াবে জনতা, ততদিন আমাদের কোনো বিপদ নেই৷
আপনারা জেনোফোবিয়া মোকাবিলার জন্য কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন?
লন্ডনের বরো অফ হ্যারো ব্রিটেনের সেই জায়গা, যেখানে বিভিন্ন ধর্ম ও জাতির মানুষ বাস করে৷ দক্ষিণ এশিয়া থেকে পূর্ব ইউরোপ, সব জায়গার মানুষ এই বরোতে বাস করে৷ অনেক বছর আগে, ইংলিশ ডিফেন্স লিগ হ্যারোর কেন্দ্রীয় মসজিদের বিরোধিতা করেছিল৷ তখন মসজিদের সমর্থনে হ্যারোর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জনতা তার বিরুদ্ধে মিছিল করেছিল৷
হ্যারোর সব নির্বাচিত সরকারি কাউন্সিলরকে বিভিন্ন সম্প্রদায়কে একজোট রাখার দায়িত্ব নিতে হবে, তাদের কথা শুনতে হবে৷ যাতে কেউ এটা মনে না করেন যে তিনি অবহেলিত বা উপেক্ষিত৷
আপনি এখন কোনো নির্দিষ্ট ইস্যু নিয়ে কাজ করছেন?
আমি সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার উপর জোর দিচ্ছি৷ রোক্সেথ, দক্ষিণ হ্যারোয় সাম্প্রতিককালে বন্দুক নিয়ে অপরাধ, ছুরি সহ হামলা ও ডাকাতি বেড়েছে৷ শিশুদের নিয়ে এ সব এলাকায় মানুষ আর নিরাপদ বোধ করছেন না৷ অপরাধমূলক ঘটনা বাড়তে থাকায় তার প্রভাব পড়ছে তরুণদের উপর৷ তাদের দলে দলে নিয়োগ করা হচ্ছে এ সব কাজে৷ এটা আমি বন্ধ করতে চাই৷