তালেবানের কাছে এত দ্রুত গতিতে আফগানিস্তানের ক্ষমতা চলে যাওয়ায় পশ্চিমা দেশগুলোও বিস্মিত হয়েছে৷ কারণ, কেউই আশা করেনি যে আফগান বাহিনী যুদ্ধ করবে না এবং এত দ্রুত হাওয়ায় মিলেয়ে যাবে।
বিজ্ঞাপন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সোমবার জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে তালেবানের ক্ষমতায় আসার বিষয়ে তার বক্তব্য জানিয়েছেন।
বাইডেন আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন এবং তালেবানের অগ্রযাত্রা প্রতিরোধ না করার জন্য আফগান নেতৃত্বকেই দায়ী করেন।
বাইডেন বলেন, "সত্য হলো, ঘটনা আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুত গতিতে ঘটেছে। তাহলে কী ঘটেছে? আফগানিস্তানের রাজনীতিবিদেরা হাল ছেড়ে দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। আফগান সামরিক বাহিনী হাল ছেড়ে দিয়েছে, এমনকি কখনো কখনো যুদ্ধ করার চেষ্টাও করেনি।"
তালেবানের শীর্ষ নেতা কারা?
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা সরে যাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে পুরো দেশ দখল করে নিয়েছে তালেবান৷ ১৯৯৪ সালে গঠিত তালেবানের বর্তমান শীর্ষ নেতাদের পরিচয় জানা যাবে এই ছবিঘরে৷
ছবি: Gulabuddin Amiri/AP/picture alliance
হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা
তালেবানের সুপ্রিম নেতা আখুন্দজাদা এই গোষ্ঠীর রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামরিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সর্বোচ্চ ব্যক্তি৷ ২০১৬ সালে তার পূর্বসূরী আখতার মনসুর মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হওয়ার পর দায়িত্ব পান আখুন্দজাদা৷ পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কুচলাক শহরের এক মসজিদে তিনি প্রায় ১৫ বছর শিক্ষকতা ও ধর্মপ্রচারের কাজ করেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স৷ তার বয়স প্রায় ৬০ বলে মনে করা হয়৷
ছবি: Imago/Xinhua
মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব
তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে তিনি৷ তালেবানের সামরিক অভিযানের দায়িত্বে আছেন ইয়াকুব৷ ২০১৬ সালে আখতার মনসুর নিহত হওয়ার পর ইয়াকুবকে তালেবানের দায়িত্ব নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল৷ কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা কম এবং বয়স কম হওয়ায় ইয়াকুব নেতা হিসেবে আখুন্দজাদার নাম প্রস্তাব করেন৷ ইয়াকুবের বয়স ৩০-এর ঘরে বলে ধারণা করা হয়৷
ছবি: Gulabuddin Amiri/AP/picture alliance
সিরাজুদ্দীন হাক্কানি
হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান৷ পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে তালেবানের আর্থিক ও সামরিক সম্পদ দেখাশোনা করে এই গোষ্ঠী৷ আফগানিস্তানে আত্মঘাতী বোমা হামলার চল এই গোষ্ঠী শুরু করে বলে মনে করা হয়৷ সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইকে হত্যার চেষ্টা, ভারতীয় দূতাবাসে আত্মঘাতী হামলার জন্য হাক্কানি নেটওয়ার্ককে দায়ী করা হয়৷ হাক্কানির বয়স ৪০-এর ঘরে শেষ থেকে ৫০-এর ঘরে শুরু পর্যন্ত বলে মনে করা হয়৷
ছবি: FBI/REUTERS
মোল্লা আব্দুল গনি বারাদার
তালেবানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বারাদার এই গোষ্ঠীর রাজনীতি বিভাগের প্রধান৷ কাতারের দোহায় আফগান সরকার ও তালেবানের মধ্যে যে আলোচনা চলছিল, সেখানে উপস্থিত ছিলেন তিনি৷ তালেবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের সবচেয়ে বিশ্বস্ত কর্ম ছিলেন বারাদার৷ ২০১০ সালে পাকিস্তানের করাচিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ ২০১৮ সালে তিনি ছাড়া পান৷
ছবি: Alexander Zemlianichenko/REUTERS
শের মোহাম্মদ আব্বাস স্তানেকজাই
তালেবান যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন তিনি উপমন্ত্রী ছিলেন৷ এরপর প্রায় এক দশক তিনি কাতারের দোহায় বাস করেন৷ ২০১৫ সালে তাকে দোহার রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান করা হয়৷ সাম্প্রতিক সময়ে আফগান সরকার ও তালেবানের মধ্যকার আলোচনায় তিনি উপস্থিত ছিলেন৷ এছাড়া বিভিন্ন দেশে কূটনৈতিক সফরে তালেবানের প্রতিনিধিত্ব করেছেন স্তানেকজাই৷
ছবি: Sefa Karacan/AA/picture alliance
আব্দুল হাকিম হাক্কানি
তাকে তালেবানের বর্তমান সুপ্রিম নেতা আখুন্দজাদার সবচেয়ে বিশ্বস্ত মনে করা হয়৷ তিনি তালেবানের সাবেক ছায়া প্রধান বিচারপতি৷ বর্তমানে তিনি এই গোষ্ঠীর ধর্মীয় পণ্ডিতদের প্রভাবশালী সংগঠনের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন৷ আফগান সরকারের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেয়া তালেবানের প্রতিনিধি দলের প্রধান ছিলেন হাক্কানি৷ উপরের ছবিটি ২০০৫ সালের৷
ছবি: AP Photo/picture alliance
6 ছবি1 | 6
তিনি আরো বলেন, "যে যুদ্ধে আফগান বাহিনী নিজেদের জন্য যুদ্ধ করতে আগ্রহী নয়, সে যুদ্ধে অ্যামেরিকান সৈন্যরা মারা যাচ্ছে৷ তারা এমন যুদ্ধ করতে পারে না, করা উচিত নয়৷"
যে আফগান সেনাবাহিনী দুই দশক ধরে অ্যামেরিকার প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্রে সজ্জিত ছিল, কিভাবে এত দ্রুত তারা তালেবানের কাছে আত্মসমর্পণ করতে পারে? এটা ভেবে এখনো অনেক পর্যবেক্ষক অবাক হচ্ছেন৷
তালেবানের প্রায় ৮০ হাজারের কাছাকাছি যোদ্ধা রয়েছে, অন্যদিকে আফগান সরকারের সৈন্যসংখ্যা তিন লাখের কাছাকাছি। তবুও জঙ্গি গোষ্ঠীটি মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পুরো দেশ দখল করে ফেললো।
এই পরাজয়ের পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে।
ন্যাটোর বিমান বাহিনীর অনুপস্থিতি
কাবুলভিত্তিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ শফিক হামদাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, আফগান নিরাপত্তা বাহিনী আর্থিক ও সামরিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল ছিল৷ সেসব সমর্থন প্রত্যাহার শুরুর পর তারা দুর্বল হয়ে পড়েছিল।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ আতিকুল্লাহ ওমরখাইল বলেন, "গত বছর দোহায় মার্কিন-তালেবান চুক্তি এবং এই বছর আফগানিস্তান থেকে ন্যাটো সেনাদের নিঃশর্ত প্রত্যাহার তালেবানের মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছে।"
তিনি আরো বলেন, তালেবান নেতারা জানতেন যে, আফগান সৈন্যরা যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সহায়তা না পেলে কাবুলে সরকার উৎখাত করা সম্ভব।
আফগান সৈন্যদের হতাশা
ওয়াশিংটন আফগান সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্রে সুসজ্জিত করা বাবদ প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে৷ তালেবান মোকাবিলায় সৈন্যদের অন্তত কাগজে-কলমে হলেও যথেষ্ট শক্তিশালী হওয়া উচিত ছিল।
কাবুল বিমানবন্দরের ভয়াবহ ছবি
রোববারই কাবুল দখল করেছে তালেবান। শহর ঘিরে রেখেছে তারা। বিমানবন্দরে পালাতে চাওয়া মানুষের ভিড়। বিমানের মাথায় মানুষ। ভিড়ের চাপে মৃত সাত।
ছবি: Wakil Kohsar/AFP/Getty Images
বিমান না বাস
উপমহাদেশে বাসের মাথায় অনেকসময় মানুষ চড়েন, ট্রেনের মাথাতেও মাঝেমধ্যে দেখা যায় তাদের। কিন্তু তাই বলে বিমানের মাথায় মানুষ! সেই দৃশ্যও দেখা গেল কাবুল বিমানবন্দরে। কাবুল ছাড়ার জন্য কিছু মানুষ এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
ছবি: Wakil Kohsar/AFP/Getty Images
প্রবল ভিড়
যেদিকে দেখা যায়, সেদিকেই মানুষের মাথা। পিলপিল করছে মানুষ। বিমানবন্দরের ভিতরের ছবি।
ছবি: AFP
কোথায় যাবেন
কোথায় যাবেন জানা নেই। তাদের কাছে টিকিট নেই, ভিসা নেই, আছে শুধু অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ভয় এবং পালানোর মরিয়া প্রয়াস।
ছবি: AP Photo/picture alliance
পাঁচিল ও কাঁটাতারের বেড়া টপকে
বিমানবন্দরে উঁচু পাঁচিল, তার উপরে কাঁটাতারের বেড়া। সে সব টপকে মানুষ ঢুকেছেন বিমানবন্দরে। ছবিতে একটি মেয়েকে পাঁচিলে টেনে তুলছেন এক পুরুষ।
ছবি: REUTERS
যে কোনো ভাবে ঢোকার চেষ্টা
বিমানে যে কোনো ভাবে ঢোকার চেষ্টা করেছেন মানুষ। একমাত্র বিমানেই কাবুল তথা আফগানিস্তানের বাইরে যাওয়া যাবে। তাই মরিয়া হয়ে উঠেছে মানুষ।
ছবি: AP Photo/picture alliance
বাইরে গাড়ি রেখে
মানুষ এতটাই বেপরোয়া, যে বিমানবন্দরের বাইরে গাড়ি রেখে পরিবারের সকলকে নিয়ে তারা ছুটছেন ভিতরে ঢোকার জন্য।
ছবি: REUTERS
নারী ও শিশুরাও
শুধু পুরুষরা নয়। নারী ও শিশুদেরও দেখা গেছে বিমানবন্দরে ঢুকে প্লেন ধরার মরিয়া চেষ্টা করতে।
ছবি: REUTERS
বাইরে তালেবান প্রহরা
বিমানবন্দরের বাইরে সতর্ক পাহারায় তালেবান। বন্দুক হাতে তারা প্রহরারত।
ছবি: REUTERS
ভিড়ের চাপে
প্রবল ভিড় এবং বিশৃঙ্খলার শিকার হলেন অন্ততপক্ষে সাতজন। পালাতে চেয়েছিলেন তারা। পারলেন না। চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
ছবি: AFP/Getty Images
মার্কিন বিমানবাহিনীর বিমান
কাবুল বিমানবন্দরের উপরে মার্কিন বিমানবাহিনীর বিমান। এই বিমানবন্দর এখনো অ্যামেরিকার দখলে।
ছবি: ASVAKA NEWS via REUTERS
বিমান ঘিরে সেনা
পরিস্থিতি দেখে মার্কিন সেনা বিমানগুলি ঘিরে ধরে। আফগান জনতা দূর থেকে দেখছেন। তারা তখনো আশায় যে, বিমানে করে চলে যেতে পারবেন।
ছবি: Wakil Kohsar/AFP/Getty Images
নামতে পারল না
বিমানবন্দরের এমন অবস্থা ছিল যে, সোমবার জার্মান সেনাবাহিনীর বিমান সেখানে নামতে পর্যন্ত পারেনি।
সকলকে বিমানবন্দরের বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য বন্ধ রাখা হয় এয়ারপোর্ট। বেশ কয়েকঘণ্টা পরে তা খোলে।
ছবি: Maxar Technologies/REUTERS
13 ছবি1 | 13
বিশ্লেষকরা আফগান সেনাবাহিনীর পতনের পিছনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে মনে করেন- হতাশা এবং দুর্নীতিগ্রস্ততাকে।
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে ২০২০ সালে কাতারের দোহায় মার্কিন-তালেবান চুক্তি হয়৷ সেটির পরই আফগানদের কাছে এই বার্তা পৌঁছায় যে, ওয়াশিংটন আর আফগানিস্তানে আগ্রহী নয়৷ এর ফলে আফগান বাহিনী হতাশ হয়ে পড়ে।
জানুয়ারিতে যখন ট্রাম্পের জায়গায় জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তখন আফগান কর্মকর্তারা আশা করেছিলেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে আরো কিছুটা সময় পাবেন।
কিন্তু ২০২১ সালের এপ্রিলে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাইডেন দ্বিগুণ গতিতে এগিয়ে নেন৷ যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাটো মিত্ররাও তা অনুসরণ করে।
আফগান প্রশাসন এত দ্রুত সৈন্য প্রত্যাহারের জন্য প্রস্তুত ছিল না তা স্পষ্ট৷ তালেবান দেশব্যাপী যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়নি এবং আন্তঃআফগান আলোচনাও ঝুলে ছিল।
ইউএস কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স এর-একটি প্রতিবেদন অনুসারে, আফগান সামরিক বাহিনীর "সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চৌকিগুলোতে খাদ্য এবং গোলাবারুদের মতো গুরুত্বপূর্ণ জিনিসও সরবরাহ করার ক্ষমতা ছিল না।"
আফগানিস্তান যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের বক্তব্য
01:53
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "আদতে কোনো লাভ হবে না, এটা বুঝতে পেরেই বেশিরভাগ সৈন্য জীবনের ঝুঁকি না নিয়ে তালেবানের সঙ্গে বোঝাপড়া, আত্মসমর্পণ করা বা প্রতিরোধ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷"
বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান বরাবরই আশরাফ গনির সরকারের ব্যাপক দুর্নীতির খবর প্রকাশ করে আসছে।
দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের আফগানিস্তান পেপার্স প্রকল্পের তথ্য অনুসারে, সেনা ও পুলিশ মিলিয়ে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর তিন লাখ ৫২ হাজার সদস্য থাকলেও সাবেক সরকার কেবল দুই লাখ ৫৪ হাজার সদস্যের পরিচয় নিশ্চিত করতে পেরেছে৷
পত্রিকাটি জানায়, কমান্ডাররা অর্থ লোপাটের জন্য কেবল ‘ভুয়া সৈনিকই' তৈরি করেননি, সৈন্যদের বেতন এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ নিয়েও দুর্নীতি করেছেন।
যুদ্ধের খরচ পর্যবেক্ষণ করার দায়িত্বপ্রাপ্ত মার্কিন সংস্থা প্রতিবেদন দিয়েছে যে ‘জবাবদিহিতা ছাড়া খরচের' সুযোগই এই ধরনের দুর্নীতিকে উসকে দিয়েছে এবং এটি বন্ধ করার চেষ্টাতেও মনোযোগ ছিল না।
আবার তালেবানের আফগানিস্তান
দীর্ঘ দুই দশক পর আফগানিস্তানের দখল আবার নিজেদের হাতে তুলে নিলো তালেবান৷ ছবিঘরে তালেবানের অতীত, বর্তমানের চিত্র৷
ছবি: Str/XinHua/dpa/picture alliance
দুই দশক আগে...
ওপরের ছবিটি ২০০১ সালের নভেম্বর মাসের৷ আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে জাবাল উস সেরাজ শহরে তালেবান সৈন্যদের সরিয়ে দখল নিচ্ছে মার্কিন সমর্থিত বাহিনীর সদস্যরা৷
ছবি: Yannis Behrakis/REUTERS
ধ্বংসের চিত্র
তালেবান বনাম মার্কিন সংঘর্ষের সময় সংবাদমাধ্যমে উঠে আসছিল আফগানিস্তানের বিভিন্ন দিক থেকে ধ্বংস আর প্রাণহানির চিত্র৷ ২০০২ সালের এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে বোমা হামলার শিকার কাবুলের দারুল-আমান প্রাসাদ, যার বাইরে নিশ্চিন্তে খেলছে দুই আফগান কিশোর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Bianchi
শরণার্থী
আফগান যুদ্ধের ফলে ২০০০ সাল থেকে ৩৬ লাখ শরণার্থী আশ্রয় নেন ইরান ও পাকিস্তানে৷ বর্তমানে বিশ্বজুড়ে তৃতীয় বৃহত্তম শরণার্থী গোষ্ঠী এই আফগানরা৷ দুই দশক পরে আবারও যখন উত্তপ্ত আফগানিস্তান, নতুন করে আফগান শরণার্থীর ভিড় দেখা যাচ্ছে তুরস্ক, ইরান ও ইউরোপের বিভিন্ন সীমান্তে৷
ছবি: Hussain Ali/Pacific Press/picture alliance
আবার তালেবান
চলতি বছর মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর খুব অল্প সময়েই আফগানিস্তানের দখল নিয়েছে সশস্ত্র জঙ্গি গোষ্ঠী তালেবান৷ ছবিতে রাজধানী কাবুলের হামিদ কারজাই বিমানবন্দরের বাইরের রাস্তায় বন্দুক হাতে তিন তালেবান সদস্য৷
ছবি: WAKIL KOHSAR/AFP/AFP/Getty Images
নিহত পাঁচ
তালেবান দখল নিলেও আফগানিস্তানে এখনো শান্তি ফেরেনি৷ তালেবান কাবুলে ঢুকে পড়ার পর বিমানবন্দরে গিয়ে শত শত আফগান জোর করে বিমানে উঠে দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছিলেন৷ এরই মাঝে সেখানে পাঁচ জন নিহত হওয়ার খবর এলো৷ বিমানবন্দরটির দায়িত্বে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা সোমবার সকালে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলি ছুঁড়েছিল বলে জানা গেছে৷ তবে ওই পাঁচজন কিভাবে প্রাণ হারিয়েছেন তা এখনো জানা যায়নি৷
ছবি: REUTERS
প্রেসিডেন্টের প্রাসাদও দখলে
রোববার দেশ ছেড়েছেন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি৷ একই দিনে কাবুলে অবস্থিত প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেসে ঢুকে পড়ে তালেবান সদস্যরা৷ সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে সেই চিত্র৷ তালেবানের মুখপাত্র ঘোষণা করেন, আফগান যুদ্ধ শেষ হয়েছে, এবার নতুন সরকার গঠন করা হবে৷
ছবি: Zabi Karim/AP/picture alliance
শহরের দখল
গত কয়েক সপ্তাহে আফগানিস্তানের সবকটি গুরুত্বপূর্ণ শহরেরই দখল নিয়েছে তালেবান৷ একে একে হেরাত, কান্দাহার, গজনি, কুন্দুজের মতো সব বড় শহরের নিয়ন্ত্রণই নিয়ে নেয় তারা৷
ছবি: Gulabuddin Amiri/AP/picture alliance
নিজদেশে বিপন্ন আফগানরা
ক্ষমতার হাতবদলের মাঝে অনেক আফগান নাগরিকই নতুন করে বিপন্ন বোধ করছেন৷ কাবুল বিমানবন্দরের ভেতরে ভিড় করেছেন হাজার হাজার জনতা৷ যে কোনো উপায়ে দেশ ছাড়তে চান তারা৷ তাদের মতে, বিশ বছর আগের বাস্তবতা আবার ফিরে আসতে পারে তাদের জীবনে৷ বেশ ঝুঁকির মধ্যে পশ্চিমা বাহিনীর সাথে সুসম্পর্ক রাখা আফগানরা৷
ছবি: AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
সংস্থাটির মতে, "এই অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় করা হয়েছে কিনা সে প্রশ্নের চূড়ান্ত উত্তর লড়াইয়ের ময়দানে ফল দিয়েই বোঝা সম্ভব হবে৷''
এই প্রতিবেদনটি এখন কংগ্রেসের মূল্যায়নের অপেক্ষায় আছে।
মতাদর্শের অনুপস্থিতি
আফগান সেনাবাহিনীর পতনের আরেকটি কারণ ছিল উদ্দেশ্যহীনতা৷ অনেকেরই নিজের গোত্র বা অঞ্চলের প্রতি আনুগত্য কাবুলে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আনুগত্যের চেয়ে বেশি ছিল। অন্যদিকে তালেবান জঙ্গি ইসলামপন্থি আদর্শে ঐক্যবদ্ধ।
২০০১ সালে যখন অ্যামেরিকা আফগানিস্তান আক্রমণ করে ক্ষমতা থেকে তালেবানকে উৎখাত করে, তালেবান বলেছিল যে, তারা ইসলামী আদর্শ ছাড়বে না এবং আফগানিস্তান থেকে ‘পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী' এবং হানাদারদের উৎখাত করতে যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
পাকিস্তানী গণমাধ্যমের ভাষ্যকার নাদিম ফারুক পরাচা মনে করেন, কাবুলে সরকারের প্রতি দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা আফগান বাহিনীর আনুগত্য ছিল একেবারেই ভঙ্গুর৷
পরাচা উল্লেখ করেন, ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত সৈন্য প্রত্যাহারের পর দেশটির সাবেক সমাজতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ নজিবুল্লাহকে ক্ষমতাচ্যুত করতে মুজাহিদিনের তিন বছর লেগেছিল, কিন্তু গনির বাহিনী এক মাসও টিকতে পারেনি।