আফ্রিকার অনেক দেশে দরিদ্র কিশোরদের একমাত্র মনোরঞ্জনের পথ ফুটবল৷ মাঠেঘাটে, বস্তির মধ্যে, সমুদ্রতটে ফুটবল খেলে তারা৷ অনেকেরই সুঠাম শরীর, দারুণ স্ট্যামিনা৷ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ইটালির ফুটবল তারকা মারিও বালোতেলি বা আনজেলো অগবনা তাদের অনেকের কাছেই আদর্শ৷ সামুয়েল এটোও বা দিদিয়ে দ্রগবারও ভক্ত কম নয়৷ সেই স্বপ্নের হাতছানি দেখিয়ে অসাধু আদম-ব্যবসায়ীরা হাজার হাজার আফ্রিকান কিশোরদের বিপুল অর্থের বিনিময়ে ইউরোপে নিয়ে গিয়ে কার্যত পথে বসাচ্ছে৷ শুধু ইউরোপ নয়, সম্প্রতি কামেরুন থেকে একদল খেলোয়াড়কে নেপালে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়৷
এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ছিল জার্মানির বায়ার্ন মিউনিখ আর বোরুসিয়া ডর্টমুন্ড৷ ডর্টমুন্ডকে হারিয়ে ‘ট্রেবল’ জিতেছে বায়ার্ন৷ বুন্ডেসলিগার নতুন মৌসুম শুরুর আগের দিন ফিরে তাকানো যাক বুন্ডেসলিগার ৫০ বছরে৷
ছবি: picture-alliance/dpaবুন্ডেসলিগা শুরু হয়েছিল ১৯৬৩ সালে৷ প্রথম আসরের প্রথম ম্যাচ৷ প্রথম গোলের জন্য এক মিনিটও অপেক্ষা করতে হয়নি৷ বোরুসিয়া ডর্টমুন্ডের ফ্রিডহেল্ম ‘টিমো’ কনিয়েটস্কা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বল জালে জড়িয়ে উল্লাসে মাতলেন৷ কিন্তু কী দুর্ভাগ্য, কনিয়েটস্কা-র জীবন এবং বুন্ডেসলিগার ইতিহাসের এমন স্মরণীয় মুহূর্তের ছবি কেউ কোনোদিন দেখতে পারবেন না৷ ক্যামেরা হাতে নেয়ার সময় না দিয়েই গোল করলে ছবি তোলা যায়, বলুন!
ছবি: picture-alliance/dpa১৯৬৫ সাল৷ খেলোয়াড়দের সঙ্গে লেনদেনে ঘাপলা ধরা পড়ায় লিগ থেকে বাদ দেয়া হয় হ্যার্টা বার্লিনকে৷ সুযোগ পায় বার্লিনের আরেক ক্লাব ‘তাসমানিয়া ১৯০০’৷ বড় আসরে খেলার সুযোগটাকে একটুও কাজে লাগাতে পারেনি দলটি৷ পয়েন্ট টেবিলের একেবারে নীচে ছিল তারা৷ মাত্র ৮ পয়েন্ট পেতে গোল করেছিল ১৫টি আর খেয়েছিল ১০৮টি৷ লিগ ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে দল বাছতে গেলে আজও তাই ‘তাসমানিয়া ১৯০০’-এর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী পাওয়া যায়না৷
ছবি: picture-alliance/dpaডর্টমুন্ড আর শালকের ১৯৬৯ সালের ম্যাচটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে মজার একটি কারণে৷ প্রিয় দল ১-০ গোলে পিছিয়ে পড়ায় রেগেমেগে মাঠে ঢুকে পড়েছিল শালকের কিছু উচ্ছৃঙ্খল সমর্থক৷ পরিস্থিতি খারাপ দেখে নিরাপত্তার দায়িত্বে রাখা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরগুলোও গেল ক্ষেপে৷ সমর্থকদের দোষে শালকের খেলোয়াড় ফ্রিডেল রাউশ আর গেয়ার্ড নয়সার-কে খেতে হলো কুকুরের কামড়৷ রাউশ-এর পশ্চাৎদেশে এখনো নাকি একটি কামড়ের দাগ বিদ্যমান!
ছবি: picture-alliance/dpaকাঠও ঢুকে পড়েছে বুন্ডেসলিগার ইতিহাসে৷ এক সময় গোলপোস্টগুলো ছিল কাঠের৷ তো ১৯৭১ সালে ব্রেমেনের বিপক্ষে গোল করার আনন্দে গোলপোস্টের পেছনের জাল বেয়ে উঠছিলেন ম্যোনশেনগ্লাডবাখ-এর স্ট্রাইকার হ্যারব্যার্ট লাউমান৷ কাঠ যে পচে দুর্বল হয়ে আছে বোঝেননি৷ ফলে ভেঙে পড়ল গোলপোস্ট৷ অনেক চেষ্টা হলো, কিন্তু গোলপোস্ট আর ঠিক করা গেল না৷ মাঠের এক দিকে পোস্ট না থাকায় সেদিন খেলাই পরিত্যক্ত হয়ে গেল৷
ছবি: picture-alliance/dpaতখনো ফুটবলে এত টাকার খেলা শুরু হয়নি৷ বুন্ডেসলিগায় জার্সিতে তখনো কোনো বহুজাতিক কোম্পানির নাম ওঠা শুরু হয়নি৷ ১৯৭৩ সালে বুন্ডেসলিগায় আইনট্রাখট ব্রাউনশোয়াইগ ক্লাবের খেলোয়াড়দের জার্সিতে প্রথম আসে বিজ্ঞাপন৷ খেলোয়াড়দের জার্সিতে ‘ইয়েগারমাইস্টার’ মদের লোগো হরিণের কাটা মাথার ছবি দেখে চটে গিয়েছিল জার্মান ফুটবল ফেডারেশন৷ বুন্ডেসলিগায় জার্সি স্পন্সর করার বিষয়টি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায় ১৯৮১ সালে৷
ছবি: picture-alliance/dpaম্যাচের ৩২ মিনিটেই প্রথমার্ধ শেষ৷ সবাই অবাক৷ জানা গেল রেফারি ভেল্ফ-ডিটমার আলেনফেলডার ম্যাচের আগে বেশি করে মদ গেলায় নিজেকে ঠিক সামলাতে পারছিলেন না বলে ১৩ মিনিট বাকি থাকতেই বাজিয়ে দিয়েছেন প্রথমার্ধ শেষের বাঁশি৷ এমন কাণ্ডের সমালোচনা করায় আলেনফেল্ডার বলেছিলেন, ‘‘আমরা পুরুষ, আমরা তো ফান্টা খাইনা৷’’ ঘটনাটি ১৯৭৫ সালের৷ ব্রেমেন শহরে অনেক বারে এখনো অনেকে মদের অর্ডার দিতে গিয়ে বলেন, ‘‘আলেনফেল্ডার আছে?’’
ছবি: picture-alliance/dpa১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে লিগ জিতেছিল বায়ার্ন মিউনিখ৷ কিন্তু তাদের হারাতে পারলে চ্যাম্পিয়ন হতো ব্রেমেন৷ ম্যাচের ৮৯ মিনিটে পেনাল্টি পেয়েছিল তারা৷ গোল করলে জয় অবধারিত৷ কিন্তু মিশায়েল কুতসুপ বল মারলেন গোলপোস্টে৷ ব্রেমেন পারলোনা চ্যাম্পিয়ন হতে৷ কুতসুপ বুন্ডেসলিগায় মোট ৪০ বার পেনাল্টি নিয়ে গোল করেছেন ৩৯টি৷ একটা মাত্র মিসের জন্য সারা জীবন আফসোস করতে হবে তাকে!
ছবি: picture-alliance/dpaঅদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল ২০০১ সালে৷ এনারগি কটবুস মাঠে নামিয়েছিল এমন এক দল যেখানে একজনও জার্মান নেই, এগার জনের প্রত্যেকেই বিদেশি৷ অখ্যাত দলটি আজও বিখ্যাত হয়ে আছে সে কারণেই৷ পিপলিকা, হুইদুরোভিচ, মাটিয়ুস, আক্রাপোভিচ, কোবিলানস্কি, লাতাউনজি, মিরিউটা, রেগেকাম্ফ, ভাটা, ফ্রাঙ্কলিন এবং লাবাক – সেদিনের ওই এগারোজন খেলোয়াড়ের নাম তাই খুব গুরুত্ব দিয়ে লিখে রাখা হয়েছে বুন্ডেসলিগার ইতিহাসে৷
ছবি: picture-alliance/dpaসেবার ১৯৫৮ সালের পর প্রথম বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হবার সুযোগ পেয়েছে শালকে৷ লিগের শেষ দিন৷ নিজেদের শেষ ম্যাচটা জিতে সমর্থকদের সঙ্গে বিজয়োৎসব শুরু করে দিয়েছেন শালকের খেলোয়াড়রা৷ তাঁরা জানতেন না বায়ার্ন-হামবুর্গের ম্যাচ তখনো চলছে৷ হঠাৎ জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখানো হলো সেই খেলার ফলাফল৷ শেষ মুহূর্তে সমতা ফিরিয়ে ২০০২ সালের আসরেরও চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন! সমর্থকদের ভিড়েই কাঁদতে শুরু করলেন শালকের খেলোয়াড়রা৷
ছবি: picture-alliance/dpa কামেরুনের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফুটবলার জঁ ক্লোদ মভুম্যাঁ সিএফএস নামের এক সংগঠনের প্রধান হিসেবে এই সমস্যা সম্পর্কে অনেক তথ্য সংগ্রহ করেছেন৷ তাঁর মতে, প্রতি বছর এভাবে প্রায় ১৫,০০০ তরুণ আফ্রিকান ফুটবল খেলোয়াড়দের বিদেশে নিয়ে যাওয়া হয়৷ যারা এই কাজ করে, তারা প্রায়ই নামি ইউরোপীয় ফুটবল ক্লাবের নকল ভিজিটিং কার্ড ছাপিয়ে খেলোয়াড় প্রতি ৩ থেকে ১০ হাজার ইউরো আদায় করে৷ সন্তানদের কল্যাণের কথা ভেবে অনেক পরিবার প্রয়োজনে ধার-দেনা করেও সেই অর্থ জোগাড় করে৷
আন্তর্জাতিক ফুটবল সংগঠন ফিফা-ও এই সমস্যা সম্পর্কে সচেতন৷ ১৮ বছরের কম বয়সি ফুটবলারদের আন্তর্জাতিক ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে ক্লাবগুলির জন্য অনেক কড়া নিয়ম চালু করা হয়েছে৷ ইলেক্ট্রনিক ‘ট্রান্সফার ম্যাচিং সিস্টেম' নামের একটি ব্যবস্থা চালু করার পর অপ্রাপ্তবয়স্ক ফুটবলারদের বিদেশে খেলার ঘটনা অনেক কমে গেছে বলেও ফিফা দাবি করছে৷ কিন্তু যারা এই নিয়মের আওতায় রয়েছে, সেই সব স্বীকৃত ক্লাব ও অ্যাকেডামিকে নিয়ে সমস্যা নেই৷ কিন্তু কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বে-আইনি পথে খেলোয়াড় পাচার করতে চাইলে সে ক্ষেত্রে ফিফার তেমন কিছুই করার থাকে না৷ তাছাড়া যে সব অ্যাকাডেমি আফ্রিকা মহাদেশে তরুণদের ফুটবল জগতে সক্রিয়, তাদের প্রায় ৮০ শতাংশেরই কোনো স্বীকৃতি নেই৷
এসবি/ডিজি (রয়টার্স)