1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আফ্রিকার গ্রামাঞ্চলে আশা বয়ে আনছে সৌর বিদ্যুৎ

১০ জুন ২০২০

একবিংশ শতাব্দীতেও বিশ্বের কিছু প্রান্তে বিদ্যুৎ সরবরাহ এখনো স্বপ্ন থেকে গেছে৷ আফ্রিকার দেশ মালির প্রত্যন্ত এক এলাকায় সৌরবিদ্যুৎ সার্বিক উন্নয়নের স্বপ্ন কিছুটা হলেও বাস্তব করে তুলছে৷

ছবি: Africa-Greentec

মালির দক্ষিণ পশ্চিমে সিরাকোরো গ্রামের মানুষ অতিথিদের স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন৷

মালিতে বড় প্রকল্প

মালির প্রত্যন্ত এলাকার সিরিকরো গ্রামে গ্রামে কখনো বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না৷ এবার টর্স্টেন শ্রাইবার ও তাঁর স্ত্রী আইডা-র কল্যাণে পরিস্থিতি বদলাতে চলেছে৷ তাঁরা ‘আফ্রিকা গ্রিন টেক’ নামের কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা৷ ঢাকঢোল পিটিয়ে তাঁদের স্বাগত জানানো হচ্ছে৷

তাঁদের কোম্পানি দুর্গম সাহেল অঞ্চলে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নিয়ে আসছে৷ বহুকাল ধরে স্থানীয় মানুষ এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলেন৷ আইডা শ্রাইবার বলেন, ‘‘অবশেষে সাফল্য অর্জন করে এখানকার মানুষের জন্য সেটা সম্ভব করে নিশ্চিন্ত লাগছে৷’’

টর্স্টেন শ্রাইবার মনে করিয়ে দেন, ‘‘এর জন্য প্রায় নয় মাসের প্রস্তুতি লেগেছে৷ যখন সেই মুহূর্ত এলো, যখন জানা গেল আগামীকালই আলো আসতে চলেছে, তখন বেশ নিশ্চিন্ত হওয়া গেল৷’’

মালির প্রত্যন্ত গ্রামে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার

06:13

This browser does not support the video element.

প্রকল্প রূপায়নে জটিলতা

গ্রামের মানুষ উৎসবে মেতে উঠলেও ‘আফ্রিকা গ্রিন টেক’ কোম্পানির প্রযুক্তিবিদরা কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন৷ আলোর বাতি জ্বালানোর আগে অনেক কাজ বাকি৷ দীর্ঘ যাত্রার পর সব যন্ত্রাংশ পরীক্ষা করতে হয়৷ কন্টেনার প্রায় ছয় মাস ধরে শুল্ক দপ্তরে আটকে ছিল৷ তারপর বেশ কয়েক দিন ধরে বালুভরা পথ অতিক্রম করে গন্তব্যে পৌঁছেছে৷

এই সৌর প্রণালীর দাম প্রায় দেড় লাখ ইউরো৷ এর ফলে স্থানীয় অর্থনীতি শক্তিশালী হবে, এমনটাই আশা করা হচ্ছে৷ টর্স্টেন শ্রাইবার বলেন, ‘‘এমন সৌর প্লান্ট কার্যকর করে তুলতে হলে কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ হাজার জনসংখ্যার গ্রামের প্রয়োজন৷ তাছাড়া বিদ্যুতের সঠিক উপযোগের সম্ভাবনা আছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হয়৷ বাসার জন্য যারা সৌরশক্তি পরিষেবা দেয়, তাদের তুলনায় ছোট ও মাঝারি আকারের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করে তোলাই আমাদের লক্ষ্য৷ আমরা জানতে চাই, এখানে ছুতার মিস্ত্রী, ওয়েল্ডিং মিস্ত্রী, দরজিরা কোথায়? আমরা ৪০ থেকে ৫০টি ছোট ও মাঝারি আকারের প্রতিষ্ঠানের খোঁজ করি৷’’

নারীর ক্ষমতায়ন

আইডা শ্রাইবারের জন্ম মালিতেই৷ তিনি বিশেষ করে স্থানীয় নারীদের সাহায্য করতে আগ্রহী৷ তাঁদের মধ্যে অনেকে জিনিসপত্র বিক্রি করেন৷ আইডা চান, তাঁরাও বিদ্যুৎ সংযোগের সুবিধা গ্রহণ করুন৷ আইডা বলেন, ‘‘শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকার কারণেই নারীদের বেশিরভাগ সমস্যা দেখা যায়৷ সে কারণে তাঁরা সন্তানধারণের প্রতি বেশি মনোযোগ দেন৷ ফলে জন্মের হার বেড়েই চলে৷ ‘আফ্রিকা গ্রিনটেক’ তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আয়ের সুযোগ বাড়ানোর পথ খুলে দিতে চায়৷’’

গ্রামের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হলে মানুষ সন্তানের শিক্ষায় আরও বিনিয়োগ করতে পারবে৷ অর্থাৎ বিদ্যুৎ সরবরাহের পাশাপাশি গ্রামবাসীদের জীবনযাত্রার উন্নতির সম্ভাবনাও বাড়ছে৷ টর্স্টেন শ্রাইবার মনে করেন, ‘‘সাহেল অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আমাদের জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ৷ তবে নির্মল জ্বালানী সরবরাহ করে এবং পরিষ্কার পানি সরবরাহের চেষ্টা চালিয়ে অস্ত্র ছাড়াই আমরা শান্তি সৃষ্টি করতে পারি বলে মনে করি৷ বিদ্যুতের মাধ্যমে আয় বাড়লে মানুষ পরস্পরের সঙ্গে সহজে আপোশ করতে পারে৷ অনেক গ্রামে আমরা এমন সংঘাতের পরিস্থিতির উন্নতি লক্ষ্য করেছি৷’’

সংশয় ঝেড়ে ফেলে অংশগ্রহণ

সিরিকরো গ্রামে কাজ প্রায় শেষ৷ শেষ ল্যাম্পপোস্টগুলি প্রস্তুত করা হচ্ছে৷ যে সব মানুষ এতকাল মনস্থির করে উঠতে পারেন নি, চোখের সামনে পরিবর্তন দেখে এখন তাঁরা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করতে চান৷ সালিফ কোনাটে-র স্ত্রী শাকসবজি এবং ডিম ও মুরগির মাংস বিক্রি করেন৷ তাই তিনি বাসায় বিদ্যুৎ সংযোগ চান৷ তিনি বলেন, ‘‘ফ্রিজ কিনতে চাই বলে আমি চুক্তি স্বাক্ষর করেছি৷ তখন আমার স্ত্রী সব পণ্য আরও বেশিদিন তাজা রাখতে পারবেন এবং আরও ভালো দাম পাবেন৷ সন্তানরা আরও ভালোভাবে পড়াশোনা করতে পারবে, জীবন আরও নিরাপদ হয়ে উঠবে৷’’

গ্রাহকদের বিদ্যুতের মাশুল দিতে হবে৷ তবে আফ্রিকা মহাদেশে প্রচলিত ডিজেল জেনারেটরের তুলনায় সেই অঙ্ক অনেক কম৷

বিনিয়োগের অর্থ ফেরত পেতে কোম্পানির প্রায় ১৫ বছর সময় লাগবে৷ ১৬টি সোলার কন্টেনার এরই মধ্যে চালু হয়ে গেছে৷ প্রতিবেশী দেশ নাইজারেও একটি ইউনিট বসানো হয়েছে৷ আরও চারটি ইউনিট আফ্রিকায় পাঠানো হচ্ছে৷ টর্স্টেন শ্রাইবার বলেন, ‘‘পরিবর্তন এনে ও অন্যদের এই কাজে প্রেরণা জোগানোর ইচ্ছা থেকে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আমরাও প্রেরণা পাই৷ ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে পরিবেশের উন্নতি আসল বিষয়৷ আমি চাই আমার সন্তানরা জানুক যে আমি কমপক্ষে পরিবর্তনের চেষ্টা করেছিলাম৷ চারিদিকে অবনতির নীরব দর্শক হয়ে থাকি নি৷’’

সন্ধ্যার দিকে সব কাজ শেষ৷ রাত নামলেও যাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু থাকে, তা নিশ্চিত করতে ব্যাটারি নিয়ন্ত্রণের প্রণালী আরও একবার পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে৷ টর্স্টেন বলেন, ‘‘এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল৷ স্টোরেজ সিস্টেম কাজ না করলে সব বৃথা হয়ে যেত৷ তবে এখন আলো আনতে পারছি৷’’

বিদ্যুৎ সরবরাহের ফলে সিকোরোর পথঘাট অবশেষে আলোকিত হয়েছে৷ বিদ্যুতের নতুন যুগকে স্বাগত জানাতে গ্রামবাসীরা পথে নেমে নাচ শুরু করে দিয়েছেন৷

ইয়ুর্গেন শ্নাইডার/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ