প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও আফ্রিকা মহাদেশের অনেক মানুষ তার সুফল ভোগ করতে পারেন না৷ কেনিয়ার এক তরুণ বিজ্ঞানী খাদ্য নিরাপত্তা সংকট দূর করতে এক মূল্যবান গবেষণা চালাচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
খাদ্য নিরাপত্তায় অভিনব উদ্যোগ
04:07
খাদ্য নিরাপত্তায় অভিনব উদ্যোগ
04:07
This browser does not support the video element.
প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও আফ্রিকা মহাদেশের অনেক মানুষ তার সুফল ভোগ করতে পারেন না৷ কেনিয়ার এক তরুণ বিজ্ঞানী খাদ্য নিরাপত্তা সংকট দূর করতে এক মূল্যবান গবেষণা চালাচ্ছেন৷
আপাতত ২৯ বছর বয়স্ক এই বিজ্ঞানী কিনোয়া গাছ নিয়ে গবেষণা করছেন৷ দক্ষিণ অ্যামেরিকার এই পুষ্টিকর শস্য আফ্রিকার পুষ্টিজনিত সমস্যা সমাধান করতে পারে৷ সেই লক্ষ্যে তিনি আফ্রিকার পূর্ব ও পশ্চিমের পাঁচটি দেশের শস্যবীজ ও মাটির নমুনা পরীক্ষা করেন৷ ভ্যালেন্টাইন ওয়াকু বলেন, ‘‘বীজ ও মাটি বিশ্লেষণ করা হবে, যাতে পুষ্টিকর পদার্থ, মাটি ও উৎপাদিত শস্যের মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে পারি৷''
কোন ধর্মে কী খাওয়া নিষেধ?
বিশ্ব জুড়ে সব ধর্মের মানুষের খাবারের উপর নানা বিধিনিষেধ আছে, কোনোটা খাওয়া সম্ভব আর কোনোটা খাওয়া বারণ, বিশেষ করে আমিষ, অর্থাৎ মাছ-মাংসের ক্ষেত্রে৷ বহু শতাব্দী ধরে এই সব বিধিনিষেধ চলে আসছে৷
ছবি: DW/S. Waheed
ইসলাম ধর্মে...
ইসলাম ধর্মে শূকরের মাংস ‘হারাম’৷ এছাড়া বেওয়ারিশ পশুপাখির মাংস হারাম এবং পশুপাখির রক্তও হারাম৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Venance
হিন্দুধর্মে গরু
হিন্দুধর্মে গরুকে পবিত্র বলে মনে করা হয়, তাই গো-মাংস ভক্ষণ নিষিদ্ধ৷ ভেড়ার মাংস, মুরগির মাংস বা মাছ ছাড়া বস্তুত বাকি সব ধরণের মাংসই নিষিদ্ধ৷ হিন্দুদের একটি বড় অংশ নিরামিষ ভোজন করে থাকেন৷
ছবি: AP
ইহুদিরা যা খান ও যা খান না
ইহুদিদের জন্য যা খাওয়া অনুমোদিত, তাকে বলা হয় কোশার ও যা খাওয়া নিষিদ্ধ, তাকে বলা হয় ত্রেফা৷ কোশার হলো সেইসব প্রাণী, যাদের পায়ের খুর পুরোপুরি চেরা এবং যারা জাবর কাটে, যেমন গরু, ছাগল কিংবা ভেড়া৷ ঘোড়া কিংবা শূকর এই কারণে কোশার নয়৷ কোশার মাছের আবার আঁশ ও পাখনা থাকা চাই৷
ছবি: AP
বৌদ্ধধর্মে খাওয়া নিয়ে বিধিনিষেধ
বৌদ্ধধর্মে সব ধরণের মাংস, এমনকি মাছ ভক্ষণও নিষিদ্ধ, কেননা বৌদ্ধরা বিশ্বাস করেন যে, কোনো প্রাণিসত্তার মৃত্যুর জন্য তাদের দায়ী হওয়া উচিৎ নয়৷
ছবি: AP
শিখদের ‘নিষিদ্ধ’ খাবার...
শিখরা শূকরের মাংস খান না৷ সেই সঙ্গে হালাল বা কোশার মাংসও তাদের কাছে অভক্ষ্য, কেননা অন্য কোনো ধর্মের ধর্মাচারে অংশগ্রহণ করা তাদের জন্য নিষিদ্ধ৷
ছবি: DW/S. Waheed
জৈন ধর্মাবলম্বীরা মূলত নিরামিষভোজী
জৈনধর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নীতি হলো অহিংসা, যে কারণে অধিকাংশ জৈন নিরামিষ আহার করেন৷ তবে তারা দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যও গ্রহণ করে থাকেন৷
ছবি: DW/S. Waheed
6 ছবি1 | 6
দীর্ঘমেয়াদি এই প্রকল্পের প্রথম বছরেই ভ্যালেন্টাইন ওয়াকু তিনটি মানানসই বীজ আবিষ্কার করেছেন৷ শীঘ্রই চাষিরা তাঁর গবেষণার ফলাফল হাতেনাতে কাজে লাগাবেন৷ তিনি বলেন, ‘‘নতুন শস্য হওয়ায় আমরা তাদের বলতে চাই যে, এটি ব্যবহার করলে তাদের ফলন ভালো হবে৷ তাই আমরা জানাবো যে এই প্রজাতির শস্য আফ্রিকায় ভালো ফল দিচ্ছে৷''
গবেষণাগার থেকে খেতে প্রয়োগের পথ দেখাচ্ছে ‘বিন প্রজেক্ট'৷ কেনিয়ার কৃষি ও গবাদি পশু গবেষণা কেন্দ্র ‘কালরো' এই গবেষকদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে৷ মাচাকোস এলাকার চাষিরা এক বছর ধরে এই কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন৷ এক বিশেষ প্রজাতির শিম চাষের নানা দিক সম্পর্কে পরামর্শ পাচ্ছেন তাঁরা৷ তাঁদেরই একজন মাগডালেনে মুকোনইয়ো মুসা৷ তিনি বলেন, ‘প্রশিক্ষণের ফলে আমাদের কাজ কমে গেছে৷ এখন আমরা আগাছা উপড়ে ফেলে আর্দ্রতা রক্ষার কাজে লাগাই৷'' আরেক চাষি টিমথি মুটিসো-ও এই উদ্যোগ নিয়ে সন্তুষ্ট৷ তিনি বলেন, ‘‘ভালো ফলন পাওয়ায় আমরা গর্বিত৷ আগের মতো আর হয় না, কারণ আমাদের এখন গাছ লাগানো শেখানো হয়৷ গ্রুপের সঙ্গে আমরা সেই শিক্ষা প্রয়োগ করি৷''
চাষিরা তাঁদের বাড়তি ফলন বাজারে ছাড়েন অথবা খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানিগুলিকে বেচে দেন৷ এই প্রকল্পের ফলেই এমনটা সম্ভব হচ্ছে৷ কালরো সংগঠনের ডেভিড কারানজা বলেন, ‘‘আমাদের ভূমিকা হলো, বড় আকারের প্রসেসিং বা প্রি-কুকিং-এর জন্য সঠিক প্রজাতি বেছে নেওয়া, কাজের সঙ্গে চাষিসহ সংশ্লিষ্ট মানুষদের ফলন ও শস্য একত্র করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া৷''
যে খাবারগুলো আলাদা খাবেন
শরীর সুস্থ রাখতে খাবার আবশ্যক৷ কিন্তু কিছু সাধারণজ্ঞানের অভাবে খাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা বেশ কিছু ভুল করে থাকি৷ এর ফলে শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে৷ কিন্তু কী কারণে সেটা হচ্ছে, তা অজানাই থেকে যায়৷ সেই ভুলগুলোই থাকছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: Colourbox/N. Ponomarenko
খাবার ও পানি
আয়ুর্বেদ ও চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, খাওয়ার ৪৫ মিনিট আগে অথবা ৪৫ মিনিট পরে পানি পান করা উচিত৷ অর্থাৎ খাওয়ার সাথে বা খেতে খেতে কখনই পানি পান করা উচিত নয়৷ এমনকি খাওয়ার সাথে কোনো পানীয়ই পান করা উচিত নয়, যেমন, চা, কফি, জুস বা কোমল পানীয়৷ এতে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়৷
ছবি: Colourbox
অ্যান্টিবায়োটিক এবং দুগ্ধজাত পণ্য
অ্যান্টিবায়োটিক নেওয়ার তিন ঘণ্টা আগে এবং তিন ঘণ্টা পরে দুগ্ধজাত পণ্য, যেমন দই, পনির, দুধ এগুলো খাওয়া উচিত নয়৷ বিশেজ্ঞদের মতে, দুগ্ধজাত পণ্যে যেসব ব্যকটিরিয়া থাকে তারা অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষমতা হ্রাস করে ফেলে৷
দুধের মধ্যে যে ল্যাকটোজ প্রোটিন থাকে, সেটা পাচনের জন্য শরীরকে অনেক কষ্ট করতে হয়৷ তাই দুধ খাওয়ার আগে বা পরে টক জাতীয় ফল যেমন, লেবু, তেঁতুল, আনারস – এ সব খেলে পেটের মধ্যে দুধ ফেটে যায়৷ এর ফলে গ্যাস, অ্যাসিডিটি/অম্বল এমনকি পেট ব্যথাও হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kalaene
কাশির ওষুধ আর লেবু
লেবুর রস – তা সে যে লেবুরই হোক না কেন, তাতে রয়েছে ভিটামিন সি৷ তাই সর্দি-কাশি হলে লেবু খাওয়া উপকারী৷ কিন্তু লেবু এবং কাশির ওষুধ – এ দু’টো একসঙ্গে খেলে বিপদ৷ কাশির ওষুধের সাথে লেবুর রসের যে রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়, তাতে ওষুধের গুণাগুণ কমে যায়৷ তাই দু’টো একসাথে খেয়ে কোনো লাভ নেই৷
ছবি: INAPI
কার্বোনেটেড পানীয় আর পুদিনা
পেপসি, কোক, ফান্টা বা যে কোনো কার্বোনেটেড পানীয়তে পুদিনা পাতা দেয়া উচিত নয়৷ এ দুটোর মিশ্রণে বিষক্রিয়া হতে পারে৷ এমনকি পেটে সায়নাইড সৃষ্টির আশঙ্কাও থাকে৷
ছবি: Elenathewise/Fotolia
দই আর ফল
আয়ুর্বেদ বলছে, দইয়ের সাথে টক ফল খাওয়া উচিত না৷ অনেকেই অবশ্য দইয়ের মধ্যে ফল দিয়ে খান৷ দইয়ের সঙ্গে মিষ্টি ফল খাওয়া ভালো, কিন্তু টক ফল খেলে হজমে গণ্ডগোল, অ্যালার্জি, এমনকি সাইনাসের সমস্যাও হতে পারে৷
ছবি: Fotolia/FOOD-pictures
মদ্যপানের সঙ্গে ওষুধ
মদ্যপানের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে রক্তপ্রবাহ বেড়ে যায়৷ তাই ওষুধ গ্রহণের সময় মদ্যপান থেকে বিরত থাকারই পরামর্শ দিয়ে থাকেন ডাক্তাররা৷
ছবি: picture-alliance/Bildagentur-online
7 ছবি1 | 7
‘সিয়াট'-এর বিজ্ঞানীদের জন্য টেকসই প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ প্রতিষ্ঠানের প্রধান এ বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন৷ শিমের ক্ষেত্রে গবেষণা অনেক এগিয়ে গেছে৷ ইনস্টিটিউটের হাতে বিশ্বের সব চেনা প্রজাতির বিনস-এর জীবাণু রয়েছে৷ সিয়াট-এর প্রধান রবিন বুরুচারা বলেন, ‘‘আমাদের কাছে জীবাণুর প্লাজম রয়েছে, গবেষণাও করতে পারি৷ কিন্তু আমরা আমাদের জাতীয় গবেষণা ব্যবস্থার সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করি৷ তারপর এজেন্টদের সঙ্গেও সেভাবে কাজ করি, যাতে তা চাষিদের স্তর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে৷''
বিন প্রজেক্ট বছরখানেক ধরে চলছে এবং প্রায় শেষ হবার মুখে৷ ভ্যালেন্টাইন ওয়াকু এর বেড়ে চলা সাফল্য সম্পর্কে অত্যন্ত খুশি৷ তিনি শিম নিয়েও গবেষণা চালিয়েছেন৷ এবার কিনোয়া নিয়ে ব্যস্ত৷ তবে লক্ষ্য একই৷ তিনি বলেন, ‘‘আফ্রিকায় এই খাদ্য নিরাপত্তা সংকট চলছেই৷ আমি কিনোয়া নিয়ে যে কাজ করছি, সেটা সফল হলে প্রান্তিক মানুষদের জীবনযাত্রার উন্নতি হবে৷''
ভ্যালেন্টাইন ওয়াকু-র কিনোয়া প্রকল্প পাঁচ বছরের জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে৷ বিজ্ঞানী হিসেবে তিনি চান, চাষিরা যেন তাঁর গবেষণার ফলাফল থেকে দ্রুত ফায়দা তুলতে পারে এবং আফ্রিকায় সফলভাবে কিনোয়া-র চাষ হতে পারে৷