ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানের কারণে আফ্রিকায় ব্যাপক খাদ্য সংকটের সতর্কতা জারি। সংকট হতে পারে ইউরোপেও।
বিজ্ঞাপন
অক্সফ্যাম একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ইউক্রেন-রাশিয়া লড়াইয়ের কারণে পূর্ব আফ্রিকায় খাদ্য সংকট শুরু হয়ে গেছে। পরিস্থিতি এমনই চললে এই সংকট আরো বাড়বে।
অক্সফ্যামের প্রধান গ্যাব্রিয়েলা বুচার বলেছেন, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, সোমালিয়া এবং দক্ষিণ সুদানে খাদ্য সংকট সবচেয়ে বেশি হতে পারে। বুচারের কথায়, ''ইউক্রেনে রাশিয়া অভিযান গোটা বিশ্বেই খাদ্য সংকট তৈরি করবে। কিন্তু গরিব দেশগুলিতে তার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে। পূর্ব আফ্রিকায় ইতিমধ্যেই সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।''
পূর্ব আফ্রিকা ইউক্রেন এবং রাশিয়া থেকে পাঠানো গমের উপর প্রবলভাবে নির্ভরশীল। কিন্তু লড়াইয়ের কারণে আপাতত সেই সরবরাহ বন্ধ আছে। যার প্রভাব কেনিয়া, ইথিওপিয়া, সোমালিয়ার মতো দেশগুলির উপর পড়তে শুরু করেছে। বস্তুত, কৃষ্ণসাগর কার্যত আটকে রেখেছে রাশিয়া। সেখানে একাধিক খাদ্যবোঝাই জাহাজ দাঁড়িয়ে আছে। ওই জাহাজেই পূর্ব আফ্রিকায় গম পাঠানো হচ্ছিল। কৃষ্ণসাগরের ওই অঞ্চলকে বলা হয় বিশ্বের ব্রেড বাস্কেট। বিপুল পরিমাণ গম সেখান থেকে ইউরোপ এবং আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে যায়।
খাদ্য, ওষুধের সংকট আর আতঙ্কের শহর কিয়েভ
কয়েকদিন আগেও ইউরোপের অন্য দেশগুলোর রাজধানীর মতোই শান্তিময় ব্যস্ততার শহর ছিল কিয়েভ৷ রাশিয়ার হামলা শুরুর পর বদলে গেছে সব৷ ইউক্রেনের রাজধানীর মানুষের এখন পর্যাপ্ত খাবার, ওষুধ নেই, নেই জীবনের নিরাপত্তা...
ছবি: Emilio Morenatti/AP/picture alliance
সার্বক্ষণিক আতঙ্ক
রাশিয়ার সেনাবাহিনীর হামলার প্রধান লক্ষ্য রাজধানী কিয়েভ৷ হঠাৎ হঠাৎ তাই বোমার আঘাতে কেঁপে উঠছে কিয়েভ৷ ওপরের ছবিতে তেমনই এক হামলার পর জায়গাটি ঘুরে দেখছেন ইউক্রেনের এক সেনাসদস্য৷
ছবি: Efrem Lukatsky/AP/dpa/picture alliance
রাজধানীবাসীর দুর্বিষহ জীবন
১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সি পুরুষদের যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য দেশে থাকার নির্দেশ দিয়েছে ইউক্রেন সরকার৷ বাকিদের অনেকেই কিয়েভ ছেড়েছেন৷ যারা এখনো আছেন, তারা পড়ছেন নানা সমস্যায়৷ খাবার এবং ওষুধও শেষ হয়ে যাওয়ায় সুপারমার্কেট, মুদি দোকান, ফার্মেসি কিংবা এটিএম বুথের সামনে ভিড় করছেন তারা৷ সোমবার সুপারমার্কেটের সামনে অনেক মানুষকে টানা দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন ডয়চে ভেলের আলেক্সান্দার সাভিৎস্কি৷
ছবি: Lilia Rzheutska/DW
সাবোটাজের আশঙ্কায় কড়া নিরাপত্তা
রাশিয়ার কোনো সমর্থক হঠাৎ হামলা চালাতে পারে- এই আশঙ্কায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে কিয়েভে৷ ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল প্রায় বন্ধ৷ সব গাড়িতে চলছে ব্যাপক তল্লাশি৷
ছবি: Aytac Unal/AA/picture alliance
হাসপাতালেও আতঙ্ক
রাশিয়ার হামলার আশঙ্কায় হাসপাতালের রোগীদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ জায়গায়৷ বেশিরভাগ হাসপাতালে রোগীদের ঠাঁই হয়েছে বেসমেন্টে৷ ওপরের ছবিতে ওখমাদেত শিশু হাসপাতালে সন্তানকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছেন এক মা৷
ছবি: Emilio Morenatti/AP/picture alliance
বেসমেন্টেই চিকিৎসাসেবা
ওখমাদেত শিশু হাসপাতালের বেসমেন্টে রোগীদের অসুস্থতাজনিত সব তথ্য লিখে নিচ্ছেন এক নার্স৷
ছবি: Emilio Morenatti/AP/picture alliance
হাসপাতাল যখন বিকল্প আশ্রয়কেন্দ্র
রাশিয়ার বোমা হামলা থেকে বাঁচতে রোগীদের পরিবারের সদস্যরাও আশ্রয় নিয়েছেন ওখমাদেত শিশু হাসপাতালের বেসমেন্টে৷
ছবি: Emilio Morenatti/AP/picture alliance
নিরুপায় অবস্থান
যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য শুধু ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সি পুরুষদেরই দেশ না ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে ইউক্রেন সরকার৷ শিশু অসুস্থ, তাই নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও অন্য শহর বা দেশে যেতে পারেননি ছবির এই মা-শিশুরা৷
ছবি: Emilio Morenatti/AP/picture alliance
রেল স্টেশনে আশ্রয়
রাশিয়ার হামলার আঘাত থেকে বাঁচতে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন ট্রেন স্টেশনে৷
কিয়েভ ট্রেন স্টেশনের এটি এখন নিয়মিত দৃশ্য৷ পোল্যান্ডগামী ট্রেনের অপেক্ষায় হাজারো মানুষ৷
ছবি: Chris McGrath/Getty Images
হেঁটে অন্য দেশে...
রাশিয়ার হামলা শুরুর পর থেকে প্রায় সব বিদেশিই ইউক্রেনের পাশের দেশগুলোতে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন৷ অনেকে হেঁটেই পাড়ি দিয়েছেন দীর্ঘ পথ৷ ওপরের ছবিতে কিয়েভ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ভারতীয় শিক্ষার্থীর হেঁটে হাঙ্গেরিতে পৌঁছানোর মুহূর্ত৷
ছবি: ATTILA KISBENEDEK/AFP/Getty Images
10 ছবি1 | 10
প্রতি বছর ২০ থেকে ২৫ মিলিয়ন টন গম আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে সরবরাহ করে ইউক্রেন। অন্যদিকে রাশিয়া রপ্তানি করে প্রায় ৩০ মিলিয়ন টন। অক্সফ্যামের রিপোর্ট বলছে, প্রায় গোটা আফ্রিকা ওই রপ্তানির উপর নির্ভরশীল। ফলে সাম্প্রতিক লড়াই বিপুল সংকট তৈরি করবে।
ইউরোপের অভিযোগ, কৃষ্ণসাগরে রাশিয়া প্রায় ২০০টি জাহাজ আটকে রেখে দিয়েছে। গমবোঝাই জাহাজগুলিকে কোথাও যেতে দেওয়া হচ্ছে না। রাশিয়ার নৌবহর এলাকাটি কার্যত ঘিরে রেখে দিয়েছে।
রাশিয়া অবশ্য জানিয়েছে, ইউক্রেন ওই অঞ্চলে সমুদ্রে মাইন পেতে রেখেছে। জাহাজগুলির সুরক্ষার জন্যই তারা এলাকাটি আটকে রেখেছে।