পরিবেশ বাঁচিয়ে লবণ উৎপাদন
৬ জুন ২০১৯গিনির রাজধানী কোনাক্রি-র উত্তরে ধোঁয়ার গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে৷ অনেক পরিবার তাদের গ্রাম ছেড়ে উপকূলের কাছে অস্থায়ী বসতি গড়ে বসবাস করছে৷ শুষ্ক মরসুমে প্রখর রোদের তেজ থাকে৷ এই কয়েক মাসেই লবণ তৈরি করা সম্ভব৷
কাঠ পুড়িয়ে লবণ উৎপাদন প্রক্রিয়া
গিনির অ্যাডাম নামের এনজিও-র কর্মীরা চিরায়ত লবণ উৎপাদন প্রক্রিয়ার বিকল্প সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছেন৷ এক কিলোগ্রাম লবণ পেতে ফাতুমাতা সিলা-কে ৩ কিলোগ্রাম কাঠ পোড়াতে হয়৷ উপকূলে ম্যানগ্রোভ বনভূমি ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে৷ এনজিও কর্মী মোহামেদ লামিন কামারা বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘এই আধারে লবণাক্ত পানি ২৪ ঘণ্টা ধরে ফোটাতে হয়৷ সেটা করতে সব সময়ে পোড়া কাঠের জায়গায় নতুন কাঠ দিতে হয়৷ আপনি দেখছেন, ওরা কত পরিমাণ কাঠ ব্যবহার করছে৷ আসলে সে সব গাছের শুকনা শাখা-প্রশাখা৷ আগে গাছের যে মোটা কাণ্ড দেখা যেত, সেগুলি এখন লোপ পেয়েছে৷'' সেইসঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দেন, যে এবার তাঁরা শুধু পরিস্থিতির মূল্যায়ন করতে এসেছেন৷
লবণ উৎপাদনকারী হিসেবে ফাতুমাতা সিলা অবশ্য এই পরিবর্তন সম্পর্কে সন্দিহান৷ তিনি বলেন, ‘‘আপনি বলছেন, কাঠ ব্যবহার করে লবণাক্ত পানি ফোটানো উচিত নয়৷ কিন্তু অন্য কীভাবে আমরা সে কাজ করবো? আমাদের কাঠ জ্বালানো বন্ধ করতে হলে এখানে এসে সাহায্য করুন৷''
ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণের প্রচেষ্টা
কয়েক শো মিটার দূরে কিন্দিয়াদি বন্দর অবস্থিত৷ ১০ বছর আগে এখানকার মানুষের সঙ্গে মিলে এনজিও-টি গরান গাছ লাগিয়েছিল৷ তখন থেকে গ্রামের আশেপাশে ঘন জঙ্গল গজিয়ে উঠেছে, যা উপকূলে ভূমিক্ষয় প্রতিরোধ করছে৷ গ্রামের কর্তৃপক্ষ বিশেষ এক বন সুরক্ষা কমিটি গঠন করেছে৷ যাযাবরদের গরুর কারণে যে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, এনজিও কর্মীরা কমিটিকে সে বিষয়ে জানাতে এসেছেন৷ কমিটির কোষাধ্যক্ষ ফাসিনেট কামারা বলেন, ‘‘আমাদের জানানোর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ৷ সকালে সবার আগে যাযাবরদের কাছে গিয়ে আমরা কথা বলবো৷ আমরা তাদের ম্যানগ্রোভ সুরক্ষার গুরুত্ব বুঝিয়ে বলবো৷ জানিয়ে দেবো, যে এখন থেকে তাদের পশুগুলি কোনো ক্ষতি করলে তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে৷''
একটিও গাছ যাতে কাটা না হয়, গ্রামের মানুষ তা নিশ্চিত করেন৷ অ্যাডাম-এর প্রতিনিধি মোহামেদ কামারা বলেন, একটি গাছ কেটে ফেললে প্রায় ১০ ইউরো অঙ্কের জরিমানা দিতে হয়৷ এখানকার মানুষের কাছে সেটা একটা বড় অঙ্ক৷ তিনি বলেন, ‘‘এখানে ম্যানগ্রোভ অরণ্য পুরোপুরি হারিয়ে যাবার আগে পুরোপুরি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে৷ আমরা সেটাই চাই, আমাদের পরিবেশ রক্ষা করতে চাই৷''
পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি
বন সংরক্ষণের উদ্যোগের আওতায় এই এনজিও সিলা পরিবারেরও মতবদল করতে পেরেছে৷ গোটা অঞ্চলের অন্যতম প্রধান লবণ প্রস্তুতকারী হিসেবে তারা উদ্ভাবনী প্রক্রিয়া প্রয়োগ করছে৷ আগের মতোই লবণাক্ত মাটি চেঁচে নিয়ে সমুদ্রের পানির সঙ্গে মিশিয়ে ছেঁকে নেওয়া হচ্ছে৷
কিন্তু এখন সেই মিশ্রণ আর আগুনের উপর ফোটানো হচ্ছে না৷ বরং এক অগভীর আধারে রেখে রোদে শুকানো হচ্ছে৷ হোসপাইপের একটি প্রণালী কাজে লাগিয়ে লবণের ঘন মিশ্রণ সমানভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ পানি শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলে লবণ অবশিষ্ট থাকছে৷ মোহামেদ লামিন কামারা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘তারা নিজেরাও কিছুদিন চেষ্টা চালিয়েছিল৷ তারপর আমরা দল গঠন করে তাদের এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলাম৷ কাঠের আগুনে লবণ ফোটাচ্ছে, এমন মানুষ আজ আর নেই বললেই চলে৷ বেশিরভাগ উৎপাদনকারীই এই প্রক্রিয়া প্রয়োগ করতে চান৷''
সিলা পরিবার লবণ উৎপাদনের ক্ষেত্র বাড়িয়ে চলেছে৷ এই ব্যবসা আসলে বেশ লাভজনক৷ রোদের নীচে ২৪ ঘণ্টা ধরে বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ার পর তারা লবণ তুলতে পারে৷ প্রত্যেক আধারে দিনে ১৫ থেকে ২৫ কিলোগ্রাম লবণ সৃষ্টি হয়৷ পানিতে ফুটিয়ে এত পরিমাণ উৎপাদন করা সম্ভব হতো না৷
একই সঙ্গে লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় লবণ উৎপাদনকারীরা এই বাষ্পীভবন প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছিলেন৷ ফলে ম্যানগ্রোভ বনও বেঁচে যায়৷
গেয়ারলিন্ড ফলমার/এসবি