1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পরিবেশ বাঁচিয়ে লবণ উৎপাদন

৬ জুন ২০১৯

‘সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না' – পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এমন সমাধানসূত্র পেলে বাড়তি মুনাফার লোভ দেখিয়ে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব৷ আফ্রিকায় লবণ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এমনই একটি উদ্যোগ নজর কাড়ার মতো৷

Frauen sammeln Salz in Senegal
ছবি: Noel Rojo

গিনির রাজধানী কোনাক্রি-র উত্তরে ধোঁয়ার গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে৷ অনেক পরিবার তাদের গ্রাম ছেড়ে উপকূলের কাছে অস্থায়ী বসতি গড়ে বসবাস করছে৷ শুষ্ক মরসুমে প্রখর রোদের তেজ থাকে৷ এই কয়েক মাসেই লবণ তৈরি করা সম্ভব৷

কাঠ পুড়িয়ে লবণ উৎপাদন প্রক্রিয়া

গিনির অ্যাডাম নামের এনজিও-র কর্মীরা চিরায়ত লবণ উৎপাদন প্রক্রিয়ার বিকল্প সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছেন৷ এক কিলোগ্রাম লবণ পেতে ফাতুমাতা সিলা-কে ৩ কিলোগ্রাম কাঠ পোড়াতে হয়৷ উপকূলে ম্যানগ্রোভ বনভূমি ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে৷ এনজিও কর্মী মোহামেদ লামিন কামারা বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘এই আধারে লবণাক্ত পানি ২৪ ঘণ্টা ধরে ফোটাতে হয়৷ সেটা করতে সব সময়ে পোড়া কাঠের জায়গায় নতুন কাঠ দিতে হয়৷ আপনি দেখছেন, ওরা কত পরিমাণ কাঠ ব্যবহার করছে৷ আসলে সে সব গাছের শুকনা শাখা-প্রশাখা৷ আগে গাছের যে মোটা কাণ্ড দেখা যেত, সেগুলি এখন লোপ পেয়েছে৷'' সেইসঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দেন, যে এবার তাঁরা শুধু পরিস্থিতির মূল্যায়ন করতে এসেছেন৷

লবণ উৎপাদনকারী হিসেবে ফাতুমাতা সিলা অবশ্য এই পরিবর্তন সম্পর্কে সন্দিহান৷ তিনি বলেন, ‘‘আপনি বলছেন, কাঠ ব্যবহার করে লবণাক্ত পানি ফোটানো উচিত নয়৷ কিন্তু অন্য কীভাবে আমরা সে কাজ করবো? আমাদের কাঠ জ্বালানো বন্ধ করতে হলে এখানে এসে সাহায্য করুন৷''

ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণের প্রচেষ্টা

কয়েক শো মিটার দূরে কিন্দিয়াদি বন্দর অবস্থিত৷ ১০ বছর আগে এখানকার মানুষের সঙ্গে মিলে এনজিও-টি গরান গাছ লাগিয়েছিল৷ তখন থেকে গ্রামের আশেপাশে ঘন জঙ্গল গজিয়ে উঠেছে, যা উপকূলে ভূমিক্ষয় প্রতিরোধ করছে৷ গ্রামের কর্তৃপক্ষ বিশেষ এক বন সুরক্ষা কমিটি গঠন করেছে৷ যাযাবরদের গরুর কারণে যে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, এনজিও কর্মীরা কমিটিকে সে বিষয়ে জানাতে এসেছেন৷ কমিটির কোষাধ্যক্ষ ফাসিনেট কামারা বলেন, ‘‘আমাদের জানানোর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ৷ সকালে সবার আগে যাযাবরদের কাছে গিয়ে আমরা কথা বলবো৷ আমরা তাদের ম্যানগ্রোভ সুরক্ষার গুরুত্ব বুঝিয়ে বলবো৷ জানিয়ে দেবো, যে এখন থেকে তাদের পশুগুলি কোনো ক্ষতি করলে তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে৷''

লবণ তৈরির পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি

04:19

This browser does not support the video element.

একটিও গাছ যাতে কাটা না হয়, গ্রামের মানুষ তা নিশ্চিত করেন৷ অ্যাডাম-এর প্রতিনিধি মোহামেদ কামারা বলেন, একটি গাছ কেটে ফেললে প্রায় ১০ ইউরো অঙ্কের জরিমানা দিতে হয়৷ এখানকার মানুষের কাছে সেটা একটা বড় অঙ্ক৷ তিনি বলেন, ‘‘এখানে ম্যানগ্রোভ অরণ্য পুরোপুরি হারিয়ে যাবার আগে পুরোপুরি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে৷ আমরা সেটাই চাই, আমাদের পরিবেশ রক্ষা করতে চাই৷''

পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি

বন সংরক্ষণের উদ্যোগের আওতায় এই এনজিও সিলা পরিবারেরও মতবদল করতে পেরেছে৷ গোটা অঞ্চলের অন্যতম প্রধান লবণ প্রস্তুতকারী হিসেবে তারা উদ্ভাবনী প্রক্রিয়া প্রয়োগ করছে৷ আগের মতোই লবণাক্ত মাটি চেঁচে নিয়ে সমুদ্রের পানির সঙ্গে মিশিয়ে ছেঁকে নেওয়া হচ্ছে৷

কিন্তু এখন সেই মিশ্রণ আর আগুনের উপর ফোটানো হচ্ছে না৷ বরং এক অগভীর আধারে রেখে রোদে শুকানো হচ্ছে৷ হোসপাইপের একটি প্রণালী কাজে লাগিয়ে লবণের ঘন মিশ্রণ সমানভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ পানি শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলে লবণ অবশিষ্ট থাকছে৷ মোহামেদ লামিন কামারা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘তারা নিজেরাও কিছুদিন চেষ্টা চালিয়েছিল৷ তারপর আমরা দল গঠন করে তাদের এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলাম৷ কাঠের আগুনে লবণ ফোটাচ্ছে, এমন মানুষ আজ আর নেই বললেই চলে৷ বেশিরভাগ উৎপাদনকারীই এই প্রক্রিয়া প্রয়োগ করতে চান৷''

সিলা পরিবার লবণ উৎপাদনের ক্ষেত্র বাড়িয়ে চলেছে৷ এই ব্যবসা আসলে বেশ লাভজনক৷ রোদের নীচে ২৪ ঘণ্টা ধরে বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ার পর তারা লবণ তুলতে পারে৷ প্রত্যেক আধারে দিনে ১৫ থেকে ২৫ কিলোগ্রাম লবণ সৃষ্টি হয়৷ পানিতে ফুটিয়ে এত পরিমাণ উৎপাদন করা সম্ভব হতো না৷

একই সঙ্গে লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় লবণ উৎপাদনকারীরা এই বাষ্পীভবন প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছিলেন৷ ফলে ম্যানগ্রোভ বনও বেঁচে যায়৷

গেয়ারলিন্ড ফলমার/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ