আফ্রিকায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধে অতিরিক্ত ১ কোটি ৫০ লাখ ইউরো ত্রাণের আহ্বান জানিয়েছেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷ জাতিসংঘ বলছে, সোমালিয়া এবং দক্ষিণ সুদানসহ আফ্রিকার চারটি দেশের ২ কোটি মানুষ অনাহারে রয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গাব্রিয়েল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যাতে অবিলম্বে তারা এ ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ নেন৷ রবিবার তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি ত্রাণ দিতে দেরি করে এসব অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ অনাহারে থাকবে৷
এরইমধ্যে জার্মানির এই নেতা জাতিসংঘকে অঙ্গীকার করেছেন, আফ্রিকাতে জার্মানির যে পরিমাণ ত্রাণ দেয়ার কথা ছিলো, তা দ্বিগুণ করবে তারা৷ এছাড়া গাব্রিয়েল অন্যান্য দাতা সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানান যাতে তারা দ্রুত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেন৷ এছাড়া দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে এ ব্যাপারে আরও বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি৷
অবিলম্বে জরুরি ত্রাণ:
গত সপ্তাহে জাতিসংঘের প্রতিনিধি ও' ব্রায়ান জানান, কেনিয়া, দক্ষিণ সুদান, সোমালিয়া এবং ইয়েমেনে এখনই ব্যবস্থা নেয়া না হলে অনাহারে বহু মানুষের মৃত্যু হবে৷ শুক্রবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলে তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান৷ বলেন, ‘‘নষ্ট করার মতো সময় নেই৷ শিশুরা মারা যাচ্ছে, এমন ছবি দেখার অপেক্ষা করার কোনো মানে হয় না৷ এই চারটি দেশের একটা জিনিসে মিল আছে, আর তা হলো সংঘাত৷ তাই মহা বিপর্যয় ঠেকাতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে৷''
গত সপ্তাহে সোমালিয়া সফরের সময় জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সেদেশের বিপর্যয় এড়াতে ৮২ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার সহায়তার আহ্বান জানান৷ জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, সোমালিয়া মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি প্রায় ৬০ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছে এবং তারা ত্রাণের উপর বেঁচে আছে৷ গত দু'মাসে কলেরায় আক্রান্ত ৮ হাজার রোগীর চিকিৎসা চলছে৷ এর প্রধান কারণ বিশুদ্ধ পানির অভাব৷
অন্যদিকে জাতিসংঘ বলছে, দক্ষিণ সুদানে ১০ লাখ মানুষ অনাহারে রয়েছে৷ ৫৫ লাখ মানুষ ত্রাণের উপর নির্ভর করে বেঁচে আছে৷ এদিকে, ত্রাণ সংস্থাগুলো সরকারের সমালোচনা করে বলছে, ত্রাণ কর্মীদের ‘ওয়ার্কিং ভিসার' ফি বাড়িয়ে দিয়েছে দক্ষিণ সুদান সরকার৷ আগে যা ছিল ৩০০ মার্কিন ডলার, তা এখন বাড়িয়ে করা হয়েছে ১০ হাজার মার্কিন ডলার৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের অভিযোগ সংকটময় পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে দক্ষিণ সুদান সরকার৷
আফ্রিকায় খরা: ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ভয়
বৃষ্টি নেই, ফসল নেই, আফ্রিকায় বহু দশকের মধ্যে চরম খরায় প্রায় দেড় কোটি মানুষ বিপন্ন, বিশেষ করে ইথিওপিয়ায়৷
ছবি: Reuters/T. Negeri
বৃষ্টির অপেক্ষায়
ক্যানিস্টারগুলো খালি, অথচ চতুর্দিকে কোথাও এক ফোঁটা খাবার জল নেই৷ গত ৩০ বছরে ইথিওপিয়ায় এরকম খরা হয়নি৷ মাসের পর মাস বৃষ্টি নেই৷ জাতিসংঘ বলছে, এক কোটি মানুষের জন্য অবিলম্বে খাদ্য চাই, এমনকি ক্ষুধিতদের সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হতে পারে৷ আফ্রিকার অন্যান্য অঞ্চলেও পরিস্থিতি ভয়াবহ৷
ছবি: Reuters/T. Negeri
মরছে পশু
ইথিওপিয়ার অধিকাংশ মানুষ চাষবাস করে খান৷ গরুবাছুর পুষে সারা পরিবারের পেট চলে৷ শেষবার নাকি বৃষ্টি হয়েছিল রমজানের সময়, জানালেন আফার অঞ্চলের এক খামারচাষি৷ কিন্তু রমজান তো ছিল জুলাই মাসে! ‘তখন থেকে কোনো বৃষ্টি হয়নি৷ পানি নেই, মাঠে ঘাস নেই৷ মরছে জন্তু-জানোয়ার৷’
ছবি: Reuters/T. Negeri
বাচ্চাদের বিভীষিকা
এবারকার খরা যেন ১৯৮৪ সালের দুর্ভিক্ষের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, যেবার ইথিওপিয়ায় দশ লাখ মানুষ প্রাণ হারান৷ এখন দেশে আবার খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে, সবচেয়ে ছোটরাই যা-তে কষ্ট পাচ্ছে৷ ইথিওপিয়ার সরকার বলছেন, চার লক্ষ শিশু এমনভাবে অপুষ্টিতে ভুগছে যে, তাদের ডাক্তার দেখানো দরকার৷
ছবি: Reuters/T. Negeri
এল নিনিও নির্মম
জিম্বাবুয়েতে ভুট্টার চাষে এবার শুধু কিছু শুকিয়ে যাওয়া ভুট্টার দানা পাওয়া গেছে – যার একটা কারণ হলো এল নিনিও-র প্রত্যাবর্তন৷ বিশ্বের অন্যত্র এই এল নিনিও-র কারণেই আবার বন্যা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/P. Bulawayo
অবোলা জীব
এই গরুটির আর দাঁড়িয়ে ওঠার ক্ষমতা নেই৷ জিম্বাবুয়ের মাসভিঙ্গো প্রদেশে খরার ছবি৷ খামারের লোকজন অর্ধমৃত জীবটির পায়ের ফাঁকে গাছের ডাল ঢুকিয়ে তাকে খাড়া করার চেষ্টা করছেন৷ ২০১৫ সালে জিম্বাবুয়েতে বৃষ্টিপাত হয়েছে তার আগের বছরের তুলনায় ৫০ শতাংশ কম৷ মাটি শুকনো, ফুটিফাটা৷
ছবি: Reuters/P. Bulawayo
নদী যখন শুকিয়ে যায়
এটা মাঠ নয়, ব্ল্যাক উম্ফোলোজি নদীর খাত৷ নদীটি দক্ষিণ আফ্রিকার ডার্বান শহরের উত্তরপূর্বে৷ সাধারণত নদীতে জল থাকে, কিন্তু এবার তা পুরোপুরি শুকিয়ে গেছে৷ স্থানীয় বাসিন্দারা নদীবক্ষে গর্ত খুঁড়ে চুঁইয়ে ওঠা পানি সংগ্রহ করছেন৷
ছবি: Reuters/R. Ward
বৃষ্টি নেই, ফসল নেই, তাই দাম বাড়ছে
মালাউয়ি ঠিক ইথিওপিয়া কিংবা জিম্বাবুয়ের মতোই খরার প্রকোপে৷ রাজধানী লিলংওয়ের বাজারে ভুট্টার দানার মতো খাদ্যশস্যের দাম চড়েছে অভূতপূর্বভাবে৷ ফসল খারাপ হওয়ায় খাদ্যশস্য আমদানি করতে হয়েছে৷ দাম এমনভাবে বেড়েছে যে, স্থানীয় মানুষদের সামর্থ্যে কুলোচ্ছে না৷