প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিশ্বের অনেক মানুষ নিহত হয়৷ আফ্রিকায় এই সংখ্যাটা সবচেয়ে বেশি৷ এবার তাদের সহায়তা করতে এগিয়ে আসছে স্প্যানিশ কোম্পানি এনভিয়া৷
ছবি: Messe Duesseldorf/ctillmann
বিজ্ঞাপন
এনভিয়ার একটি প্রযুক্তির নাম গোয়ার্ড ৷ এটি ‘জিও-টার্গেটেড অ্যালার্ট' ভিত্তিক একটি প্রযুক্তি৷ এর মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় সক্রিয় থাকা মোবাইল ফোনে একসঙ্গে এসএমএস পাঠানো যায়৷
ব্যাপারটা এ রকম – ধরুন আপনি কোনো শপিং মলে আছেন৷ গোয়ার্ড প্রযুক্তির সাহায্যে কোনো কোম্পানি চাইলে তাদের পণ্যের মার্কেটিং এর জন্য আপনার মোবাইলে এসএমএস পাঠাতে পারবে৷ এভাবে একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঐ শপিং মলে থাকা প্রত্যেকের মোবাইলে এসএমএস পাঠানো সম্ভব৷ ইউরোপে এই প্রযুক্তির ব্যবহার রয়েছে৷
প্রাকৃতিক দুর্যোগ যাদের নিত্যসঙ্গী
বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ নতুন নয়৷ ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডোর মতো দুর্যোগ মোকাবিলা করেই এগিয়ে চলছে মানুষ৷ তবে দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক৷ বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে ছবিঘর৷
ছবি: Jewel Samad/AFP/Getty Images
সবচেয়ে ভয়ংকর টর্নেডো
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় টর্নেডোর ঘটনা ঘটে ১৯৮৯ সালে৷ সেবছরের ২৬ এপ্রিল মানিকগঞ্চ জেলার দৌলতপুর এবং সাটুরিয়া এলাকার উপর দিয়ে বয়ে যায় প্রলয়ংকরী টর্নেডো৷ এতে প্রাণ হারায় ১,৩০০ মানুষ৷
ছবি: David L. Nelson/AFP/Getty Images
পুরোপুরি ধ্বংস
২৬ এপ্রিলের টর্নেডোতে কার্যত ছয় বর্গকিলোমিটার এলাকা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়৷ সেসময় অবজারভার পত্রিকায় এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘‘ধ্বংসযজ্ঞ এতই নিঁখুত যে, সেখানে কিছু গাছের চিহ্ন ছাড়া দাঁড়ানো আর কোনো বস্তু নেই৷’’
ছবি: David L. Nelson/AFP/Getty Images
ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় টর্নেডো
আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডার পর অন্যতম টর্নেডোপ্রবণ দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ৷ সর্বশেষ গত ২২ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টর্নেডোতে বেশ কয়েকজন প্রাণ হারায়৷
ছবি: picture alliance / AP Photo
পূর্বাভাষের প্রযুক্তি নেই
টর্নেডোর পূর্বাভাষের কোনো প্রযুক্তি নেই বাংলাদেশে৷ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এ কে এম মাকসুদ কামাল এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমাদের দেশে না থাকলেও এখন টর্নেডোর পূর্বাভাষ দেয়া সম্ভব৷ অ্যামেরিকা এবং ইউরোপ এক ধরনের রাডার ব্যবহার করে অন্তত ৪৫ মিনিট আগে টর্নেডোর পূর্বাভাষ দিতে পারে৷ আর এ ধরনের পূর্বাভাষ দিয়ে জীবন ও সম্পদ রক্ষার নজির আছে৷’’
ছবি: picture alliance / AP Photo
ঘূর্ণিঝড়ের নিয়মিত শিকার বাংলাদেশ
টর্নেডো ছাড়াও ঘূর্ণিঝড়েরও নিয়মিত শিকার হয় বাংলাদেশ৷ উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত বাংলাদেশে মৌসুমী ঘূর্ণিঝড়ের তালিকায় ১৫৮২ সালের কথা উল্লেখ রয়েছৈ৷ সেসময় বাকেরগঞ্জের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারায় দু’লাখ মানুষ৷
ছবি: Reuters
স্বাধীনতা পরবর্তী বড় দুর্যোগ
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটে ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল৷ সেসময় চট্টগ্রামে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে প্রাণ হারায় কমপক্ষে ১৩৮,০০০ মানুষ৷ প্রায় এক কোটি মানুষ ঘরছাড়া হয়৷ ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটারের মতো৷
ছবি: AFP/Getty Images
আইলার আঘাত
সর্বশেষ ২০০৯ সালে সাইক্লোন আইলায় কয়েকশত মানুষ প্রাণ হারায়৷ সাইক্লোনের পরপরই ডায়েরিয়া ছড়িয়ে পড়লে প্রাণ হারায় কমপক্ষে চার ব্যক্তি৷ এভাবে নিয়মিতই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করছে বাংলাদেশ৷
ছবি: DW
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে এখন বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবও পড়তে শুরু করেছে৷ বিশেষ করে উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে সমুদ্রের পানি বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় বিশাল এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে৷
ছবি: Jewel Samad/AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
এবার একই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে মানুষের প্রাণ বাঁচাতে চায় এনভিয়া৷ এ লক্ষ্যে তারা চলতি বছরের শেষ নাগাদ কেনিয়ায় একটা প্রকল্প শুরু করতে যাচ্ছে৷ এর মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারীদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে আগেই সতর্কবার্তা দেয়া হবে৷
বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, আফ্রিকায় এমন অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চল রয়েছে, যেখানকার মানুষরা টেলিভিশন, বেতার ও ইন্টারনেটের সুবিধা থেকে বঞ্চিত৷ কিন্তু তাদের মোবাইল রয়েছে৷ তাই সে সব মানুষকে সতর্কবার্তা দিতে মোবাইলই সবচেয়ে বেশি কার্যকর৷
কোনো দুর্যোগপ্রবণ এলাকার অধিবাসীরা এনভিয়া থেকে বিনামূল্যে বার্তা পাবে৷ তবে সে জন্য টাকাটা দেবে সে দেশের সরকার৷ এনভিয়া কোম্পানির এক কর্মকর্তা জানান, ইতিমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার পরিবেশ মন্ত্রণালয় তাদের সেবার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে৷ কেননা এর মাধ্যমে দুর্যোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা কমানো গেলে দুর্যোগ পরবর্তী অবস্থা মোকাবিলায় সরকারের খরচও কমে যাবে৷
যেভাবে কাজ করে গোয়ার্ড প্রযুক্তি
কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে ও আবহাওয়া অফিস থেকে ভূমিকম্প, সুনামি বা বন্যার পূর্বাভাষ পাওয়া এবং সেগুলো কোথায় হামলা করতে পারে সে তথ্য পাওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে গোয়ার্ড প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্ভাব্য আক্রান্ত এলাকার মানুষের মোবাইলে এসএমএস পাঠানো যায়৷