আফ্রিকায় যাত্রা দুর্গার, পুজো দেবেন মাসাইরা
১১ সেপ্টেম্বর ২০২২দুর্গাকে পুজো দেবেন সেখানকার জাতিগোষ্ঠী মাসাইমারা৷ শুধু কী তাই৷ দেবী বছরভর থাকবেন সবুজে ঘেরা কেনিয়ার মাসাই গ্রামে, এমন আশা ভক্তদের৷
কলকাতাসহ গোটা রাজ্যে উৎসবের প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে৷ শুরু হয়েছে মণ্ডপ তৈরির কাজ৷ প্রতিমাশিল্পীরা তুমুল ব্যস্ত৷ আর তিন সপ্তাহও হাতে নেই৷ পশ্চিমবঙ্গ শুধু নয়, ভারতের অন্য রাজ্য ও বিশ্বের বিভিন্ন শহরে দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হয়৷ বহির্বঙ্গে প্রবাসীরা পুজোর আয়োজন করেন৷
এবার ভারত থেকে একদল পর্যটক আফ্রিকার মাসাইমারায় গিয়ে পুজোর আয়োজন করছেন৷ মাসাইদের গ্রামে সেখানকার অধিবাসীদের কাছ থেকে পুজো নেবেন দেবী৷
আফ্রিকার অরণ্যে দুর্গা
আফ্রিকার দেশ কেনিয়ার মাসাইমারা অভয়ারণ্য৷ বিশ্বের সবচেয়ে বড় সংরক্ষিত বনভূমি৷ ধু ধু রুক্ষ প্রান্তর আর শুষ্ক আবহাওয়া৷ মাঝেমধ্যে ঝোপঝাড়৷ এই অরণ্য পশুরাজ সিংহের বাসস্থান৷ এই সিংহ দশভুজার বাহন৷ ‘জয়বাবা ফেলুনাথ'-এ সত্যজিৎ রায়ের খুদে চরিত্র ক্যাপ্টেন স্পার্কের গল্প মনে পড়তে পারে৷ সে ফেলুদাকে বলেছিল, আফ্রিকার রাজার কাছে তাদের পরিবারের খোয়া যাওয়া প্রত্নমূর্তি আছে৷ বাড়িতে নির্মীয়মাণ প্রতিমার বাহন সিংহের মুখে রাখা ছিল মূল্যবান সামগ্রীটি৷ সেই আফ্রিকার রাজার উদ্দেশে নিজের ডেরায় পাড়ি দিয়েছেন দুর্গা৷ আজ, রোববার কলকাতা থেকে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে উড়ে গিয়েছে প্রতিমা৷
প্রতিমার কেনিয়া পাড়ি
মাসাইদের ভূমিতে দুর্গাপুজোর আয়োজনের পরিকল্পনা এক পর্যটন সংস্থার৷ তাঁর অন্যতম কর্ত্রী রাখি মিত্র সরকার একদল পর্যটককে নিয়ে মাসাইদের গ্রামে যাবেন, সেখানেই হবে দুর্গাপুজো৷ প্রতিমা তৈরি করেছেন কুমোরটুলির শিল্পী মিন্টু পাল৷ ফাইবার নয়, মাটির প্রতিমা৷ আটপৌরে সাজ৷ উচ্চতায় ২৪ ইঞ্চি, চওড়ায় ২০ ইঞ্চি৷ প্রতিমা নাইরোবি পৌঁছনোর পর সেখাকার বাঙালি সংগঠনের সদস্যরা অভ্যর্থনা জানাবেন৷ এরপর দুর্গা রওনা দেবেন মাসাইদের গ্রামের দিকে৷ শুধু বাংলা নয়, বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে অভারতীয় পর্যটকরাও যোগ দেবেন আফ্রিকার দুর্গোৎসবে৷
শঙ্করের পায়ে পায়ে
এই অভিনব ভ্রমণ যেন ‘চাঁদের পাহাড়'-এর শঙ্করের অভিযানের মতো রোমাঞ্চকর! আয়োজক রাখি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের উদ্দেশ্যে এই ভাবনা৷ পুজো বলতে যে আচার পালন করা হয়, তার সুযোগ এখানে সীমিত৷ বাঙালি সংস্কৃতির প্রদর্শনীই মূল লক্ষ্য৷'' এর আয়োজন বেশ চমকপ্রদ৷ অভয়ারণ্যের ভিতর মাসাইদের গ্রামে হবে পুজোর অনুষ্ঠান৷ কলকাতা থেকে শুধু প্রতিমা নয়, পুজোর সরঞ্জাম যতটা সম্ভব নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ ধূপ-ধুনো, কাঁসর-ঘণ্টা পৌঁছে যাচ্ছে কেনিয়ায়৷ মাসাইদের গ্রামে ১৪-১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুজোর মূল পর্ব সারা হবে৷ সেই অনুষ্ঠানের ছবি পর্যটন সংস্থা সামনে আনবে মহালয়ায়৷
মাসাইদের হাতেই পুজো
তিন পর্যটক ঋতা বসু, শিখা মজুমদার, ত্রয়ী সরকারের উপর পুজো আয়োজনের মূল ভার দিয়েছেন রাখি৷ ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যটকদের দল ফিরে এলেও তারা তিন জন থেকে যাবেন৷ বাংলা ক্যালেন্ডারে সপ্তমী-অষ্টমী-নবমী তিথিতে তারা যাবেন মাসাই গ্রামে৷ তাদের তত্ত্বাবধানে নানা সজ্জায় রঙিন, দীর্ঘদেহী মাসাইরা করবেন পুজো৷ সিংহের সঙ্গে যাঁদের বাস, তাঁদের হাতেই পুজো পাবেন সিংহবাহিনী৷ রাখি বলেন, ‘‘ধূপ-ধুনোর ব্যবহার শেখানো হবে মাসাইদের৷ প্রদীপ জ্বালাতে শেখানো হবে৷ কাঁসার-ঘণ্টা থেকে শাঁখ বাজানো, সবই শেখানোর চেষ্টা করবেন পর্যটকরা৷ এই পুজো পর্বের ভিডিও তুলে আমাকে পাঠাতে বলেছি৷’’
সিংহের ডেরায় সিংহবাহিনী
পুজোর পর প্রতিমা বিসর্জন দেওয়াই রীতি৷ কিন্তু মাসাইদের গ্রামে কোথায় ভাসান দেওয়া হবে? শিল্পী মিন্টু পাল বলেন, ‘‘প্রতিমা রেখে দেওয়া যাবে বছর দুয়েক৷ অবিকল এক থাকবে৷ আমাদের প্রতিমা প্রতি বছরই বিদেশে যায়৷ কোভিডের পর এবার ভাল সাড়া পেয়েছি৷ তবে মাসাইদের গ্রামে আমার প্রতিমা যাচ্ছে, এর অনুভূতিই আলাদা৷’’
অতএব প্রতিমা থাকবে সেই অচিন গ্রামে৷ সিংহের ডেরায়, কোনো ছাউনির নীচে৷ মাসাইরা বছরভর তার দেখভাল করবেন, প্রদীপ জ্বালাবেন৷ আফ্রিকার রাজাই পাহারা দেবে বাঙালির ঘরের মেয়েকে!