শকুনি বলতেই অনেক মানুষের গা ঘিন ঘিন করে ওঠে, বা ভয় লাগে! আসলে এই পাখিগুলো জীবজগৎ ও মানুষের পক্ষে অতি উপকারী৷ কিন্তু আফ্রিকান ওঝাদের টোটকা ওষুধ তৈরির জন্য প্রতিবছর শ'য়ে শ'য়ে শকুনি মারা হয়৷
বিজ্ঞাপন
ফিলি মথলাদেসি তাঁর অ-কেতাবি জড়িবুটি কেনার জন্য জোহানেসবার্গের মুতি বাজারে যান৷ ফিলি হলেন একজন সাঙ্গোমা, অর্থাৎ প্রথাগত আফ্রিকান ওঝা৷ এই বাজারে তিনি তাঁর ওষুধের সব রকম উপাদানই পান, যদিও সেজন্য কিছু কিছু বিরল প্রজাতিকে প্রাণ দিতে হয়৷ তার মধ্যে শকুনিও রয়েছে৷ এই ধরনের একটি পাখি কিনতে পড়ে প্রায় ২০০ ইউরো৷
ফিলি মথলাদেসি বলেন: ‘‘ওরা প্রধানত চোখগুলো আর মাথাটা ব্যবহার করে৷ তাতে নাকি ভবিষ্যৎ বলে দেওয়া যায় – এই পাখিগুলো বহুদূর থেকে দেখতে পায় কিনা৷ কাজেই এটা অন্যান্য জড়িবুটির সঙ্গে দিতে হয়৷ পুড়িয়ে গন্ধ শোঁকা যায়৷ সেই ধোঁয়া যখন নাকে-মুখে ঢোকে, তখন স্বভাবতই ভবিষ্যৎ পর্যন্ত দেখা যায়৷''
আসলে সাঙ্গোমা-রা ওষুধের জন্য কোনো জীবজন্তু মারতে পারেন না, জানালেন ফিলি৷ কিন্তু চাহিদা এতো বেশি যে, প্রতিবছর শয়ে শয়ে শকুন মেরে এ ধরনের বাজারে বিক্রি করা হয়৷ শকুনদের জন্য এর ফলশ্রুতি ভয়াবহ৷ আফ্রিকায় গত ত্রিশ বছরে শকুনদের সংখ্যা প্রায় ৮০ শতাংশ কমে গেছে৷
প্রাণিকুলের কয়েকটি খারাপ খবর
সম্প্রতি কয়েকটি প্রাণী সম্পর্কে মন খারাপ করা খবর পাওয়া গেছে৷ ছবিঘরে থাকছে সে কথা৷
ছবি: picture-alliance/Woodfall/Photoshot/M. Hill
আগের তথ্য সত্যি নয়!
মেরু অঞ্চলের বাসিন্দা সাদা ভল্লুকরা খাবারের অভাব পড়লে শক্তিসঞ্চয় করতে কিছুদিন হাইবারনেশনে কাটাতে পারতো বলে এতদিন জানা ছিল৷ কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে সেটা সত্যি নয়৷
ছবি: AFP/Getty Images/P. J. Richards
জনপ্রিয় সিংহ ‘সেসিল’
জিম্বাবোয়ের প্রখ্যাত সিংহ সেসিলকে গত জুলাই মাসে হত্যা করেন এক মার্কিন শিকারি৷ বিষয়টির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর যুক্তরাষ্ট্র সহ সারা বিশ্বে সমালোচনার ঝড় ওঠে৷ যুক্তরাষ্ট্রেরই অনেক নাগরিক এই ঘটনায় মার্কিন ঐ শিকারিকে বিচারের মুখোমুখি করতে জিম্বাবোয়েতে পাঠানোর পক্ষে সোচ্চার হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Zumaress
হাতির মৃত্যু
বিশ্ব যখন সেসিলের মৃত্যুর ঘটনায় শোকাহত তখনই কেনিয়ায় পাঁচটি হাতিকে হত্যার খবর জানা যায়৷ সংরক্ষিত একটি পার্কে ঐ হাতিগুলোকে দাঁতহীন অবস্থায় মরে পড়তে দেখা যায়৷ অসাধু ব্যবসায়ীদের হাতে প্রতিবছর শত শত হাতির মৃত্যু হয়৷
ছবি: picture-alliance/Woodfall/Photoshot/M. Hill
রইলো বাকি চার
চেক প্রজাতন্ত্রের একটি চিড়িয়াখানায় গত মাসের শেষ সপ্তাহে নাবির নামের একটি উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডারের মৃত্যু হয়৷ ফলে বিশ্বে এখন এই প্রজাতির আর মাত্র চারটি গন্ডার থাকলো৷ বিজ্ঞানীরা ঐ গন্ডারগুলোর প্রজননের চেষ্টা করছে৷ কিন্তু এখন পর্যন্ত সফলতার খবর আসেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/CTK Photo/D. Tanecek
কুমিরও নিরাপদ নয়
অস্ট্রেলিয়ার একটি শহরে পুরনো এক রেফ্রিজারেটরে একসঙ্গে ৫০টি লবণাক্ত পানির কুমিরের মাথা পাওয়া গেছে৷ কুমিরের চামড়া মূল্যবান হওয়ায় অসাধু শিকারিদের জীবন আজ হুমকির মুখে৷
ছবি: Getty Images/I. Waldie
লাল স্যামন
জুন মাসে প্রচণ্ড গরমের কারণে পানির উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় কলম্বিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় আড়াই লক্ষ লাল স্যামন মাছের হয় মৃত্যু হয়েছে, না হয় মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে গেছে বলে জানা গেছে৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/H. Schulz
6 ছবি1 | 6
বিষ দিয়ে মারা
আন্দ্রে বোথা ‘এনডেঞ্জারড ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট' প্রকৃতি সংরক্ষণ সংগঠনের কর্মী৷ তিনি যে কর্মসূচির দায়িত্বে রয়েছেন, তার উদ্দেশ্য হল, আফ্রিকার শকুনদের রক্ষা করা৷ শকুনরা হল মহাদেশটির আবর্জনা পরিষ্কার করার দায়িত্বে৷ তারা জন্তুজানোয়ারের মরাপচা লাশ খেয়ে তা থেকে রোগ ছড়ানো রোধ করে৷ শকুনদের সবচেয়ে বড় শত্রু হল বিষ, বললেন বোথা, সহজে পাওয়া যায়, আবার সস্তাও বটে৷ তিনি বলেন, ‘‘এখানে যা দেখছেন, তা হল এই যে, এই পাখিগুলোকে খাবারের লোভ দেখিয়ে কাছে নিয়ে আসাটা কতো সহজ৷ দুঃখের বিষয়, চোরাশিকারীরাও সে ভাবেই কাজ করে৷ একমাত্র পার্থক্য হল, ওরা বিষাক্ত টোপ ব্যবহার করে৷ পাখিগুলোকে মেরে ফেলে, তারপর সেগুলোকে বেচে টাকা পায়৷''
শকুনদের রক্ষা করা খুব শক্ত কাজ৷ পাখিগুলো দিনে চারশো কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারে৷ কাজেই শকুন মরলে তার প্রভাব কোনো দেশে সীমাবদ্ধ থাকে না৷ যেগুলো বাঁচে, তাদের অনেকেই শেষমেষ ব্রায়ান জোনস-এর হাতে এসে পড়ে৷ ব্রায়ান আহত জন্তুজানোয়ারদের জন্য একটি পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরি করেছেন৷ বহু শকুন হাই-টেনশন বিদ্যুতের তারে লেগে প্রাণ কিংবা অঙ্গ হারায়৷ ব্রায়ানের পুনর্বাসন কেন্দ্রে তাদের খাইয়ে-দাইয়ে সুস্থ করে আবার সম্ভব হলে ছেড়ে দেওয়া হয়৷ যদিও তাদের ভবিষ্যৎ যে কতোটা নিশ্চিত, তা বলা শক্ত৷
মোহোলোহোলো ওয়াইল্ডলাইফ রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারের প্রধান ব্রায়ান জোনস বলেন: ‘‘বাসা ছাড়ার পর পাখিগুলোর পঁচাত্তর ভাগ এক বছরও বাঁচে না৷ বিশ্বব্যাপী শিকারী পাখিদের নিয়ে গবেষণা করে এ কথা জানা গিয়েছে৷ কাজেই তাদের সংখ্যা আবার বাড়বে কী করে? গতবছর এখানে প্রায় দু'হাজার শকুনিকে বিষ দিয়ে মারা হয়েছে৷ সেটা কী দিয়ে পূরণ করব? ওদিকে প্রতিবছর অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে৷ এটা একটা সংকট৷ শিগগীরই আকাশে আর কোনো শকুন দেখতে পাওয়া যাবে না৷''
হুমকির মুখে পশুরাজ ও অন্যান্য প্রাণী
জীববৈচিত্র্যকে হুমকির হাত থেকে কীভাবে রক্ষা করা যায় তা নিয়ে চিন্তিত বিশেষজ্ঞরা৷ কেননা হুমকির মুখে রয়েছে হাঙর, বরফ চিতা, আফ্রিকার সিংহ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হুমকির মুখে পশুরাজ
আফ্রিকার সিংহ হিসেবে পরিচিত হলেও বলকান এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে একসময় তারা রাজত্ব করে বেড়িয়েছে৷ এদের সংখ্যা বর্তমানে এতই কমে গেছে যে কেবল ভারতের কিছু অঞ্চল এবং সাহারা মরুভূমির দক্ষিণে এদের দেখা মেলে৷
ছবি: picture alliance/dpa-Zentralbild
রাশিয়ার বৃদ্ধ মানুষ
সায়গা নামে হরিণের মতো দেখতে এই প্রাণীটি কিন্তু বরফ যুগের প্রাণী৷ এই প্রাণীদের এখন কেবল রাশিয়ায় পাওয়া যায়৷ পাচারের কারণে দিন দিন কমছে এদের সংখ্যা৷ প্রাণীগুলো শুধু যে দিনে ১২০ মাইল হাঁটতেই পারে তাই না, সাঁতরাতেও পারে এরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
পাখনার কারণে হাঙর শিকার
হাঙরের পাখনা জাপান ও চীনে খুবই জনপ্রিয়৷ এ কারণে জেলেরা জীবন্ত হাঙরের বাচ্চা ধরে এদের পাখনা কেটে আবার তাদের সমুদ্রে ফেলে দেয়৷ ফল এদের মৃত্যু৷ এছাড়া হাঙরের মাংসও ঐসব অঞ্চলে খাওয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
লম্বা করাত
লম্বা করাতের হাঙর এখন বিলুপ্তির পথে৷ প্রায় আট মিটার লম্বা হয় এই করাত৷ আর করাতের কারণেই খুব সহজে জেলেদের জালে ধরা পড়ে এরা৷
ছবি: TORSTEN BLACKWOOD/AFP/Getty Images
বিষের শিকার শিকারীরা
ডাইক্লোফেনাক শিকারী পাখিদের জন্য শত্রু৷ দক্ষিণ এশিয়া, স্পেন ও ইটালিতে গরু, শুকর আর ঘোড়াদের এই বেদনানাশক দেয়া হয়৷ আর এদের মৃত্যু হলে যেসব শিকারি পাখি এদের খায় খায় তারা কিডনি নষ্ট হওয়ার কারণে মারা যায়৷
ছবি: Vulture Conservation Foundation
চিড়িয়াখানার শরণার্থী
এশিয়ার বন্য গাধাদের এখন নতুন উপনাম হচ্ছে চিড়িয়াখানার শরণার্থী৷ গত ১৫ বছরে এদের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/D. & M. Sheldon
সিল মাছ
এদের চামড়া খুব মূল্যবান৷ এ কারণে শিকারীদের চোখ থাকে এদের উপর৷ তবে গত কয়েক বছর ধরে প্রাণী অধিকার রক্ষা সংগঠনগুলোর উদ্যোগে এদের রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে৷ এমনকি সংখ্যা কিছুটা বাড়ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্লাস্টিক যখন কচ্ছপের খাবার
সাড়ে ২২ কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে বসবাস করছে কচ্ছপরা৷ কারণ বিবর্তনের সাথে অভিযোজন করার দারুণ ক্ষমতা রয়েছে এদের৷ তবে মানুষ প্রায়ই এদের ডিম চুরি করে এবং সমুদ্রে প্লাস্টিকসহ অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্য বাড়ার কারণে মৃত্যুর মুখে পড়ে এসব কচ্ছপ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মেরু ভাল্লুক
মেরু ভাল্লুকের অবস্থান তখনই শক্ত হয়, যখন পায়ের নীচে কঠিন বরফ থাকে৷ কেবল আর্কটিকে এদের পাওয়া যায়৷ সেখানে শক্ত বরফখণ্ডের নীচে এরা ভেসে বেড়ায়৷ কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বরফ গলে যাওয়ায় এদের লুকিয়ে থাকা কঠিন হচ্ছে৷ ফলে সহজেই শিকারীদের হাতে ধরা পড়ছে এরা৷ কমে যাচ্ছে এদের সংখ্যা৷
ছবি: picture alliance/dpa
স্টিং রে মাছের কাটা
এ ধরনের স্টিং রে মাছদের যে কাটা থাকে তা খুব সহজেই জালে ধরা পড়ে৷
ছবি: picture-alliance/ZB
10 ছবি1 | 10
উইংট্যাগ, রিং, হারনেস
পশুপাখি সংরক্ষণকারীদের একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল মানুষজনকে শেখানো৷ শিশু ও যুবগোষ্ঠীরা পাখিগুলোর সংস্পর্শে এসে শেখে, এই শকুনরা আফ্রিকার প্রকৃতির জন্য কতোটা অপরিহার্য৷ শকুনরা কীভাবে বেঁচে থাকে, তা নিয়েও গবেষণা করা অত্যন্ত জরুরি৷ এক পর্যায়ে গবেষক তা নিয়ে ব্যস্ত৷ সেজন্য প্রচুর ধৈর্যের প্রয়োজন আর সেই সঙ্গে দৌড়নোর ক্ষমতা!
বোথা বলেন: ‘‘আমরা এই পাখিগুলোকে ধরে উইং ট্যাগ লাগাই, পায়ে রিং লাগাই, কিছু কিছু ক্ষেত্রে হারনেস পরাই, যাতে তারা কোথায় যাচ্ছে, তা ট্র্যাক করা যায়: দক্ষিণ আফ্রিকায় তাদের রেঞ্জ বরাবর তারা কোথায় তাদের খাবার পায় - এই সব জুড়ে আমরা একটা ধারণা পাই, তারা কোথায় বিপদে পড়তে পারে৷''
সেই সব বিপদগুলোকে যতোদূর সম্ভব দূরে রাখাই হল আন্দ্রে বোথা-র লক্ষ্য, যাতে আফ্রিকার আকাশে ভবিষ্যতেও শকুনিদের ধীরগতিতে চক্কর দিতে দেখা যায়৷